টেকসই উন্নয়নের ক্ষেত্রে স্থানীয় মানুষের ঐতিহ্য বেশ কাজে লাগতে পারে৷ আফ্রিকার দেশ তানজানিয়ায় এমন কিছু প্রকল্প সাফল্যের দাবি করতে পারে৷ প্রকৃতি ও পরিবেশের ক্ষতি না করে সেখানকার মানুষ আয় বাড়ানোর উপায় খুঁজে পেয়েছেন৷
বিজ্ঞাপন
আইডিয়াটা সুইজারল্যান্ডের ক্রিস্টিয়ান ফাটারলাউস-এর মাথায় এসেছিল৷ ২০০৩ সালে তিনি প্রথমবার জাম্বিয়ানি গিয়ে মোহামেদ ওকালার সঙ্গে আলাপ করেছিলেন৷ দু'জনে মিলে ‘মেরিনকালচার্স' নামের সংগঠন চালু করেন৷ তখনই তাঁরা বুঝেছিলেন যে, দ্বীপটির ভবিষ্যৎ বেশ বিপজ্জনক৷ সংগঠনের সহ প্রতিষ্ঠাতা মোহামেদ ওকালা বলেন, ‘‘চাকরি খোঁজার সময়ে মানুষ বোঝে, যে তারা সংগ্রাম চালাচ্ছে৷ কিছু মানুষ ঝোপঝাড়ে ঢুকে জঙ্গল কাটে, যেটা উচিত নয়৷ ফলে আরও বিপর্যয় আসছে৷ অর্থাৎ এখানকার মানুষের কোনো বিকল্প উপায়ে সমস্যা সমাধানের উপায় নেই৷''
সংগঠনের আর এক সহ প্রতিষ্ঠাতা ক্রিস্টিয়ান ফাটারলাউস বলেন, ‘‘প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে আমি সেই সব নারীদের পর্যবেক্ষণ করেছিলাম, যারা সামুদ্রিক আগাছা সংগ্রহ করেন৷ আমার খুব ভালো লেগেছিল যে, তাঁরা শুধু শিকার ও সংগ্রহই করেন না, তাঁরা চাষের কাজও করেন৷ কিন্তু যখন দেখলাম তাঁরা কত আয় করছেন, তখন মনে হলো, এমন কোনো সামুদ্রিক পণ্য থাকা উচিত যা এখানকার মানুষের কর্মসংস্থানে সাহায্য করবে, তাঁরা যথেষ্ট আয়ও করতে পারবেন৷''
সাতটি সামুদ্রিক সংরক্ষিত এলাকা
পরিবেশবাদীদের উদ্যোগের কারণেই হোক কিংবা বিভিন্ন দেশের সরকারের সচেতনতা বাড়ার কারণেই হোক, বিশ্বের কয়েকটি স্থানে সামুদ্রিক সংরক্ষিত এলাকা গড়ে উঠেছে৷ ছবিঘরে থাকছে এমন সাতটি অঞ্চলের কথা৷
ছবি: picture-alliance/Wildlife
গ্রেট ব্যারিয়ার রিফ মেরিন পার্ক
অস্ট্রেলিয়ার উত্তরপূর্ব উপকূল জুড়ে থাকা গ্রেট ব্যারিয়ার রিফের একটি বড় অংশকে সংরক্ষিত এলাকা ঘোষণা করা হয়েছে৷ সেখানে মাছ ধরা নিষিদ্ধ৷ আর সামুদ্রিক জাহাজগুলোর জন্যও নির্দিষ্ট রুট নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে৷
ছবি: imago/blickwinkel
প্যাসিফিক রিমোট আইল্যান্ডস মেরিন ন্যাশনাল মনুমেন্ট
আয়তনের দিক দিয়ে বিশ্বের সবচেয়ে বড় সংরক্ষিত সামুদ্রিক এলাকা৷ প্রশান্ত মহাসাগরে থাকা যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকটি দ্বীপ নিয়ে গড়ে ওঠা এই সংরক্ষিত এলাকায় সবুজ কচ্ছপ, বিভিন্ন রকমের ঝিনুক, হাঙর, কাঁকড়া, ডলফিন, তিমি ইত্যাদি বাস করে৷
ছবি: imago/blickwinkel
গালাপাগোস মেরিন রিজার্ভ
