ডয়চে ভেলের ঝানা নেমৎসোভাকে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরিস জনসন বললেন, সাবেক রুশ গুপ্তচর সের্গেই স্ক্রিপালের উপর আক্রমণের জন্য ব্রিটেন কেন রাশিয়াকে দায়ী মনে করে৷
বিজ্ঞাপন
ডয়চে ভেলে: মিস্টার জনসন, ক'দিন আগে আপনি বলেছিলেন যে, খুব সম্ভবত প্রেসিডেন্ট পুটিন স্বয়ং সাবেক ডাবল এজেন্ট সের্গেই স্ক্রিপালের উপর স্নায়ুর বিষ প্রয়োগের নির্দেশ দিয়েছিলেন৷ এই মনোভাব সমর্থনের জন্য আপনার বা ব্রিটিশ সংসদের কাছে কি কোনো প্রমাণ আছে?
বরিস জনসন: প্রথমেই বলা দরকার যে, আমাদের মতে, রুশ জনগণ বা রাশিয়া এই আক্রমণের জন্য দায়ী নয়৷ রাশিয়ার সঙ্গে আমাদের কোনো বিবাদ নেই৷ ক্রেমলিন ও রুশ রাষ্ট্র বর্তমানে যা হয়ে দাঁড়িয়েছে, তাই নিয়েই সমস্যা৷ আমি যা বলেছিলাম, তার কারণ ছিল এই যে, যদি কী পদার্থ ব্যবহার করা হয়েছে, সেটা দেখেন, তাহলে দেখবেন যে, সেটা ছিল নভিচক গোত্রীয় একটি রাসায়নিক৷ আমাদের পোর্টন ডাউনের বিজ্ঞানীরাই তা বলেছেন৷ আরো ভাবতে হবে যে, সের্গেই স্ক্রিপালকে হত্যার উপযুক্ত লক্ষ্য বলে শনাক্ত করা হয়েছে এবং ভ্লাদিমির পুটিন স্বয়ং বলেছেন যে, বিশ্বাসঘাতকদের – অর্থাৎ মিস্টার স্ক্রিপালের মতে দলত্যাগীদের বিষ দেওয়া উচিত৷ কাজেই এটা শুধুমাত্র একটি রুশ স্নায়ুর বিষ হতে পারে৷
পুটিন নিজে এই নির্দেশ দিয়েছিলেন তা প্রমাণ করার মতো কোনো নির্ভরযোগ্য সাক্ষ্য-প্রমাণ আছে আপনার কাছে?
উনি নিজেই গোটা প্রক্রিয়াটার দায়িত্বে – ব্রিটেনে আমরা যেরকম বলে থাকি৷ কেউ না কেউ দায়ী এবং যুক্তরাজ্যে আমাদের মতে সাক্ষ্য-প্রমাণ ও আক্রমণের জন্য দায়িত্ব রুশ রাষ্ট্রের দিকে অঙ্গুলিনির্দেশ করছে, আলেক্সান্ডার লিটভিনেঙ্কোর ক্ষেত্রে যেমন ঘটেছিল৷ আপনার হয়তো মনে আছে যে, অবশেষে পোলোনিয়ামের সূত্র খুব স্পষ্টভাবে রুশ রাষ্ট্রের দিকে নির্দেশ করছিল৷ শেষমেষ মিস্টার পুটিনের উপর ভার, কাজেই তিনি দায়িত্ব ও শাস্তিযোগ্যতা এড়াতে পারেন না৷
রাজনীতির ইতিহাসে বিষ দিয়ে হত্যার যত চেষ্টা
রাজনীতির ইতিহাসে বিষ দিয়ে মারার চেষ্টা বহুবার হয়েছে – কখনো সফল, কখনো অসফল৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Sazonov
আলেক্সি নাভালনি
রাশিয়ার বিরোধীদলীয় নেতা ও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিনের কট্টর সমালোচক আলেক্সি নাভালনিকে সাইবেরিয়া থেকে জার্মানিতে নেওয়া হয়েছে৷ নাভালনির শরীরে বিষপ্রয়োগ করা হয়েছে বলে ধারণা করছেন সমর্থকরা৷ ১৯ আগস্ট ৪৪ বছর বয়সি সাবেক এই আইনজীবী চা খাওয়ার পর অসুস্থ হয়ে পড়েন৷
