স্পিকার: ট্রাম্পের দলে বিদ্রোহ, ম্যাকার্থি পারলেন না
৪ জানুয়ারি ২০২৩
মার্কিন কংগ্রেসে রাজনৈতিক নাটক। হাউসের স্পিকার পদে তিনবার ভোটের পরেও জিততে পারলেন না রিপাবলিকান ম্যাকার্থি।
বিজ্ঞাপন
অ্যামেরিকায় গত একশ বছরে কংগ্রেসের ইতিহাসে এমন হয়নি। স্পিকার নির্বাচনের জন্য তিনবার ভোটাভুটি হলো। তারপর কেউ স্পিকার নির্বাচিত হতে পারলেন না। হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভস মুলতুবি ঘোষণা করতে হলো।
আর এই ঐতিহাসিক ঘটনাটি ঘটলো, তার কারণ, ট্রাম্পের দল রিপাবলিকান পার্টির মধ্যে মধ্যপন্থি এবং দক্ষিণপন্থিদের লড়াই। দলের এই আড়াআড়ি বিভাজনের ফলেই প্রথম দিনে অন্তত ম্যাকার্থি স্পিকার হতে পারেননি। তিনবার ভোটাভুটির পরেও নয়।
মধ্যবর্তী নির্বাচনের পর রিপাবলিকানরা হাউসে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে। আশা করা হয়েছিল, তারা এদিন জয়োৎসব পালন করবে। কিন্তু দিনের শেষে দেখা গেল, দলে বিদ্রোহ হয়েছে। যে ম্যাকার্থির স্পিকার হওয়ার কথা ছিল, তিনি ইতিহাসে নাম তুলে ফেলেছেন, তবে অন্য কারণে।
যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যবর্তী নির্বাচনের যেসব দিকে নজর সবার
গত কয়েকমাসে প্রতিনিধি বাছাই, নির্বাচনি প্রচারণা এবং তহবিল সংগ্রহের নানা উদ্যোগ দেখা গেছে মার্কিন মুল্লুকে৷ এবার মধ্যবর্তী নির্বাচন ওয়াশিংটনে ক্ষমতার ভারসাম্য ঠিক করে দেবে৷ নির্বাচনে গুরুত্ব পাচ্ছে নানা কিছু৷ চলুন দেখি৷
ছবি: picture-alliance/J. Schwenkenbecher
মধ্যবর্তী নির্বাচন মঙ্গলবার
২০২২ সালের মধ্যবর্তী নির্বাচন মূলত অনুষ্ঠিত হচ্ছে মঙ্গলবার৷ এই নির্বাচনে রিপাবলিকানরা ব্যাপক সমর্থন পাওয়ার আশা করছেন৷ অন্যদিকে, কংগ্রেসে সামান্য ব্যবধানে এগিয়ে থাকা ডেমোক্রেটরা নিজেদের অবস্থান ধরে রাখা নিয়ে কিছুটা উদ্বিগ্ন মনে হচ্ছে৷ অর্থনীতির দুরবস্থা, অপরাধ, প্রেসিডেন্টের কারিশমা, গর্ভপাত আইনের মতো বিষয়াদি এই নির্বাচনে ভূমিকা রাখতে পারে৷
ছবি: Brandon Bell/REUTERS
লালদের জনপ্রিয়তা কি বাড়ছে?
মঙ্গলবারের নির্বাচনে রিপাবলিকানদের পক্ষে সমর্থন বাড়বে বলেই ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে৷ কিন্তু সেটার বিস্তৃতি কতটা হবে তা এক্ষুণি বলা মুশকিল৷ মুদ্রাস্ফীতি এবং রাজনৈতিক বিভাজন বাড়ায় ভোটারদের মধ্যে দেশের ভবিষ্যত নিয়ে হতাশা কাজ করছে৷ আর ইতিহাস বলছে ভোটাররা সাধারণত ক্ষমতাসীনদের উপরেই তাদের হতাশার দায় চাপায়৷
ছবি: Eva Marie Uzcategui/AFP/Getty Images
ডেমোক্রেটদের আশা গর্ভপাত আইন
ডেমোক্রেটরা আশা করেছিলেন যে গর্ভপাতের অধিকার বাতিল সংক্রান্ত সুপ্রিম কোর্টের রায় মধ্যবর্তী নির্বাচনে ক্ষমতাসীনদের জনপ্রিয়তা হারানোর ঐতিহাসিক ধারায় বিঘ্ন ঘটাবে বা ক্ষতি কমাবে৷ কিন্তু নির্বাচনের দিন যত ঘনিয়েছে দলটির নেতাদের মধ্যে এই আশা ততটাই কমেছে বলে মনে হয়েছে৷ রিপাবলিকান দলে গর্ভপাতবিরোধী যারা আছেন তাদের ভোট কমতে পারে৷
ছবি: Getty Images/E. Nouvelage
কংগ্রেসের নিম্নকক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে পারে রিপাবলিকানরা
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, মধ্যবর্তী নির্বাচনে মার্কিন কংগ্রেসের নিম্নকক্ষে রিপাবলিকানদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিশ্চিত হতে পারে৷ এজন্য দলটির আরো পাঁচটি আসন প্রয়োজন৷ হয়ত এরচেয়ে বেশি আসনও পেয়ে যেতে পারে দলটি৷ আর এই সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিশ্চিত করতে ডেমোক্রেটদের কিছু এলাকায় বেশ অর্থ বিনিয়োগ করেছেন রিপাবলিকানরা৷
ছবি: Mandel Ngan/AFP
সিনেট জয় আরো সহজ
মার্কিন কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেটে ডেমোক্রেটদের অবস্থা আরো নাজুক৷ রিপাবলিকানরা আরেকটি আসন পেলেই উচ্চকক্ষ নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Schwenkenbecher
ল্যাটিনো ভোটাররা কি আরো ডানে সরবে?
