শাটডাউনের জের ধরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির আফগানিস্তান সফর বাতিল করলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প৷ দেশের জন্য গুরুতর এই সময়ে ডেমোক্র্যাট নেতার দেশে থাকা উচিত বলে মনে করছেন তিনি৷
বিজ্ঞাপন
বৃ্হস্পতিবার ন্যান্সি পেলোসির ব্রাসেলস ও আফগানিস্তান সফরে যাওয়ার কথা ছিল৷ এর আগে মঙ্গলবার স্টেট অব দ্য ইউনিয়নে ট্রাম্পের ভাষণ দেওয়া স্থগিতের অনুরোধ করেন ন্যান্সি৷ বিশ্লেষকরা বলছেন, তারই পাল্টা ব্যবস্থা নিলেন ট্রাম্প৷ বছরের শুরুতে কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে প্রেসিডেন্টের স্টেট অব দ্য ইউনিয়নের ভাষণ দেওয়া এক রকক নিয়মের মধ্যেই পড়ে৷
সরকারি সামরিক বাহিনীর বিমানে সফর কথা ছিল ন্যান্সির৷ শেষ মুহূর্তে ট্রাম্পের নির্দেশে সেই যাত্রা ভণ্ডুল করা হয়৷ হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র সারাহ হুকাবি স্যান্ডার্স টুইটার বার্তায় পেলোসির সফর নিয়ে ট্রাম্পের নির্দেশনা সম্বলিত চিঠি প্রকাশ করেন৷ সেই চিঠিতে ট্রাম্প বলেন, সীমান্তে দেয়াল নির্মাণ নিয়ে আলোচনা ও অচলাবস্থা নিরসনে প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকারের দেশে থাকাই ভালো হবে৷ তিনি আরো বলেন, যদি একান্তই স্পিকার যেতে চান, তাহলে তিনি বেসামরিক বিমানে ভ্রমণ করতে পারেন৷ সরকারি সামরিক বিমান উড্ডয়নই কেবল স্থগিত করা হয়েছে, পেলোসির যাত্রা নয়৷
এদিকে প্রেসিডেন্টের এই আচরণে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পেলোসির মুখপাত্র ড্রিউ হ্যামিল৷ অপর এক টুইটার বার্তায় তিনি বলেন, এই সফর আফগানিস্তানের উদ্দেশ্যেই ছিল৷ পথে ব্রাসেলসে থামার উদ্দেশ্য ছিল দুটো৷ এক, চালককে বিশ্রাম দেওয়া, দুই, ব্রাসেলসে ন্যাটোর সদর দফতরে যাওয়া, সেখানে মার্কিন নেতৃত্বাধীন সামরিক জোটের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ণ আস্থা আছে সেটা পুনঃপ্রকাশ করা৷
হলিউডের নজরে ‘হোয়াইট হাউস’
এই ছবিগুলি অ্যামেরিকার রাষ্ট্রপতি নির্বাচন ও ‘হোয়াইট হাউস’-কে নতুনভাবে চেনায়, দেখুন এই ছবিঘরে...
ছবি: Imago/Sony/BRON Studios
টানাপোড়েনে ‘দ্য ফ্রন্ট রানার’
জেসন রাইটম্যান পরিচালিত ছবি ‘দ্য ফ্রন্ট রানার‘ ২০১৮ সালে মুক্তি পায়৷ ১৯৮৮ সালের নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী গ্যারি হার্টের চরিত্রে অভিনয় করেন হিউ জ্যাকম্যান৷ উল্লেখ্য, গ্যারি হার্ট ছিলেন প্রথম প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী, যার যৌন কেলেঙ্কারির কেচ্ছা উঠে আসে শিরোনামে৷ এই ছবিটি তুলে ধরেছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সংবাদমাধ্যমের ভূমিকার বিভিন্ন দিক৷
ছবি: Imago/Sony/BRON Studios
হিউ-এর ক্যারিশমা
১৯৮৮ সালের নির্বাচনের আগ পর্যন্ত কলোরাডোর ডেমোক্র্যাট প্রার্থী ছিলেন নির্বাচনের ‘হট ফেভারিট’৷ কিন্তু সব হিসেব পাল্টে দেয় এক নারীর সাথে তাঁর নৌকাবিহারের ঘনিষ্ঠ মুহূর্তের কিছু ছবি৷ ব্যক্তিত্বশালী এই রাজনীতিকের নানা কেচ্ছা বর্তমান প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কীর্তিকলাপের সামনে নেহাতই তুচ্ছ, এমনও মনে করেন অনেকে৷
ছবি: Imago/Sony/BRON Studios
হার্ট, না ক্লিন্টন, নাকি ট্রাম্প?