ছবি: Getty Images/AFP/K. Kudrayavtsev
সের্গেই স্ক্রিপাল
৬৬ বছর বয়সি সাবেক রুশ গুপ্তচর সের্গেই স্ক্রিপালকে ব্রিটেনের স্যালিসবেরি শহরের একটি শপিং মলের সামনে অজ্ঞান অবস্থায় একটি বেঞ্চের উপর পাওয়া যায়৷ তিনি কোনো অজ্ঞাত বিষের শিকার হয়েছেন বলে পুলিশের ধারণা৷ রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেস্কভ এই পরিস্থিতিকে ‘দুঃখজনক’ বললেও যোগ করেছেন যে, ‘‘(ঘটনার) কারণ কী হতে পারে অথবা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি কী করেছেন, সে বিষয়ে আমাদের কাছে কোনো তথ্য নেই৷’’
ছবি: picture-alliance/dpa/Tass
কিম জং নাম
উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের বৈমাত্রেয় ভাই কিম জং নাম ২০১৭ সালের ১৩ই ফেব্রুয়ারি কুয়ালালামপুর বিমানবন্দরে প্রাণ হারান৷ দৃশ্যত দুই নারী তাঁর মুখে ভিএক্স নামের একটি রাসায়নিক মাখিয়ে দিয়েছিলেন৷ মালয়েশিয়ার একটি আদালতে অভিযুক্তদের বিচার চলার সময় জানা যায় যে, আক্রান্ত হওয়ার সময় কিম জং নাম-এর পিঠের ব্যাগে ভিএক্স বিষের ডজন খানেক অ্যাম্পুল ছিল৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/S. Kambayashi
আলেক্সান্ডার লিটভিনেঙ্কো
সাবেক রুশ গুপ্তচর লিটভিনেঙ্কো দেশ ছেড়ে ব্রিটেনে আশ্রয় নেবার পর সাংবাদিকতা শুরু করেন এবং রাশিয়ার ফেডারাল সিকিউরিটি সার্ভিস এফএসবি ও পুটিনের বিরুদ্ধে দু’টি বই লেখেন৷ ২০০৬ সালের ২৩শে নভেম্বর দু’জন সাবেক কেজিবি কর্মকর্তার সঙ্গে সাক্ষাতের পর লিটভিনেঙ্কো অসুস্থ হয়ে পড়েন ও পরে হাসপাতালে প্রাণত্যাগ করেন৷ সরকারি তদন্তে দেখা যায় যে, তেজস্ক্রিয় পলোনিয়াম-২১০ বিষের ক্রিয়ায় তাঁর মৃত্যু হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Kaptilkin
ভিক্টর কালাশনিকভ
সোভিয়েত কেজিবি গোয়েন্দা বিভাগের সাবেক কর্নেল ভিক্টর কালাশনিকভ তখন সাংবাদিক হিসেবে সস্ত্রীক বার্লিনে বসবাস করছিলেন৷ ২০১০ সালের নভেম্বর মাসে কালাশনিকভ ও তাঁর স্ত্রীকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়৷ সেখানে তাদের রক্তে যথাক্রমে ৩ দশমিক ৭ ও ৫৬ মাইক্রোগ্রাম পারদ পাওয়া যায়৷ স্বাভাবিক অবস্থায় রক্তে এক থেকে তিন মাইক্রোগ্রাম পারদ থাকা নিরাপদ৷পরে এক সাক্ষাৎকারে কালাশনিকভ বলেন, ‘‘মস্কো আমাদের বিষ দিয়েছে৷’’
ছবি: picture-alliance/dpa/RIA Novosti
ভিক্টর ইউশ্চেঙ্কো
