রাজধানীর মতিঝিল আইডিয়াল স্কুলের নবম শ্রেণির দুই শিক্ষার্থীকে টিকা দেওয়ার মধ্য দিয়ে করোনাভাইরাসের টিকাদান কর্মসূচির এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হলো বাংলাদেশে৷
বিজ্ঞাপন
সোমবার সকালে ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সি শিক্ষার্থীদের এই টিকাদান কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক৷
ফাইজারের টিকার প্রথম ডোজ পায় আইডিয়াল স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্রী মাহজাবিন তমা এবং একই ক্লাসের তাহসান হোসেন৷ আপাতত কিশোর শিক্ষার্থীদের ফাইজারের টিকাই দেওয়া হবে৷ গত ১৪ অক্টোবর মানিকগঞ্জের কয়েকটি স্কুলের ১২০ জন শিক্ষার্থীকে পরীক্ষামূলকভাবে এই টিকার প্রথম ডোজ দেওয়া হয়৷ এবং তাদের কারও কোনো সমস্যা না হওয়ায় এখন সারা দেশে স্কুল শিক্ষার্থীদের টিকার আওতায় আনার কাজ শুরু হল৷
মঙ্গলবার থেকে ঢাকার আটটি কেন্দ্রে কিশোরদের টিকাদান চলবে বলে জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক৷ প্রতিটি কেন্দ্রে ৫ হাজার করে দৈনিক ৪০ হাজার শিক্ষার্থীকে করোনাভাইরাসের টিকা দেওয়া হবে৷ তিনি বলেন, ‘‘এরপর আমরা ঢাকার বাইরে ২১টি জেলায় টিকাদান শুরু করব৷ পর্যায়ক্রমে উপজেলাতেও শিশুদের টিকা দেওয়ার চিন্তা আছে৷ বাংলাদেশের একটি শিশুও টিকার বাইরে থাকবে না৷’’
ঢাকায় শিক্ষার্থীদের করোনার টিকা দেওয়া শুরু
স্কুল-কলেজের ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সি শিক্ষার্থীদের করোনার বায়োনটেক-ফাইজার টিকা দেয়া শুরু হয়েছে৷ সোমবার ঢাকার আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে এই কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক৷
ছবি: Mortuza Rashed
এক কেন্দ্র দিয়ে শুরু
উদ্বোধনী দিনে শুধুমাত্র ঢাকার মতিঝিলের আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে টিকা দেয়া হয়েছে৷ আগামীকাল মঙ্গলবার থেকে ঢাকার বাকি সাত কেন্দ্রে টিকাদান কার্যক্রম চলবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা৷ কেন্দ্রগুলো হচ্ছে হার্ডকো স্কুল, চিটাগাং গ্রামার স্কুল, সাউথ পয়েন্ট স্কুল, সাউথ ব্রিজ স্কুল, স্কলাস্টিকা স্কুল, ঢাকা কমার্স কলেজ এবং কাকলী স্কুল৷
ছবি: Mortuza Rashed
আগ্রহ সহকারেই টিকা নিচ্ছে শিক্ষার্থীরা
আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী আনিকা আজাদ অর্চি বলেন, ‘‘টিকা নিতে পেরে আমাদের বেশ ভালো লাগছে৷ তেমন কোনো ভয় কাজ করছে না মনে৷ আমরা যারা আজকে এসেছি টিকা নিতে, সবাই নিজ আগ্রহেই এসেছি৷’’
ছবি: Mortuza Rashed
মার্চের মধ্যে শতভাগ মানুষকে টিকা দেওয়ার প্রত্যয়
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ বি এম খুরশীদ আলম উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জানান, ‘‘এখন পর্যন্ত দেশের ২৫ ভাগ মানুষ কমপক্ষে এক ডোজ টিকা পেয়েছেন৷ আমাদের লক্ষ্য মার্চের মধ্যে দেশের শতভাগ মানুষকে টিকা কার্যক্রমের আওতায় আনা৷ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দিক নির্দেশনায় আমরা সেভাবেই কাজ করে চলেছি৷’’
ছবি: Mortuza Rashed
সন্তানদের ভালোর জন্যই এই টিকা
আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে নবম শ্রেণিতে পড়ুয়া মেয়েকে নিয়ে এসেছেন মা পাঁপড়ি খান৷ তিনি টিকাদানের উদ্যেগের ব্যাপারে বলেন, ‘‘আমি মনে করি এটি অবশ্যই সরকারের একটি ভালো পদক্ষেপ৷ সব ধরণের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যেহেতু খোলা হচ্ছে, তাই টিকা দেওয়াটা আমাদের সন্তানদের জন্য অবশ্যই ভালো কিছু আনবে বলেই আমরা আশা রাখছি৷’’
ছবি: Mortuza Rashed
শুধু নিবন্ধনকৃতরাই টিকা পাবেন
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের টিকা কর্মসূচির পরিচালক ডাঃ শামসুল হক জানান, শুধুমাত্র সুরক্ষা অ্যাপের মাধ্যমে নিবন্ধনকৃত শিক্ষার্থীরাই টিকা নিতে পারবেন৷ মোবাইলে তারিখ এবং কেন্দ্র সংক্রান্ত এসএমএস প্রাপ্তি সাপেক্ষে টিকাকেন্দ্রে আসতে হবে৷
ছবি: Mortuza Rashed
সারাদেশে ২২ জেলায় প্রস্তুতি
