পুরোপুরি স্বাধীনতা নয়, গণভোটে আরও স্বায়ত্তশাসনের পক্ষে রায় দিলেন ইটালির উত্তরের দুই রাজ্যের মানুষ৷ অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী এই অঞ্চলে এমন প্রবণতা ইটালিতে দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে উঠছে৷
বিজ্ঞাপন
রবিবার ইটালির লম্বার্ডি ও ভেনেতো রাজ্য আরও স্বায়ত্তশাসনের প্রশ্নে এক গণভোট অনুষ্ঠিত হয়েছে৷ সর্বশেষ হিসেব অনুযায়ী, লম্বার্ডি রাজ্যে প্রায় ৯৫ শতাংশ ভোটার স্বায়ত্তশাসনের আরও অধিকারের পক্ষে রায় দিয়েছেন৷ সেখানে ভোটগ্রহণের হার ছিল ৪০ শতাংশের সামান্য বেশি৷ ভেনেতো রাজ্যে প্রায় ৫৮ শতাংশ ভোটার তাঁদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন৷ সেখানে স্বায়ত্তশাসনের পক্ষে ৯৮ শতাংশ ভোট পড়েছে৷
তবে ভেনেতো রাজ্যে এই ভোটগ্রহণের সময় হ্যাকারদের হামলা হয়েছে, এমন সন্দেহের কারণে আনুষ্ঠানিক ফলাফল প্রকাশে বিলম্ব ঘটছে৷ দুই রাজ্যর মুখ্যমন্ত্রী ভোটারদের এই স্পষ্ট রায়ের পর প্রধানমন্ত্রী পাওলো জেন্টিলোনি-র সঙ্গে স্বায়ত্তশাসনের বিষয়ে আলোচনার ঘোষণা করেছেন৷ উল্লেখ্য, স্পেনের কাটালুনিয়া রাজ্যের মতো এই উদ্যোগ একতরফা ছিল না৷ রোমে ফেডারেল সরকারের সম্মতি নিয়েই এই গণভোট অনুষ্ঠিত হয়েছে৷ গণভোটের রায় কার্যকর করার কোনো আইনি বাধ্যবাধকতাও নেই৷
স্পেনের কাটালুনিয়া রাজ্যের মতো ইটালির উত্তরের এই দুই রাজ্য অর্থনৈতিক মাপকাঠিতে অত্যন্ত সমৃদ্ধ৷ এই দুই রাজ্য দেশের অর্থনৈতিক উৎপাদনশীলতার প্রায় ৩০ শতাংশের ভাগীদার৷ কর ও রাজস্বের একটা বড় অংশ ফেডারেল সরকারের হাতে তুলে দিতে আর প্রস্তুত নয় এই দুই রাজ্য সরকার৷ এই গণভোটের রায় কার্যকর হলে এ ক্ষেত্রে আরও ক্ষমতা পাবে লম্বার্ডি ও ভেনেতো রাজ্য৷ অন্যদিকে ইটালির অন্যান্য অঞ্চল সেই সমৃদ্ধি থেকে অনেকটা বঞ্চিত হবে৷ দেশের উত্তরাঞ্চলে ক্ষমতাসীন দক্ষিণপন্থি পপুলিস্ট ‘নর্দার্ন লিগ’ দল বেশ কিছুকাল ধরে বিচ্ছিন্নতাবাদের উদ্যোগ নিয়ে আসছে৷ তবে পুরোপুরি স্বাধীনতার দাবি থেকে সরে এসে তারা আপাতত স্বায়ত্তশাসনের অধিকার পেতে উৎসাহী৷ গণভোটের রায়কে হাতিয়ার করে এই দল ফেডারেল সরকারের সঙ্গে আরও জোরালোভাবে দরকষাকষি করবে বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে৷
উত্তরের দুই রাজ্য শেষ পর্যন্ত স্বায়ত্তশাসনের অধিকার আদায় করতে পারলে ইটালির সংবিধান সংশোধনের জন্য চাপ আরও বাড়তে পারে বলে পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন৷ সে দেশে বর্তমানে ফেডারেল সরকারের হাতেই বেশি ক্ষমতা রয়েছে৷ জার্মানির মডেলে রাজ্য সরকারগুলিরহাতে আরও ক্ষমতা তুলে দেবার জন্য চাপ বাড়তে পারে বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে৷
এসবি/এসিবি (ডিপিএ, এএফপি)
স্পেনের পর ইউরোপে আরও বিভাজনের আশঙ্কা?
স্পেনের কাটালুনিয়া রাজ্যের স্বাধীনতার গণভোট নিয়ে বিতর্কের মাঝে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্য কিছু অঞ্চলেও বিচ্ছিন্নতার প্রয়াস উৎসাহ পাচ্ছে৷ এই সব অঞ্চলে কাটালুনিয়ার স্বাধীনতার প্রতি ব্যাপক সমর্থন দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/EPA/G. Stuart
ব্রেক্সিটের পর স্কটল্যান্ডের ভবিষ্যৎ
২০১৪ সালেই এক গণভোটে স্কটল্যান্ডের ৫৫ শতাংশ ভোটার ব্রিটেন থেকে স্বাধীনতার বিপক্ষে রায় দিয়েছিলেন৷ কিন্তু ব্রেক্সিট-পরবর্তী যুগে তাদের মতামত আবার যাচাই করতে চায় স্কটল্যান্ডের জাতীয় পার্টি৷ ইইউ-র সঙ্গে ব্রিটেনের বিচ্ছেদ সংক্রান্ত চুক্তি চূড়ান্ত হলে, এমনকি কোনো বোঝাপড়া না হলেও স্কটল্যান্ডে স্বাধীনতার প্রশ্নে গণভোট আয়োজন করতে চায় এসএনপি দল৷
ছবি: picture-alliance/dpa/EPA/G. Stuart
বেলজিয়াম থেকে ফ্লেমিশ অঞ্চলের বিদায়?
