বাংলাদেশে স্থানীয় সরকার নির্বাচন সংসদ নির্বাচনের মতোই দলীয় ভিত্তিতে হওয়া উচিত বলে মনে করেন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম৷ তবে বিএনপির নেতারা এ ব্যাপারে আগাম কোনো মন্তব্য করতে চাননি৷
বিজ্ঞাপন
আগামীতে উপজেলা, সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনও দলীয়ভাবে আয়োজন করার জন্য আইন সংশোধনের কথা বলেছেন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম৷ তিনি ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে সোমবার বলেছেন, নির্দলীয় নয়, স্থানীয় সরকার নির্বাচনও দলীয়ভাবে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতো হওয়া উচিত৷ প্রার্থী মনোনয়ন থেকে নির্বাচনি প্রচারণা, প্রতীক সবই৷
তিনি বলেন, ‘‘গণমাধ্যমে বলা হয়, উপজেলা পরিষদে আওয়ামী লীগ এত পেল, বিএনপি এত পেল৷ কী করে বুঝব যে এরা আওয়ামী লীগ, তারা বিএনপি৷ আর তাই যদি হয় তাহলে দলীয় প্রতীক ব্যবহারে কেন লুকোচুরি?''
সৈয়দ আশরাফ বলেন, ‘‘এই অবস্থার পরিবর্তনে প্রধানমন্ত্রী স্থানীয় সরকার নির্বাচন আইনটি পরীক্ষা করতে বলেছেন৷ স্থানীয় সরকারকে গতিময় করতে আইন সংশোধন জরুরি৷ আশা করি, শিগগিরই একটি ড্রাফট বিল সংসদে তুলতে পারব৷''
এ নিয়ে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম কী বললেন, তা নিয়ে তাঁরা ভাবেন না৷ যদি প্রধানমন্ত্রী বলতেন তাহলে বিবেচনা করা যেত৷ এছাড়া প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার আগে তাঁরা তা নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে চান না৷ কারণ সরকারের মন্ত্রীরা নানা কথাই বলেন৷''
সুশাসনের জন্য নাগরিক বা সুজন-এর সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘জাতীয় নির্বাচনের মতো স্থানীয় সরকার নির্বাচন দলীয় ভিত্তিত হলে দলের পক্ষ থেকে ভোটাররা প্রতিশ্রুতি পাবেন৷ দলীয় ভিত্তিতে প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন হবে৷ কিন্তু বাংলাদেশের যে রাজনৈতিক পরিস্থিতি, তাতে উল্টো ঘটনা ঘটবে৷''
অন্যরকম নির্বাচন
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ১৫৩টি আসনে একক প্রার্থী থাকায় রবিবার অর্ধেকের বেশি আসনে ভোট গ্রহণ হয়নি৷ নির্বাচনের দিনের কিছু ছবি দিয়ে সাজানো হয়েছে এই ছবিঘর৷
ছবি: DW/M. Mamun
নিরাপত্তা ব্যবস্থা
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন সফল করতে সরকার ব্যাপক নিরাপত্তা প্রস্তুতি গ্রহণ করে৷ এজন্য ৫৯ জেলায় বিভিন্ন বাহিনীর প্রায় সাড়ে চার লাখ সদস্য মোতায়েন করা হয়৷ বাকি পাঁচটি জেলায় নির্বাচনের প্রয়োজন পড়েনি৷
ছবি: DW/M. Mamun
অলস সময়
