বাংলাদেশে গুলশান হামলার সন্দেহভাজন মাস্টারমাইন্ড তামিম চৌধুরীসহ তিন জঙ্গি পুলিশি অভিযানে নিহত হয়েছে৷ ঢাকার অদূরে নারায়ণগঞ্জে শনিবার সকালে একটি বাড়িতে অভিযান চালানোর সময় তারা নিহত হয়৷
বিজ্ঞাপন
পুলিশের আইজি বলেছেন, অভিযানের সময় জঙ্গিরা পুলিশকে লক্ষ্য করে গ্রেনেড ছুড়লে পুলিশ তাদের স্নাইপার রাইফেল দিয়ে গুলি করলে তারা নিহত হয়৷ পুলিশ নিহতদের যে ছবি প্রকাশ করেছে তাতে এক জঙ্গির মরদেহের বুকের ওপর একটি আগ্নেয়াস্ত্র স্পষ্ট৷
পুলিশের বক্তব্য অনুযায়ী, নারায়ণগঞ্জের পাইকপাড়া এলাকার একটি বাড়ির তিন তলায় জঙ্গিরা অবস্থান করছিল৷ ভোর থেকেই পুলিশের সোয়াট এবং কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের সদস্যরা বাড়িটি ঘিরে রাখে৷ সকাল সাড়ে ৯টা থেকে সাড়ে ১০টা এক ঘণ্টার অভিযানে তিন জঙ্গি নিহত হয়৷ পুলিশের আইজি এ কে এম শহীদুল হক জানান, অভিযানের পর তামিম চৌধুরীর ছবির সঙ্গে একটি মরদেহের হুবহু মিল পাওয়া যায়৷ আমরা নিশ্চিত যে ওটাই তামিম চৌধুরী৷ বাকি দু'জনের পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা চলছে৷
কামাল যা বললেন
তিনি বলেন, ‘‘অভিযানের শুরুতে জঙ্গিরা পুলিশকে লক্ষ্য করে গ্রেনেড ছোড়ে৷ তখন পুলিশ স্নাইপার রাইফলে দিয়ে গুলি করলে জঙ্গিরা নিহত হয়৷''
এক সাংবাদিক আইজিপিকে প্রশ্ন করেন, আপনি কি নিশ্চত তারা পুলিশের গুলিতেই নিহত হয়েছে? জবাবে আইজিপি বলেন, ‘‘জঙ্গিদের গুলি করেছে পুলিশ, তারা কি আপনার গুলিতে নিহত হবে?''
এদিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ঘটনার পর নারায়ণগঞ্জে সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘গুলশান হামলার মাস্টার মাইন্ড তামিম চৌধুরী নিহত হয়েছে৷ তামিম চৌধুরী চ্যাপ্টার শেষ৷ আমরা আশা করছি বাকি জঙ্গিরাও শিগগিরই গ্রেপ্তার হবে৷''
প্রসঙ্গত, গত পহেলা জুলাই গুলশান হামলার পর বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ক্যানাডিয়ান নাগরিক তামিম চৌধুরীর নাম গুলশান হামলার ‘মাস্টার মাইন্ড' হিসেবে আলোচনায় আসে৷ পুলিশ এও জানায় যে সে বাংলাদেশেই অবস্থান করছে৷ এরপর কল্যাণপুরে জঙ্গি আস্তানায় অভিযানের পর পুলিশ জানায়, তামিম চৌধুরী ওই আস্তানায় নিয়মিত যেতো৷ এরপর পুলিশ তাকে ধরিয়ে দিতে ২০ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করে৷
ঢাকায় নিরাপত্তার স্বার্থে বিশেষ বাস ও রিকশা
গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলার পর, গুলশান-বনানী-বারিধারা ও নিকেতন এলাকায় চালু হয়েছে শীততাপ নিয়ন্ত্রিত আধুনিক বাস ও বিশেষ রঙের রিকশা সার্ভিস৷ যার নাম রাখা হয়েছে ‘ঢাকা চাকা’৷ দেখুন ছবিঘরে৷
ছবি: DW
কূটনৈতিক এলাকায় নতুন বাস
গুলশান, বারিধারা, বনানী ও নিকেতন সোসাইটির উদ্যোগে এবং ঢাকা মহানগর পুলিশের সহায়তায় বিশেষ এ সার্ভিসটির বাস্তবায়ন করছে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন৷
ছবি: DW
দুই রুটে ‘ঢাকা চাকা’
মোট দু’টি রুটে প্রতি ১০ মিনিট পর পর বাস ছাড়বে৷ একটি রুট – তেজগাঁও-গুলশান লিংক রোডের নাভানা মোড় থেকে পুলিশ প্লাজা, গুলশান ১ ও রূপায়ণ টাওয়ার হয়ে গুলশান ২-এর গোলচত্বর পর্যন্ত৷ আর অন্য রুটের বাসটি ছাড়বে কাকলী মোড় থেকে৷ এটি বনানী বাজার, গুলশান ২ নম্বর হয়ে যাবে নতুন বাজারে৷
ছবি: DW
ভাড়া মাত্র ১৫ টাকা
নতুন এ বাস সার্ভিসটি শীততাপনিয়ন্ত্রিত৷ তারপরেও যে কোনো দূরত্বের ভাড়া মাত্র ১৫ টাকা৷ অর্থাৎ মাত্র ১৫ টাকায় পুরো গুলশান এলাকায় যাতায়াত করা যাবে৷ এছাড়া এই বাসে রয়েছে বিনামূল্যে ইন্টারনেট ব্যবহারের ব্যবস্থাও৷
ছবি: DW
কম দূরত্বের যাত্রীরা খুশি নন
সামগ্রিক ভাবে এ ভাড়া যাত্রীদের কাছে সহনীয় হলেও, ছোট ছোট রুটের যাত্রীরা ১৫ টাকা ভাড়াকে বেশি মনে করছেন৷ যেমন গুলশান শুটিং ক্লাব থেকে গুলশান ২ নম্বরের ভাড়া ১৫ টাকা৷ এটা ঠিক আছে৷ কিন্তু গুশলান ১ নম্বর থেকে গুলশান ২ নম্বরের দূরত্ব অনেক কম৷ অথচ এক্ষেত্রেও ভাড়া কিন্তু সেই ১৫ টাকাই৷ আগে গুলশান ১ নম্বর থেকে ২ নম্বরের ভাড়া ছিল মাত্র ৪-৬ টাকা৷
ছবি: DW
অভিযোগের শেয নেই
নতুন এ সার্ভিসে বাসের সংখ্যা অনেক কম হওয়ায় দীর্ঘ সময় ধরে যাত্রীদের লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে হচ্ছে৷ তাই এ নিয়ে অভিযোগ অনেক যাত্রীর৷ শুধু তাই নয়, গুলশান এলাকায় অন্যান্য গণপরিবহন বন্ধ থাকায় অন্যান্য ভোগান্তির কথাও জানালেন সাধারণ মানুষ৷ তাঁদের কথায়, আগে ঢাকার বিভিন্ন জায়গা থেকে গুলশানে সরাসরি আসা যেত৷ কিন্তু এখন আসতে হচ্ছে ভেঙে ভেঙে৷
ছবি: DW
বাসের সংখ্যাও কম
বাসের সংখ্যা কম হওয়ায় অনেকক্ষণ পরে একটি বাস এলেও তার উপর যাত্রীদের চাপ পড়ে যায়৷ ফলে গাদাগাদি করে যাত্রী নিয়ে চলতে হচ্ছে বাসগুলোকে৷ এরপরেও গুলশান-বনানী এলাকায় অন্য কোনো গণপরিবহন না থাকায় এখন অনেকেই ঝুঁকি নিয়ে এ বাসে যাতায়ত করেন৷
ছবি: DW
