বিশ্বের সেরা ও প্রখ্যাততম পদার্থবিদদের মধ্যে গণ্য করা যায় তাঁকে৷ দুরারোগ্য ব্যাধি সত্ত্বেও জ্ঞানবিজ্ঞানের জগতে যার অবাধ বিচরণ, সেই স্টিফেন হকিং পঁচাত্তরে পা দিয়েছেন৷
বিজ্ঞাপন
স্টিফেন হকিং যখন বিশ্বের যে কোনো জায়গায় বক্তৃতা দেন, হল ভরে যায় লোকে৷ অনেকের কাছে তিনি একালের সেরা পদার্থবিদ৷ তাঁর দৃষ্টান্ত থেকে বোঝা যায়, মানুষের মধ্যে কী অসম্ভব ক্ষমতা লুকনো থাকে৷
তাঁর অধীনে যারা ডক্টরেট করেছেন, তাদের অনেকেই সারা জীবনের জন্য হকিং-এর বন্ধু হয়ে গেছেন৷
হ্যানোভার-এর মাক্স-প্লাঙ্ক ইনস্টিটিউট ফর গ্র্যাভিটেশনাল ফিজিক্স-এর প্রফেসর ব্রুস অ্যালেন বললেন, ‘‘আমার মনে হয়, উনি মাধ্যাকর্ষণ পদার্থবিদ্যার বৃহত্তম ও সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নগুলি নিয়ে গবেষণা করেছেন – সফলভাবে৷ অনেকেই বড় বড় সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করেন, কিন্তু খুব কম মানুষই তা-তে সফল হন৷''
মঙ্গলগ্রহের পথে ভারতের ‘মঙ্গলায়ন’
মঙ্গলবার ভারতের একটি অর্বিটার সফলভাবে মঙ্গলগ্রহের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেছে৷ সফল হলে যুক্তরাষ্ট্র, সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন ও ইউরোপের পর তারা হবে চতুর্থ রাষ্ট্র যারা সফলভাবে মঙ্গল মিশন শেষ করবে৷
ছবি: picture-alliance/AP
যাত্রা শুরু
৫ নভেম্বর, ২০১৩ তারিখে ভারতের একটি অর্বিটার সফলভাবে মঙ্গলগ্রহের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেছে৷ এর মাধ্যমে প্রযুক্তি জগতে নিজেদের অবস্থান শক্তিশালী করল ভারত৷ মিশনের উদ্দেশ্য, লাল গ্রহের পরিবেশে মিথেনের উপস্থিতি আছে কিনা, তা যাচাই করে দেখা৷
ছবি: picture-alliance/dpa
৪.৫ বিলিয়ন রূপি
এই মিশনের জন্য ভারত ব্যয় করেছে ৪.৫ বিলিয়ন রূপি৷ একটি বোয়িং ৭৮৭ বিমানের দাম তার চেয়ে দ্বিগুন৷ ‘মঙ্গলায়ন’ নামের এই অর্বিটারটি ২০১৪ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর মঙ্গল গ্রহের অর্বিটে পৌঁছাবে বলে আশা করা হচ্ছে৷ এই দীর্ঘ সময়ে সে পাড়ি দেবে ৪২২ মিলিয়ন মাইল পথ৷
ছবি: Getty Images/Afp/Sajjad Hussain
সফল হলে এলিট ক্লাবে
এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র, সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন ও ইউরোপের মঙ্গল মিশন সফল হয়েছে৷ ফলে ভারত সফল হলে তারা এলিট ক্লাবে প্রবেশ করবে৷ এছাড়া এশিয়ার মধ্যে তারা হবে প্রথম৷
ছবি: imago/Xinhua
অর্ধেকই ব্যর্থ
এখন পর্যন্ত মঙ্গলকে ঘিরে প্রায় ৪০টি মিশন হয়েছে৷ এর মধ্যে ২০১১ সালে চীন আর ১৯৯৯ সালে জাপানের সহ ২৩টিই ব্যর্থ হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/AP
দিল্লি-বেইজিং প্রতিযোগিতা?
