জার্মানির কিন্ডারগার্টেনের শিক্ষকদের জন্য তৈরি এক ক্ষুদ্র পুস্তিকা নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে৷ এতে উগ্র ডানপন্থি মনোভাব দেখানো শিশু এবং অভিভাবকদের মোকাবিলা করার উপায় জানানো হয়েছে৷
বিজ্ঞাপন
তবে ডানপন্থি গণমাধ্যম বিষয়টির সমালোচনায় মুখর হয়েছে৷ জার্মানির সবচেয়ে বড় পত্রিকা বিল্ড-এর বিরুদ্ধে উগ্র ডানপন্থিদের উস্কানি দেয়ার অভিযোগ উঠেছে৷ বর্ণবাদবিরোধী বেসরকারি সংগঠন ‘আমাদিও এন্টনিও ফাউন্ডেশন' (এএএস) কতৃক প্রকাশিত এক ক্ষুদ্র পুস্তিকাকে পত্রিকাটি ভুলভাবে উপস্থাপন করেছে বলে দাবি উঠেছে৷
পত্রিকাটি ক্ষুদ্র পুস্তিকা সম্পর্কে লিখেছে যে, এটির মাধ্যমে শিশুদেরকে তাদের বাবা-মায়ের প্রতি গোয়েন্দাগিরিতে উৎসাহিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে৷ তবে এএএস দাবি করেছে, শুধুমাত্র উগ্রডানপন্থি এক ব্লগে লেখালেখির পর বিল্ড এই বিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, যেখানে মূলত ডানপন্থিদের বক্তব্য তুলে ধরা হয়েছে৷ আর সেসব বক্তব্য খন্ডনের কোনো চেষ্টা করা হয়নি৷
শরণার্থী শিশুরা ঠিকমতো শিক্ষা পাচ্ছে তো?
জার্মান স্কুলগুলিতে শরণার্থীরা কি ঠিকমতো পড়াশোনার সুযোগ পাচ্ছে? শরণার্থীদের সমস্যাগুলো ধরতে পারছেন তো শিক্ষকেরা? সম্প্রতি এক সমীক্ষা এই প্রশ্ন তুলে দিয়েছে৷ শরণার্থীদের শিক্ষা নিয়ে নতুন করে চিন্তাভাবনাও শুরু হয়েছে৷
ছবি: picture alliance/dpa/AA/M. Abdullah
সমস্যার মূল
এই মুহূর্তে জার্মানির বিভিন্ন অঞ্চলের স্কুলে প্রায় ১ লক্ষ ৩০ হাজার শরণার্থী শিশু পড়াশোনা করে৷ কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, তাদের ঠিক মতো শেখাতে পারছেন তো শিক্ষকেরা? তাদের সমস্যাগুলো ধরা যাচ্ছে তো?
ছবি: picture alliance/dpa/M. Skolimowska
হিংসা, ভয়, গরিবি
জার্মানির আর পাঁচজন ছাত্রের মতো শরণার্থীরা নয়৷ নিজের দেশ থেকে তাদের পালিয়ে আসতে হয়েছে৷ তারা হিংসা, ভয়, গরিবির শিকার৷ তাদেরকে মূলস্রোতে আনতে গেলে শিক্ষার অন্য মডেল তৈরি করা দরকার৷
ছবি: picture alliance/dpa/Sputnik/I. Zarembo
ড্রপ আউট
সমীক্ষা বলছে, স্কুলের পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিতে না পেরে বহু শরণার্থী শিশুই মাঝপথে পড়াশোনা বন্ধ করে দিচ্ছে৷
স্পেশাল স্কুল
শরণার্থীদের জন্য বিভিন্ন অঞ্চলে স্পেশাল স্কুল তৈরি করা হয়েছে৷ কোনো কোনো সংগঠন কলেজ পড়ুয়াদের দিয়ে সেখানে ক্লাস নেওয়ার ব্যবস্থা করেছে৷ কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, ওই শিক্ষকেরা শরণার্থীদের সমস্যা ধরতে পারছেন তো?