ডাঃ শামসুল হক বলেন, আপাতত দেশের ২২টি জেলায় শিক্ষার্থীদের টিকা দেওয়ার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে৷ পর্যায়ক্রমে সারাদেশেই এ কার্যক্রম পরিচালিত হবে৷ যেহেতু বায়োনটেক-ফাইজারের টিকা সংরক্ষণের জন্য বিশেষ ফ্রিজার মেশিন লাগে, তাই সেগুলো ব্যবস্থা করতে আমাদের কিছুটা সময় লাগবে৷
ছবি: Mortuza Rashed
দেওয়া হচ্ছে বায়োনটেক-ফাইজারের টিকা
শিক্ষার্থীদের বায়োনটেক-ফাইজারের টিকা দেওয়া হচ্ছে৷ বর্তমানে দেশে প্রায় ৭২ লাখ টিকা মজুদ আছে এবং নভেম্বরে আরও ৫০ লাখ ডোজ টিকা আসবে৷
ছবি: Mortuza Rashed
টিকা পরবর্তী পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা
টিকা নেওয়ার পর অসুস্থ অনুভব করলে সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসার দেওয়ার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে৷ এজন্য কুর্মিটোলা হাসপাতাল, সোহরাওয়ার্দি হাসপাতাল, কুয়েত মৈত্রী হাসপাতাল, কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতাল এবং ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন প্রস্তুত রাখা হয়েছে৷
ছবি: Mortuza Rashed
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি কৃতজ্ঞতা
কোভ্যাক্সের আওতায় টিকা প্রাপ্তির জন্য অনুষ্ঠানে উপস্থিত মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর মিলারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক এবং শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি৷ তারা বলেন, মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সদিচ্ছা এবং আন্তরিকতা ছাড়া এ টিকা পাওয়া সহজ হতো না৷
ছবি: Mortuza Rashed
অন্য প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরাও টিকা নিতে পারবে
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, ‘‘ঢাকার কেন্দ্রগুলোতে প্রতিদিন টিকা দেওয়ার সক্ষমতা রয়েছে পাঁচ হাজার৷ সে হিসেবে আমরা আটটি কেন্দ্রে ৪০ হাজার ডোজ টিকা দিতে পারবো৷ কেন্দ্রগুলোতে সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছাড়াও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা টিকা দিতে পারবেন৷’’
ছবি: Mortuza Rashed
10 ছবি1 | 10
দেশের ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সি শিক্ষার্থীদের টিকা দিতে প্রায় ৩ কোটি ডোজ টিকা লাগবে এবং ফাইজারের ৮০ লাখ ডোজের বেশি টিকা রয়েছে দেশে৷ আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্ম কোভ্যাক্স বাংলাদেশকে আরও টিকা দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে বলে জানান স্বাস্থ্য মন্ত্রী৷
স্বাস্থ্যমন্ত্রী শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, ‘‘তোমরা সবাই টিকা পাবে, টিকা নেওয়ার পর স্কুলে আস৷ কিন্তু স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে নইলে করেনাভাইরাস সংক্রমণ আবার আসবে৷’’
দীপু মনি বলেন, ‘‘আমরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলেছি, কিন্তু সীমিত আকারে৷ কিন্তু টিকাদান কার্যক্রম যত সফল হবে তত দ্রুত স্কুলে পাঠদান কার্যক্রম চালু করতে পারব৷ আমরা আশা করছি, নতুন বছরের শুরু পর্যন্ত আমরা টিকাদান কার্যক্রমে অনেক দূর এগিয়ে যেতে পারব৷ শিক্ষা কার্যক্রম চালু করতে পারব৷’’
টিকা পেতে স্কুল শিক্ষার্থীদের সুরক্ষা অ্যাপে নিবন্ধন করে মোবাইল এসএমএসের মাধ্যমে টিকা নেওয়ার তারিখ ও কেন্দ্রের নাম জানানো হবে৷এবং টিকা নেওয়ার সময় টিকা কার্ড প্রিন্ট করে সাথে নিয়ে যেতে হবে৷
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের সহায়তায় ঢাকায় আটটি কেন্দ্র নির্ধারণ করা হয়েছে ৷ সেখান থেকে সংশ্লিষ্ট এলাকার অন্য সব স্কুলের শিক্ষার্থীদেরও টিকা দেওয়া হবে ৷ সেগুলো বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার হার্ডকো স্কুল, মালিবাগের সাউথ পয়েন্ট স্কুল, গুলশানের চিটাগাং গ্রামার স্কুল, মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল ও কলেজ, মিরপুরের ঢাকা কমার্স কলেজ, ধানমণ্ডির কাকলী স্কুল, উত্তরার সাউথ ব্রিজ স্কুল এবং মিরপুরের স্কলাস্টিকা স্কুল৷
