বিশ্বজুড়ে প্রতিবছর অন্তত ১০ লাখ নারী স্তন এবং জরায়ু মুখের ক্যানসারে আক্রান্ত হয়৷ আর প্রতি বছর এই দু'টি রোগে আক্রান্ত নারীদের দুই তৃতীয়াংশের মৃত্যু হয়৷ বাংলাদেশের মতো দেশগুলোতে এই মৃত্যু হার আরও বেশি৷
বিজ্ঞাপন
চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নতির প্রেক্ষাপটে আমরা জানি যে, স্তন এবং জরায়ু মুখের ক্যানসারে আক্রান্ত নারীদের ম্যামোগ্রাফি এবং রেডিওথেরাপির মতো কিছু ডায়গনিস্টিক এবং চিকিত্সা সেবা দেয়া সম্ভব৷ বিশেষ করে প্রাথমিক অবস্থার ক্যানসার মোকাবিলা করার জন্য এসব সেবা বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে৷ কিন্তু এই চিকিৎসাপদ্ধতি অনেক ব্যয়বহুল হওয়ার কারণে প্রতি বছর লাখো নারীর মৃত্যু হয়৷
গবেষকরা বলছেন, এ প্রেক্ষাপটে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এগিয়ে না এলে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশের নারীদের এই প্রাণঘাতী রোগ থেকে বাঁচানো মুশকিল হবে৷ গবেষকরা তাই আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টার আহ্বান জানাচ্ছেন, যাতে করে ২০৩০ সালের মধ্যে স্তন এবং জরায়ু মুখের ক্যানসার প্রতিরোধে এবং মৃত্যুর হার কমানোর ক্ষেত্রে উন্নতি সাধন করা যায়৷
জরায়ু মুখ ক্যানসার প্রতিরোধে করণীয়
জরায়ু মুখে ক্যানসার বিশ্বব্যাপী নারী মৃত্যুর অন্যতম কারণ৷ বাংলাদেশেও প্রতি বছর প্রায় ১৮ হাজার নারী নতুন করে জরায়ু মুখ ক্যানসারে আক্রান্ত হচ্ছেন এবং প্রতি বছর প্রায় ১২ হাজার নারী এই ক্যানসারে মৃত্যু বরণ করেন৷
প্যাপ টেস্ট নামের একটি পরীক্ষার মাধ্যমে জরায়ু মুখের কোষের পরিবর্তন নির্ণয় করা হয়৷ ‘ব্রাশ' অথবা ‘স্পেকুলাম' নামক সরঞ্জাম জরায়ু মুখে প্রবেশ করিয়ে জরায়ু থেকে কোষ সংগ্রহ করা হয় এবং তা পরীক্ষার জন্য ল্যাবরেটরিতে পাঠানো হয়৷ জরায়ু কোষে যে কোনো ধরনের পরিবর্তন ধরা পড়লেই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দ্রুত সুনিদির্ষ্ট চিকিৎসা শুরু করতে পারেন, যাতে ভবিষ্যতে রোগীটির ক্যানসারে আক্রান্ত হবার আশঙ্কা না থাকে৷
ক্যানসারের যে ধরনের চিকিৎসা সম্ভব
ক্যানসার চিকিৎসার নানা উপায় রয়েছে৷ রোগের ধরন, মাত্রা এবং নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে প্রয়োজন অনুযায়ী সেগুলো অবলম্বন করা হয়৷ চলুন জেনে নেই ক্যানসার চিকিৎসার সাত উপায় সম্পর্কে৷
ছবি: Imago/photothek
সার্জারি
একজন রোগীর দেহ থেকে ক্যানসারের জীবাণু বের করে ফেলতে অনেক সময় সার্জারি করা হয়৷ এক্ষেত্রে চিকিৎসকরা ছোট এবং পাতলা ছুরি ব্যবহার করে চামড়া, মাংস, এমনকি কখনো কখনো হাড় কেটেও রোগীর ক্যানসার আক্রান্ত অংশ বের করে আনেন৷ এই অপারেশনের সময় ব্যথা অনুভূত না হলেও পরবর্তীতে চামড়ার ক্ষত শুকাতে বেশ সময় লাগে এবং সেই সময় তীব্র ব্যথা অনুভূত হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Philbey
