ইরানের ডেপুটি শিক্ষামন্ত্রী একথা জানিয়েছেন। একাধিক ছাত্রীর শরীরে বিষ মিলেছে।
বিজ্ঞাপন
তেহরান থেকে সামান্য দূরে ইরানের কম শহরে এই ঘটনা ঘটেছে বলে জানা গেছে। কমের পার্শ্ববর্তী একটি শহরের স্কুলেও একই ঘটনা ঘটেছে বলে মনে করা হচ্ছে। রোববার দেশেরডেপুটি শিক্ষামন্ত্রী স্বয়ং একথা জানিয়েছেন। মন্ত্রী ইউনেস পানাহি জানিয়েছেন, এক শ্রেণির মানুষ মেয়েদের স্কুল বন্ধ করতে চান। সে কারণেই তারা মেয়েদের স্কুলে বিষ ছড়ানোর ব্যবস্থা করেছিল। এক ধরনের গ্যাস ব্যবহার করা হয়েছিল বলে প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে। মেয়েদের ফুসফুসে বিষের চিহ্ন মিলেছে।
ইরানে ‘নারী, জীবন, স্বাধীনতা!’ প্রতিবাদের তিন মাস
গত সেপ্টেম্বরে মাহসা আমিনির মৃত্যু ইরানে গত কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় প্রতিবাদের সূচনা করেছিল৷ সেই প্রতিবাদ দমনে সর্বশক্তি প্রয়োগ করেছে দেশটির শাসকগোষ্ঠী৷ তবুও থামেনি প্রতিবাদ৷
ছবি: LOUISA GOULIAMAKI/AFP/Getty Images
বিপ্লবের প্রতীক
চুল হিজাবে ঠিকভাবে ঢাকা না হওয়ার অভিযোগে আমিনিকে ১৩ সেপ্টেম্বর আটক করেছিল ইরানের নীতি পুলিশ৷ এর কদিন পর ১৬ সেপ্টেম্বর তার মৃত্যুর ঘোষণা আসে৷ তার আগে আমিনি হাসপাতালে কোমায় ছিলেন৷ আমিনির এই অস্বাভাবিক মৃত্যু গোটা ইরানে প্রতিবাদের সূচনা করে৷
ছবি: Kenzo Tribouillard/AFP
‘নারী, জীবন, স্বাধীনতা!’
আমিনির কুর্দি জন্মস্থান সাক্কাজে তার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া থেকে ১৭ সেপ্টেম্বর প্রতিবাদের শুরু হয়৷ নারীরা তাদের হিজাব খুলে বাতাসে উড়িয়ে ইরানি ভাষায় ‘‘নারী, জীবন, স্বাধীনতা!’’ বলে শ্লোগান দিয়েছেন৷ ২৬ অক্টোবর আমিনির কবরস্থানে হাজির হয়েছিলেন কয়েক হাজার মানুষ৷ ছবিটি সেখানে তোলা৷
ছবি: UGC/AFP
আয়াতুল্লাহদের বিরুদ্ধে ঐতিহাসিক বিদ্রোহ
আমিনির মৃত্যু ঐতিহাসিক এক আন্দোলনের শুরু করেছে৷ উৎপীড়নকারী সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে কেঁপে উঠেছে গোটা ইরান৷ ছবিটি সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে তেহরানে তোলা৷ শুধু নারীরা নয়, সব বয়সের, জাতের মানুষ এই আন্দোলনে শরিক হয়েছেন৷
ছবি: AFP
হিজাব এবং ভয় ছাড়া
গত তিনমাসে ইরানের পশ্চিমাঞ্চলের রাস্তায় হিজাব ছাড়া নারীর সংখ্যা বেড়েছে৷ ইরানের আইন অনুযায়ী, হিজাব ছাড়া বাইরে গেলে বেত্রাঘাত এবং কারাদণ্ড হতে পারে৷ কিন্তু নারীরা তাসত্ত্বেও সাহস দেখাচ্ছেন৷
ছবি: SalamPix/abaca/picture alliance
শাসক গোষ্ঠীর সহিংস প্রতিরোধ
প্রতিবাদকারীদের দমনে সহিংসতার পথ বেছে নিয়েছে ইরানের শাসকগোষ্ঠী৷ এজন্য পুলিশ এবং কুখ্যাত এক আধাসামরিক বাহিনীকে মোতায়েন করা হয়েছে৷ মানবাধিকার সংগঠনগুলোর হিসেব অনুযায়ী, নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে প্রাণ হারিয়েছেন চারশোর বেশি মানুষ, যাদের মধ্যে অনেক শিশু এবং তরুণ রয়েছে৷
