স্পেনে অতিরিক্ত পর্যটনের বিরুদ্ধে ক্ষোভ বাড়ছে
৪ নভেম্বর ২০২৪স্পেনের মায়োর্কা দ্বীপ লাগামহীন পার্টির কারণেও পরিচিত৷ হাজার হাজার পর্যটক প্লায়া দে পালমায় খুশির জোয়ারে নিজেদের ভাসিয়ে দেন৷ তাদের মধ্যে জার্মানদের সংখ্যাই বেশি৷ কিন্তু এর ফলে প্রতিবেশীরা বিরক্ত হন৷
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি প্রায় ২৫ বছর সেখানে রয়েছেন৷ তিনি নিজের ক্ষোভ তুলে ধরলেন৷ তিনি বলেন, ‘‘পর্যটন পুরোপুরি বদলে গিয়েছে৷ এখন শুধু বিশাল মাত্রায় মদ্যপান চলে৷ আমরা অসহায় বোধ করি৷ বিকট শব্দের কারণে আমাকে কানে ইয়ারপ্লাগ লাগিয়ে ঘুমাতে হয়৷''
রাতের তাণ্ডবের চিহ্ন চারিদিকে ছড়িয়ে রয়েছে৷ পড়ে থাকা খালি বোতল ও ক্যান খুবই দৃষ্টিকটু৷ দ্বীপের পার্টি জোন বলে পরিচিত অনেক জায়গায় আঞ্চলিক সরকারের কড়া হস্তক্ষেপ সত্ত্বেও পরিস্থিতি বদলাচ্ছে না৷
প্লায়া দে পালমার প্রশাসন পথেঘাটে বা সৈকতে মদ্যপান নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে৷ সেই নির্দেশ অমান্য করলে দেড় হাজার ইউরো পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে৷ তাছাড়া অ্যালকোহল বিক্রি করে, এমন সব দোকান রাত সাড়ে নয়টায় বন্ধ করার কথা৷
অ্যালেন কার্বোনেল ও মিগেল পাস্কুয়াল নতুন বিধিনিয়ম কার্যকর করার লক্ষ্যে সংগ্রাম চালাচ্ছেন৷ তাঁরা পার্টি জোনে বাস করেন৷ পাড়ার এক সংঘে যোগ দিয়ে তাঁরা সমস্যা মোকাবিলার চেষ্টা করছেন৷ অ্যালেন বলেন, ‘‘এই জায়গাটা যেন এক থিম পার্ক৷ পর্যটকরা বের হয়ে পাড়ার মধ্য দিয়ে তাণ্ডব করতে করতে আসে৷ পড়ে যায়, বমি করে, পথেঘাটে প্রস্রাব করে৷ সবাই এমন করে৷''
পাড়ার সংঘের সদস্য মিগেল পাস্কুয়ালের মতে, ‘‘যে সব দোকান সময়সীমা অমান্য করে, সরকারকে তাদের শাস্তি দেওয়া শুরু করতে হবে৷ এমন সব উপদ্রব আমাদের সহ্য করতে হয়৷ আমার পরিবারেই জার্মান সদস্য রয়েছে৷ এমন ব্যবহারের কারণে আমার লজ্জা হয়৷''
দিনের আলো থাকতেই পার্টি শুরু হয়ে যায়৷ পর্যটকদের কাছে সেটা সৈকতে ‘প্রি-ড্রিংকিং'৷ অ্যালোকোহল পানে নিষেধাজ্ঞার কথা শুনে থাকলেও তারা এমন কীর্তি করে৷
পাড়ার সংঘ কর্তৃপক্ষের নিষ্ক্রিয় ভূমিকা নিয়ে খুবই অসন্তুষ্ট৷ পার্টির শব্দ শুধু রাজপথেই সীমাবদ্ধ থাকে না৷ পর্যটকরা হোটেল বা অ্যাপার্টমেন্টে ফিরেও বারান্দায় পার্টি চালিয়ে যায়৷ কারণ আরো বেশি ফ্ল্যাট পর্যটকদের ভাড়া দেওয়া হচ্ছে৷ অ্যালেন কার্বোনেল বলেন, ‘‘বহু বছর ধরে শুনে আসছি যে সমস্যা সমাধানের নাকি চেষ্টা চলছে৷ কিন্তু সমস্যা থেকে গেছে৷ কেউ আসলে কিছুই করতে চায়না, কারণ পর্যটনের কারণে অর্থ আসে৷''
ডিডাব্লিউ বালিয়ারিক দ্বিপপূঞ্জের প্রশাসনের বক্তব্য জানতে টেলিফোনে ও লিখিতভাবে একাধিক অনুরোধ করেছিল৷ কিন্তু প্রাদেশিক সরকার কোনো সাক্ষাৎকার বা তথ্য দিতে রাজি হয়নি৷ মায়োর্কা সেই অঞ্চলের সবচেয়ে বড় দ্বীপ৷
অনেক হোটেল সংস্থাও দুশ্চিন্তায় পড়েছে৷ স্থানীয় হোটেল সংঘের সভাপতি পেদ্রো মারিন বহু বছর ধরে হোটেলের মান ও ভাড়া বাড়ানোর জন্য লড়াই করছেন৷ সেইসঙ্গে ছুটি কাটানোর ন্যূনতম সময়সীমা সংক্রান্ত শর্ত আরোপ করে তাঁরা পার্টি টুরিস্টদের আগমন কমানোর চেষ্টা করছেন৷ হোটেল সংঘের প্রতিনিধি পেদ্রো মারিন মনে করেন, ‘‘দায়িত্বশীল পর্যটকদের আকর্ষণ করতে এই সব উদ্যোগ যথেষ্ট নয়৷ আমার মতে, এখানে আসার আগেই মানুষকে সে বিষয়ে সচেতন করতে হবে৷ তারা এখানে এসে আমাদের সঙ্গে সৈকত উপভোগ করতে পারেন, একাই যেন সবটা দখল করতে না চান৷ আমাদের সবাইকে সৈকতের যত্ন নিতে হবে৷''
দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে স্থানীয় মানুষ ধীরে ধীরে অন্য জায়গায় চলে যেতে পারেন৷ অনেকেই আর বিকট শব্দ সহ্য করতে প্রস্তুত নন৷
নর্মান স্ট্রিগেল/এসবি