স্পেনের বাস্ক অঞ্চলের সাগরপাড়ের শহর সান সেবাস্টিয়ান৷ সেখানকার এক স্থপতি তাঁর পরিবারের জন্য ‘এল' আকৃতির একটি বাড়ি তৈরি করেছেন৷ সামনে থেকে দেখলে এই স্টুডিও হাউসকে একটি দুর্গের মতো মনে হয়৷
বিজ্ঞাপন
‘এল’-এর মতো দেখতে অদ্ভুত এক বাড়ি
03:45
বাইরে থেকে বাড়ির সৌন্দর্য্য ঠিক বোঝা না গেলেও বারান্দা থেকে ঠিকই অসাধারণ সব দৃশ্য উপভোগ করা যায়৷
স্থপতি ও বাড়ির মালিক আলেখান্দ্রো পেনা টেরুল বলেন, ‘‘প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখার জন্য আমরা বাড়ির অন্য দিকটা খোলা রাখতে চেয়েছি৷ এই দিকটা বাড়িতে ঢোকার জন্য৷ রাস্তা থেকে মানুষ বাড়ির ভেতরটা দেখতে পাক, সেটা আমরা চাইনি৷''
মূল দরজাটাও বেশ দুর্ভেদ্য৷ বাড়ির মালিক নিজেই এর নকশা করেছেন৷ এটি তৈরিতে কর্টেন স্টিল ব্যবহার করা হয়েছে৷ আলেখান্দ্রো পেনা টেরুল জানান, ‘‘কর্টেন স্টিলের ব্যবহার বাস্ক অঞ্চলের একটা বৈশিষ্ট্য৷ ইয়র্গ ওটাইজা, এদুয়ার্দো চিলিদার মতো ভাস্কর এই স্টিল অনেক ব্যবহার করেছেন৷ ঘরবাড়ি তৈরির জন্যও এটা ভালো৷''
যে সব বাড়ি তৈরিতে ৫০০ বছরেরও বেশি সময় লেগেছে!
কখনো টাকা ফুরিয়েছে, কোথাও বা আগ্রহ ফুরিয়েছে – বাড়ি তৈরি শেষ হতে হতে কেন শতাব্দীর পর শতাব্দী পার হয়ে যায়, তার অনেক কারণ থাকতে পারে৷ মস্কোর ক্রেমলিন বা জার্মানির উল্ম শহরের ক্যাথিড্রাল জানে সে কথা৷
ছবি: picture alliance/Arco Images
উল্ম ক্যাথিড্রাল, জার্মানি
বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু গির্জার চুড়া এই উল্ম ক্যাথিড্রালেই৷ গির্জাটি তৈরি হয়েছিল শুধুমাত্র স্থানীয় বাসিন্দাদের বদান্যতায়, তাই বুঝি ৫০০ বছরের বেশি সময় লেগেছে কাজ শেষ করতে৷ দ্য মাদার অফ ক্রাউডফান্ডিং প্রকল্পটির ক্রনিক অর্থাভাব ছিল, তাই জার্মানির সবচেয়ে বড় প্রটেস্টান্ট চার্চটির নির্মাণকার্য শেষ হয় ১৯৮০ সালে৷
ছবি: picture alliance/robertharding/M. Lange
মালবর্ক ক্যাসল, পোল্যান্ড
ইউরোপের সবচেয়ে বড় ইটের বাড়ি হলো এই মালবর্ক দুর্গ; তৈরি করতে ৭০০ বছরের বেশি সময় লেগে গেছে শুধু নকশা বদলানোর জন্যেই নয়, যুদ্ধ আর লুটতরাজের দরুণও বটে৷ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের যখন শেষ হতে চলেছে, তখন মালবর্ক দুর্গের অর্ধেকের বেশি ধ্বংস হয়ে যায়৷ আজ এটি ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট ও পোল্যান্ডের একটি মুখ্য টুরিস্ট অ্যাট্রাকশন৷
ছবি: picture alliance/robertharding/C. Kober
স্ট্রাসবুর্গ ক্যাথিড্রাল, ফ্রান্স
মহাকবি ইওহান ভল্ফগাং ফন গ্যোটে ছিলেন স্ট্রাসবুর্গ ক্যাথিড্রালের একজন ভক্ত৷ তিনি যখন স্ট্রাসবুর্গে পড়াশুনো করছেন, অষ্টাদশ শতাব্দীর সত্তরের দশকে, তখন ১৪২ মিটার উঁচু স্ট্রাসবুর্গ ক্যাথিড্রাল ছিল বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু গির্জে৷ তবু নির্মাণকার্য চলে আরো ১০০ বছর ধরে৷ শেষমেষ ১৯৭০ সালে দক্ষিণের চুড়োটি অসমাপ্ত রেখেই কাজ বন্ধ হয়৷
ছবি: picture alliance/Eibner-Pressefoto
মস্কোর ক্রেমলিন
রাশিয়ায় ক্ষমতার প্রতীকই হলো এই ক্রেমলিন,তার লাল ইট আর সোনালি গম্বুজ৷ অথচ এই ক্রেমলিন তৈরির কাজ শেষ হতে ৮০০ বছরের বেশি সময় লেগে গেছে৷ ষোড়শ আর সপ্তদশ শতাব্দীতে জার ও তাঁর পরিবারবর্গ এখানেই থাকতেন৷ পরে সোভিয়েত আমলে এটাই ছিল সরকারের আসন৷ আজ এর অনেকটাই মিউজিয়াম – আর গোটা কমপ্লেক্সটাই ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট৷
