নতুনকে গ্রহণ করা মানেই কি পুরানোকে বর্জন করতে হবে? দুইয়ের মধ্যে মেলবন্ধন কি সম্ভব নয়? সুইজারল্যান্ডের এক স্থপতি গ্রামের একটি বাড়ির সংস্কারের ক্ষেত্রে ঠিক সেই চেষ্টাই করেছেন৷ ফলে গ্রামের নিজস্ব স্থাপত্যশৈলি নষ্ট হয়নি৷
বিজ্ঞাপন
গ্রামের সব বাড়িঘর যে এক রকম দেখতে, তার পেছনে রয়েছেন একজন স্থপতি৷ তিনি অষ্টাদশ শতাব্দীর একটি খামারবাড়ি সংস্কার করেছেন৷ আগে যেখানে শুয়োরের খোয়াড় আর খড়ের গাদা ছিল, সেখানে এখন সিমেন্ট দিয়ে তৈরি আধুনিক কাঠামো৷ তবে গ্রামের স্থাপত্য রীতি মেনেই তা করা হয়েছে৷ স্থপতি কুয়র্ট হাউয়েনস্টাইন বলেন, ‘‘কাঠামো ও গ্রামের নিজস্ব পরিচয় বজায় রেখে কীভাবে নতুন করে নির্মাণ করা যায়, সেটাই ছিল আমাদের লক্ষ্য৷ তবে নতুনত্বকে বর্জন করে নয়৷ এ নিয়ে বেশ ভাবতে হয়েছে৷ গ্রামের বিবর্তনের পথে নতুন নির্মাণ চালিয়ে যেতে হবে৷''
পুরানো ও নতুনের সহাবস্থান সত্যি দেখার মতো৷ হাউয়েনস্টাইনের স্ত্রী মারিলিস ড্যুস্টারহাউস বলেন, ‘‘আপনাদের স্বাগত জানাই৷ ভেতরে আসুন, বাড়িটা ভালো করে ঘুরে দেখাই৷ নীচে সবচেয়ে পুরানো অংশটি দেখা যাক৷ এখানে দুটি গুদামঘর ছিল৷ এদিকে জুসার, এখানে বাকি যন্ত্রপাতি ছিল৷ এই ঘরটি সন্ধ্যায় মিডিয়া রুম হয়ে যায়, মানুষ আরামে বসতে পারে৷''
জার্মানির বিখ্যাত সিনেমা হলগুলো
সিনেমা দেখার জন্য শীতকালটা দারুণ সময়৷ তাই ডয়চে ভেলে জার্মানির বিখ্যাত মুভি থিয়েটারগুলো তুলে ধরছে আপনাদের সামনে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
১৯৫০-এর আকর্ষণ
চিড়িয়াখানা বা জু-কে জার্মান ভাষায় বলে ‘সো’৷ একসময় বার্লিনের চিড়িয়াখানার নামানুসারে ‘সো পালাস্ট’ ছিল জার্মানির সবচেয়ে আকর্ষণীয় সিনেমা হল৷ সবাক চলচ্চিত্রের প্রথমদিকে, রোমি শ্নাইডার এবং সোফিয়া লরেনের মতো তারকাদের ছায়াছবিগুলো এই হলেই প্রথম ব্যাপক সাফল্য পেয়েছিল৷ দু’বছরের সংস্কারের পর সম্প্রতি আবার এটি খুলে দেয়া হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
স্থাপত্য শিল্প
চলচ্চিত্র শিল্পে ‘সো পালাস্ট’ যখন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে, এসেন শহরের ‘লিষ্টবুর্গ’ সিনেমা হল তখন স্থাপত্য শিল্পের অনন্য নির্দশন হয়ে উঠেছে৷ ৫০ এবং ৬০-এর দশকে সিনেমার প্রিমিয়ারের জন্য এই হলটিকেই সাধারণত বেছে নেয়া হতো৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সবচেয়ে বড় থিয়েটার
লিষ্টবুর্গ থিয়েটারে ১২৫০টি আসন রয়েছে৷ নির্মাণের পর ৮৫ বছর ধরে বিখ্যাত জার্মান চলচ্চিত্রগুলোর প্রিমিয়ার হয়েছে এখানে৷ ১৯৫১ সালের জুলাইতে অ্যামেরিকান সায়েন্স ফিকশন মুভি ডেস্টিনেশন মুন-এরও প্রদর্শনী হয়েছিল এখানে৷
ছবি: Otto Häublein/Fotoarchiv Ruhr Museum
বৃহত্তম মাল্টিপ্লেক্স
লিষ্টবুর্গের সাথে পরে যুক্ত হয় এসেনের নাম৷ জার্মানির বৃহত্তম মাল্টিপ্লেক্স এটি৷ এর আসন সংখ্যা ৫৩৭০ এবং এর মধ্যে হল আছে ১৬টি৷ এমনকি পুরো ইউরোপের মধ্যে সবচেয়ে বড় মাল্টিপ্লেক্স এটি৷ প্রতিদিন তাই হাজারো দর্শক এখানে বসে চলচ্চিত্র উপভোগ করেন৷ কিন্তু এক শতক আগেও চিত্রটা কিন্তু একেবারে ভিন্ন ছিল৷
ছবি: picture-alliance/dpa
শুরুর গল্প
ছবিতে গতি সঞ্চার শুরু হয় ১৮৯৫ সালে, যখন অগাস্ট এবং লুইস লুমিয়ার প্যারিসে প্রথম শর্ট ফিল্ম প্রদর্শন করেন৷ এর অনেক পরে, ১৯০৭ সালের ২১শে এপ্রিল নিজ বাড়িতে ‘থিয়েটার অফ লিভিং পিকচার্স’ নির্মাণ করেন কার্ল গ্যাব্রিয়েল৷ বর্তমানে তা গ্যাব্রিয়েল ফিল্ম থিয়েটার নামে পরিচিত, যেখানে এখনও ছবি দেখানো হয়৷