এখানে এমন সব প্রাণীর দেখা পাওয়া যায় যেগুলো বিশ্বের আর কোথাও নেই৷ গালাপাগোস মেরিন রিজার্ভের দেখভাল করে ইকুয়েডর৷ উন্নয়নশীল বিশ্বের নিয়ন্ত্রণে থাকা সবচেয়ে বড় সামুদ্রিক সংরক্ষিত এলাকা এটি৷
ছবি: imago/Westend61
বোয়ি সিমাউন্ট মেরিন প্রোটেক্টেড এরিয়া
ক্যানাডার উপকূল থেকে ১৮০ কিলোমিটার পশ্চিমে প্রশান্ত মহাসাগরের পানির নীচে একটি আগ্নেয়গিরি রয়েছে৷ নাম ‘বোয়ি সিমাউন্ট’৷ সেখানকার প্রাণিজগৎ বেশ সমৃদ্ধ৷
ছবি: BR
চাগোস দ্বীপপুঞ্জ
মালদ্বীপ থেকে প্রায় ৫০০ কিলোমিটার দক্ষিণে ভারত মহাসাগরে এই দ্বীপপুঞ্জ অবস্থিত৷ ব্রিটেনের নিয়ন্ত্রণে থাকা এই অঞ্চলকে ২০১০ সালে সংরক্ষিত এলাকা ঘোষণা করা হয়৷
ছবি: NASA Johnson Space Center/Image Science & Analysis Laboratory
দ্য শ্লেসভিশ-হলশ্টাইন ভাডেন সি ন্যাশনাল পার্ক
জার্মানির সবচেয়ে বড় ন্যাশনাল পার্ক৷ আয়তন ৪,৪১০ বর্গকিলোমিটার৷ ২০০৯ সালে এর নাম ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় স্থান পায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
দ্য পেলাগোস স্যাঙ্কচুয়ারি ফর মেডিটেরেনিয়ান মেরিন ম্যামলস
ফ্রান্স ও ইটালি ঘেঁষে ভূমধ্যসাগরের যে অংশ রয়েছে সেখানে বসবাস করা স্তন্যপায়ী প্রাণীদের বাঁচাতে এই অভয়ারণ্য গড়ে তোলা হয়েছে৷ এটাই এখন পর্যন্ত বিশ্বের একমাত্র সামুদ্রিক সংরক্ষিত এলাকা যেটি দুটো দেশ জুড়ে অবস্থিত৷
ছবি: picture-alliance/Wildlife
7 ছবি1 | 7
এক মাসেই কাজিয়া ওমর আলি ও নাসিরি হাসান হাজি সামুদ্রিক আগাছা বিক্রি করে প্রায় ৩০ ডলার আয় করেছেন৷ আজকাল কখনো একটি স্পঞ্জ বিক্রি করেই এত টাকা হাতে আসে৷ তবে নতুন কাজের জন্য তাঁদের সাঁতার শিখতে হয়েছে৷ কারণ স্পঞ্জের ফার্ম সমুদ্রতট থেকে কয়েক'শ মিটার দূরে অবস্থিত৷ এক কিলো স্পঞ্জ দিনে এক টন পানি পাম্প ও ফিল্টার করে৷ স্পঞ্জ চাষি কাজিয়া ওমর আলি বলেন, ‘‘সামুদ্রিক ঘাসের চাষ খুবই কঠিন পরিশ্রমের কাজ৷ সব সময়ে ভিজে বস্তা বইতে হয়৷ স্পঞ্জ ফার্মে কখনো ভারি কাপড় পরা যায় না৷''
চাহিদা খুবই বেশি৷ স্পঞ্জ ফার্মগুলি বিক্রির পরিমাণ আরও বাড়াতে পারে৷ কিন্তু ‘মেরিনকালচার্স' টেকসই পদ্ধতিতে কাজ করতে চায়৷ সব চারাই নিজেদের উৎপাদন থেকে আসে৷ স্পঞ্জ তোলার জন্য প্রস্তুত হতে প্রায় এক বছর সময় লাগে৷ মোহামেদ ওকালা বলেন, ‘‘কারণ সমুদ্র আসলে জমির মতো৷ ফলন তুলে সেই জায়গায় বীজ বপণ না করলে সেগুলি হারিয়ে যাবে৷ ফলনের পর বীজ বপণ করলে বার বার উৎপাদন হবে৷''