ছবি: picture alliance/ZB/J. Kalaene
ভাভেল, পোল্যান্ড
পোল্যান্ডের ক্রাকাও শহরের ভাভেল কমপ্লেক্সটিতে কাজ চলেছে গত এক হাজার বছরের বেশি সময় ধরে! পোল্যান্ডের নৃপতিরা এখানে থাকতেন৷ প্রতি শতাব্দীতে নতুন নতুন ভবন যোগ হয়েছে ভাভেলে – এমনকি গত শতাব্দীতেও৷ কাজেই ভাভেল-এর কাহিনি আজও সমাপ্ত হয়নি এবং কোনোদিনই সমাপ্ত হবে না বলে ধরে নেওয়া যায়৷
ছবি: picture alliance/Arco Images
5 ছবি1 | 5
এই হাউসের রুমগুলো বেশ বড়৷ ২০১৪ সালে বাড়ি তৈরির কাজ শেষ হয়৷ বাড়িটি যেন খোলামেলা আর আলো-বাতাসে পরিপূর্ণ হয় সেভাবেই নকশা করেছেন আলেখান্দ্রো পেনা৷
টেরুল বলেন, ‘‘ডাইনিং রুমটি বড় করে বানানোর পরিকল্পনা করা হয়েছিল৷ এটি একেবারে বাড়ির মাঝখানে অবস্থিত৷ বাস্ক অঞ্চলের মানুষের কাছে ডাইনিং রুম বেশ গুরুত্বপূর্ণ, কেননা আমরা রান্না করতে পছন্দ করি৷''
তিন তলা এই বাড়ির আয়তন ৬০০ বর্গমিটারের বেশি৷ পরিবারের সদস্য সংখ্যা চার৷ অতিথি সহ সবার বেডরুম আছে দ্বিতীয় তলায়৷ যেমন আছে গ্যালারিও৷
বারান্দার আশপাশ কংক্রিট দিয়ে তৈরি৷ ফলে দৃষ্টিটা সহজেই সামনের সুন্দর দৃশ্যের দিকে চলে যায়৷
বাড়ির বাইরের দিকেও কংক্রিট ব্যবহার করা হয়েছে৷ রাস্তার দিক থেকে স্টুডিও হাউসটির সৌন্দর্য্য ভালভাবে বোঝা না গেলেও বাড়ির অন্য দিক থেকে ঠিকই সুন্দর দৃশ্য দেখা যায়৷
আজব এক উল্টো বাড়ি
জার্মানিতেই তৈরি হয়েছে এমন এক বাড়ি যা পুরোপুরি উল্টো৷ বাড়ির ছাদ নীচে আর টেলিভিশন, ফ্রিজ, আসবাবপত্র সব ওপরে! চলুন ঘুরে দেখি আজব সেই বাড়ি৷
ছবি: picture-alliance/ZB/Sauer
উল্টো দুনিয়া
২০০৪ সালের ৪ সেপ্টেম্বর জার্মানির মেকলেনবুর্গ ফোয়রপমার্ন রাজ্যের ট্রাসেনহাইডে-তে নির্মাণ করা হয় অদ্ভুত এই বাড়ি৷ জার্মান ভাষায় বাড়িটির নাম, ‘ডি ভেল্ট শ্টেট কপ্ফ’, অর্থাৎ ‘পৃথিবীটা মাথার ওপরে দাঁড়িয়ে’৷ সত্যিই তাই৷ বাংলায় ‘হেঁট মুণ্ডু ঊর্ধ্ব পদ’ বলে একটা কথা আছে, ঠিক সেভাবে এ বাড়ির ছাদটা নীচে, আর নীচে থাকার জিনিসগুলো সব ওপরে৷ পর্যটকদের প্রধান আকর্ষণ হয়ে উঠেছে এই বাড়ি৷
ছবি: picture-alliance/ZB/Lösel
স্ক্রু আর আঠার কেরামতি
বাড়িটির নকশা করেছেন দুই পোলিশ স্থপতি ক্লাউডিউসৎজ গোলোস এবং সেবাস্টিয়ান মিকিচিউক৷ কেমন করে উল্টো করে সব তৈরি বা স্থাপন করা হলো? সবই স্ক্রু আর আঠার জাদু৷ ঘরের আসবাবপত্র, টেলিভিশন থেকে শুরু করে সাধারণত মেঝেতে বা ছাদের নীচে থাকে এমন সব জিনিস ওপরে লাগানো হয়েছে শুধু স্ক্রু আর আঠা দিয়ে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Büttner
অবাক তাকিয়ে রয়...
দর্শনার্থীরা গিয়ে অবাক হয়ে দেখেন সবকিছু৷ ছবিতে দেখুন, এক দর্শনার্থীর চোখের সামনে উল্টো হয়ে ঝুলছে একটা গাছের টব৷ অবাক তো লাগবেই!
ছবি: picture-alliance/dpa/Büttner
ভাগ্যিস সিঁড়িটা ঠিকঠাক!
উল্টো বাড়ি হলেও বাড়ির একটা জিনিস অন্তত ঠিক আছে৷ কী সেটা, জানেন? সিঁড়ি৷ সিঁড়িও যদি ওপরের দিকে থাকতো তাহলে দর্শনার্থীদের কী বিপদটাই না হতো!
ছবি: picture-alliance/ZB/Sauer
স্টিলের কাঠামো
ঘরের সব আসবাবপত্রের চাপটা পড়ে ছাদের ওপর৷ এমন বাড়ির কাঠামোটা একটু বেশি শক্ত না হলে কি চলে? সে কথা ভেবেই ইট-শুঁড়কির জায়গায় স্টিল ব্যবহার করে নির্মাণ করা হয়েছে ‘ডি ভেল্ট শ্টেট কপ্ফ’, নির্মাণকাজে ব্যয় হয়েছে ৩ লক্ষ ইউরো!