ইউক্রেনের বিরোধী নেতা ইউশ্চেঙ্কো ২০০৪ সালের নভেম্বর মাসে অসুস্থ হয়ে পড়েন ও দেখা যায় যে, একটি ভাইরাল ইনফেকশন ও সেই সঙ্গে রাসায়নিকের বিষক্রিয়ার ফলে তাঁর অ্যাকিউট প্যানক্রিয়াটিস হয়েছে৷ এর ফলে ইউশ্চেঙ্কোর জন্ডিস হয়, মুখ ফুলে যায় এবং ত্বকে এক ধরণের দাগ থেকে যায়, যা ডাইঅক্সিন বিষের প্রভাবে ঘটে থাকতে পারে বলে চিকিৎসকদের ধারণা৷ সরকারি চররা তাঁকে বিষ দিয়েছে বলে ইউশ্চেঙ্কো দাবি করেন৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Leodolter
খালেদ মেশাল
১৯৯৭ সালের ২৫শে সেপ্টেম্বর তারিখে ইসরায়েলের গুপ্তচর বিভাগ হামাস নেতা খালেদ মেশালকে হত্যা করার চেষ্টা করে৷ কথিত আছে, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু স্বয়ং নাকি হত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন৷ মেশাল জর্ডানের আম্মানে অবস্থিত হামাসের কার্যালয় থেকে বেরোনোর সময় দু’জন ইসরায়েলি গুপ্তচর তাঁর কানে কোনো বিষাক্ত পদার্থ স্প্রে করে৷ মেশাল অক্ষতই থাকেন এবং পরে ঐ দুজন ইসরায়েলি গুপ্তচরকে ধরাও সম্ভব হয়৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Sazonov
গেয়র্গি মার্কভ
১৯৭৮ সালে বুলগেরীয় সরকারবিরোধী মার্কভ বিবিসি-তে কাজ শেষ করে বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলেন – হঠাৎ কিছু একটা তাঁর থাই ফুঁড়ে দেয়৷ ওদিকে মার্কভ দেখেন, এক পথচারী তার ছাতা মাটি থেকে তুলছে৷ ছুঁচ ফোটার জায়গাটা ফুলে উঠে চারদিনের মধ্যে মার্কভ প্রাণ হারান৷ ময়না তদন্ত বলে, একটি শূন্য দশমিক দুই মিলিগ্রাম রিসিন বিষের পেলেট থেকে মার্কভের মৃত্যু ঘটেছে৷ পথচারীর ছাতা থেকেই পেলেটটা ছোঁড়া হয়েছিল, বলে অনেকের বিশ্বাস৷
ছবি: picture-alliance/dpa/epa/Stringer
গ্রিগরি রাসপুটিন
রুশ বিপ্লবের ঠিক আগে রাসপুটিন একজন আধ্যাত্মিক শক্তিসম্পন্ন গুনিন হিসেবে পরিচিত ছিলেন৷ ১৯১৬ সালের ৩০শে সেপ্টেম্বর তিনি সেন্ট পিটার্সবার্গের ইয়ুসুপভ প্রাসাদে আসেন প্রিন্স ফেলিক্স ইয়ুসুপভের আমন্ত্রণে৷ প্রিন্স ইয়ুসুপভ তাঁকে পটাসিয়াম সায়ানাইড বিষ মাখানো কেক খেতে দেন ও সায়ানাইড মাখানো পাত্রে সুরা পরিবেশন করেন৷ সেই বিষাক্ত কেক ও সুরা থেকে রাসপুটিনের কিছুই হয় না৷ অতঃপর রাসপুটিনকে গুলি করে হত্যা করা হয়৷
ছবি: picture-alliance/ IMAGNO/Austrian Archives
9 ছবি1 | 9
আপনি ,অর্থাৎ ব্রিটিশ সরকার চলতি তদন্তের ফলাফলের জন্য অপেক্ষা না করে এই বিবৃতি দিলেন কেন?