রাশিয়া ও চীনের একটি মঙ্গল মিশন ব্যর্থ হওয়ার কয়েক মাস পর গত বছরের স্বাধীনতা দিবসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং মঙ্গলায়নের ঘোষণা দিয়েছিলেন৷ ফলে দিল্লি আর বেইজিংয়ের মধ্যে এক ধরণের প্রতিযোগিতার গন্ধ পাচ্ছেন বিশ্লেষকরা৷
ছবি: picture-alliance/dpa
উদ্দেশ্য বহুবিধ
ভারত প্রতি বছর মহাকাশ কর্মসূচির জন্য প্রায় এক বিলিয়ন ডলার খরচ করে৷ এর আওতায় এখন পর্যন্ত কৃত্রিম উপগ্রহ ও অত্যাধুনিক রিমোট সেন্সিং প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা হয়েছে, যা দিয়ে উপকূলীয় অঞ্চলে মাটির অবক্ষয়, বন্যার প্রভাব ও ক্ষয়ক্ষতি নির্ধারণ সহ অনেক কাজ করা যাচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
আরও পরিকল্পনা
২০০৮ সালে সফলভাবে প্রথম চন্দ্র মিশন শেষ করার পর ২০১৬-১৭ সালে আবারও চাঁদে মিশন পাঠানোর পরিকল্পনা করছে ভারত৷ এছাড়া মহাকাশচারীসহ স্পেস ফ্লাইট পরিচালনারও পরিকল্পনা রয়েছে তাদের৷ তবে এই বিষয়টা এখনও সরকারের অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে৷
ছবি: picture-alliance/AP
7 ছবি1 | 7
হকিং-এর বৃহত্তম আবিষ্কার
একটি তত্ত্ব দিয়ে গোটা মহাশূন্যের ব্যাখ্যা করাটা একটা মহান কাজ৷ সেই অসীম ব্যাপ্তিতে হকিং-কে যা বিশেষভাবে ভাবিয়েছে, তা হলো তথাকথিত ব্ল্যাক হোল৷ দশকের পর দশক গবেষণা করেছেন হকিং: ব্ল্যাক হোলে যে পদার্থ উধাও হয়, তা যায় কোথায়? সেই পদার্থের বিভিন্ন চরিত্রগত বৈশিষ্ট্য কি যায় না বজায় থাকে? স্টিফেন হকিং বিভিন্ন উত্তর খুঁজে পেয়েছেন, কিন্তু কোনো চূড়ান্ত সমাধান খুঁজে পাননি৷ ব্ল্যাক হোলও যে বাষ্পের মতো উপে যেতে পারে, এটাই হলো হকিং-এর বৃহত্তম আবিষ্কার৷
প্রফেসর ব্রুস অ্যালেন বললেন, ‘‘এক হাজার বছর পরেও ওটা একটা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য থাকবে; দেখাবে যে, মাধ্যাকর্ষণ ও কোয়ান্টাম মেকানিক্সের মধ্যে একটা সংযোগ আছে৷ একটি অতি সহজ কিন্তু বুনিয়াদী উপলব্ধি৷''
সুপারম্যানের ক্ষমতা অসীম৷ স্টিফেন হকিং তাঁর পঙ্গু শরীরে আবদ্ধ হয়ে, মৃত্যুর মুখোমুখি হয়ে জীবনধারণ করে চলেছেন গত ৫৪ বছর ধরে৷ এই ভাগ্য তিনি মেনে নিয়েছেন, মানিয়ে নিয়েছেন তাঁর রসবোধ দিয়ে৷ তাঁর পক্ষে যতটুকু করা সম্ভব, তিনি তাই করেন: বিশিষ্ট মানুষ হিসেবে তিনি পরিবেশ দূষণ ও জলবায়ু পরিবর্তনের বিপদ সম্পর্কে সাবধান করে দিয়েছেন৷
২০০৭ সালে তাঁর স্বপ্ন সার্থক হয়৷ সুপারম্যানের মতো স্টিফেন হকিং-ও একটি প্যারাবোলিক ফ্লাইটে ভারহীন অবস্থায় বাতাসে ভাসতে পারেন৷ স্টারশিপ এন্টারপ্রাইজে স্টিফেন হকিং-কে নিউটন, অ্যান্ড্রয়েড ডাটা ও আইনস্টাইনের সঙ্গে এক টেবিলে বসে তাস খেলার সুযোগ দেওয়া হয়৷ স্টিফেন হকিং প্রায় স্টার ট্রেক ফ্যানদের মতোই মজা পান৷
প্রফেসর স্টিফেন হকিং-কে তাঁর ৭৫তম জন্মদিনে আমাদের হার্দিক শুভেচ্ছা৷
সাড়ে বারো হাজার কিলোমিটার দূর থেকে ছবি
নয় বছর ঘুরে ঘুরে অবশেষে প্লুটোর কাছে গেল মহাকাশযান নিউ হরাইজন্স৷ কাছে মানে, ১২ হাজার ৫০০ কিলোমিটার দূরে৷ সেখান থেকেই তোলা হয়েছে ছবি৷ এ নিয়েই ছবিঘর৷
ছবি: Reuters/NASA/APL/SwRI
এই প্রথম....
