1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

স্কুল খুললেও রাস্তার ক্লাস বন্ধ করবেন না 'রাস্তার মাস্টার'

পায়েল সামন্ত কলকাতা
১৮ নভেম্বর ২০২১

স্কুল খুললেও পড়াশুনোয় ফিরতে পারেনি সব পড়ুয়া৷ যাদের সঙ্গতি নেই, তাদের জন্যই এক শিক্ষক রাস্তায় শুরু করেছিলেন পাঠদান৷ তাতেই মিলেছে সাফল্য৷ স্কুল খুলে গেলেও বন্ধ হবে না রাস্তার স্কুল৷

Westbengalen Lehrer unterrichtet auf Straße
ছবি: Payel Samanta/DW

মঙ্গলবার থেকে পশ্চিমবঙ্গে খুলেছে স্কুল-সহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান৷ শুরু হয়েছে নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির ক্লাস৷ ধীরে ধীরে খুলবে বাকি ক্লাসগুলিও৷ কথা ছিল, প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে মিড ডে মিলের চাল-আলু নিতে আসার সময় অভিভাবকদের হাতে দেওয়া হবে পাঠ্য বিষয় বা অ্যাক্টিভিটি টাস্ক৷ কিন্তু শিক্ষকরাই গত দুই বছর যাবৎ বারবার বলেছেন, নানা কারণে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করা সম্ভব হচ্ছে না৷ ফলে এই দু বছর স্কুল বন্ধ হওয়ায় শিক্ষার্থীরা পিছিয়ে গিয়েছে অনেকটাই৷ এর ফলে প্রথম প্রজন্মের শিক্ষার্থীদের মধ্যে বাড়ছিল স্কুলছুট হওয়ার আশঙ্কা৷  

এই সঙ্কট ভাবিয়ে তুলেছিল শিক্ষক দীপনারায়ণ নায়ককে৷ পশ্চিম বর্ধমানের জামুরিয়ায় তিলকা মাঝি আদিবাসী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক তিনি৷ কোভিড বিধিনিষেধ ও লকডাউনের মধ্যে তিনি ‘দুয়ারে শিক্ষা' এনেছেন৷ বাংলা শিক্ষা পোর্টাল টাস্ক বিলির আগে থেকেই তিনি আদিবাসী শিশুদের পড়ানোর কাজ শুরু করেছেন৷ শিক্ষকের নিজের বেতনের টাকা থেকেই চলেছে পঠনপাঠন৷ এমনকি স্লেট, পেন্সিল থেকে শুরু করে ক্ষুধা মেটানোর অনেকরকম আয়োজন৷ 

প্রথমেই সাড়া মিলেছিল, এমন নয়৷ গত বছর মে মাসে রাস্তার স্কুল খোলার সময় মাত্র পাঁচ জন পড়ুয়া এসেছিল৷ তারপর এই রাস্তার পঠনপাঠনে ধীরে ধীরে আগ্রহী হয়ে ওঠে দরিদ্র আদিবাসী পড়ুয়ারা৷ এখন সেই সংখ্যাটা হাজারের বেশি৷ আদিবাসী গ্রামের মাটির বাড়ির দেয়ালে নির্দিষ্ট দূরত্ব অন্তর ব্ল্যাক বোর্ড লাগানো হয়৷ ফলে গোটা পাড়াই হয়ে ওঠে ক্লাসরুম৷ আর এ ভাবেই দীপনারায়ণ হয়ে উঠেছেন 'রাস্তার মাস্টার'৷ তিনি বলেন, "শিক্ষার অধিকারে ৬-১৪ বছরের শিশুদের শিক্ষার কথা বলা আছে৷ তবে আমার ক্লাসে চার বছরের খুদেও পড়তে আসে৷ বাবা-মা কাজে চলে গেলে দাদা বা দিদির হাত ধরে সে-ও পড়তে আসে৷ আবার মাধ্যমিক বা উচ্চ মাধ্যমিকের ছাত্রছাত্রীরাও আসে৷ তারাও তাদের সমস্যার কথাটা বলে৷"