ছবি: picture alliance/dpa/AA/M. Abdullah
শরণার্থী শিক্ষক
কোনো কোনো স্কুলে অবশ্য শরণার্থী শিক্ষকদেরই পড়ানোর কাজে নিয়োজিত করা হয়েছে৷ অনেকেই বিষয়টিকে ভালো মডেল বলে মনে করছেন৷ শরণার্থী শিক্ষকেরা শিশুদের সমস্যা অনেক সহজে বুঝতে পারেন৷ সব স্কুলেই এ ধরনের ব্যবস্থা করা যায় কিনা, তা নিয়ে ভাবনা চিন্তা চলছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/J. Macdougall
মূলস্রোতে ফেরানো
শরণার্থী শিশুদের জার্মানির মূলস্রোতের সংস্কৃতির সঙ্গে যুক্ত করা দরকার৷ কিন্তু তার জন্য অনেক সময় দেওয়া দরকার৷ শরণার্থী শিশুদের মন বোঝা দরকার প্রথমে৷ সেখানেই ঘাটতি থাকছে বলে অনেকের ধারণা৷
ছবি: S.Ponsford
সরাসরি কথাবার্তা
শরণার্থী ছাত্রদের সঙ্গে আলাদা আলাদা করে কথা বলা দরকার বলে মনে করছেন অনেকে৷ প্রত্যেকের সমস্যাগুলো আলাদা আলাদা করে বোঝা দরকার৷ তাদের বোঝাতে হবে, আর ভয়ের কোনো কারণ নেই৷ তারা নিরাপদ৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/L. Pitarakis
7 ছবি1 | 7
পুস্তিকাটি তৈরিতে অর্ধেক অর্থায়ন করেছে জার্মানির পরিবার মন্ত্রণালয়৷ এতে একজন কিন্ডারগার্টেন শিক্ষক যদি উগ্র ডানপন্থি কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে পড়েন, কিংবা কোনো শিক্ষার্থী যদি কিন্ডারগার্টেনে স্বস্তিকা আঁকে এবং পরিবারে এটাকে ইতিবাচকভাবে দেখা হয়, তাহলে করণীয় কী তার পরামর্শ দেয়া হয়েছে৷ পুস্তিকাটিতে কয়েকটি উদাহরণও দেয়া হয়েছে৷
উগ্র ডানপন্থি ব্লগে এবং বিল্ড পত্রিকায় লেখালেখির পর এএএস নানা মহল থেকে হুমকি পেয়েছে বলে জানিয়েছে৷ প্রতিষ্ঠানটির মুখপাত্র সিমোনে রাফায়েল এই বিষয়ে বলেন, ‘‘আমরা সেই প্রতিবেদন প্রকাশের প্রথম ৪৮ ঘণ্টায় ৪৫০টি ফোনকল পেয়েছি, যেগুলোতে আমাদের উপর এমনকি সন্ত্রাসী হামলা চালানোর মতোও হুমকি দেয়া হয়েছে৷''
তবে বিতর্ক হলেও শিক্ষকরা পুস্তিকাটিকে ইতিবাচকভাবে নিয়েছেন বলে জানিয়েছে এএএস৷ শিশুদের শিক্ষা প্রদানে এটি সহায়ক হবে বলেও মন্তব্য করেছেন শিক্ষকরা৷
ডয়চে ভেলের পক্ষ থেকে এই বিষয়ে বিল্ড পত্রিকার সঙ্গে যোগাযোগ করে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি৷
বেন নাইট/এআই
সন্তান লালন-পালনে অনেক ক্ষেত্রে পুরনো ‘নিয়মই’ ভালো
ছোটরা আর আগের মতো বড়দের শ্রদ্ধা করে না– এরকম কথা আজকাল প্রায়ই শোনা যায়৷ জার্মানির কিন্ডার গার্টেন বা শিশুদের স্কুলের শিক্ষকরাও শিশুদের আচরণে খুব সন্তুষ্ট নন৷ কেন এমনটা হচ্ছে এবং কিভাবে এর সমাধান সম্ভব?