এসেছে হলুদ রিকশাও
সার্কুলার বাস সার্ভিস চালুর পাশাপাশি এ সব এলাকায় চালু করা হয়েছে হলুদ রঙের রিকশা সার্ভিসও৷ পুরো গুলশান-বনানী-বারিধারা ও নিকেতন এলাকার আবাসিক সোসাইটিগেুলোর উদ্যোগে প্রাথমিকভাবে মাত্র ৫০০ রিকশা নামানো হয়েছে৷ এর মধ্যে গুলশানে ২০০টি, বনানীতে ২০০টি, বারিধারা ও নিকেতনে ৫০টি করে রিকশা৷
ছবি: DW
রিকশার জন্য বিশেষ ‘হটলাইন’
গুলশান-বনানী- বারিধারা ও নিকেতন আবাসিক এলাকায় নতুন এ রিকশার গায়ে টাঙ্গিয়ে দেয়া হয়েছে বিভিন্ন রুটের নির্ধারিত ভাড়া৷ এ ভাড়ায় কোনো চালক না চলতে চাইলে একটি ‘হটলাইন’ নম্বরে অভিযোগ করতে পারবে যাত্রীরা৷ এছাড়া কোনো যাত্রীর গতিবিধি সন্দেহজনক হলেও হটলাইন নম্বরটিতে জানানো যাবে৷
ছবি: DW
নানারকম বিধি-নিষেধ
নতুন এ রিকশা সার্ভিসের চালকরা নির্ধারিত সব জায়গায় যেতে বাধ্য৷ আবার এ সব রিকশা নিয়ে ঐ সব এলাকার বাইরেও যেতে পারবেন না তারা৷
ছবি: DW
হারিয়ে যায়নি সাধারণ রিকশা
গুলশান-বনানী- বারিধারা ও নিকেতন এলাকায় শুধু হলুদ রঙের বিশেষ রিকশা চলাচলের কথা বলা হলেও চালু হওয়ার ছয়দিন পরেও দেখা গেছে যে, অন্যান্য সাধারণ রিকশাও চলছে এ সব এলাকায়৷
ছবি: DW
সমস্যা এখানেও আছে...
গুলশান-বনানী-বারিধারা এলাকায় গত চার বছর ধরে রিকশা চালান খুলনার জাহাঙ্গীর আলম৷ নতুন এ নিয়মের ফলে অনেক সুবিধার কথাই বললনে তিনি৷ তবে যাত্রীদের নিয়ে তাঁর অভিযোগ, নির্ধারিত ভাড়ার পরও অনেক যাত্রীই নাকি তাঁদের সঙ্গে ভাড়া কমানোর দাবি করেন৷ আবার এ নিয়ে দুর্ব্যবহারও করেন অনেকে৷
ছবি: DW
11 ছবি1 | 11
কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার ছানোয়ার হোসেন জানান, অভিযানের পর আস্তানায় একে-২২ রাইফেলসহ কিছু আগ্নেয়াস্ত্র পাওয়া গেছে৷ তবে তারা গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র আগেই পুড়িয়ে ফেলেছে৷
অভিযানের পর পুলিশ নিহত জঙ্গিদের মরদেহ এবং বাড়ির ভেতরের কিছু ছবি প্রকাশ করেছে৷ আর তাদের দেখা যায় নিহত এক জঙ্গির মরদেহের বুকের ওপর একটি একে-২২ রাইফেল৷ এছাড়া আরেকটি ছবিতে কিছু বই, একটি দূরবীন, একটি চশমা, কম্পিউটারের যন্ত্রাংশ এদিক-ওদিক পড়ে থাকতে দেখা যায়৷
পুলিশ জানায়, ক্রাইম সিনের কাজ শেষ হলে তিন জঙ্গির মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতালে পাঠানো হবে৷
তারা জানায়, জঙ্গিরা ওষুধ ব্যবসায়ী পরিচয়ে এই বাড়ির তিন তলা জুলাই মাসে ভাড়া নিয়েছিল৷