আজকের যুগে স্ট্রেস বা মানসিক চাপ একটা বড় সমস্যা৷ কিন্তু তা যদি জিনের মাধ্যমে আপনার সন্তানসন্ততিদের কাছে পৌঁছায়, তাহলে কী করা উচিত? বিজ্ঞানীরা ইঁদুরের উপর পরীক্ষা চালিয়ে সেই প্রক্রিয়া বোঝার চেষ্টা চালাচ্ছেন৷
বিজ্ঞাপন
স্ট্রেস বা মানসিক চাপের সবচেয়ে মারাত্মক অবস্থা৷ অপ্রত্যাশিত, অনিবার্য, ভোলা যায় না – মনের মধ্যে এমন সব ছবি ভেসে ওঠে চরম পীড়া দেয়৷ শুধু স্মৃতিভাণ্ডারে নয়, জিনের মধ্যেও তা থেকে যায়৷ হ্যাঁ, ঠিকই শুনেছেন৷ ট্রমা বা চরম অভিজ্ঞতার ছাপ বংশানুক্রমিক হতে পারে৷
যেমন জুরিখ বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবে একটি ইঁদুরের ঠিক তেমনই ট্রমা হয়েছে৷ অথচ তার এমন কোনো সাক্ষাৎ অভিজ্ঞতা হয়নি৷ কিন্তু তার এক পূর্বপুরুষের তেমন ট্রমা হয়েছিল৷ বাচ্চা বয়সে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে তার মা'কে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে৷ সেই চরম স্ট্রেসের অভিজ্ঞতার ছাপ কয়েক প্রজন্ম ধরে বংশের মধ্যে থেকে গেছে৷
প্রায় ৮ বছর আগে নিউরোবায়োলজিস্ট ইসাবেল মানসুই সেই আবিষ্কার করেন৷ তারপর থেকে তিনি বিষয়টি চর্চা করে চলেছেন৷ তিনি নাতি-পুতিদের মধ্যে প্রপিতামহের ট্রমার চিহ্ন খুঁজছেন৷ এমন আচরণ সংক্রান্ত পরীক্ষার সময়ে যতটা সম্ভব নীরব থাকতে হয়৷ ইসাবেল বলেন, ‘‘ইঁদুরটিকে দেখে কিছু বোঝার উপায় নেই৷ যেমন কোনো মানুষ যৌন নিপীড়নের শিকার হয়ে ট্রমায় ভুগলেও তাকে দেখে সেটা বোঝা যাবে, এমনটা ধরে নেওয়া যায় না৷''
স্ট্রেস বা মানসিক চাপ কমানোর সেরা কিছু কৌশল
যাঁরা প্রায়ই মানসিক চাপের মধ্যে থাকেন তাঁদের ডিপ্রেশন, হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের মতো অসুখ হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেশি৷ তাই শত ব্যস্তার মাঝেও নিজেকে কীভাবে এ সব অসুখের ঝুঁকি থেকে দূরে রাখা সম্ভব, তার সেরা টিপসগুলো জেনে নিন৷
ছবি: Colourbox
ব্যায়াম বা খেলাধুলা
হালকা ব্যায়াম বা খেলাধুলা মানসিক চাপ কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে৷ জগিং বা সাইকেল চালালে স্ট্রেস হরমোন কমে গিয়ে হৃদপিণ্ডকে সুস্থ রাখে৷ সমীক্ষায় দেখা গেছে ক্লান্ত, পরিশ্রান্ত মানুষকেও হালকা খেলাধুলা বা ব্যায়াম প্রফুল্ল রাখে৷ তবে অবশ্যই মানসিক চাপ আরো বেড়ে যাওয়ার মতো কোনো প্রতিযোগিতামূলক খেলাধুলা নয় কিন্তু!