রেডিয়েশন থেরাপি
রেডিয়েশন থেরাপি বা রেডিওথেরাপিতে উচ্চমাত্রার রেডিয়েশন ব্যবহার করে ক্যানসার সেল ধ্বংস করা হয় এবং টিউমার ছোট করে ফেলা হয়৷ বিষয়টি অনেকটা এক্স-রে’র মতো৷ এক্সরে-তে কম মাত্রার রেডিয়েশন ব্যবহার করা হয়৷ ক্যানসার চিকিৎসার ক্ষেত্রে মাত্রাটা বেশি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
কেমোথেরাপি
কেমোথিরাপির মাধ্যমে আসলে ঔষধ ব্যবহার করে ক্যানসার সেল ধ্বংস করা হয়৷ এই প্রক্রিয়ায় ক্যানসার সেলের বৃদ্ধি থামানো কিংবা কমানো হয়৷ অনেক সময় শরীরের ভেতরে ক্যানসার টিউমারের আকার ছোট করে ব্যথা কমাতেও কেমোথেরাপি ব্যবহার করা হয়৷
ছবি: Reuters/K. Abdullah
ইমিউনথেরাপি
ইমিউনথেরাপির মাধ্যমে আসলে একজন ক্যানসার রোগীর শরীরের ইমিউন সিস্টেম বা রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে ক্যানসারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের চেষ্টা করা হয়৷ এটি একটি বায়োলজিক্যাল থেরাপি৷
ছবি: picture alliance/AP Photo/E. Thompson
টার্গেটেড থেরাপি
টার্গেটেড থেরাপির ক্ষেত্রে ক্যানসার সেলের বৃদ্ধির সুনির্দিষ্ট কারণ বের করে তা প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় ঔষধ ব্যবহার করা হয়৷ এক্ষেত্রে চিকিৎসকরা একজন রোগীকে নিয়ে যত গবেষণা করেন, ততই নির্ভুলভাবে রোগ প্রতিরোধের উপায় বের করতে পারেন৷
ছবি: Rhombos Verlag
হরমোনথেরাপি
যেসব ক্যানসার হরমোন ব্যবহার করে শরীরের মধ্যে বৃদ্ধি ঘটায়, সেগুলো প্রতিরোধে হরমোনথেরাপি ব্যবহার করা হয়৷ এই থেরাপির মাধ্যমে রোগ নিরাময় করা হলে তা আবার ফিরে আসার ঝুঁকি কম থাকে৷
ছবি: Colourbox
স্টেম সেল ট্রান্সপ্লান্ট
উচ্চমাত্রার কেমোথেরাপি বা রেডিয়েশনথেরাপি ব্যবহারের ফলে যেসব ক্যানসার রোগীর শরীরের রক্ত উৎপাদনকারী স্টেমসেল ধ্বংস হয়ে যায়, তাদের চিকিৎসায় স্টেম সেল ট্রান্সপ্লান্ট থেরাপি ব্যবহার করা হয়৷ এই প্রক্রিয়ায় রোগীর শিরায় সিরিঞ্জের মাধ্যমে স্বাস্থ্যবান স্টেমসেল প্রবেশ করিয়ে দেয়া হয়৷ এরপর সেগুলো বোন মেরো০তে পৌঁছে কাজ শুরু করে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/ Waltraud Grubitzsch
প্রিসিশন মেডিসিন
এই প্রক্রিয়ায় একজন ক্যানসার রোগীর ‘জেনেটিক্যাল’ পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে চিকিৎসকরা তাঁর জন্য উপযুক্ত চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন৷ কেউ কেউ এটাকে ‘পার্সোনালাইজড মেডিসিন’-ও বলেন৷ তথ্যসূত্র: ক্যানসার ডটগভ
ছবি: Colourbox/Pressmaster
8 ছবি1 | 8