কেননা পুটিনের রাশিয়ার সঙ্গে এ ধরনের সমস্যা থাকলে কি ঘটে, সে বিষয়ে আমাদের তিক্ত অভিজ্ঞতা আছে৷ বারো বছর আগে লন্ডনে আলেক্সান্ডার লিটভিনেঙ্কোর হত্যাকাণ্ড ঘটে৷ তখন সেটা একটা চমকপ্রদ ঘটনা ছিল৷ যুক্তরাজ্য বিপুল সাবধানতা ও ধীরতার সঙ্গে অগ্রসর হয় ও আমরা মিস্টার কোভতুন ও মিস্টার লুগোভয় – যারা দায়ী বলে বিশেষভাবে সন্দেহ করা হচ্ছিল – (এই দুজনের) বহিষ্কারের জন্য রুশ বিচার প্রণালীর সঙ্গে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিই৷ অবশেষে আমরা যা পাই, তা হলো, আমাদের বিচার প্রক্রিয়ার সঙ্গে সহযোগিতার আমন্ত্রণের প্রতি এক ব্যঙ্গাত্মক প্রত্যাখ্যান৷ কাজেই আমরা এই সিদ্ধান্ত নেওয়া খুব দরকারি বলে মনে করি যে, ইউরোপে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে যে ধরনের স্নায়ুর বিষ ব্যবহার করা হয়নি, তা যদি বেপরোয়াভেবে স্যালিসবেরিতে ব্যবহার করা হয়ে থাকে, তবে তার কূটনৈতিক ফলশ্রুতি সইতে হবে৷
আপনি বলতে চাইুছেন, নভিচক স্নায়ুর বিষ রাশিয়া থেকে এসেছে৷ এত তাড়াতাড়ি তা বের করতে পারলেন কী করে? ব্রিটেনের কাছে কি নভিচকের নমুনা আছে?
আপনাকে স্পষ্ট করে বলছি... আমি যখন তার সাক্ষ্য-প্রমাণ দেখি, যেমন পোর্টন ডাউনের কর্মীরা, পরীক্ষাগার...
কাজেই তাদের কাছে নভিচকের নমুনা আছে...
হ্যাঁ, আছে৷ আর তারা সন্দেহাতীতভাবে জানিয়েছে৷ আমি নিজে (সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞানীকে) জিজ্ঞাসা করেছি; আমি বলেছি, ‘‘আপনি নিশ্চিত তো?'' তিনি বলেছেন যে, সন্দেহের বিন্দুমাত্র অবকাশ নেই৷ কাজেই আমরা যে পদক্ষেপ নিয়েছি, তা করা ছাড়া আমাদের খুব কম বিকল্প ছিল৷ তবে এবারকার পরিস্থিতি আর ১২ বছর আগে আলেক্সান্ডার লিটভিনেঙ্কোর ঘটনার সঙ্গে ফারাকটা হলো এই যে, এবার আন্তর্জাতিক রাষ্ট্রসমাজ অনেক বেশি সহানুভূতিশীল, রাশিয়া বিগত কয়েক বছরে যে ধরনের আচরণ করছে, সে বিষয়ে অনেক বেশি অবহিত৷ ব্রাসেলসের আলোচনাচক্রে যখন বাকি সব ইউরোপীয় দেশের সঙ্গে কথাবার্তা বলেছি, তখন প্রায় এমন কোনো দেশই ছিল না, যারা (রুশ তরফে) প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কোনো ধরনের অনিষ্টকারী বা ব্যাঘাত সৃষ্টিকারী আচরণের শিকার হয়নি৷
ভ্লাদিমির পুটিন: গোয়েন্দা থেকে প্রেসিডেন্ট
পড়াশোনা শেষে গোয়েন্দা হিসেবে কাজ শুরু করেছিলেন ভ্লাদিমির পুটিন৷ এরপর কয়েক বছরের মধ্যেই রাজনীতির শীর্ষে চলে আসতে সক্ষম হন তিনি৷
জন্ম ১৯৫২ সালে সেন্ট পিটার্সবার্গে৷ ১৯৭৫ সালে আইন বিষয়ে পড়াশোনা শেষ করে সাবেক সোভিয়েত গোয়েন্দা সংস্থা কেজিবিতে যোগ দিয়েছিলেন৷ তাঁর প্রথম দায়িত্ব ছিল নিজ শহর লেনিনগ্রাদে (পরবর্তীতে নাম হয় সেন্ট পিটার্সবার্গ) বিদেশি নাগরিক ও কনস্যুলেটের কর্মীদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করা৷ এরপর বদলি হন পূর্ব জার্মানির ড্রেসডেনে৷ বার্লিন প্রাচীর পতনের পর তিনি কেজিবির অনেক ফাইল পুড়িয়ে ফেলেন বলে জানা যায়৷
বামে তরুণ পুটিনকে দেখতে পাচ্ছেন? ছবিতে যে ব্যক্তিকে এক নারীর সঙ্গে হাত মেলাতে দেখা যাচ্ছে, তাঁর নাম আনাতোলি সবচাক৷ তিনিই প্রথম পুটিনকে রাজনীতিতে নিয়ে আসেন, নিজের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দেন পুটিনকে৷