ছবি: picture alliance/dpa/B. Pedersen
রিল্যাক্স করার কৌশল
পেশী রিল্যাক্স করার নতুন কৌশলগুলোর মধ্যে যোগব্যায়াম বা ইয়োগা এবং মেডিটেশনের কথা বলছেন বিশেষজ্ঞরা৷ যার মাধ্যমে শারীরিক এবং মানসিক চাপ কমে শরীর ও মনকে করে হালকা ও ফুরফুরে৷ বিশেষজ্ঞের মতে, প্রচণ্ড চাপ থাকা সত্ত্বেও অনেকের ক্ষেত্রেই ইয়োগা বা মেডিটেশনের মতো রিল্যাক্স করার এই নতুন কৌশল বেশ সাহায্য করে৷
ছবি: Colourbox
সবুজ প্রকৃতি সুস্থ রাখে
নেদারল্যান্ডের গবেষকরা খুঁজে বের করেছেন যে, সবুজ রং মানুষের নার্ভকে একদিকে যেমন শান্ত রাখে তেমনি আনন্দিতও করে৷ কারণ সমীক্ষায় জানা যায়, যাঁরা শহরের কেন্দ্রস্থলে বসবাস করেন তাঁদের চেয়ে যাঁদের বাড়িতে বাগান আছে বা সবুজে ঘেরা বাগানের কাছাকাছি বসবাস করেন, তাঁরা মানসিকভাবে সুস্থ থাকেন৷
ছবি: Colourbox
কাজের ফাঁকে বিশ্রাম
শরীর এবং মন দু’টোরই মাঝে মাঝে ভালোভাবে বিশ্রামের প্রয়োজন হয়৷ বিশেষ করে যাঁরা সারাদিন কম্পিউটারের সামনে বসে কাজ করেন, তাঁদের মানসিক চাপে রক্তে স্ট্রেস হরমোনের মাত্রা বেড়ে যায়৷ এক্ষেত্রে কাজের ফাঁকে খানিকক্ষণ মুক্ত বাতাসে হাঁটা বা হালকা ব্যায়াম করলে আবার বেশ তরতাজা বা ফ্রেশ হয়ে কর্মস্থলে ফেরা যায়৷
ছবি: Fotolia/Andreas Haertle
মনকে শান্ত করার বিশেষ জায়গা
কিছুক্ষণের নীরবতা মাঝে মাঝে শরীর ও মনকে এতটাই শান্ত করতে পারে যে মানসিক চাপ বা স্ট্রেসের বিরুদ্ধে তা ঠিক যেন ওষুধের মতো কাজ করে৷ তাই বাড়ির কোথাও একটি খালি ঘরে দিনে ১৫ থেকে ২০ মিনিট সময় কাটাতে পারেন৷ যারা বড় শহরে থাকেন, তারা চলে যান কোনো মিউজিয়ামে বা লাইব্রেরিতে৷ আর শরীর ও মনকে শান্ত করতে পারে মসজিদ, মন্দির বা গির্জার মতো ধর্মীয় স্থানগুলোও৷
ছবি: DW/D. Maksimovic
5 ছবি1 | 5
অর্থাৎ এর জন্য এক পরীক্ষার প্রয়োজন রয়েছে৷ ইঁদুরটিকে ঠান্ডা পানির শক বা ধাক্কা দেওয়া হবে৷ এর মাধ্যমে মানসিক অসুস্থতা প্রকাশ পায়, এমনকি তা পরিমাপও করা যায়৷ ইঁদুরটি কেমন আচরণ করবে? দেখা গেল, ইঁদুরটি মরিয়া হয়ে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করছে৷
পরীক্ষাটি দেখতে নিষ্ঠুর মনে হলেও জেলা কর্তৃপক্ষ এর অনুমতি দিয়েছে৷ ইসাবেল মানসুই বলেন,‘‘অবশ্যই, কিন্তু বলপূর্বক এই সাঁতারের পরীক্ষা স্বাভাবিক মানদণ্ড হিসেবে স্বীকৃত৷ প্রাণীটির জন্য এটা স্ট্রেস বৈকি৷ দেখা যাচ্ছে, ইঁদুরটি হাল ছেড়ে নিজেকে ভাসিয়ে দিয়েছে৷''
এমন পরিস্থিতিতে স্বাভাবিক ইঁদুরের আচরণ কিন্তু একেবারে বিপরীত হয়৷ সে লড়াকু মনোভাব দেখিয়ে কয়েক মিনিট ধরে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করে৷ ট্রমা থাকলে ইঁদুর অনেক দ্রুত হাল ছেড়ে দেয়, এক্ষেত্রে যেমনটা দেখা যাচ্ছে৷ ইসাবেল মানসুই অবশ্য মনে করেন, ৬ মিনিট অত্যন্ত দীর্ঘ সময়৷ সেক্ষেত্রে ইঁদুরটিকে পানি থেকে সরিয়ে ফেলা উচিত৷