স্পেনের রাজা হুয়ান কার্লোস সিংহাসন ছাড়তে চান৷ তাঁর স্থলাভিষিক্ত হবেন তাঁর জ্যেষ্ঠপুত্র ফেলিপে এবং রাজা ষষ্ঠ ফেলিপে হিসেবে রাজকার্য চালাবেন৷ কিন্তু দেশের তরুণ সমাজ চাইছে রাজা-বদলের পরিবর্তে পালাবদল৷
বিজ্ঞাপন
রাজা হুয়ান কার্লোসকে দেশ চিরকাল মনে রাখবে, কেননা জেনারেল ফ্রাংকোর একনায়কতন্ত্রের পর স্পেনের গণতন্ত্রে উত্তরণের পথে এই নৃপতির বিশেষ অবদান ছিল৷ কিন্তু সে ঘটনাটি ঘটে ১৯৭৫ সালে: আজকের তরুণদের অধিকাংশের জন্ম তার অনেক পরে৷ রাজা হুয়ান কার্লোসের বয়স আজ ৭৬, তাঁর সুযোগ্য পুত্র ফেলিপের বয়স ৪৬৷ তরুণ প্রজন্মের বাস্তবের সঙ্গে আজকের রাজপরিবারের যোগাযোগ সামান্যই, বলে যুব সমাজের ধারণা৷
রাজা হুয়ান কার্লোস ১৯৮১ সালে টেলিভিশনে আবির্ভূত হয়ে একটি সামরিক অভ্যুত্থান রোধ করেছিলেন৷ কিন্তু ২০১২ সালে সেই নৃপতিই স্পেনে যুব বেকারত্ব নিয়ে হা-হুতাশ করার পর বতসোয়ানায় গিয়েছিলেন হাতি শিকার করতে৷ তারপর তাঁর কনিষ্ঠ কন্যা ক্রিস্টিনার স্বামী ইনাকি উর্দাঙ্গারিনকে নিয়েও দুর্নীতির মামলা হয়েছে এবং রাজকুমারী ক্রিস্টিনাকে সেই মামলায় প্রকাশ্য আদালতে সাক্ষ্য দিতে হয়েছে৷
গন্তব্য, পার্টি! জার্মানরা বেপরোয়া যেখানে...
সংস্কৃতি? না, ধন্যবাদ৷ অনেক জার্মানের কাছে ছুটি মানে ‘পার্টি টাইম’৷ অবশ্য মায়র্কা দ্বীপের ‘বালারমান ৬’ সমুদ্রসৈকতে মদ্যপানের উপর খানিকটা বিধিনিষেধ আরোপ হয়েছে৷ তাই বেপরোয়া হতে বিকল্প উপায় খুঁজতে বাধ্য অনেকে৷
ছবি: Getty Images
বিদায় ‘বালারমান ৬’?
পাব, গান এমনকি সিনেমাতেও খুঁজে পাওয়া যায় ‘বালারমান ৬’ সমুদ্রসৈকতকে৷ মায়র্কা-র এই (অ)খ্যাত সৈকত কোনো এক কারণে অধিকাংশ জার্মানের অত্যন্ত প্রিয়৷ কিন্তু সম্প্রতি এই সৈকতে মদ্যপানের উপর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে৷ দশটার পর মদ্যপান করা যাবেনা, ককটেল পান করতে হবে নির্দিষ্ট হারে – এসব নিয়মে হতাশ অনেকে৷ কিন্তু তাই বলে কি থেমে থাকবে পার্টি?
