নিয়মিত রক্তদানকে অনেকেই জীবনের অংশ করে নিয়েছেন৷ তারপরও সারা বিশ্বে জটিল রোগে আক্রান্ত এবং অস্ত্রোপচারের টেবিলে শোয়া রোগীদের জীবন বাঁচাতে গবেষকরা তাকিয়ে আছেন ‘স্টেম সেল’ থেকে কৃত্রিম উপায়ে রক্ত তৈরির গবেষণার দিকে৷
বিজ্ঞাপন
যুক্তরাজ্যের প্রায় চার শতাংশ মানুষের কাছ থেকে প্রতি বছর রক্ত সংগ্রহ করে স্কটিশ ন্যাশনাল ব্লাড ট্রান্সফিউশন সার্ভিস৷ নতুন নতুন দাতা খোঁজার তাগিদ থেকে এ প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা সব সময়ই চেষ্টা করেন, যাতে প্রথমবার রক্ত দিতে আসা দাতাদের কোনো বিরূপ অভিজ্ঞতা না হয়৷ পাশাপাশি কৃত্রিম রক্ত তৈরির উপায় বের করতে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন ট্রান্সফিউশন সার্ভিসের বিজ্ঞানীরার৷
এ প্রতিষ্ঠানের পরিচালক (মেডিকেল) মার্ক টার্নার বলেন, প্রাপ্তবয়স্ক স্টেম সেল থেকে রক্ত উৎপাদন করা সম্ভব – তত্ত্বীয়ভাবে তা আগেই জানা ছিল৷ কিন্তু এসব কোষের সংখ্যা বৃদ্ধির সীমাবদ্ধতার কারণে এ পদ্ধতিতে বড় পরিসরে রক্ত তৈরি করা সম্ভব হয় না৷
‘‘এখন বিজ্ঞানীরা যেটা করতে পারেন, তা হলো ভ্রুণ বা পূর্ণবয়স্ক কলাতন্ত্র থেকে ‘প্লুরিপোটেন্ট স্টেম সেল' সংগ্রহ করা, যা থেকে অনেক বেশি পরিমাণে স্টেম সেল সংগ্রহ করা যায়৷ এই গবেষণায় সফল হতে আমাদের আরো বহু পথ যেতে হবে৷''
স্ট্রোকের লক্ষণ ও করণীয়
স্ট্রোক! শুনলেই কেমন যেন আঁতকে উঠে সবাই৷ মস্তিষ্কের রক্ত চলাচলে ব্যাঘাতের কারণে হতে পারে স্ট্রোক৷ ফলে শরীরের এক পাশ অবশ হয়ে যেতে পারে৷ বাকশক্তিও বন্ধ হয়ে যেতে পারে৷ সারাজীবন হয়তো বা হুইলচেয়ারে চলতে হতে পারে৷
ছবি: Sebastian Kaulitzki - Fotolia.com
স্ট্রোক বিপজ্জনক
মস্তিষ্কের রক্ত চলাচলে ব্যাঘাতের কারণে এই রোগ যে কোনো সময় যে কারও হতে পারে একেবারে হঠাৎ করেই৷ স্ট্রোক হলে বাকশক্তি, দৃষ্টিশক্তিও হারিয়ে যেতে পারে৷ শরীরের যে-কোনো অংশ অবশ হতে পারে৷ সারাজীবন হয়তো বা হুইলচেয়ারে চলতে হতে পারে৷ তবে এটা নির্ভর করে মস্তিষ্কের কোন অংশে স্ট্রোক হয়েছে বা আঘাতটা কত বেশি তার ওপর৷
ছবি: Sebastian Kaulitzki - Fotolia.com
স্ট্রোকের লক্ষণ ও ঝুঁকি
মাথা ঘুরানো, হাটতে অসুবিধা হওয়া, চোখে ঘোলাটে দেখা এসব অসুবিধা দেখা দেয় স্ট্রোক হওয়ার আগে৷ ডায়াবেটিস, অতিরিক্ত মোটা, উচ্চরক্তচাপ, ধূমপান, মদ্যপান, স্ট্রেস ইত্যাদি স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়৷
ছবি: PeJo - Fotolia.com
একেবারেই দেরি নয়
যে-কোনো জায়গায় যে-কোনো সময় মস্তিস্কে রক্তক্ষরণ হতে পারে৷ তখন দেরি না করে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে তা না হলে হয়তো দেরি হয়ে যেতে পারে৷
ছবি: Robert Kneschke - Fotolia.com
জার্মানিতে স্ট্রোকে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা
প্রতি বছর জার্মানিতে ২৬০,০০০ মানুষ স্ট্রোকে আক্রান্ত হচ্ছে৷ মৃত্যুর কারণ হিসেবে স্ট্রোকের স্থান তৃতীয় ৷ সারা বিশ্বেই স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়া রোগীর সংখ্যা দিনদিন বেড়েই চলছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
