জার্মান চ্যান্সেলর একটি হাইস্কুলে গিয়ে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন প্রশ্নের মুখোমুখি হয়েছেন৷ এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ব্রেক্সিট, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ‘ফ্রাইডেস ফর ফিউচার’৷ কিন্তু আলোচিত প্রশ্ন ছিল কপিরাইট আইনের আর্টিকেল ১৩ নিয়ে৷
বিজ্ঞাপন
বার্লিনের টোমাস মান হাইস্কুলে মঙ্গলবার সকালটা ছিল উত্তেজনায় ভরপুর৷ চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলের স্কুল পরিদর্শন নিয়ে এত উত্তেজনা৷ এই একটি দিনের জন্য স্কুল থেকে মোবাইল ফোনের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হয়েছিল, যাতে শিক্ষার্থীরা ম্যার্কেলের সাথে সেলফি তুলতে পারে৷
আঙ্গেলা ম্যার্কেল: এক বিজয়ীর নাম
রাজনীতির মাঠে প্রতিদ্বন্দ্বীদের সুকৌশলে কাবু করা বা হটিয়ে দেয়ার কাজটি খুব ভালো পারতেন তিনি৷ প্রতিপক্ষ দলের লোকেরা তো আছেই, নিজ দলেরও প্রতিদ্বন্দ্বীর ক্ষেত্রে এই কৌশল অবলম্বন করতেন আঙ্গেলা ম্যার্কেল৷
ছবি: picture-alliance/dpa/ANP/R. De Waal
কোলকেই পেছনে ফেলে
সিডিইউ নেতা সাবেক চ্যান্সেলর হেলমুট কোল হাতে ধরে ম্যার্কেলকে মন্ত্রিসভায় পদ দেন, ম্যার্কেলের উত্থানে ভুমিকা রাখেন৷ ১৯৯৮ সালে চ্যান্সেলর পদ হারানোর পর দলের তহবিল নিয়ে একটি ঘটনা দু’জনকে মুখোমুখি দাঁড় করায়৷ তখন ম্যার্কেল সাহস করে বলেন যে, কোলকে ছাড়াই সিডিইউ’র এগিয়ে যাওয়া উচিত৷ দল ম্যার্কেলের পক্ষেই দাঁড়ায়৷ কোলকে ছাড়াই এগিয়ে যায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Altwein
হটে গেলেন গ্যুন্টার হ্যারমান ও্যটিঙার
রাজনীতিতে পথ থেকে সরিয়ে দেয়া মানে কিন্তু সবসময় জোর খাটানো নয়৷ যেমনটি তিনি করেছেন বাডেন-ভুর্টেমব্যার্গ রাজ্যের সিডিইউ নেতা গুন্টার ওয়েটিঙ্গারের সঙ্গে৷ দলে তাঁর এই সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বীকে ২০১০ সালেই তিনি ইউরোপিয়ান কমিশনে বড় চাকরি দিয়ে পাঠিয়ে দেন, যদিও ইউরোপের রাজনীতিতে ওয়েটিঙ্গারের কোনো পূর্ব অভিজ্ঞতা ছিল না৷
ছবি: picture-alliance/dpa/P. Seeger
হারিয়ে গেলেন রোল্যান্ড কখ
দালাই লামার সঙ্গে বন্ধুত্বের জন্য কখ অনেকের কাছেই পরিচিত ছিলেন৷ তিনি সরকারের দ্বৈত নাগরিকত্বের পরিকল্পনার বিরুদ্ধেও চালিয়েছেন প্রচারণা৷ হেসে রাজ্যে দলের ম্যার্কেলবিরোধী অংশের একজন বলেই তাঁকে গণ্য করা হতো৷ কখ এ-ও ভেবেছিলেন যে, বার্লিন থেকে চাকরির জন্য তাঁকে ডাকা হবে৷ তাঁর কোনো ভাবনাই হালে পানি পায়নি৷ বরং নিজেই মিলিয়ে গিয়েছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ক্রিস্টিয়ান ভুল্ফ – দুর্ভাগা প্রেসিডেন্ট