স্পঞ্জের এক সহজাত জীবাণুনাশক গুণ রয়েছে৷ তাই অসুস্থ মানুষ ও অ্যালার্জির রোগীদের জন্য এটি খুব উপকারী৷ এমনকি স্পঞ্জ সিদ্ধও করা যায়৷ স্পঞ্জ চাষিরা দিনের ফলন বাড়িতে নিয়ে গিয়ে সেগুলি ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত করে তোলার কাজ করেন৷ স্পঞ্জ চাষি নাসিরি হাসান হাজি বলেন, ‘‘সমুদ্র থেকে স্পঞ্জ তোলার পর আমাদের সেগুলি প্রস্তুত করতে ও শুকাতে হয়৷ সেগুলি বাড়িতে নিয়ে গিয়ে বালু, ঝিনুক বা ছোট ছোট প্রাণী বেছে বার করে নিতে হয়৷ তারপর সেগুলি ধুয়ে পরিষ্কার করতে হয়৷''
জীববৈচিত্রের অসাধারণ মুহূর্ত যখন ক্যামেরাবন্দি
বিচারকদের জন্য ভীষণ কষ্টকর ছিল কাজটি৷ কিন্তু এরপরও সেরা হিসেবে তারা বেছে নিয়েছেন অসাধারণ একটি স্থিরচিত্রকে৷ এখানে থাকছে সেরা ছবিগুলোর কয়েকটি৷
ছবি: Michael Nichols/Wildlife Photographer of the Year 2014
বরফ এবং পাখি
১৫ থেকে ১৭ বছর ক্যাটাগরিতে পুরস্কার জিতেছে এই ছবিটি৷ ছবিটি তুলতে সুইডিশ ফটোগ্রাফারকে বরফের মধ্যে গর্ত খুঁড়ে পাখিটির জন্য খাবার রাখতে হয়েছিল৷ আর তার ফলেই অসাধারণ এই ছবিটির জন্ম৷
ছবি: Edwin Sahlin/Wildlife Photographer of the Year 2014
প্রাকৃতিক বিশেষ ‘এফেক্ট’
চিলির আগ্নেয়গিরির অসাধারণ এই ছবিটি তুলেছেন ফ্রান্সিস্কো নেগ্রোনি৷ বিশ্বের পরিবেশ ত্যাটাগরিতে এটি পুরস্কার জিতে নিয়েছেন৷
ছবি: Francisco Negroni/Wildlife Photographer of the Year 2014
ইয়াং ওয়াইল্ডলাইফ ফটোগ্রাফার অফ দ্য ইয়ার
বাংলাদেশ হলে এই আলোকে বলা হতো ‘কনে দেখা আলো’৷ সেই আলোতে উত্তর পূর্ব স্পেনে কাকড়া বিছার এই ছবিটি তুলেছেন কার্লোস পেরেজ নাভাল৷ পাঁচ বছর বয়স থেকে ছবি তোলা শুরু করেন তিনি৷ এ বছর পেয়েছেন ইয়াং ওয়াইল্ডলাইফ ফটোগ্রাফার অফ দ্য ইয়ারের পুরস্কার৷
ছবি: Carlos Perez Naval/Wildlife Photographer of the Year 2014
হাঙরের ছবি
মেক্সিকোর এই হাঙরের ছবিটি তুলেছেন রডরিগো ফ্রিস্কিওনে৷ ওয়ার্ল্ড ইন আওয়ার হ্যান্ডস ক্যাটাগরিতে পুরস্কার জিতেছে এটি৷
ছবি: Rodrigo Friscione Wyssmann/Wildlife Photographer of the Year 2014
স্কুইডের ডিস্কো
মাত্র তিন সেন্টিমিটার লম্বা এই স্কুইডটির ছবিটি তুলেছেন ফরাসি আলোকচিত্রী ফাবিয়েন মিশেনেট৷
ছবি: Fabien Michenet/Wildlife Photographer of the Year 2014
হামিং বার্ড
এই ছবিটি থেকেই আপনি মোটামুটি একটি ধারণা নিতে পারবেন কত অসাধারণ ছবি এবারের প্রতিযোগিতায় এসেছিল৷ ছবিটি দুটি হামিং বার্ডের৷ এই ছবিটি বার্ডস ক্যাটাগরিতে সেরা ছবির পুরস্কার জিতেছে৷
ছবি: Jan van der Greef/Wildlife Photographer of the Year 2014
বাদুড়
জার্মান একটি বাংকারে বাদুড়ের এই ছবিটি তুলেছেন লুকাস বোজিকি৷ ম্যামালস ক্যাটাগরিতে পুরস্কার জিতেছে এটি৷
ছবি: Łukasz Bożycki/Wildlife Photographer of the Year 2014