ভোটার না থাকায় ঢাকার মিরপুরের হাজী আশ্রাফ আলী হাইস্কুলে স্থাপিত ভোটকেন্দ্রের সামনে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের অলসভাবে সময় কাটাতে দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: DW/M. Mamun
ভোটারের জন্য অপেক্ষা
ঢাকার বঙ্গবন্ধু অ্যাকাডেমি ভোটকেন্দ্রের ছবি এটি৷ কেন্দ্রে প্রবেশ করতে ভোটারদের জন্য বাঁশ ও দড়ি দিয়ে নির্ধারিত স্থান চিহ্নিত করা হয়েছে৷ কিন্তু ভোটার নেই৷
ছবি: DW/M. Mamun
এখানেও একই অবস্থা
ছবিটি হারম্যান মাইনার কলেজ কেন্দ্রের৷ পাশাপাশি স্থাপিত কয়েকটি বুথ যেন খাঁ-খাঁ করছে৷ জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষক পরিষদ, জানিপপ-এর চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ ডয়চে ভেলেকে জানান, ভোটার উপস্থিতি কম হবে এটাই স্বাভাবিক৷ কারণ এটি একটি ভিন্ন ধরনের নির্বাচন৷ একতরফার সঙ্গে আছে ব্যাপক সহিংসতা এবং বিরোধী দলের হরতাল-অবরোধ৷
ছবি: DW/M. Mamun
বিড়ম্বনার শিকার
নির্বাচনে ভোট দিতে গিয়ে ভোটার তালিকায় নাম খুঁজে না পেয়ে অনেক ভোটার ফিরে গেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে৷ তবে কেউ কেউ অবশ্য কষ্টটা শিকার করেই ভোট দিয়েছেন৷ ছবিতে মিরপুরের একটি কেন্দ্রে ভোটারদের সিরিয়াল নম্বর খুঁজতে দেখা যাচ্ছে৷ তাঁদের সহায়তা করছেন নির্বাচন সংশ্লিষ্টরা৷
ছবি: DW/S. Kumar Dey
ভোটাধিকার প্রয়োগ
ভোট দিচ্ছেন একজন ভোটার৷ অবশ্য তাঁর মতো ভাগ্যবান হতে পারেননি দেশের মোট ভোটারের শতকার ৫২ জন৷ অর্ধেকেরও বেশি প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ায় এসব ভোটারের ভোট দেয়ার সুযোগ ছিল না৷ এই কারণে রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রীও ভোট দিতে পারেননি৷
ছবি: DW/M. Mamun
নারী ভোটার
ঢাকার একটি কেন্দ্রে ভোট প্রয়োগের অপেক্ষায় কয়েকজন নারী ভোটার৷
ছবি: DW/M. Mamun
উৎসাহে কমতি নেই
আব্দুল হাকিম নামে ৮৯ বছরের এই ভোটার দুই ব্যক্তির সহায়তায় ঢাকার একটি ভোটকেন্দ্রে ভোট দিয়েছেন৷
ছবি: DW/M. Mamun
সেনা সদস্যদের পাহারা
দুজন ভোটার ভোট দিতে যাচ্ছেন৷ কেন্দ্রের নিরাপত্তায় সেখানে ছিলেন সেনা সদস্যরা৷
ছবি: DW/M. Mamun
9 ছবি1 | 9
তিনি আরো বলেন, ‘‘সেটা হলে স্থানীয় সরকার দলবাজদের দখলে চলে যাবে৷ উন্নয়ন হবে দলীয় লোকজনের জন্য৷ আর প্রার্থীর সংখ্যাও কমে যাবে৷ যার ফলে ভোটারদের প্রার্থী বাছাইয়ের সুযোগ যাবে কমে৷'' তিনি মনে করেন, বর্তমান পদ্ধতিতে স্থানীয় সরকারে পরিমাণে অল্প হলেও ভোটারবান্ধব প্রতিনিধি পাওয়া যায়৷ তাঁদের তেমন দলীয় পরিচয় না থাকায় তাঁরা কাজের মাধ্যমে ভোটারদের মন জয় করতে চান৷
তবে তিনি এও মনে করেন যে, এখন একমাত্র দলীয় প্রতীক ও সরাসরি ঘোষিত দলীয় মনোনয়ন ছাড়া পুরো স্থানীয় সরকার নির্বাচন দলীয় রাজনীতির খপ্পড়ে পড়ে গেছে৷