ছবি: Imago/ITAR-TASS
উল্কার বেগে উত্থান
খুব দ্রুতই সেন্ট পিটার্সবার্গ থেকে মস্কো চলে গিয়েছিলেন পুটিন৷ ১৯৯৭ সালে তৎকালীন রুশ প্রেসিডেন্ট বরিস ইয়েলিৎসিন তাঁকে নিজের প্রশাসনে মাঝ পর্যায়ের এক পদে নিয়োগ দেন৷ এই পদটি আসলে ছিল গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক বন্ধুত্ব গড়ে তোলার পদ, যার মাধ্যমে ভবিষ্যতে দেশ পরিচালনার অভিজ্ঞতা পেয়েছিলেন পুটিন৷
ছবি: picture alliance/AP Images
বন্ধুর মৃত্যু
২০০০ সালে সবচাকের মৃত্যু পুটিনকে আবেগে আক্রান্ত করেছিল৷ কারণ, যাঁরা পুটিনকে রাশিয়ার ভবিষ্যৎ প্রেসিডেন্ট হিসেবে দেখতে চেয়েছিলেন, তাঁদের অন্যতম ছিলেন তিনি৷ সবচাকের মৃত্যুর বছরখানেক আগে তাঁর বিরুদ্ধে থাকা প্রতারণার অভিযোগ নিজের রাজনৈতিক ক্ষমতা প্রয়োগ করে বাতিল করেছিলেন পুটিন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Chirikov
অস্থায়ী প্রেসিডেন্ট
২০০০ সালের জুনে ইয়েলিৎসিন ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়ালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী পুটিন অস্থায়ী প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিয়োগ পেয়েছিলেন৷ এরপর যখন তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য প্রচারণা চালাচ্ছিলেন, তখন তাঁর বিরুদ্ধে সেন্ট পিটার্সবার্গ প্রশাসনে থাকাকালীন দুর্নীতির অভিযোগ আনা হয়েছিল৷ কিন্তু অভিযোগ যিনি এনেছিলেন, সেই সাংসদ মারিনা সালিয়েকে শেষ পর্যন্ত শহর ছাড়তে বাধ্য করা হয়েছিল৷
ছবি: Imago/ITAR-TASS
রাজনৈতিক সঙ্গী
সংবিধান অনুযায়ী, প্রেসিডেন্ট হিসেবে দু’বার দায়িত্ব পালনের পর ২০০৮ সালে আর তৃতীয়বারের মতো প্রেসিডেন্ট হওয়া সম্ভব ছিল না পুটিনের৷ তাই সেই সময় তিনি তাঁর রাজনৈতিক সহকর্মী দিমিত্রি মেদভেদেভকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে সমর্থন দিয়েছিলেন৷ আর নিজে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়েছিলেন৷ সেবারই সংবিধানে পরিবর্তন আনা হয় আর প্রেসিডেন্টের মেয়াদকাল চার থেকে বাড়িয়ে ছয় বছর করা হয়৷ এরপর ২০১২ সালে আবার প্রেসিডেন্ট হন পুটিন৷
ছবি: Imago/ITAR-TASS
চতুর্থবার প্রেসিডেন্ট
১৮ মার্চ, ২০১৮ রবিবার অনুষ্ঠিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে আবারও জয়লাভ করেন পুটিন৷ ফলে ২০২৪ সাল পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট থাকছেন তিনি৷ ২০৩০ সালেও তিনি প্রার্থী হবেন কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে পুটিন সেই সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়ে বলেন, ‘‘১০০ বছর বয়স পর্যন্ত কাজ করে যাবার কোনো ইচ্ছা তাঁর নেই৷’’
ছবি: Reuters/D. Mdzinarishvili
7 ছবি1 | 7
কিন্তু একটি সাক্ষাৎকারে আপনি বলেছেন যে, আপনি এ বিষয়ে রাশিয়ার সঙ্গে গঠনমূলক সহযোগিতা কামনা করেন৷ পুটিনের বিরুদ্ধে সরাসরি অভিযোগ করার পর সেটা কিভাবে সম্ভব, বলে আপনি মনে করেন?