টিকা নেওয়ার পর কোনো শিশু অসুস্থ হয়ে পড়লে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতাল, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল, সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল, কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে৷
এনএস/কেএম (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)
দেড় বছর পর মুখরিত শিক্ষাঙ্গন
করোনা মহামারির কারণে প্রায় ১৭ মাস বন্ধ থাকার পর খুলে দেওয়া হলো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান৷ এতদিন পর শ্রেণীকক্ষে প্রবেশ করে আনন্দ-উচ্ছ্বাসে ভাসছে শিক্ষার্থীরা৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
পূর্ব প্রস্তুতি
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হবে এমন সিদ্ধান্তের পর স্কুল-কলেজগুলো নিজেদের প্রতিষ্ঠান, প্রাঙ্গন পরিষ্কারে ব্যস্ত হয়ে পড়ে৷ ঢাকার ধানমন্ডি গভর্ণমেন্ট বয়েজ হাই স্কুলে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা শ্রেণীকক্ষসহ বিদ্যালয়ের ঝোপঝাড় পরিষ্কার করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
সেজেছে বর্ণিল সাজে
দীর্ঘ ১৭ মাস পর শিক্ষার্থীদের শ্রেণীকক্ষে স্বাগত জানানোর জন্য ঢাকার ভিকারুন্নিসা নূন স্কুল, উদয়ন উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, অগ্রণী স্কুল ও কলেজসহ একাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গিয়ে দেখা গেল, শিক্ষার্থীদের বরণ করে নিতে তারা প্রস্তুত৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
ফুল দিয়ে অভ্যর্থনা
ঢাকার একাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ঘুরে দেখা গেল, কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের ফুল, চকলেট দিয়ে স্বাগত জানাচ্ছে৷ ঢাকার উদয়ন উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা গেল, সেখানে ফুল দিয়ে বরণের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের উজ্জীবিত করতে নাচ-গানের আয়োজনও করা হয়েছে৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রবেশ
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকে যে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হলো স্বাস্থ্যবিধি মেনে স্কুল-কলেজে প্রবেশ৷ মাস্ক পড়া নিশ্চিত করা, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা এবং জীবাণুনাশক স্প্রের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের হাত পরিস্কারের বিষয়টি সর্বাধিক গুরুত্বের সঙ্গে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে৷ বিভিন্ন স্কুল ঘরে দেখা গেল শিক্ষার্থীরা হাত পরিস্কার ও মুখে মাস্ক পরে বিদ্যালয়ে প্রবেশ করছে৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
আসনসংখ্যার অর্ধেক শিক্ষার্থী
ঢাকার ভিকারুন্নিসা নূন স্কুল, উদয়ন উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, অগ্রণী স্কুল ও কলেজসহ একাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সেখানে একাধিক গ্রুপে ভাগ করে প্রতিটি শ্রেণীকক্ষে আসনসংখ্যার অর্ধেক শিক্ষার্থীকে পাঠদান করা হচ্ছে৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পাঠদানের সূচি
সপ্তাহে কোন শ্রেণির ক্লাস কতদিন হবে এ বিষয়ে একাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের সাথে কথা বলে জানা যায়, পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থী এবং আগামী ও চলতি বছর যারা এসএসসি এবং এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবেন, তাঁরা সপ্তাহে ৫ দিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন৷ বাকি শিক্ষার্থীরা সপ্তাহে ১ দিন আসবেন৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
‘শ্রেণিকক্ষের বিকল্প নেই’
ঢাকার উদয়ন উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ইংরেজি ভার্সনের শিক্ষিকা খন্দকার নাসরিন রহমান বলেন, ‘‘করোনার শুরু থেকেই আমরা অনলাইনে ক্লাস নিয়ে আসছি৷ অনলাইনে সবই আমরা করেছি, কিন্তু শিক্ষার্থীদের আগ্রহের মূল জায়গাটা আসলে শ্রেণীকক্ষেই৷ আজকে স্কুলে আসবে ভেবে তাঁরা সবাই আনন্দিত৷ আর অনলাইনে আসলে ইচ্ছা থাকলেও নিজের সবটুকু ঢেলে পড়ানো সম্ভব হয় না৷ শ্রেণিকক্ষের আসলে কোনো বিকল্প নেই৷’’