লোয়ার স্যাক্সনি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন ক্রিস্টিয়ান ভুল্ফ৷ জনপ্রিয়তার কারণে ২০০৫ সালের নির্বাচনে সিডিইউ থেকে চ্যান্সেলর পদের জন্য অন্যতম প্রতিযোগী ছিলেন৷ কিন্তু পরে আঙ্গেলা ম্যার্কেলকে সমর্থন দেন৷ অবশ্য প্রেসিডেন্ট পদের প্রশ্ন এলে তিনি ম্যার্কেলের প্রথম পছন্দ ছিলেন না৷ হর্স্ট ক্যোলারের হঠাৎ পদত্যাগের পর তিনি নির্বাচিত হন৷ অবশ্য পরে দুর্নীতির দায়ে সেই চাকরিও হারাতে হয়৷ মামলাও খেতে হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ফ্রিডরিশ ম্যার্ৎস – ক্ষমতার লড়াইয়ে পরাজয়
সাবেক ইউরোপীয় ও জার্মান সংসদ সদস্য ফ্রিডরিশ ২০০০ থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত সিডিইউ/সিএসইউ পার্লামেন্টারি গ্রুপের চেয়ারম্যান ছিলেন৷ কিন্তু সিডিইউ নেতা ম্যার্কেল তাঁকে হটিয়ে চেয়ারম্যান হন, যা তিন বছর পর চ্যান্সেলর পদের জন্য লড়তে তাঁকে সহায়তা করে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/U. Baumgarten
5 ছবি1 | 5
জলবায়ু সংক্রান্ত প্রশ্ন
প্রশ্ন-উত্তর পর্বে শিক্ষার্থীদের হাতে ছিল আধাঘণ্টা সময়৷ কিন্তু এই স্বল্প সময়ে তারা ইউরোপীয় ইউনিয়নের ভবিষ্যৎ, সামাজিক বৈষম্য, স্কুলের ডিজিটাইজেশনসহ নানা বিষয়ে প্রশ্ন করে৷ তবে জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে ম্যার্কেল সরকারের নিষ্ক্রিয়তার বিরুদ্ধে ‘ফ্রাইডেস ফর ফিউচার' এর অংশ হিসেবে জার্মানির হাজারো তরুণ-তরুণীর ধর্মঘটের কথা মাথায় রেখে এ বিষয়ক প্রশ্নের জন্য তৈরি হয়েই এসেছিলেন ম্যার্কেল৷ বাস্তুসংস্থানের ভবিষ্যত নিয়ে প্রশ্নের উত্তর দেয়ার ফাঁকে ম্যার্কেল জানতে চান, ঐ বিক্ষোভে কারা অংশ নিয়েছিল৷ অডিটোরিয়ামে উপস্থিত ২০০'র ও বেশি শিক্ষার্থীদের মধ্যে হাত তুলেছিল ১০ জনেরও কম৷ এ সময় ম্যার্কেল বলেন, ‘‘একজন রাজনীতিবিদ হিসেবে আমি মনে করি এই আন্দোলন খুব গুরুত্বপূর্ণ৷ ভালো কিছু করার জন্য আমাদের মধ্যে যে সচেতনতা এটা তারই প্রতীক৷''
কঠিন প্রশ্নের মুখোমুখি
কঠিন প্রশ্নের মুখোমুখি হলে কীভাবে তা সামলে দিতে হয়, তা ম্যার্কেল ভালোই জানেন৷ ব্যবসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর যেমন দিয়েছেন, তেমনি পরিবেশ সম্পর্কিত প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘‘একদিকে আমরা দেখছি মানুষের চাকরি হারানোর ভয় রয়েছে, আবার এমন মানুষ আছে, যারা জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে চিন্তিত৷ আমাদের তাই সবার কথা মাথায় রেখে কাজ করতে হবে৷''
ব্যবসায় যেসব শিক্ষার্থীর আগ্রহ রয়েছে, তাদের জামার্নির একমাত্র অবশিষ্ট বাদামি কয়লা খনির এলাকা লাওজিৎস সফরের পরামর্শ দিলেন ম্যার্কেল৷ এই খনিটি ২০৩৮ সালে বন্ধ করা হবে৷ তিনি বলেন, ‘‘ঐ এলাকার প্রতিটি মানুষ চাকরি হারানোর আতঙ্কে রয়েছে৷ আমাদের তাদের কথাও মাথায় রাখতে হবে৷''