প্রধানমন্ত্রী (টেরেসা মে) যেমন বলেছেন, আমরা বেছে নিতে দিয়েছি৷ আমরা বলেছি, দেখো, পদার্থটা নভিচক৷ সেটা কিভাবে তোমাদের ভাঁড়ার থেকে বেরিয়ে স্যালিসবেরির রাজপথে ব্যবহৃত হলো, তার যদি কোনো যুক্তিযুক্ত ব্যাখ্যা থাকে, তাহলে এসো, আমরা একযোগে কাজ করে রহস্যের সমাধান করি৷ অপরদিকে যদি কোনো ব্যাখ্যা না থাকে, তাহলে আমরা ধরে নিতে বাধ্য হবো যে, রুশ রাষ্ট্রের নির্দেশেই এ ঘটনা ঘটেছে৷ আমরা কোনো উত্তর পাইনি৷ আমাদের বহু ব্যঙ্গাত্মক টুইট আর ট্রল পাঠানো হয়েছে৷
ক্রেমলিন বলছে, তারা সংশ্লিষ্ট পদার্থটির নমুনা পেতে চায়৷ আপনি কি রুশ তদন্তকারীদের পদার্থটি পরখ করার সুযোগ দেবেন?
আমি ক্রেমলিনের গোয়েন্দাদের সৌজন্য সহকারে বলতে বাধ্য হবো যে, আমরা রাসায়নিক সমরাস্ত্র বর্জন সংগঠনের বৈজ্ঞানিক বিশেষজ্ঞদের উপরেই আস্থা রাখবো৷ দেখা যাক, তারা কী বলেন৷ রাসায়নিক সমরাস্ত্র চুক্তি অনুযায়ী ব্রিটেনের পক্ষে সেটাই বাধ্যতামূলক প্রক্রিয়া৷ এছাড়া আমি বলতে বাধ্য যে, নভিচক নিয়ে যা যা ঘটেছে, সে ব্যাপারে রুশ অবস্থান আমার কাছে ক্রমেই আরো বেশি উদ্ভট হয়ে উঠছে৷
ব্রিটিশ সরকার ও প্রধানমন্ত্রী উভয়েই কিছু কিছু শাস্তিমূলক ব্যবস্থার কথা ঘোষণা করেছেন; ব্রিটেন থেকে ২৩ জন রুশ কূটনীতিককে বহিষ্কার করা হয়েছে ও রুশ তরফ থেকেও তার পাল্টা প্রতিক্রিয়া এসেছে৷ আপনি কি আর কোনো ব্যবস্থা নেবেন?
আমরা ২৩ জন কূটনীতিককে বহিষ্কার করেছি, যারা সম্ভবত কূটনীতিকের ছদ্মবেশে গুপ্তচর ছিলেন; এছাড়া আমরা আরো কিছু পদক্ষেপ নেবো৷ আমরা বিশেষ করে আমাদের সীমান্ত আরো জোরদার করছি; যুক্তরাজ্যে বেআইনিভাবে অথবা দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত অর্থসম্পদ রোখার জন্য আমাদের হাতে একাধিক আইনের অস্ত্র আছে, আমরা সেগুলো প্রয়োগ করতে পারি৷ জাতীয় অপরাধ সংস্থা ও জাতীয় অর্থনৈতিক অপরাধ গোষ্ঠী রয়েছে৷ তারা তাদের কাজ করবে৷ কিন্তু মনে রাখবেন, যুক্তরাজ্যে আইনের শাসন কায়েম, কাজেই রাজনীতিক হিসেবে আমি বলতে পারি না, ওর টাকা বাজেয়াপ্ত করো অথবা এটা করো কিংবা সেটা করো৷ (এদেশে) ওভাবে কাজ চলে না৷