ছবি: Mortuza Rashed/DW
‘অনলাইন ক্লাসে তেমন আগ্রহ ছিল না’
ঢাকার উদয়ন উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের উচ্চমাধ্যমিক দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সাদিয়া আক্তার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার ব্যাপারে অনুভূতি জানতে চাইলে বলেন, ‘‘অনেকদিন পর কলেজে এসেছি, অনেক ভালো লাগছে৷ আমরা চাই করোনা পরিস্থিতি ভালো হোক, আমরা যেন নিয়মিত ক্লাস করতে পারি৷ এতদিন অনলাইনে ক্লাস করলেও তেমন আগ্রহ পেতাম না৷ কিন্তু এখন শ্রেনিকক্ষে বসে ক্লাস করছি, সবকিছু নতুন উদ্যমে শুরু করা যাবে৷’’
ছবি: Mortuza Rashed/DW
অভিবাবকদের মিশ্র প্রতিক্রিয়া
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার প্রথম দিনে পঞ্চম শ্রেণীতে পড়ুয়া মেয়েকে নিয়ে উদয়ন উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে এসেছেন সাজেদা আক্তার সুরমা৷ তিনি বলেন, ‘‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলায় মিশ্র অনুভূতি হচ্ছে৷ একবার মনে হচ্ছে এটা সঠিক সিদ্ধান্ত ছিল, আবার মনে হচ্ছে করোনা আর ডেঙ্গুর মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান না খুলে দিলেও পারতো৷’’
ছবি: Mortuza Rashed/DW
পরিস্থিতি খারাপ হলে আবার বন্ধ
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার ব্যাপারে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, ‘‘শিক্ষার্থীদের সামগ্রিক ক্ষতির কথা বিবেচনা করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হলেও করোনা পরিস্থিতি খারাপ হলে ফের সেগুলো বন্ধ করে দেওয়ার সুপারিশ করা হবে৷’’
ছবি: Mortuza Rashed/DW
আইসোলেশন সেন্টার
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার ব্যাপারে যে সকল নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে তার মধ্যে অন্যতম শর্ত হলো আইসোলেশন সেন্টার প্রস্তুত রাখা৷ কোনো শিক্ষার্থী যদি ক্লাস চলাকালীন অসুস্থ হয়ে পড়ে, সেক্ষেত্রে তাঁকে যেন দ্রুত অক্সিজেনসহ প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া যায় প্রত্যেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে সে প্রস্তুতি রাখতে হবে৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
খুশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরাও
ভিকারুন্নিসা স্কুল এন্ড কলেজের পাশে ভ্রাম্যমাণ স্টেশনারির দোকান চালান এমন একাধিক বিক্রেতার সাথে কথা বলে জানা গেছে, এত দীর্ঘ সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় তাঁদের আয়-রোজগার বন্ধ ছিল৷ যেহেতু অন্য কোনো ব্যবসার পুঁজি ছিল না, তাই সংসার চালানো দায় হয়ে পড়েছিল৷ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ায় তারা খুশি৷ করোনার জন্য আর যেন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করা না হয় সে বিষয়ে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তারা৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
অনেকেই ঝরে পড়েছে!
সরেজমিনে অনেক শিক্ষার্থীর সাথে কথা বলেই জানা গেছে যে, করোনার কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এতদিন বন্ধ থাকায় তাঁরা পরিবারকে আর্থিক সহায়তা করতে কাজে যোগ দিয়েছে এবং হয়তো কখনোই তাঁদের পক্ষে আর পড়াশোনা চালানো সম্ভব হবে না৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এলাকায় তীব্র যানজট
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার দিনে ঐসব এলাকায় তীব্র যানজট দেখা যায়৷ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুলার রোড এলাকায় কর্তব্যরত এক ট্রাফিক সার্জেন্ট নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘‘আজকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা উপলক্ষে সব সড়কেই যানজট নিয়ন্ত্রণে রাখতে পুলিশের তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে৷ কিন্তু তবুও আমরা যানজট কমাতে হিমশিম খাচ্ছি৷ মানুষের স্বেচ্ছাচারিতা এবং আইন না মানার প্রবণতা দিন দিন বেড়েই চলেছে বলে সড়কে এই অবস্থা৷’’