স্থপতির কাজ বাড়ি ডিজাইন করা৷ কিন্তু নিজের বাসা কি নিজেরই তৈরি করা উচিত? স্পেনের এক স্থপতি গাছপালার মাঝে নিজের জন্য অভিনব এক বসতবাড়ি তৈরি করিয়েছেন, যার ডিজাইন আন্তর্জাতিক স্তরে নজর কেড়েছে৷
বিজ্ঞাপন
গাছপালার মাঝে বসবাস
02:22
স্পেনের রাজধানী মাদ্রিদ থেকে মাত্র এক ঘণ্টা দূরে ‘এল এস্কোরিয়াল' মনাস্টারি বা মঠ৷ এলাকার আশেপাশের টিলাগুলির উপর অনেক ভিলা রয়েছে৷ এর মধ্যে ‘কাসা লেভেনে' চারিপাশের জঙ্গলের সঙ্গে যেন মিলেমিশে রয়েছে৷ প্রায় ১,৪০০ বর্গমিটার এলাকার উপর ৮০টি পাইন গাছ বাড়িটিকে এক অভিনব চরিত্র দিয়েছে৷ সবচেয়ে উপরের তলায় বাড়ির প্রবেশপথ৷ বসার ঘরে যেতে হলে সিঁড়ি দিয়ে কিছুটা নামতে হবে৷
বাড়ির মালিক রিচার্ড লেভেনে নিজে একজন স্থপতি৷ তা সত্ত্বেও নিজের বাড়ি পরিকল্পনার দায়িত্ব তিনি পুরোপুরি অন্যের হাতে তুলে দিয়েছিলেন৷ তিনি বলেন, আসলে স্থপতি হিসেবে নিজের বাড়ি পরিকল্পনা করা বড়ই কঠিন৷ নিজেকেই তো সেই বাড়িতে থাকতে হবে৷ রোজ সকালে উঠে নিজের সব ভুল দেখতে হবে৷ তারপর সারাদিন ধরে সেই সব ত্রুটি কাটানোর চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে৷ তখন মাথা খারাপ হয়ে যাবে৷ তাই এই দায়িত্ব অন্যের হাতে তুলে দিয়ে আমি খুশি৷''
আজব এক উল্টো বাড়ি
জার্মানিতেই তৈরি হয়েছে এমন এক বাড়ি যা পুরোপুরি উল্টো৷ বাড়ির ছাদ নীচে আর টেলিভিশন, ফ্রিজ, আসবাবপত্র সব ওপরে! চলুন ঘুরে দেখি আজব সেই বাড়ি৷
ছবি: picture-alliance/ZB/Sauer
উল্টো দুনিয়া
২০০৪ সালের ৪ সেপ্টেম্বর জার্মানির মেকলেনবুর্গ ফোয়রপমার্ন রাজ্যের ট্রাসেনহাইডে-তে নির্মাণ করা হয় অদ্ভুত এই বাড়ি৷ জার্মান ভাষায় বাড়িটির নাম, ‘ডি ভেল্ট শ্টেট কপ্ফ’, অর্থাৎ ‘পৃথিবীটা মাথার ওপরে দাঁড়িয়ে’৷ সত্যিই তাই৷ বাংলায় ‘হেঁট মুণ্ডু ঊর্ধ্ব পদ’ বলে একটা কথা আছে, ঠিক সেভাবে এ বাড়ির ছাদটা নীচে, আর নীচে থাকার জিনিসগুলো সব ওপরে৷ পর্যটকদের প্রধান আকর্ষণ হয়ে উঠেছে এই বাড়ি৷
ছবি: picture-alliance/ZB/Lösel
স্ক্রু আর আঠার কেরামতি
বাড়িটির নকশা করেছেন দুই পোলিশ স্থপতি ক্লাউডিউসৎজ গোলোস এবং সেবাস্টিয়ান মিকিচিউক৷ কেমন করে উল্টো করে সব তৈরি বা স্থাপন করা হলো? সবই স্ক্রু আর আঠার জাদু৷ ঘরের আসবাবপত্র, টেলিভিশন থেকে শুরু করে সাধারণত মেঝেতে বা ছাদের নীচে থাকে এমন সব জিনিস ওপরে লাগানো হয়েছে শুধু স্ক্রু আর আঠা দিয়ে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Büttner
অবাক তাকিয়ে রয়...
দর্শনার্থীরা গিয়ে অবাক হয়ে দেখেন সবকিছু৷ ছবিতে দেখুন, এক দর্শনার্থীর চোখের সামনে উল্টো হয়ে ঝুলছে একটা গাছের টব৷ অবাক তো লাগবেই!
ছবি: picture-alliance/dpa/Büttner
ভাগ্যিস সিঁড়িটা ঠিকঠাক!
উল্টো বাড়ি হলেও বাড়ির একটা জিনিস অন্তত ঠিক আছে৷ কী সেটা, জানেন? সিঁড়ি৷ সিঁড়িও যদি ওপরের দিকে থাকতো তাহলে দর্শনার্থীদের কী বিপদটাই না হতো!
ছবি: picture-alliance/ZB/Sauer
স্টিলের কাঠামো
ঘরের সব আসবাবপত্রের চাপটা পড়ে ছাদের ওপর৷ এমন বাড়ির কাঠামোটা একটু বেশি শক্ত না হলে কি চলে? সে কথা ভেবেই ইট-শুঁড়কির জায়গায় স্টিল ব্যবহার করে নির্মাণ করা হয়েছে ‘ডি ভেল্ট শ্টেট কপ্ফ’, নির্মাণকাজে ব্যয় হয়েছে ৩ লক্ষ ইউরো!