গবেষণা
আর সে কারণেই স্ট্রোক নিয়ে গবেষণা জরুরি হয়ে পড়েছে৷ জার্মানিতে গত ২০ বছরে স্ট্রোক থেরাপি বেশ শক্তিশালী হয়েছে, বলেন প্রফেসর ইওয়াখিম রোটার, হামবুর্গ আসক্লেপিয়োস ক্লিনিক৷ স্ট্রোকে আক্রান্ত গড় আয়ু মেয়েদের ৭৫ আর পুরুষদের ৭০ বছর৷ স্ট্রোকের কবলে পড়তে পারে শিশু কিশোররাও৷
শিশুরাও এর বাইরে নয়
জার্মানিতে প্রতিবছর স্ট্রোকে আক্রান্ত হয় ৩০০ শিশু ৷ এর মধ্যে এক তৃতীয়াংশ আবার নবজাতক শিশু৷শুধু তাি নয় মাতৃগর্ভেও আক্রান্ত হতে পারে শিশু৷ তাছাড়া বংশগত কারণে এমনটা হতে পারে৷শিশুদের ক্ষেত্রে অনেক সময় কয়েক মাস বা কয়েক বছর পর হয়তো মস্তিষ্কের ক্ষতি ঠিক মতো বোঝা যায়৷
ছবি: Cristina Quicler/AFP/Getty Images
নিয়মমতো চলতে হবে
স্ট্রোক হলে মানুষ মুহূরতেই অথর্ব হয়ে যেতে পারে৷ তাদের হতে হয় পরের উপর নির্ভরশীল৷ তাদের বুঝে শুনে খাওয়া-দাওয়া করতে হয়৷ করতে হয় নিয়মিত ব্যায়াম৷ এড়িয়ে চলতে হয় বাড়তি স্ট্রেস৷ কারণ যদি কারও দ্বিতীয়বার স্ট্রোক হয় তাহলে পরিণতি মারাত্মক হতে পারে৷ কাজেই প্রথমবার স্ট্রোক হওয়ার পর থেকে সাবধানতা অবলম্বন করতে হয়৷ নিয়মিত ব্লাডপ্রেশার মাপা প্রয়োজন এবং হাসিখুশি থাকাটাও জরুরি৷
ছবি: Fotolia/Robert Kneschke
7 ছবি1 | 7
যুক্তরাজ্যের গবেষকরা আপাতত পরীক্ষাগারে লোহিত রক্তকনিকা তৈরির চেষ্টা করছেন, যা হবে পরিমাণে বেশি এবং মানব দেহে প্রবেশ করালে কোনো ঝুঁকি তৈরি হবে না৷
টার্নার বলেন, এ পদ্ধতি খুবই জটিল৷ এ সব কোষের সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য পাঁচ থেকে ছয়বার কালচার করতে হয়৷ আর লোহিত কনিকা তৈরি হতে সময় লাগে প্রায় এক মাস৷
‘‘আমাদের এখন এই কৌশলকে পরীক্ষাগার থেকে পুরোপুরি একটি উৎপাদন প্রক্রিয়ায় পরিণত করতে হবে৷ এ কাজে মান নিয়ন্ত্রণ এবং খরচ কম রেখে অন্যান্য শর্ত পূরণ করা বেশ কঠিন৷ ১০ লাখ রক্ত কনিকা তৈরি করতে যদি ১০ লাখ পাউন্ড প্রয়োজন হয়, তাহলে সেই রক্ত কারো কাজে আসবে না৷''
উন্নত দেশগুলোর হাসপাতাল ও ব্লাড ব্যাংকে চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় রক্তের পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকলেও গরিব দেশগুলোর পরিস্থিতি ভিন্ন৷ বিশ্বে প্রতিদিন যে পরিমাণ রক্ত সংগ্রহ করা হয় তার অর্ধেক গ্রহণ করে বিশ্বের ১৫ শতাংশ মানুষ, যাঁরা আবার বিভিন্ন উন্নত দেশের বাসিন্দা৷
টার্নার বলেন, ‘‘প্রতি বছর বিশ্বে দেড় লাখ নারী সন্তান জন্ম দেয়ার পর রক্তক্ষরণে মারা যান৷ রক্তের সরবরাহ বাড়ানো গেলে এই মায়েদের অনেককেই বাঁচানো সম্ভব হবে৷''
কথার খাতিরে গবেষণাগারে তৈরি রক্তকে ‘কৃত্রিম' বলা হলেও আসলে তা মোটেও কৃত্রিম নয়, কেননা মানুষের কোষ থেকেই এ রক্ত তৈরি হচ্ছে৷ আর গবেষণার কাজে ভ্রুণের ব্যবহার নিয়ে বিতর্ক থাকলেও ত্বকের কোষ থেকে যে প্রক্রিয়ায় রক্ত তৈরির কথা গবেষকরা ভাবছেন, তা নিয়েও কোনো আপত্তি এ পর্যন্ত ওঠেনি৷