মহাবিশ্বে ঐতিহাসিক মুহূর্তের সাক্ষী হলো মানব সভ্যতা৷ ১৪ই জুলাই সৌরজগতের শেষ সীমায় প্লুটোর সবচেয়ে কাছ দিয়ে, অর্থাৎ ১২ হাজার ৫০০ কিলোমিটার দূর দিয়ে উড়ে যায় যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা-র তৈরি মহাকাশযান নিউ হরাইজন্স৷
ছবি: JHUAPL/SwRI
মানুষহীন মহাকাশযান থেকে ছবি...
নাসার তৈরি মহাকাশযান নিউ হরাইজন্সে কিন্তু কোনো মানুষ নেই৷ স্বয়ংক্রিয় ক্যামেরাই তুলেছে ছবি৷ ক্যামেরা খুব শক্তিশালী বলেই সাড়ে বারো হাজার কিলোমিটার দূর থেকেও এমন ছবি তুলতে পেরেছে নিউ হরাইজন্স৷ সাড়ে বারো হাজার কিলোমিটারকে বেশি দূর মনে হচ্ছে? পৃথিবী থেকে চাঁদের দূরত্ব কিন্তু এর চেয়ে ৩০ গুণ বেশি!
ছবি: Reuters/NASA/APL/SwRI
ঐতিহাসিক মুহূর্ত
২০০৬ সালের ১১ই জানুয়ারি ফ্লোরিডার কেপ ক্যানাভেরাল এয়ারফোর্স স্টেশন থেকে নিউ হরাইজন্সকে উৎক্ষেপণ করে নাসা৷ মহাকাশযানটিকে পাঠানো হয় প্লুটো নিয়ে গবেষণায় সহায়তার জন্য৷ সেই থেকে চলছিল প্রতীক্ষা – কবে প্লুটোর কাছাকাছি যাবে, কবে পাঠাবে ছবি! ১৪ই জুলাই মেরিল্যান্ডে নাসার অভিযান নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রে সবাই ছিলেন সেই মাহেন্দ্রক্ষণের অপেক্ষায়৷ ছবি দেখামাত্রই তাই উল্লাসে ফেটে পড়েন সবাই৷
নিউ হরাইজন্সের পাঠানো তথ্য অনুযায়ী, প্লুটোর ব্যস ২ হাজার ৩৭০ কিলোমিটার৷ আরেকটি বিষয়, প্লুটোকে আগে সবাই গ্রহ বলতেন, কিন্তু নিউ হরাইজন্স উৎক্ষেপণের পর থেকে এর নাম হয়েছে ‘বামন গ্রহ’৷
ছবি: Reuters/NASA New Horizons
যেখান থেকে শুরু
২০০৬ সালের ১১ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার এই কেপ ক্যানাভেরাল এয়ারফোর্স স্টেশন থেকেই যাত্রা শুরু করেছিল নিউ হরাইজন্স৷ সেই থেকে মহাকাশযানটি ছুটেই চলেছে সেকেন্ডে ১৬ কিলোমিটার বেগে৷
ছবি: NASA
তুলনা
সূর্যের সবচেয়ে কাছের গ্রহ বুধ, শুক্র, পৃথিবী এবং মঙ্গল৷ বামন গ্রহ সেরেসের পরে বৃহস্পতি, শনি, ইউরেনাস ও নেপচুন৷ দু’টি ক্ষুদ্র বিন্দুর মতো দেখাচ্ছে প্লুটো এবং তার চাঁদ শ্যারনকে৷ এই বিন্দুর মতো প্লুটোর ব্যাসই প্রায় ২,৩৭০ কিলোমিটার৷ আগে একে আরো বড় মনে করা হতো৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বিশাল ক্যামেরা
এটি নিউ হরাইজন্সে ক্যামেরা সংযোজনের সময়ের ছবি৷ লং রেঞ্জ রিকনেসেন্স ইমেজ, সংক্ষেপে ‘লরি’ নামের এই ক্যামেরার ওজন ৮ দশমিক ৬ কিলোগ্রাম৷ ক্যামেরার প্রায় পুরোটা জুড়েই আছে বেশ বড় এক দূরবীন৷ দূরবীনটির ওজন ৫ দশমিক ৬ কিলোগ্রাম৷