নির্বাচন আদৌ হবে কি না, তা নিয়ে সংশয়ে বিশেষজ্ঞরা। সংঘর্ষ এড়াতেই নির্বাচন বন্ধ, দাবি প্রশাসনের।
বিজ্ঞাপন
আগামী ২৪ ডিসেম্বর নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল লিবিয়ায়। বহু দিন পর গণতান্ত্রিক নির্বাচন নিয়ে উৎসাহী ছিলেন লিবিয়ার মানুষ। কিন্তু শেষ মুহূর্তে নির্বাচন স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নেয় নির্বাচন কমিশন। ভেঙে দেওয়া হয় ইলেকটোরাল কমিটি। যার থেকে স্পষ্ট, অদূর ভবিষ্যতে নির্বাচন করানোর কোনো পরিকল্পনা নেই।
লিবিয়ায় এখন জাতিসংঘের মিশন কাজ করছে। মঙ্গলবার তারাই প্রথম একটি বিবৃতি পাঠায়। যাতে বলা হয়, এই সময় নির্বাচন হলে সংঘর্ষ হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। বিভিন্ন গোষ্ঠী মারমুখী হয়ে আছে। এরপরেই নির্বাচন স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতা চাইতে ত্রিপোলির জাতিসংঘ কেন্দ্রের সামনে অবস্থান নেন শত শত অভিবাসনপ্রত্যাশী৷ পুলিশের গুলিতে অন্তত ছয়জন নিহত হওয়ার পর লিবিয়া ছাড়তে মরিয়া তারা৷ বিস্তারিত ছবিঘরে...
ছবি: Nada Harib/REUTERS
ব্যাপক ধরপাকড়
এক সপ্তাহ আগে রা্জধানী ত্রিপোলির বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা অভিবাসনপ্রত্যাশীদের বিরুদ্ধে ব্যাপক অভিযান শুরু করে লিবিয়ার আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী৷ অভিযানে পাঁচ হাজারেরও বেশি অভিবাসনপ্রত্যাশীকে আটক করে কারাগারে পাঠানো হয়৷
ছবি: Hussam Ahmed/AFP
কারাগারে গুলি করে অভিবাসনপ্রত্যাশী হত্যা
পাঁচ হাজারেরও বেশি অভিবাসনপ্রত্যাশীকে রাখায় ত্রিপোলির কারাগারে ভিড় অত্যন্ত বেড়ে যায়৷ শুক্রবার ব্যাপক হাঙ্গামা শুরু হয়ে যায় সেখানে ৷ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ গুলি চালালে অন্তত ছয়জন অভিবাসনপ্রত্যাশী নিহত হয় বলে জাতিসংঘের অভিবাসন সংক্রান্ত সংস্থা আইওএম জানায়৷
ছবি: Ayman Al-Sahili/REUTERS
অভিবাসনপ্রত্যাশীদের পলায়ন
অতিরিক্ত ভিড়ে গোলযোগ বেধে গেলে এক সুযোগে অনেক অভিবাসনপ্রত্যাশী কারাগার থেকে পালিয়ে যায়৷ পরে অভিযান চালিয়ে তাদের অনেককে আবার আটক করে পুলিশ৷
ছবি: Ayman Al-Sahili/REUTERS
জাতিসংঘ কেন্দ্রে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের ভিড়
রবিবার ত্রিপোলির জাতিসংঘ কেন্দ্রের সামনে শত শত অভিবাসনপ্রত্যাশী ভিড় জমান৷ তাদের অনেকের শরীরের বিভিন্ন স্থানে ব্যান্ডেজ বা আঘাতের চিহ্ন ছিল৷
ছবি: Nada Harib/REUTERS
‘আমরা অভিবাসনপ্রত্যাশী, এটাই আমাদের অপরাধ’