যৌন সংস্পর্শ জরায়ু মুখের ক্যানসার ছড়ানোর প্রধান কারণ৷ যৌন সক্রিয় প্রতিটি নারীই তাই এই ঝুঁকির আওতাভুক্ত৷ যৌন সক্রিয় সকল নারীর দৈহিক মিলন শুরুর তিন বছর পর থেকে বছরে একবার প্যাপ টেস্ট করা প্রয়োজন৷ যদি পরপর তিনটি পরীক্ষার ফলাফলে কোনো সমস্যা চিহ্নিত না হয়, সেক্ষেত্রে প্রতি তিন বছরে একবার প্যাপ টেস্ট করা যেতে পারে৷ মেনোপজ অথবা জরায়ুর আংশিক অপসারণের পরেও প্যাপ টেস্ট অব্যাহত রাখা প্রয়োজন৷ তবে সত্তরোর্ধ নারীদের জন্য যদি বিগত দশ বছরে পর পর তিনটি পরীক্ষার ফলাফলে কোনো সমস্যা না থাকে, তাহলে তাঁদের আর প্যাপ টেস্ট করার প্রয়োজন নেই৷ গর্ভবতী নারীদের ক্ষেত্রেও চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী প্যাপ টেস্ট করা যেতে পারে৷
জরায়ু মুখের ক্যানসার কোনো ছোঁয়াচে রোগ নয়৷ হিউম্যান প্যাপিলোমা নামক একটি ঘাতক ভাইরাস এই রোগের প্রধান কারণ৷ সাধারণত অধিকাংশ নারীই জীবদ্দশায় একাধিকবার এইচপিভি ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হয়৷ একজন নারীর সহজাত প্রতিরোধ ক্ষমতা বা কনডমের ব্যবহার কখনোই এই ইনফেকশনের বিরুদ্ধে স্থায়ী প্রতিরোধ হিসেবে কাজ করতে পারে না৷ সম্প্রতি জরায়ু মুখ ক্যানসার প্রতিরোধে অতি কার্যকর টিকা আবিষ্কৃত হয়েছে৷ পর পর তিন ডোজ টিকা, নিয়মিত প্যাপ টেস্টের মাধ্যমে স্ক্রিনিং, চিকিৎসকের পরামর্শ এবং সাবধানতা জরায়ু মুখের ক্যানসার প্রায় সম্পূর্ণরূপে প্রতিরোধ করতে পারে৷
স্তন ক্যানসার প্রতিরোধে করণীয়
নারীদের অন্যতম আর একটি ক্যানসার হলো স্তন ক্যানসার৷ সারা বিশ্বের নারীদের প্রতি ৮ জনের মধ্যে একজন স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত৷ বাংলাদেশেও প্রতি বছর প্রায় ২২ হাজার নারী নতুনভাবে স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হচ্ছে এবং প্রায় ১৭ হাজার নারী স্তন ক্যানসারে মৃত্যুবরণ করছে৷ যে কোনো বয়সের নারীই স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হতে পারেন৷ তবে মাঝ বয়সি নারীদের এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা বেশি৷ বয়স বাড়ার সাথে সাথে ঝুঁকিও বাড়ে৷ সাধারণত পঞ্চাশোর্ধ্ব নারীদের স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে৷
পারিবারিক ইতিহাস না থাকলেও স্তন ক্যানসার হতে পারে৷ এছাড়া বিআরসি এ -১ এবং বিআরসি এ -২ জিন দু'টির বিবর্তন বা মিউটেশনের কারণেও স্তন ক্যানসার হতে পারে৷ স্তন ক্যানসার প্রতিরোধে সর্বপ্রথম যে জিনিসটির প্রয়োজন, তা হলো নারীদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করা৷ নিয়মিত ব্রেস্ট স্ক্রিনিং করতে হবে৷ ২০ বছর বয়স থেকে প্রত্যেক মহিলার উচিত স্তনের সুস্থতা সম্পর্কে সচেতন হওয়া৷ এজন্য প্রতি মাসে মাসিক শেষ হওয়ার ৫ম থেকে ৭ম দিনের যে কোনো দিন তাঁকে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে বা গোসলের সময় স্তন ও বগলের নিচের অংশ পরীক্ষা করতে হবে এবং যে