ছবি: picture-alliance/dpa
সকাল আটটায় পার্টি শুরু
মায়র্কা-র দক্ষিণের দ্বীপ ইবিজা৷ গত শতকের নব্বই দশক থেকেই দ্বীপটি ক্লাবের জন্য বিখ্যাত৷ এখানকার ‘স্পেস’ ক্লাবটি বিশ্বের সবচেয়ে সেরা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে সংগীত বিষয়ক ম্যাগাজিন ‘ডিজেম্যাগ’৷ সম্ভবত ক্লাবটির অস্বাভাবিক পার্ট টাইমের জন্য এই স্বীকৃতি৷ এখানে পার্টি শুরু হয় সকাল আটটায়৷
ছবি: Getty Images
অন্য ঠিকানা
মায়র্কা এবং ‘বালারমান’ ছাড়াও স্পেনের মূল ভূখণ্ডের বিভিন্ন এলাকা তরুণ পর্যটকদের বিশেষ পছন্দ৷ উত্তর ইউরোপের হাজার হাজার পর্যটক কস্টা ব্রাভা’র লোরে ডে মার-এ যেতে পছন্দ করেন৷ জার্মানদের মধ্যে ১৩ শতাংশ স্পেন ভ্রমণ করেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
নতুন পছন্দ: ক্রোয়েশিয়া
পহেলা জুলাই থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য হয়েছে ক্রোয়েশিয়া৷ সেদেশের স্রচে সৈকতে প্রচুর পর্যটক ভিড় করেন৷ জার্মানরাও সেখানে নিজেদের একটি জায়গা করে নিয়েছেন৷
ছবি: picture-alliance/PIXSELL
কৃষ্ণ সাগরে বিনোদন
বুলগেরিয়ার কৃষ্ণ সাগরের সৈকতও পার্টির জন্য উপযুক্ত৷ বিকেল থেকেই এখানে জমে আড্ডা৷ আর গ্রিসেও জার্মানদের ভালো ভিড় থেকে৷ ব্রিটিশ এবং স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশগুলোর মানুষও এসব জায়গা পছন্দ করেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
নতুন নাগরিকত্বের সন্ধান?
গোটা বিশ্বের আড্ডাবাজদের আমন্ত্রণ জানায় ইউক্রেনের ক্রিমিয়ান উপদ্বীপের ‘মিনিস্টার অফ গুড মুডস’৷ কাজান্ট্রিপ উৎসবের কর্মকাণ্ড অনেকটা একটি দেশের মতো পরিচালিত হয়৷ এই উৎসবের জন্য রয়েছে ভিসা, সরকারি চাকুরি এবং সংবিধান৷ প্রতি বছর এক লাখ সত্তর হাজারের মতো তরুণ-যুবা এই উৎসবে হাজির হন৷ জার্মানরা এই উৎসবের ‘নাগরিক’ হতে পারেন, এ জন্য প্রয়োজন শুধু ‘ভালো মুড’ এবং কমলা রংয়ের পোশাক৷
ছবি: picture-alliance/dpa
উদ্যাপনে আভিজাত্য
যারা বৈচিত্রময়তার চেয়ে রুচিকে বেশি প্রাধান্য দিতে আগ্রহী, তাদের জন্য উপযুক্ত হচ্ছে স্যাঁ ত্রোপে বা সেন্ট ট্রপেজ৷ দক্ষিণ ফ্রান্সের এই পার্টি গন্তব্য সেই ১৯৭০ থেকেই বিশেষ প্রসিদ্ধ৷ তবে খরচাপাতির ক্ষেত্রে হিসেবী পার্টিপ্রেমিদের জন্য এই গন্তব্য বিশেষ আকর্ষণীয় নয়৷ যদিও এখন সেখানেও দরদামের সুযোগ তৈরি হচ্ছে এবং নির্দিষ্ট দরে অনির্দিষ্ট হারে মদ্যপানেরও সুযোগ রয়েছে৷
ছবি: Getty Images
উত্তর সাগরের সৈকতে
জার্মানদের সবচেয়ে প্রিয় ছুটি কাটানোর গন্তব্য আপন দেশ জার্মানি৷ ফলে জার্মানির উত্তরাঞ্চলের সিল্ট দ্বীপে পার্টি করতে যান অনেক জার্মান৷
ছবি: picture-alliance/dpa
রঙিন এবং উষ্ণ
উত্তর জার্মানির ফিশ স্যান্ডউইচ এবং স্পার্কলিং ওয়াইন হয়ত এখানে পাওয়া যাবেনা, তবে পার্টির উপযোগী সবকিছুই আছে এখানে৷ বলছি ভারতের গোয়ার কথা৷ পার্টির খোঁজে দুনিয়া ঘোরাদের জন্য একটি পছন্দ হতে পারে এই এলাকা৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
মায়ামিতে স্বাগতম
মায়ামি সৈকতের অন্যতম পরিচিত এক রাস্তার নাম ‘ওশেন ড্রাইভ’৷ টেলিভিশনের কল্যাণে জার্মান পর্যটকরাও এই জায়গা সম্পর্কে পরিচিত৷ অনেক টেলিভিশন সিরিজে মায়ামিকে দেখানো হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
শালোম, পার্টি!