অনেক আগেই অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল ও পিছিয়ে পড়া গোষ্ঠীর মানুষদের নিয়ে কাজ শুরু করেছিলেন দীপনারায়ণ৷ লকডাউনে তিনি দেখেন, একদিকে শিশুদের স্কুলে যাওয়ার ছেদ পড়েছে৷ তেমনি অভিভাবকেরাও কাজে যেতে পারছেন না৷ ৩৫ বছরের দীপনারায়ণ এদের নিয়ে করোনা বিধি মেনে রাস্তার উপরেই ক্লাস শুরু করেন৷ দেড় বছর ধরে শুধু খুদে শিক্ষার্থীরা নয়, তাদের মায়েরাও সপ্তাহে একদিন লেখাপড়া শেখেন৷ এক্ষেত্রে খুদেরাই দেয় মায়েদের পাঠ৷ এ ভাবেই চতুর্থ শ্রেণির নমিতা বাগচী বা বৈশাখী মারান্ডি হয়ে উঠেছে তাদের মায়ের শিক্ষক৷ বৈশাখীর হাত ধরে তার মা বছর বিয়াল্লিশের বুধনি মারান্ডি শিখে ফেলেছেন নামসই৷ 

আগে প্রতিটা পাড়াতেই বসত রাস্তার মাস্টারের শিক্ষাবান্ধব ক্লাস৷ এখন ১১টি কেন্দ্রে হয় পাঠদান৷ ইতিমধ্যে রাস্তার মাস্টার শুরু করেছেন ভ্রাম্যমাণ পাঠাগার৷ প্রান্তিক হওয়ার অপরাধে রেফারেন্স বই পায় না অনেকে, সে জন্য ছাত্রছাত্রীদের সহযোগিতায় গ্রন্থাগারের সুবিধা পৌঁছে দিচ্ছেন রাস্তার পড়ুয়াদের কাছে৷ নিজস্ব ল্যাপটপ আর একটা মাইক্রোস্কোপ হাতিয়ার করে আদিবাসী সমাজের কুসংস্কার দূর করতেও চলে রাস্তার মাস্টারের অভিযান! করোনা টিকা হোক বা ম্যালেরিয়া সচেতনতা— শিক্ষকের কাছ থেকে আদিবাসীরা পাচ্ছেন নয়া দিশা৷ দীপনারায়ণ নিজের বিয়েতে আটটি অনাথ শিশুর সারা জীবনের দায়িত্ব নিয়েছেন৷ টানা কাজ করার সুবাদে এখন রাস্তার মাস্টারকে চেনেন অনেকেই৷ অনেকে তাকে বিকল্প শিক্ষায় সাহায্য করতে এগিয়ে আসছেন৷ রাস্তার মাস্টারও চাইছেন, তার বিকল্প শিক্ষার প্রকল্প ছড়িয়ে পড়ুক অন্য জেলাতেও৷ রাস্তার মাস্টার আপাতত একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন গড়ে তুলতে চান৷ শিক্ষাবিদ পবিত্র সরকার রাস্তার মাস্টারের এই উদ্যোগের প্রশংসা করে বলেন, "এই চেষ্টাটাকে সকলের অনুকরণ করা উচিত৷ সমাজে যারা বঞ্চিত তাদের প্রতি কর্তব্য পালনে তিনি এগিয়ে এসেছেন সব রকম ঝুঁকি নিয়ে৷ এই কাজ মানবজাতির কাছে দৃষ্টান্ত হওয়া উচিত বলেই মনে করি৷”

আস্তে আস্তে সব ক্লাসের জন্যই স্কুল খোলা হবে৷ তা হলে কীভাবে চলবে রাস্তার মাস্টারের কর্মকাণ্ড? রাস্তার মাস্টার বলেন, "যাদের কাছে শিক্ষার উপকরণ নেই, তাদের কাছে শিক্ষা পৌঁছে দেওয়া আমার মুখ্য ফোকাস৷ প্রথম প্রজন্মের পড়ুয়া এরা৷ বাড়িতে বাবা মায়েরাও পড়া বুঝিয়ে দিতে পারেন না, টিউশনি নেওয়ার সামর্থ্য নেই৷ স্কুল খুলে গেলে এই সমস্যা মিটবে না৷ তাই স্কুলের পাশাপাশি এই কার্যক্রম চলবে৷ স্কুলের সময়ে আর ক্লাস করা যাবে না৷ তখন অন্য সময়ে করতে হবে৷" 

পবিত্র সরকার

This browser does not support the audio element.

দীপনারায়ণ নায়েক

This browser does not support the audio element.

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