কার কেচ্ছার ফল ছিল সুদূরপ্রসারী? গ্যারি হার্ট? হয়তো না৷ রাজনীতিকের যৌন কেচ্ছা বিষয়ে অনেকেই তুলবেন নব্বইয়ের দশকে আলোড়ন তোলা মনিকা লিউইনস্কি ও তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিন্টনের কথা, যে কারণে পদত্যাগ করতে হয় ক্লিন্টনকে৷ সংবাদমাধ্যমে এ বিষয়ের প্রতিবেদন হার্ট ও ক্লিন্টন, দুজনের রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের জন্যই মারাত্মক ফল বয়ে আনে৷ কিন্তু ট্রাম্পের একাধিক কেলেঙ্কারির ঘটনা খবরে এলেও তাঁর আসন টলাতে পারেনি৷
ছবি: picture alliance/AP Photo
পর্দায় ট্রাম্প: ‘ফারেনহাইট ১১/৯’
২০১৬ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সব অনুমান মিথ্যা প্রমাণ করে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিলারি ক্লিন্টনকে হারিয়ে দেন রিপাব্লিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প৷ এই নির্বাচনে ট্রাম্পবিরোধী মানুষ কীভাবে সংগঠিত হয়েছিলেন, কেমন ভূমিকা ছিল সংবাদমাধ্যমের, এসব রয়েছে ২০১৬ সালে মাইকেল মুর পরিচালিত ‘ফারেনহাইট ১১/৯’ নামের এই তথ্যচিত্রে৷
ছবি: picture-alliance/Everett Collection/Briarcliff Entertainment
ওয়াশিংটনের বাইরের কুকীর্তি
এই তথ্যচিত্রকে সম্পূর্ণতা দিতে পরিচালক মুর মার্কিন রাজধানী ওয়াশিংটনের বাইরের রাজ্যগুলির চিত্রও এখানে তুলে ধরেছেন৷ পরিচালক মুর মিশিগানের সাংসদ রিক স্নাইডারকে সরাসরি ‘ফ্লিন্ট ওয়াটার’ কেলেঙ্কারিতে তার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন করেন এই তথ্যচিত্রে৷ ওপরের ছবিতে রয়েছে সেই অংশের একটি দৃশ্যের ছবি৷
ছবি: picture-alliance/Everett Collection/Briarcliff Entertainment
ট্রাম্পবিরোধীরা কোথায়?
মাইকেল মুরের এই ছবিতে রয়েছে একঝাঁক হলিউড তারকার জবানবন্দী, যারা সবাই রাজনৈতিকভাবে ট্রাম্পের বিরোধী৷ এছাড়াও ছবিটিতে বলা হয়েছে, ডেমোক্র্যাট দলের নির্বাচনি কৌশলের দুর্বলতার বিষয়ে নানা তথ্য৷বর্তমান অ্যামেরিকায় একাধিক তৃণমূল স্তরের আন্দোলন গড়ে উঠছে৷ এই ছবিতে তাদের প্রতিনিধিদের ট্রাম্প সরকারের গঠনমূলক সমালোচনা করবার সুযোগ করে দিয়েছেন মাইকেল মুর৷
ছবি: picture-alliance/Everett Collection/Briarcliff Entertainment
ভাইস প্রেসিডেন্টের গুরুত্ব...