ছবি: Fotolia/Nicole Effinger
কিন্ডার গার্টেন
কিন্ডার গার্টেনে তিন বছরের শিশুদের যা করতে বলা হয় তাই করার কথা, কিন্তু না, ওরা নিজের ইচ্ছা মতোই খেলছে, অনেক ক্ষেত্রে শিক্ষক যা বলছেন শিশুরা ঠিক তার উল্টোটা করছে৷ অথচ শিক্ষক তেমন কিছুই বলতে পারছেন না৷ এরকম ঘটনা প্রায়ই ঘটছে বলে জানিয়েছেন কিন্ডার গার্টেনের একজন শিক্ষক৷
ছবি: Fotolia/photophonie
প্রাইমারি স্কুল
প্রাইমারি স্কুলেও প্রায় একই অবস্থা৷ শিক্ষকের কথা শুনতে পাচ্ছে না এমন ভাব আজকাল অনেক শিশুর মধ্যেই লক্ষ্য করা যায়৷
ছবি: picture alliance/dpa/A. Weigel
সমীক্ষা যা বলছে
শিক্ষক এবং শিশু লালন-পালন বিষয়ক বিশেষজ্ঞদের নিয়ে গবেষণা প্রতিষ্ঠান ফোর্সা-র করা এক সমীক্ষায় জানা যায়, আজকের শিশুদের মধ্যে অমনোযোগিতা, ‘অভদ্র’ আচরণ এবং সামাজিকভাবে মিশতে অক্ষমতা লক্ষ্য করা যায়৷
ছবি: Fotolia/somenski
অনেক মা-বাবার যা ধারণা
অনেক বাড়িতেই সেরকম কোনো নিয়ম কানুন নেই৷ কারণ, তাঁরা মনে করেন, বাড়িতে বেশি শাসন করলে শিশুরা মুক্তভাবে বড় হতে পারবে না, কিংবা ‘শাসন’ শিশুদের স্বাধীন চিন্তার মানুষ হওয়া কঠিন করবে৷
সন্তানকে আগের দিনের মতো শাসন করা উচিত, সন্তানের সব ইচ্ছা মেনে নেওয়া সন্তান মানুষ করার সঠিক পন্থা নয়–এমনটি অনেক শিশুও মনে করে৷ সমীক্ষাটি করা হয়েছে আট থেকে ১৫ বছর বয়সি ছেলে-মেয়েদের নিয়ে৷ সেখানে অনেক শিশুই বলেছে এ কথা৷
ছবি: imago/photothek/M. Gottschalk
‘না’ কে মেনে নেয়া
এ বিষয়ে পরিবার বিষয়ক জার্মান এক বিশেষজ্ঞ বেশ স্পষ্ট করেই বলেছেন, বড়দের প্রতি সম্মান দেখানো এবং তাঁদের শ্রদ্ধা করা শৈশব থেকেই শিখতে হয়৷ শিখতে হয় শাসন মেনে নেয়া৷ তাছাড়া শাসন করতে গিয়ে যখন ‘না’ করা হয়, সেই ‘না’ মেনে নেয়াও শিখতে হয়৷ যদিও এই ‘না’ করার কারণে মা, বাবা অনেক সময় সন্তানের কাছে সাময়িকভাবে অপ্রিয়ও হতে পারেন৷
ছবি: Imago/E. Umdorf
মা-বাবাকেই উদ্যোগী হতে হবে
শিশুরা হোমওয়ার্ক থেকে শুরু করে সারাদিন আর কী কী করবে তার একটা তালিকা করে দেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ৷ এবং রাতের খাবার একসাথে খাওয়া উচিত, যাতে সারাদিন কে কী করেছে তা নিয়ে আলোচনা করা যায়৷ নিয়ম তৈরি করে দেওয়া মানে নিজের সন্তানকে নিরাপত্তা, নিশ্চয়তা দেওয়া৷
ছবি: DW/G. Hamann
ক্লিয়ার রুলস
নিয়মের মধ্যে থেকেও মানুষ মুক্তচিন্তার, উদার মানসিকতার হতে পারে৷ বাড়িতে কিছু নিয়ম-কানুন আর শাসন থাকলে সন্তানরা যে কোনো জায়গায় সহজে খাপ খাওয়াতে পারে৷ যাদের বাড়িতে নিয়মের কোনো বালাই নেই, তাদের সন্তানদের কর্মজীবনেও নিয়ম মেনে চলতে অসুবিধা হয়৷ বিশেষজ্ঞদের মতে, একজন সুস্থ মানুষ হতে শিশুদের প্রয়োজন ‘ক্লিয়ার রুলস’৷