কোনো সমস্যা থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে৷ ৪০ বছর বয়স থেকে প্রত্যেক নারীর বছরে একবার ম্যামোগ্রাম নামের বিশেষ পরীক্ষাটি করাতে হবে৷ সম্ভব না হলে স্তনের আল্ট্রাসনোগ্রাম করা যেতে পারে৷ এছাড়া, এই বয়সকালে বছরে একবার অন্তত চিকিৎসক দিয়ে স্তন পরীক্ষা করাতে হবে৷ নিয়ন্ত্রিত ও স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন, নিয়মিত স্তন পরীক্ষা এবং নির্দেশনা অনুযায়ী ম্যামোগ্রাম করলে স্তন ক্যানসার প্রতিরোধ এবং প্রাথমিক অবস্থার রোগ নির্ণয় করা সম্ভব৷
বিশ্বব্যাপী সার্বজনীন স্বাস্থ্য কর্মসূচী বাস্তবায়ন করা এবং এক্ষেত্রে স্থায়ী উন্নয়নের লক্ষ্য অর্জনের জন্য নারীদের স্তন ক্যানসার এবং জরায়ু মুখের ক্যানসার চিকিৎসায় আন্তর্জাতিক অঙ্গীকার একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে৷ বিশেষত নিম্ন এবং মধ্যম আয়ের দেশে নারীদের জরায়ু মুখ ও স্তন ক্যানসার চিকিৎসায় সার্বিক সহায়তা করা প্রয়োজন৷
নিম্ন এবং মধ্যম আয়ের দেশে এই দু'টি ক্যানসারের ভয়াবহতার মাত্রা এবং প্রকৃতি সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহের অভাব রয়েছে৷ জরায়ু মুখ ও স্তন ক্যানসারের প্রকৃত চিত্র পাওয়ার জন্য এক্ষেত্রে যথেষ্ট উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন৷ লক্ষ লক্ষ নারী প্রতি বছর বিনা চিকিৎসায় মারা যাচ্ছেন৷ তাঁদেরকে সাশ্রয়ী মূল্যে প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা দেয়া প্রয়োজন, যাতে ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী নারীরা এই দু'টি ঘাতক ব্যাধির ভয়াবহতা থেকে বেরিয়ে আসতে পারে৷
স্তন ক্যানসার থেকে সাবধান!
ক্যানসারের কথা শুনলে কে ভয় না পায়? আর তা যদি তাঁর নারীত্বের প্রতীক, সুন্দর, সডৌল স্তনটিতে হয়, তাহলে ভয়ের মাত্রা আরো বেড়ে যায়৷ দুর্ভাগ্য হলেও সত্যি যে অন্যান্য ক্যানসারের চেয়ে স্তন ক্যানসারেই মারা যায় সবচেয়ে বেশি নারী৷
ছবি: picture-alliance/dpa
জার্মান ক্যানসার সোসাইটির তথ্য
জার্মান ক্যানসার সোসাইটির তথ্য অনুযায়ী, জার্মানিতে প্রতি বছর প্রায় ৭০ হাজার নারীর স্তন ক্যানসার নির্ণয় করা হয়, যার মধ্যে মারা যায় ১৭ হাজার৷ নারীদের অন্যান্য ক্যানসারের মধ্যে স্তন ক্যানসারেই হয় সবচেয়ে বেশি নারী৷ এতে মানুষ মারা গেলেও, এ ক্যানসার খুব মারাত্বক নয়৷ কারণ সময় মতো ধরা পড়লে এ রোগ প্রতিরোধ সম্ভব৷
ছবি: Fotolia/S. Bähren
স্তন ক্যানসারের লক্ষণ
স্তনের চামড়ায় ভাজ, লাল হওয়া বা কুচকে যাওয়া, স্তনবৃন্ত ভেতরের দিকে ঢুকে যাওয়া কিংবা বৃন্ত থেকে রস ক্ষরণ হওয়া – স্তনে এ ধরনের কোনো পরিবর্তন দেখা দিলে দ্রুত ডাক্তারের কাছে যাওয়া দরকার৷ তবে সব টিউমার বা পরিবর্তনই যে ক্যানসারে রূপ নেয়, তা কিন্তু নয়!