তবে ব্রেক্সিট নিয়ে বেশি মাথা ঘামাননি তিনি৷ ব্রেক্সিটের কারণে একজন শিক্ষার্থী তার স্কুল শেষে উচ্চশিক্ষার জন্য যুক্তরাজ্যে যাওয়ার পরিকল্পনা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেন৷ এ বিষয়ে ম্যার্কেল বলেন, ‘‘আমরা দেখতে পাচ্ছি ব্রিটেনে ব্রেক্সিট খুব সহজ ব্যাপার নয়৷ আশা করবো খুব দ্রুত এর সমাধান হবে৷ তবে কিছু অনিশ্চয়তার জন্য আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে৷ যুক্তরাজ্যে উচ্চশিক্ষার জন্য আমরা নিশ্চয়ই কোনো সমাধান বের করতে সক্ষম হব৷''
জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার ‘ভাসমান’ যুদ্ধ
বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের পিরোজপুর জেলার বিভিন্ন এলাকায় আবাদি জমি বছরে ছয় মাসেরও বেশি সময় পানির নীচে তলিয়ে থাকে৷ জলবায়ু পরিবর্তনকে মোকাবিলা করে বেঁচে থাকার গল্প শুনুন তাদের মুখেই৷
ছবি: DW/M. Mostafigur Rahman
শৈশব থেকেই ভাসমান চাষ করেন সানোয়ার মিয়া
পিরোজপুর জেলার বৈঠাকাটা ইউনিয়নের সানোয়ার মিয়ার বয়স ৪৩ বছর৷ শৈশব থেকেই বাবার হাত ধরে শিখেছেন ভাসমান পদ্ধতিতে চাষাবাদ৷ পাঁচ হাজার টাকায় এক খণ্ড জমি দুই বছরের জন্য লিজ নিয়ে তিনি বিভিন্ন ধরনের সবজির চারা উৎপাদন করছেন৷ সব খরচ বাদ দিয়ে যা থাকে তাতে সংসার চলে যায় কোনোরকমে৷
ছবি: DW/M. Mostafigur Rahman.
মৌসুমে পাঁচবার চারা
বাবুল হাওলাদার যে যায়গাটিতে ভাসমান পদ্ধতিতে চাষাবাদ করেন, সেটি তাঁর নিজেরই৷ শুকনো মৌসুমে মাত্র একবার এ জমিতে ধান চাষ করতে পারলেও ডুবন্ত জমিতে ভাসমান পদ্ধতিতে তিনি কমপক্ষে পাঁচ বার চারা উৎপাদন করতে পারেন৷ এতে তাঁর লাভও ভালো হয়৷
ছবি: DW/M. Mostafigur Rahman.
স্বামীকে সহায়তা করেন আকলিমা
আকলিমা বেগমের স্বামী ভাসমান পদ্ধতিতে গাছের চারা ও সবজি চাষাবাদ করেন জলভূমিতে৷ স্বামীর কৃষিকাজে সবসময় সহায়তা করেন তিনি৷ বীজ বপন থেকে চারা গজানো পর্যন্ত যতরকমের পরিচর্যা, তার সবই তিনি করে থাকেন বাড়ির আঙ্গিনায় বসে৷ ভাসমান পদ্ধতিতে চাষাবাদে, চারা গজানোর কাজটি বাড়িতেই করতে হয়৷
ছবি: DW/M. Mostafigur Rahman.
বীজ বপন করেই চলে সংসার
আঞ্জু আরা বেগম অন্যের জমির জন্য বীজ বপনের কাজ করেন৷ কচুরিপানা ও ঘাস দিয়ে একটি গোলাকার বল তৈরি করে তার ভেতরে বীজ বপন করতে হয়৷ এক হাজার বীজ বপনের জন্য তিনি পারিশ্রমিক পান দেড়শ টাকা৷ দিনে সর্বোচ্চ দেড় হাজার পর্যন্ত বীজ বপন করতে পারেন তিনি৷
ছবি: DW/M. Mostafigur Rahman.
ভাসমান চাষাবাদ সহজ
ডুবে থাকা জমিতে ভাসমান পদ্ধতিতে চাষাবাদই সহজ মনে হয় বৈঠাকাটা এলাকার খায়রুল ইসলামের কাছে৷ ভাসমান পদ্ধতিতে তিনি বিভিন্ন রকম লতা-জাতীয় সবজি চাষ করেন৷
ছবি: DW/M. Mostafigur Rahman.