লিবিয়া হয়ে ইউরোপে প্রবেশের উদ্দেশ্যে ত্রিপোলিতে আশ্রয় নিয়েছেন কয়েক হাজার অভিবাসনপ্রত্যাশী৷ তাদের একজন মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ বললেন, ‘‘অভিবাসনের আশায় দেশ ছেড়েছি- শুধু এটাই আমাদের অপরাধ৷ অপরাধীদের মতো আচরণ করা হচ্ছে আমাদের সঙ্গে৷’’ সুদান থেকে আসা ২৫ বছর বয়সি আব্দুল্লাহর দাবি, লিবিয়ায় এ পর্যন্ত পাঁচ জায়গায় বন্দি করা হয়েছে তাকে এবং প্রত্যেক জায়গাতেই তার ওপর অকথ্য নির্যাতন চালানো হয়েছে৷
ছবি: Nada Harib/REUTERS
নাদিয়া আবদেল রহমানের কথা
তিন বছর আগে সুদান থেকে লিবিয়ায় গেছেন নাদিয়া আব্দেল রহমান৷ স্বামী, দুই সন্তান, বোন, দুলাভাই এবং এক ভাগ্নিও ছিল তার সঙ্গে৷ কিন্তু দুর্বৃত্তরা তার স্বামীকে আটক করে মোটা অঙ্কের মুক্তিপণ দাবি করে৷ সেই টাকা দেয়ার পরও স্বামীকে মেরে ফেলা হয়৷ দুলাভাই মারা যান ভূমধ্যসাগরে ডুবে৷এখন নাদিয়ার একটাই কথা, ‘‘যে-কোনো উপায়ে আমরা লিবিয়া ছাড়তে চাই৷’’
ছবি: Ayman Al-Sahili/REUTERS
পাশে দাঁড়াতে চায় জাতিসংঘ
জাতিসংঘের অভিবাসন বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর বলেছে, ত্রিপোলির জাতিসংঘ কেন্দ্রের সামনে ভিড় করা অভিবাসনপ্রত্যাশীদের সহযোগিতা করতে প্রস্তুত তারা৷ তবে যাদের অবস্থা বেশি খারাপ, সহযোগিতার হাত তাদের দিকেই আগে বাড়ানো উচিত বলে মনে করে তারা৷ তাই অগ্রাধিকার তালিকায় কাদের রাখা যেতে পারে তা চিহ্নিত করার জন্য জাতিসংঘ কেন্দ্রের সামনের ভিড় কমানোর আহ্বান জানিয়েছে ইউএনএইচসিআর৷
ছবি: Nada Harib/REUTERS
7 ছবি1 | 7
এবারের নির্বাচনে প্রায় ৮০ জন প্রার্থীর লড়াই করার কথা ছিল। এর মধ্যে বেশ কিছু প্রার্থী হাইপ্রোফাইল। সকলেরই নিজস্ব গোষ্ঠী আছে। নির্বাচন ঘিরে সেই গোষ্ঠীগুলির মধ্যে সংঘর্ষ শুরুও হয়ে গিয়েছিল।
যুদ্ধবিধ্বস্ত লিবিয়ার রাজনৈতিক এবং সামাজিক পরিস্থিতি এখনো ভয়াবহ। একাধিক গোষ্ঠী, অসংখ্য দল ক্ষমতা দখলের মরিয়া চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তারই মধ্যে সেখানে কাজ করছে জাতিসংঘ। সব মিলিয়ে এক বেহাল অবস্থা।
জাতিসংঘের লিবিয়া বিশেষজ্ঞ ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, লিবিয়ার ভোট নিয়েও যথেষ্ট সংশয় ছিল। কীসের ভিত্তিতে নির্বাচন বিধি তৈরি হয়েছিল তাও স্পষ্ট নয়। স্পষ্ট নয়, প্রার্থী বাতিলের প্রক্রিয়া। এই সবকটি বিষয়ই সংঘর্ষের কারণ হতে পারতো বলে তিনি মনে করেন।
লিবিয়ার মানুষ অবশ্য নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে ছিলেন। একটি স্থায়ী সরকারের চাহিদা রয়েছে দেশে। কিন্তু এরপর আদৌ আর নির্বাচন হবে কি না, মঙ্গলবার সেই প্রশ্নই তুলেছেন বিশেষজ্ঞরা।