ছবি: Getty Images/J. Sullivan
মেমোগ্রাফি
‘মেমোগ্রাফি’ এমন একটি পরীক্ষা যাতে স্তনে একেবারে ক্ষুদ্র গিট, চাকা বা মাংসপিণ্ডের উপস্থিতি ধরা পড়ে৷ তাই সময়মতো মেমোগ্রাফি করানো প্রয়োজন৷ বিশেষকরে ৫০-এর ঊর্ধে যাঁদের বয়স, তাঁদের ক্ষেত্রে অবশ্যই এটা নিয়মিত করাতে হবে৷ তাছাড়া প্রত্যেক নারীরই বছরে অন্তত একবার স্ত্রী বিশেষজ্ঞের কাছে স্তন ও জরায়ু পরীক্ষা করানো উচিত৷
ছবি: Colourbox
নিজেই পরীক্ষা করুন
৩০ বছর বয়সের পর থেকে প্রত্যেক নারীর নিজেরই নিজের স্তন পরীক্ষা করা উচিত৷ এই পরীক্ষা করতে হবে ‘পিরিয়ড’ বা মাসিক হওয়ার ঠিক পরে, অর্থাৎ মাসে অন্তত একবার৷ স্তনের ওপর থেকে নীচে, নীচ থেকে ওপরে এবং এপাশ থেকে ওপাশ – নানাভাবে স্তন দুটি টিপে পরীক্ষা করতে হবে৷ বোঝার চেষ্টা করতে হবে স্তনের ভেতর শক্ত কিছু আছে কিনা৷ তবে স্তনে গিট, চাকা বা টিউমার আছে কিনা তা বোঝার জন্য ডাক্তারের কাছে যাওয়াই স্রেয়৷
ছবি: Fotolia/Forgiss
স্তন ক্যানসার রোধে অ্যাঞ্জেলিনা জোলি
হলিউডের ‘আইকনিক’ অভিনেত্রী অ্যাঞ্জেলিনা জোলির মা মারা যান স্তন ক্যানসারে৷ সেই জিন রয়েছে অ্যাঞ্জেলিনার শরীরে৷ আর সেজন্যই অ্যাঞ্জেলিনা স্তন ক্যানসারকে প্রতিরোধ করতে ‘মাস্টেকটমি’ বা স্তনব্যবচ্ছেদ করিয়েছেন৷ শুধু তাই নয়, অন্য মহিলাদের সচেতন করতে জানিয়েছেন তাঁর নিজের অভিজ্ঞতার কথাও৷
ছবি: Reuters/D. Moloshok
ক্যানসারের জিন
স্তন ক্যানসার হওয়ার নির্দিষ্ট কোনো কারণ নেই৷ তবে কারুর পরিবারে মা, খালা, ফুপু বা দাদি-নানির স্তন ক্যানসার থাকলে পরবর্তী প্রজন্মের এই রোগ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে৷ এমনটা হলে সেক্ষেত্রে বিশেষ সতর্কতার প্রয়োজন৷ অর্থাৎ খামখেয়ালি না করে নিয়মিত ডাক্তারি চেকাআপ করানো আর পাশাপাশি শারীরিক পরিশ্রম বা ব্যায়াম এবং শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা দরকার৷ছবিতে মায়ের সাথে অ্যাঞ্জেলিনা৷
ছবি: Reuters
ক্যানসার নির্ণয়ে মেমোগ্রাফিই সবচেয়ে ভালো পন্থা
‘‘গবেষকরা সবসময়ই ব্রেস্ট ক্যানসারের নতুন নতুন জিন খুঁজে পাচ্ছেন৷ তাই এর চিকিৎসাও নির্ভর করে স্তনের টিউমারের ধরণের ওপর৷ মেমোগ্রাফি ব্রেস্ট ক্যানসার নির্ণয় করার জন্য সবচেয়ে ভালো পন্থা৷ তবে স্তন ক্যানসারের চিকিৎসা শুরু করার আগে অবশ্যই দ্বিতীয় বা তৃতীয় বিশেষজ্ঞের মতামত নেওয়া প্রয়োজন৷’’ বলেন জার্মানির অন্যতম ক্যানসার বিশেষজ্ঞ ডা. কার্ল হাইৎস ম্যুলার৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ক্যানসারের ঝুঁকি কমায়...
প্রকৃতি নারীদের স্তনযুগল উপহার দিয়েছে, যাতে তাঁরা শিশুদের দুধ পান করাতে পারেন৷ তাই অনেকের কাছেই স্তন নারীত্বের প্রতীক৷ তবে এই নারীত্ব ধরে রাখতে প্রয়োজন সচেতনতার৷ জার্মান ক্যানসার সমিতির করা এক সমীক্ষা থেকে জানা যায়, প্রতিদিন আধঘণ্টা ব্যায়াম, স্বাস্থ্যকর খাবার, ধূমপান না করা, শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা ইত্যাদি করলে শতকরা ২০ থেকে ২৫ ভাগ ক্যানসারের ঝুঁকি কমে৷
ছবি: lunamarina/Fotolia.com
পুরুষদেরও কিন্তু স্তন ক্যানসার হয়!
পুরুষরা মনে করেন যে, স্তন ক্যানসার কেবল নারীদেরই হয়৷ তাই তারা এ ব্যাপারে মোটেই সচেতন নন৷ পুরুষদেরও স্তন ক্যানসার হয়, যদিও তা তুলনামূলকভাবে নারীদের চেয়ে অনেক কম৷ তাই পুরুষদেরও নিয়মিত স্তন পরীক্ষা করানো উচিত৷