কচুরিপানা বিক্রি
হারুনুর রশীদের মতো অনেকেই আছেন, কচুরিপানা বিক্রিই যাঁদের একমাত্র পেশা৷ বাড়ির আশপাশের বিভিন্ন নীচু এলাকায় তাঁরা আটকে রাখেন কচুরিপানা৷ মৌসুমে তা বিক্রি করেন কৃষকদের কাছে৷ এক নৌকা কচুরিপানা বিক্রি হয় পাঁচ থেকে আট হাজার টাকায়৷
ছবি: DW/M. Mostafigur Rahman.
শ্যাওলা-ঘাস বিক্রি করেন হারেছ মিয়া
ভাসমান পদ্ধতিতে চাষাবাদ করার জন্য পানির নিচের শ্যাওলা খুবই প্রয়োজনীয়৷ বিভিন্ন জায়গা থেকে সংগ্রহ করে কৃষকদের কাছে শ্যাওলা বিক্রি করেন তিনি৷
ছবি: DW/M. Mostafigur Rahman.
ছয় মাসে ছয় বার
নিজের জলমগ্ন জায়গায় ছয় মাসে ছয় বার সবজির চারা উৎপাদন করেন আব্দুর রহমান৷ প্রথম দুই বারের চারা বিক্রি করে তাঁর সব খরচ উঠে যায়, বাকি চার বারের পুরোটাই লাভ৷
ছবি: DW/M. Mostafigur Rahman.
জৈব পদ্ধতিতেই চাষাবাদ
নাজিরপুরের রুহুল আমিন জানান, ভাসমান পদ্ধতিতে যে চাষাবাদ হয়, তাতে সার ও কীটনাশকের ব্যবহার করতে হয় না৷ পচা কচুরিপানাই এ পদ্ধতিতে চাষাবাদে জৈব সার হিসেবে কাজ করে৷
ছবি: DW/M. Mostafigur Rahman.
9 ছবি1 | 9
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের উপর সেন্সরশিপ
এক রোমানীয়-সিরীয় কিশোরী জানতে চেয়েছিল, নতুন শরণার্থী সংকট মোকাবিলায় জার্মানি কীভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছে? আর এক শিক্ষার্থীর প্রশ্ন ছিল, দরিদ্র প্রবীণদের ব্যাপারে ম্যার্কেলের কী পরিকল্পনা রয়েছে?
তবে এসব প্রশ্নের মধ্যে একটি প্রশ্নকে প্রতিটি শিক্ষার্থী করতালির মাধ্যমে সমর্থন জানায়, সেটা হলো ইউরোপীয় ইউনিয়নের নতুন কপিরাইট আইনের আর্টিকেল ১৩ নিয়ে৷ তবে ম্যার্কেল বেশ ভারসাম্য রেখেই এ প্রশ্নের উত্তর দেন৷ তিনি বলেন, ‘‘সবারই মত প্রকাশের স্বাধীনতা রয়েছে, আর নতুন আইন মানে এই নয় যে পুরো ইন্টারনেটের উপর সেন্সরশিপ৷''
ম্যার্কেলের এই সফরকে ঘিরে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়াই ছিলো শিক্ষার্থীদের মাঝে৷ ১৬ বছর বয়সি করিম জানালো, ‘‘তিনি ভীষণ ‘কুল', ভীষণ ধীর-স্থির, তাঁর মজা করে কথা বলা বেশ ভালো লেগেছে৷ প্রশ্ন উত্তর পর্বের সবশেষ প্রশ্ন ছিলো আর্টিকেল ১৩ নিয়ে, যেটার বিষয়ে আমি খুব একটা জানতাম না৷ তিনি কিছুটা ব্যাখ্যা করেছেন, ফলে আমার এতে আগ্রহ জন্মেছে৷''
১৫ বছরের আর এক শিক্ষার্থী জানায়, ‘‘তিনি আমাদের সঙ্গে যেভাবে কথা বলেছেন, সেটা সত্যিই মজার ছিলো৷ আমাদের মত প্রকাশের স্বাধীনতা ছিলো, তাই আমরা চেয়েছি ইন্টারনেটেও আমরা যাতে স্বাধীনভাবে আমাদের মতামতগুলো তুলে ধরতে পারি৷ কারণ আমার মনে হয় আর্টিকেল ১৩ এখানে একটা সীমারেখা টেনে দিচ্ছে৷''
প্রশ্ন-উত্তর পর্বের পর শিক্ষার্থীরা চ্যান্সেলরের সঙ্গে সেলফি তোলে৷ এরপর শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বিদায় নেয়ার আগে তাঁকে বিশেষ কিছু উপহার দেয়া হয়৷