২০২০ সালের নির্বাচনে ল্যাটিনোদের সমর্থন খুব একটা পায়নি ডেমোক্রেটরা৷ কিন্তু এবার সেই পরিস্থিতি বদলাবে এমন আশাও করা যাচ্ছে না৷ কারণ মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন মেক্সিকো-মার্কিন সীমান্ত সমস্যার তেমন কোনো সমাধান দিতে পারেননি৷ অন্যদিকে, এই গোষ্ঠীর মধ্যে রিপাবলিকানদের প্রতি সমর্থন বেড়ে চলেছে বলেই ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে৷
সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প এখনো রিপাবলিকান পার্টিতে শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছেন৷ যদিও তিনি মধ্যবর্তী নির্বাচনের ব্যালটে নেই, তার সমর্থন পাওয়া বেশ কয়েকজন প্রার্থী নির্বাচনে লড়ছেন৷ এই প্রার্থীরা যদি ভালো না করেন তাহলে ২০২৪ সালে আবারও মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্পের লড়াই করার সম্ভাবনা প্রশ্নবিদ্ধ হবে৷
ছবি: Kyle Mazza/AA/picture alliance
২০২৪ এর নির্বাচনের রূপরেখা
মার্কিন এই মধ্যবর্তী নির্বাচন কার্যত ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দলগুলোর অবস্থান কী হতে যাচ্ছে তা ঠিক করে দেবে৷ রিপাবলিকানরা বড় জয় পেলে ট্রাম্পের আবারো প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে লড়াইয়ের পথ তৈরি হতে পারে, অন্যদিকে ডেমোক্রেটদের দুর্বল ফলাফল বাইডেনের দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট পদে টিকে থাকার লড়াই কঠিন করে দেবে৷
ছবি: Saul Loeb/AFP
8 ছবি1 | 8
ক্যালিফোর্নিয়া থেকে নির্বাচিত ম্যাকার্থি বুধবার স্পিকার হতে পারবেন কি না, সেটা পরের প্রশ্ন, তবে মঙ্গলবারের ঘটনা একটা স্পষ্ট ইঙ্গিত দিয়েছে, তিনি যদি স্পিকার হনও, তাহলেও তাকে রিপাবলিকানদের বিদ্রোহী নেতাদের সামলাতে হবে। সেই কাজটা সহজ হবে না। রিপাবলিকান দলে মধ্য ও দক্ষিণপন্থিদের লড়াই চলতেই থাকবে।
কেন হলো?
এবার হাউসে রিপাবলিকানদের বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নেই। তারা মাত্র কয়েকটি আসন বেশি জিতে ডেমোক্র্যাটদের পিছনে ফেলেছে। এই অবস্থায় দলের মধ্যে মধ্যপন্থি ও দক্ষিণপন্থিদের লড়াই একেবারে সামনে এসে পড়েছে। বেশ কিছুদিন ধরে এই লড়াই চলছিল। স্পিকার নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তা তীব্র হয়েছে।
তবে এক রাজনৈতিক লবিস্ট জানিয়েছেন, ম্যাকার্থি নিজেও এই হারের জন্য দায়ী। তিনি সকলের সঙ্গে সুসম্পর্ক রেখে চলেন না। কিছু নেতা তাকে ঘিরে থাকেন। দলের মধ্যে তিনি প্রচুর শত্রু তৈরি করেছেন। এই অবস্থায় তিনি বিক্ষুব্ধদের সঙ্গে আলোচনায় বসেছিলেন, তাদের ভোট পাওয়ার জন্য কিছু দাবি মেনে নেয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছিলেন। তিনি স্পিকার হওয়ার জন্য মরিয়া চেষ্টা করছেন, সেটাও সামনে আসছিল।
এবার কী হতে পারে?
ম্যাকার্থি দলের বিদ্রোহীদের ক্ষোভ দূর করে বুধবার জিততে পারেন। তিনি দলের দ্বিতীয় কোনো প্রার্থীকে সমর্থন জানাতে পারেন। আবার রিপাবলিকানদের পাঁচজন সদস্য যদি ডেমোক্র্যাট প্রার্থীকে ভোট দেন, তাহলে তিনি জিতে যাবেন।
প্রথম বিকল্পের ক্ষেত্রে তিনি বিক্ষুব্ধদের বিভিন্ন কমিটির প্রধান করার প্রতিশ্রুতি দিতে পারেন। যদি কিছু সদস্য হাউসে না আসেন, তাহলেও ম্যাকার্থি জিততে পারেন।