ছবি: CC-BY-SA-Privatarchiv Büche München
পূর্ব জার্মানির বায়োস্কোপ
বার্লিনে কার্ল মার্ক্স নামের যে রাস্তা আছে, সেখানকার ‘কিনো ইন্টারন্যাশনাল’ একসময় পূর্ব জার্মানির ছবি প্রিমিয়ারের গুরুত্বপূর্ণ স্থান ছিল৷ এখন সেটি ঐতিহাসিক ভবন হিসেবে সংরক্ষিত৷ জার্মানি বিভক্ত হওয়ার তিন মাস পর ১৯৬৩ সালের ১৫ই নভেম্বর এটার উদ্বোধন হয়৷ ১৯৮৯ সালের ৯ই নভেম্বর বার্লিন দেয়ালের পতনের দিন হাইনার কারো-র ‘কামিং আউট’ ছবির প্রিমিয়ারের পর, সেখানে আর কোনো চলচ্চিত্রের প্রদর্শনী হয়নি৷
ছবি: DW/E. Jahn
সবচেয়ে বড় স্ক্রিন
‘রুন্ডকিনো’ – রুন্ড মানে গোল এবং কিনোর অর্থ ছবিঘর৷ ড্রেসডেন শহরে ১৯৭২ সালে নির্মিত হয় এই থিয়েটারটি৷ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী স্থাপত্যের এক অনন্য নির্দশন এটি৷ এই ভবনটি ২০০৩ সাল থেকে সংরক্ষিত করা হয়েছে৷ বিশাল বড় এই থিয়েটারে আছে ৮৯৮টি আসন এবং বিরাট বড় স্ক্রিন৷
ছবি: Bundesarchiv, Bild 183-L1012-0015/cc-by-sa
ব্লকবাস্টারের প্রদর্শনী
ব্রেমানে অবস্থিত ‘অস্ট্রেটর’ নামের এই সিনেমা হলটি ১৯৬৯ সালের ৭ই নভেম্বর নির্মিত হয়৷ এখানে সাধারণ চলচ্চিত্রের চেয়ে ব্লকবাস্টার মুভিগুলোই বেশি দেখানো হত৷ যে কারণে ব্যবসায়িক সাফল্য এর অনেক বেশি৷ ১৩৪ আসনের এই থিয়েটারটি ‘সিনেমাটিক পোগ্রামিং’-এর জন্য জার্মান সরকারের বিশেষ পুরস্কারও পেয়েছে৷
ছবি: PD
8 ছবি1 | 8
সর্পিল পথে পুরানো থেকে নতুন বাড়ি যেতে হয়৷ মারিলিস আরও বলেন, ‘‘এখানে আগে গোলাঘর ছিল, যেখানে গরুর গাড়ি ঢুকে যেত৷ তারপর পশুদের এখান দিয়ে নীচের আস্তাবলে নিয়ে যাওয়া হতো৷ এটাই পুরানো অংশ, তার মাঝে নতুন অংশে যাবার পথ, যেখানে আমরা যাচ্ছি৷ এবার বাড়ির নতুন অংশে ঢুকছি৷ এর দুটি অংশ রয়েছে৷ প্রচুর আলো-বাতাস ঢোকে৷ উপরে ড্রয়িং রুম, নীচে আমার স্বামীর কাজের ঘর, পেছনে বেডরুম আর এখানে সুন্দর লাউঞ্জ৷''
যেখানেই সম্ভব মূল অংশ অক্ষত রাখা হয়েছে৷ আধুনিক রান্নাঘরের দেওয়ালটি সত্যি দেখার মতো অথবা জানালার পাশের বেঞ্চটি, যেখানে কত প্রজন্মের মানুষই না বসেছে৷ প্রাচীনের প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়েই সংস্কার চালানো হয়েছে৷ মারিলিস বলেন, ‘‘আমরা এখন বাড়ির সবচেয়ে পুরানো অংশে রয়েছি, এটাই মূল আকর্ষণ৷ এখানে যে পুরানো কাঠের প্যানেল দেখছেন, তা মোটামুটি অক্ষত রেখেই সংস্কার চালানো হয়েছে৷ জানালাগুলিও আগের অবস্থায় রয়েছে৷ ওভেনটিও আগের যুগের৷ শীতে ঘর গরম রাখে, সেই উত্তাপ বড়ই আরাম দেয়৷ নতুন আসবাবপত্রও এখানে দিব্যি খাপ খেয়ে যায়, আমাদের খুব ভালো লাগে৷ এখন এই দরজা দিয়ে বাড়ির নতুন অংশে যাওয়া যায়৷ যেমনটা দেখছেন, এখানে প্রচুর আলো৷ কোনো না কোনো জানালা দিয়ে সূর্যের আলো ঢুকবেই৷ ঘুরে দাঁড়ালে আমাদের এলাকার পাহাড়ও দেখা যায়৷ এখানে আসার পর আমরা আবার স্নো-বোর্ডিং শুরু করেছি, চালিয়েও যাচ্ছি৷ আর মিনিট দশেক গেলেই ট্রেন স্টেশন৷''
৩৬০ বর্গ মিটারের বাড়িটি বেশ সমানভাবে ভাগ করা হয়েছে৷ একদিকে পুরানো, অন্যদিকে নতুন অংশ৷ কোনো একটিকে বেছে নেবার কোনো প্রয়োজন নেই৷ কারণ সংস্কারের ফলে দুটি অংশেরই ভালো দিকগুলি উপভোগ করা যায়৷