ছবি: picture-alliance/ZB/Sauer
5 ছবি1 | 5
বাড়িটি প্রায় ৫০০ বর্গ মিটার জমি জুড়ে দাঁড়িয়ে আছে৷ কাসা লেভেনে-এ একটি সমস্যা রয়েছে৷ জমিতে গাছের সংখ্যা কমানোর নিয়ম ছিল না৷ এডুয়ার্ডো আরোয়ো তাই এই পরিস্থিতি থেকে ফায়দা তুলে বাড়ির ডিজাইন করেছিলেন৷ রিচার্ড লেভেনে বলেন, ‘‘এই বাড়ি তৈরির ক্ষেত্রে সবচেয়ে জরুরি বিষয় ছিল যত কম সম্ভব গাছ কাটা৷ মাত্র ৮টি গাছ কাটতে হয়েছে, নতুন করে গাছও লাগানো হয়েছে৷ গাছই বাড়ির জ্যামিতি নির্ধারণ করেছে৷ গাছের মাঝেই বাড়িটির অস্তিত্ব৷ এডুয়ার্ডো তাই এটিকে অ্যান্টি বস্কে, অর্থাৎ জঙ্গল-বিরোধী নাম দিয়েছে৷''
এই বৈশিষ্ট্যের কারণেই বাড়ির ডিজাইন নিউ ইয়র্কে মিউজিয়াম অফ মডার্ন আর্ট ও লন্ডনের ডিজাইন মিউজিয়ামে স্থান পেয়েছে৷
যে সব বাড়ি তৈরিতে ৫০০ বছরেরও বেশি সময় লেগেছে!
কখনো টাকা ফুরিয়েছে, কোথাও বা আগ্রহ ফুরিয়েছে – বাড়ি তৈরি শেষ হতে হতে কেন শতাব্দীর পর শতাব্দী পার হয়ে যায়, তার অনেক কারণ থাকতে পারে৷ মস্কোর ক্রেমলিন বা জার্মানির উল্ম শহরের ক্যাথিড্রাল জানে সে কথা৷
ছবি: picture alliance/Arco Images
উল্ম ক্যাথিড্রাল, জার্মানি
বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু গির্জার চুড়া এই উল্ম ক্যাথিড্রালেই৷ গির্জাটি তৈরি হয়েছিল শুধুমাত্র স্থানীয় বাসিন্দাদের বদান্যতায়, তাই বুঝি ৫০০ বছরের বেশি সময় লেগেছে কাজ শেষ করতে৷ দ্য মাদার অফ ক্রাউডফান্ডিং প্রকল্পটির ক্রনিক অর্থাভাব ছিল, তাই জার্মানির সবচেয়ে বড় প্রটেস্টান্ট চার্চটির নির্মাণকার্য শেষ হয় ১৯৮০ সালে৷
ছবি: picture alliance/robertharding/M. Lange
মালবর্ক ক্যাসল, পোল্যান্ড
ইউরোপের সবচেয়ে বড় ইটের বাড়ি হলো এই মালবর্ক দুর্গ; তৈরি করতে ৭০০ বছরের বেশি সময় লেগে গেছে শুধু নকশা বদলানোর জন্যেই নয়, যুদ্ধ আর লুটতরাজের দরুণও বটে৷ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের যখন শেষ হতে চলেছে, তখন মালবর্ক দুর্গের অর্ধেকের বেশি ধ্বংস হয়ে যায়৷ আজ এটি ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট ও পোল্যান্ডের একটি মুখ্য টুরিস্ট অ্যাট্রাকশন৷
ছবি: picture alliance/robertharding/C. Kober
স্ট্রাসবুর্গ ক্যাথিড্রাল, ফ্রান্স
মহাকবি ইওহান ভল্ফগাং ফন গ্যোটে ছিলেন স্ট্রাসবুর্গ ক্যাথিড্রালের একজন ভক্ত৷ তিনি যখন স্ট্রাসবুর্গে পড়াশুনো করছেন, অষ্টাদশ শতাব্দীর সত্তরের দশকে, তখন ১৪২ মিটার উঁচু স্ট্রাসবুর্গ ক্যাথিড্রাল ছিল বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু গির্জে৷ তবু নির্মাণকার্য চলে আরো ১০০ বছর ধরে৷ শেষমেষ ১৯৭০ সালে দক্ষিণের চুড়োটি অসমাপ্ত রেখেই কাজ বন্ধ হয়৷
ছবি: picture alliance/Eibner-Pressefoto
মস্কোর ক্রেমলিন
রাশিয়ায় ক্ষমতার প্রতীকই হলো এই ক্রেমলিন,তার লাল ইট আর সোনালি গম্বুজ৷ অথচ এই ক্রেমলিন তৈরির কাজ শেষ হতে ৮০০ বছরের বেশি সময় লেগে গেছে৷ ষোড়শ আর সপ্তদশ শতাব্দীতে জার ও তাঁর পরিবারবর্গ এখানেই থাকতেন৷ পরে সোভিয়েত আমলে এটাই ছিল সরকারের আসন৷ আজ এর অনেকটাই মিউজিয়াম – আর গোটা কমপ্লেক্সটাই ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট৷
ছবি: picture alliance/ZB/J. Kalaene
ভাভেল, পোল্যান্ড
পোল্যান্ডের ক্রাকাও শহরের ভাভেল কমপ্লেক্সটিতে কাজ চলেছে গত এক হাজার বছরের বেশি সময় ধরে! পোল্যান্ডের নৃপতিরা এখানে থাকতেন৷ প্রতি শতাব্দীতে নতুন নতুন ভবন যোগ হয়েছে ভাভেলে – এমনকি গত শতাব্দীতেও৷ কাজেই ভাভেল-এর কাহিনি আজও সমাপ্ত হয়নি এবং কোনোদিনই সমাপ্ত হবে না বলে ধরে নেওয়া যায়৷