তেল আভিভে এই তরুণ-যুবাদের হাতে হঠাৎ পানি পিস্তল দেখে যে কেউ হয়ত ঘাবড়ে যেতে পারেন, তবে এগুলো শুধুই মজা করার জন্য৷ রাজনৈতিক অস্থিরতা সত্ত্বেও ইসরায়েল ক্রমশ পর্যটকদের কাছে প্রিয় হয়ে উঠছে৷ সে দেশে রয়েছে অসংখ্য ক্লাব, পাব, রেস্তোরাঁ এবং লম্বা সমুদ্র সৈকত৷
ছবি: Jack Guez/AFP/Getty Images
11 ছবি1 | 11
এ সব কিছুর ফলে রাজপরিবার অথবা রাজতন্ত্রের জনপ্রিয়তা বাড়েনি, বরং আরো কমেছে৷ গত জানুয়ারির একটি জরিপ অনুযায়ী, স্পেনের অর্ধেকের কম মানুষ আজ রাজতন্ত্রের সপক্ষে৷ রাজপরিবারের প্রতি সমর্থন এর আগে কখনো এত নীচে নামেনি৷ ওদিকে গত মে মাসের একটি জরিপ অনুযায়ী ৩৫ বছরের কম বয়সি স্পেনীয়দের একটি সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ আজ নিজেদের ‘রিপাবলিকান', অর্থাৎ প্রজাতন্ত্রের সমর্থক বলে মনে করে৷
অপরদিকে স্পেনের ‘স্থায়িত্ব' নিয়ে একটা সমস্যা ছিল এবং থেকেই যাচ্ছে: কাতালোনিয়া ও বাস্ক প্রদেশ স্বাধীন হতে চায়, স্পেন থেকে বিচ্ছিন্ন হতে চায়৷ সেক্ষেত্রে রাজা, রাজপরিবার ও রাজতন্ত্র, সব মিলিয়ে একটা মিলনের যোগসূত্র হিসেবে কাজ করে বৈকি৷ ইউরোপের রাজপরিবারদের পারস্পরিক চেনাজানাই শুধু নয়, মধ্যপ্রাচ্যের রাজপরিবারগুলিও স্পেনের নৃপতির প্রতি বন্ধুসুলভ মনোভাবই পোষণ করে থাকেন – যা ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে স্পেনীয়দের নানা সুযোগ-সুবিধা এনে দিতে পারে৷
সব মিলিয়ে তরুণ স্পেনীয়দের মনোভাব হলো: হুয়ান কার্লোসের পর ফেলিপে রাজত্ব করলে তাদের কোনো আপত্তি নেই, তবে সেটা যদি কালে কোনো আগামী প্রজাতন্ত্রের প্রেসিডেন্টের পদে রূপান্তরিত হয়ে দাঁড়ায়, তাহলে ফেলিপে যেন আশ্চর্য না হন৷