১৮৩০ সালে ফ্রান্স ও জার্মানির মাঝে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বেলজিয়াম সৃষ্টি হয়েছিল৷ ফরাসি-ভাষাভাষী দক্ষিণাঞ্চল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে এবার স্বাধীনতার চেষ্টা চালাচ্ছে উত্তরের ফ্লেমিশভাষী সমৃদ্ধ অঞ্চল৷ বেলজিয়ামের জোট সরকারের সবচেয়ে বড় দল হিসেবে জাতীয়তাবাদী এনভিএ গোষ্ঠী ২০১৯ সালের নির্বাচনে সাফল্য বাড়িয়ে স্বাধীন ফ্লেমিশ রাষ্ট্রের স্বপ্ন কার্যকর করতে চায়৷
ছবি: Reuters
স্পেনের বাস্ক অঞ্চলের সংগ্রাম
১৯৬৯ সাল থেকে স্বাধীন বাস্ক রাষ্ট্রের জন্য সশস্ত্র সংগ্রাম চালিয়েছে বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী ‘এটা’৷ চলতি বছরের এপ্রিল মাসেই এই গোষ্ঠী অস্ত্র ত্যাগ করেছে৷ শান্তিপূর্ণ পথে ফ্রান্স ও স্পেনে বাস্ক সম্প্রদায়ের মানুষের জন্য স্বাধীন রাষ্ট্র গড়তে চায় ‘সর্টু’ নামের এক রাজনৈতিক দল৷ কাটালুনিয়ার স্বাধীনতাকামীদের প্রতি স্পেনের বাস্ক অঞ্চলে বিক্ষোভ দেখা গেছে৷
ছবি: AP
নিউ ক্যালিডোনিয়ার বিদায় আসন্ন?
প্রশান্ত মহাসাগরের দক্ষিণে ফ্রান্সের শাসন থেকে মুক্তি পেতে পারে নিউ ক্যালিডোনিয়া৷ আগামী নভেম্বর মাসে সেখানে এই প্রশ্নে গণভোট আয়োজিত হচ্ছে৷ ১৮৫৩ সাল থেকে ফ্রান্সের অধীনে থাকার পর ২৮০,০০০ জনসংখ্যার এই দ্বীপমালা স্বাধীন রাষ্ট্র হয়ে উঠতে পারে৷ ১৯৯৮ সাল থেকেই নিউ ক্যালিডোনিয়া স্বায়ত্তশাসনের আরও অধিকার ভোগ করছে৷
ভূমধ্যসাগরে ফ্রান্সের কর্সিকা দ্বীপের জনসংখ্যা প্রায় ৩৩০,০০০৷ সেখানকার জাতীয় লিবারেশন ফ্রন্ট ২০১৪ সালের জুন মাসে স্বাধীনতার লক্ষ্যে সশস্ত্র সংগ্রাম ত্যাগ করেছে বটে, কিন্তু রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় স্বাধীনতা অর্জনের স্বপ্ন ত্যাগ করেনি৷ স্বায়ত্তশাসনের বেশ কিছু অধিকার সত্ত্বেও তারা তাদের লক্ষ্যে অটল রয়েছে৷
ছবি: DW/E. Bryant
ডেনমার্কের ফেরো দ্বীপ
আটলান্টিক মহাসাগরে ফেরো দ্বীপপূঞ্জে মাত্র ৪৮,০০০ মানুষের বাস৷ সেখানকার ভোটাররা ২০১৮ সালের এপ্রিল মাসে এক গণভোটে ডেনমার্ক থেকে স্বাধীনতার প্রশ্নে তাঁদের রায় জানাবেন৷ ১৯৪৮ সাল থেকে ফেরো দ্বীপ স্বায়ত্তশাসনের অধিকার পেয়েছে৷ শুধু পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষার বিষয় দু’টি ডেনমার্কের হাতে রয়েছে৷
ছবি: picture alliance/augenklick/GES
স্বাধীনতা নয়, স্বায়ত্তশাসন চায় ইটালির উত্তরাঞ্চল
আরও স্বায়ত্তশাসনের প্রশ্নে লম্বার্ডি ও ভেনেতো রাজ্য আগামী ২২শে অক্টোবর এক গণভোটের আয়োজন করেছে৷ সেখানে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ স্বায়ত্তশাসনের পক্ষে রায় দিয়েছে৷ উত্তরের সমৃদ্ধ এই অঞ্চল গোটা দেশের অর্থনীতির প্রায় এক-তৃতীয়াংশের দাবিদার৷ ফলে কাটালুনিয়ার মতো এই অঞ্চলও কর বাবদ অর্থের আরও বড় অংশ নিজেদের কাছে রাখতে চায়৷