ছবি: AFP
নির্মম আক্রমণ
প্রতক্ষ্যদর্শীরা জানান, পুলিশ এবং আধাসামরিক বাহিনীর সদস্যরা প্রতিবাদকারীদের নির্মমভাবে পেটানোর পাশাপাশি তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছুঁড়েছে৷ তেহরানের পুলিশ ভ্যানে আটক এই নারীর মতো ১৪ হাজার মানুষকে কারাবন্দি করেছে ইরানের শাসকগোষ্ঠী৷
ছবি: SalamPix/ABACA/picture alliance
চুল কেটে প্রতিবাদ
ইরানের শাসকগোষ্ঠীর পতনের দাবিতে প্যারিস থেকে সান ফ্রান্সিসকো অবধি সারা বিশ্বে বিক্ষোভে অংশ নিয়েছেন হাজার হাজার মানুষ৷ ইস্তাম্বুলে ইরানি কনস্যুলেটের সামনে এক নারী চুল কেটে প্রতিবাদ জানিয়েছেন৷
ছবি: YASIN AKGUL/AFP/Getty Images
প্রতীকী সমর্থন
গত ১৩ ডিসেম্বর বার্লিনের ব্রান্ডেনবুর্গ গেটের উপর আলো ফেলে কুর্দি ভাষায় লেখা হয় ‘নারী, জীবন, স্বাধীনতা!’৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের টাইম ম্যাগাজিন ইরানি নারীদের ‘হিরোস অব দ্য ইয়ার’ ঘোষণা দিয়েছে৷
ছবি: Markus Schreiber/AP/picture alliance
দুই বন্দিকে ফাঁসি
ইরানে সরকারবিরোধী প্রতিবাদ কর্মসূচিতে অংশ নেয়া দুই প্রতিবাদকারী ব়্যাপার মোহসিন শেখারি এবং মজিদরেজা রাহনাভার্দকে ইতোমধ্যে মৃত্যদণ্ড দেয়া হয়েছে৷ অন্তত ৩৮ জনকে কথিত ‘সৃষ্টিকর্তার বিরুদ্ধে শত্রুতার’ অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইরান৷ দেশটিতে শিশুদেরও মৃত্যুদণ্ড দেয়ার বিধান রয়েছে৷
ছবি: AFP/Getty Images
9 ছবি1 | 9
তবে স্বস্তির কথা হলো, যে রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়েছিল, তা ভয়াবহ নয়। যে মেয়েদের দেহে ওই রাসয়নিক মিলেছে, তাদের চিকিৎসা শুরু হয়েছে। তাদের সকলের অবস্থাই এখন স্থিতিশীল।
স্থানীয় গভর্নর, পার্লামেন্টে হেলথ কমিটির এক সদস্যও ঘটনার কথা স্বীকার করেছেন। বস্তুত, গত ডিসেম্বর থেকে একাজ শুরু হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। গত কয়েকদিনে বহু ছাত্রী অসুস্থ হয়ে পড়ে। কমের পার্শ্ববর্তী শহরে গত এক সপ্তাহে ৫০ জন ছাত্রীকে হাসপাতালে পাঠাতে হয়। কমেও বহু ছাত্রী অসুস্থ হয়ে পড়েছে।
ঘটনার কথা স্বীকার করলেও কারা এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত, তা স্পষ্ট করে জানানো হয়নি। তবে মেয়েদের স্কুল বন্ধ করতেই যে এই চক্রান্ত হয়েছে, তা মেনে নিয়েছেন দেশের মন্ত্রী।
গত কয়েকমাস ধরে তুমুল আন্দোলন চলছে ইরানে। জেলে এক নারীর মৃত্যুর পর থেকে আন্দোলন তীব্র হয়। হিজাব খুলে রাস্তায় প্রতিবাদে নামেন নারীরা। আন্দোলনকারীদের উপর নৃশংস অত্যাচার চালিয়েছে পুলিশ। তা সত্ত্বেও আন্দোলন দমন করা যায়নি। বহু নারীকে জেলে ভরা হয়েছে। গোটা বিশ্ব ইরানের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছে। তারই মধ্যে এই ঘটনা আন্দোলনকে আরো জোরদার করবে বলেই মনে করা হচ্ছে।