প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডাব্লিউ বুশের ‘ডানহাত’ বলে পরিচিত তৎকালীন ভাইস প্রেসিডেন্ট ডিক চেনি৷ চেনি’র জীবন নিয়ে তৈরি ‘ভাইস’ ছবিটিতে ডিক চেনির ভূমিকায় দেখা যায় গোল্ডেন গ্লোবজয়ী অভিনেতা ক্রিশ্চিয়ান বেল-কে৷ এই ছবি শুধু বুশের আমলের অ্যামেরিকাকে তুলে ধরে না, বরং বর্তমান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক টানাপোড়েনেরও সমালোচনা করে৷
পরিচালক ম্যাককে’র মতে, হোয়াইট হাউস তখন প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশের কথায় কম, আর ভাইস প্রেসিডেন্ট ডিক চেনির আদেশে চলতো বেশি৷ ‘ভাইস’ ছবিতে রয়েছে বুশ-জমানার গুরুত্বপূর্ণ কিছু ঘটনা ও তার পেছনে চেনির অবদানের অনেক অজানা তথ্য৷
অনেকেই মনে করেন, মার্কিন রাজনীতিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষমতা রাখেন প্রেসিডেন্ট ও তাঁর স্ত্রী বা ফার্স্ট লেডি৷ ‘ভাইস’ ছবি এই বিশ্বাস ভাঙতে উদাহরণ হিসাবে তুলে ধরে ডিক চেনি ও তাঁর স্ত্রী লিন-এর কাহিনি, যাদের প্রভাবে গোটা ওয়াশিংটনের রাজনীতি এক সময় নির্ধারিত হতো৷ বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স-কে ডিক চেনির সঙ্গে তুলনা করেন অনেকে৷
পরে এক সংবাদ সম্মেলনে ড্রিউ হ্যামিল বলেন, প্রেসিডেন্ট যে অচলাবস্থার কথা বলে পেলোসির সফর বাতিল করলেন, সেই অবস্থা চলাকালে তিনি পুরো দল নিয়ে ইরাক সফর করে এসেছেন৷ একইসঙ্গে সুইজারল্যান্ডের দাভোসে অনুষ্ঠিতব্য ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিক ফোরামের আয়োজনেও প্রতিনিধি পাঠাচ্ছেন৷ ড্রিউ হ্যামিলের এই সমালোচনার জের ধরে পরে এক বিবৃতিতে দাভোস প্রতিনিধি পাঠানোর সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে হোয়াইট হাউস৷
উল্লেখ্য, মেক্সিকো সীমান্তে দেওয়াল নির্মাণের জের ধরে চলমান অচলাবস্থার ২৭ দিন কেটে গেছে৷ চলমান শাটডাউনে সরকারি কর্মীদের প্রতি সংহতি প্রকাশ করে বেতন নেননি ১০২ জন কংগ্রেস সদস্য৷ যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এই প্রথম প্রায় ৮ লাখ সরকারি কর্মী এত দীর্ঘ সময় বেতনহীন কাটাচ্ছে৷
মেক্সিকোর সীমান্তে দেয়াল নির্মাণের যে প্রতিশ্রুতি ট্রাম্প দিয়েছিলেন তা বাস্তবায়নের অর্থ বরাদ্দ নিয়েই বিবাদের শুরু৷ প্রথমে মেক্সিকো সরকার এই অর্থ দিতে চাইলেও পরে অস্বীকৃতি জানায়৷ ট্রাম্প তাঁর প্রতিশ্রুতি পূরণে কংগ্রেসের কাছে ৫৭০ কোটি ডলার দাবি করেন৷ কিন্তু জনগণের করের টাকায় এই ‘অহেতুক আবদার’ পূরণে অস্বীকৃ্তি জানায় কংগ্রেসের সংখ্যাগরিষ্ঠ ডেমোক্র্যাট৷
এদিকে ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় সরকারের তিন চতুর্থাংশ কার্যক্রম পরিচালনার অর্থ বরাদ্দ করা আছে৷ বাকি এক চতুর্থাংশের বাজেট ফুরিয়ে যাওয়ায় অচলাবস্থা ঠেকাতে গত ২১ ডিসেম্বর নতুন অস্থায়ী বাজেট বরাদ্দ ছিল অপরিহার্য৷ সেসময় ট্রাম্প ঘোষণা দেন দেয়াল নির্মাণের বরাদ্দ ছাড়া তিনি কোনো বাজেট বিলে স্বাক্ষর করবেন না৷ দুই পক্ষের অনড় অবস্থানে বাজেট অনুমোদিত না হওয়ায় ডিসেম্বরের ২২ তারিখ থেকে মার্কিন কেন্দ্রীয় সরকারের এক চতুর্থাংশ বিভাগ ও সংস্থার কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়৷