রোম্যান্টিক
ব্যাঙদের রোম্যান্টিক এই ছবিটি একই ক্যাটাগরিতে পুরস্কার জিতেছে৷
ছবি: Anton Lilja/Wildlife Photographer of the Year 2014
অসাধারণ ‘স্ন্যাপশট’
ফটোগ্রাফারের ভাগ্য ভালো এটি কোনো বিষধর সাপ নয়৷ মার্ক মন্টেস অসাধারণ এই ছবিটি তুলেছেন স্পেনে৷ ক্যাটাগরি ১১ থেকে ১৪ বছর৷
ছবি: Marc Montes/Wildlife Photographer of the Year 2014
ইগুয়ানা
এই ইগুয়ানাটাকে দেখে মনে হচ্ছে কিছুটা দ্বিধা রয়েছে তার মধ্যে৷ কোস্টারিকায় এই ছবিটি তুলে পুরস্কার জিতেছেন উইল জেনকিনস৷
ছবি: Will Jenkins/Wildlife Photographer of the Year 2014
সেরাদের সেরা
তানজানিয়ার জাতীয় পার্কের এই ছবিটিতে সিংহদের দেখা যাচ্ছে৷ এই ছবিটি দেখে মনে হতে পারে অনেক বছর আগে তোলা, যেখানে আশেপাশে কোনো মানুষের চিহ্ন নেই৷ ছবিটি তোলার জন্য ছয় মাস এই সিংহদের পর্যবেক্ষণ করেছেন ফটোগ্রাফার মাইকেল নিকল্স৷ আর তাই ওয়াইল্ডলাইফ ফটোগ্রাফার অফ দ্য ইয়ার ২০১৪ জিতেছেন তিনি৷
ছবি: Michael Nichols/Wildlife Photographer of the Year 2014
11 ছবি1 | 11
একটি স্পঞ্জ যত্ন করে রাখলে প্রায় ২০ বছর তা ব্যবহার করা যায়৷ কাজিয়া ওমর আলি বলেন, ‘‘মানুষ যে স্পঞ্জ ব্যবহার করে স্নান করে, সে বিষয়ে আমাদের কোনো ধারণাই ছিল না৷ আমি নিজেও একটি ব্যবহার করতে শুরু করেছি৷''
‘মেরিনকালচার্স' সংগঠন এর মধ্যে নতুন একটি প্রকল্পও শুরু করেছে৷ প্রবাল দিয়ে অ্যাকোয়াফার্মিং-এর এক প্লান্টেশন গড়ে তুলছে এই সংগঠন৷ ক্রিস্টিয়ান ফাটারহাউস বলেন, ‘‘আনুমানিক ২০টি বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী অ্যাকোয়েরিয়াম ব্যবসার জন্য উপযুক্ত বলে আমরা মনে করছি৷ প্রবালের মধ্যে চাষের পদ্ধতিও বেশ সহজ৷ প্রবালের একটি টুকরো কেটে নিয়ে সেটিকে একটি বিশেষ স্তরের উপর বসিয়ে দিতে হয়৷ এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে স্পঞ্জ চাষের মিল রয়েছে৷''
উপহ্রদের মধ্যে এক সংরক্ষিত এলাকা গড়ে তোলা হবে আগামী পদক্ষেপ৷ তখন এই প্রবাল বনায়নের জন্যও ব্যবহার করা যাবে৷‘মেরিনকালচার্স' গ্রামের কিছু চাষিকে এই প্রকল্পে শামিল করতে পেরেছে৷ মুসা ইয়েচা ভুয়াই ‘ডেমা' নামের এক ঐতিহ্যবাহী মাছের ফাঁদ তৈরি করছেন৷ স্থানীয় জেলে মুসা ইয়েচা ভুয়াই বলেন, ‘‘প্রথমত, আমাদের এই হাল-ফ্যাশানের মাছ ধরার পদ্ধতি বন্ধ করতে হবে৷ রাতে মাছ ধরা ও বিশাল জাল ব্যবহার করা আর চলবে না৷ কীভাবে ডেমা দিয়ে আবার পর্যাপ্ত পরিমাণ মাছ ধরা যায়, তা নিয়ে কথা বলতে হবে৷ নিজেদেরকেও কিছুটা বদলাতে হবে৷''
কারণ উপহ্রদটি রক্ষা করতে গেলে গ্রামের মানুষের সমর্থনের প্রয়োজন রয়েছে৷