পশ্চিম আফ্রিকা ছেড়ে এবোলার থাবা এবার পড়েছে ইউরোপের মাটিতে৷ স্পেনের এক সেবিকার এবোলা ধরা পড়েছে৷ এবোলা আশঙ্কায় চারজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে৷ বাকিদেরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে৷
বিজ্ঞাপন
স্প্যানিশ গণমাধ্যমে আক্রান্ত সেবিকার নাম টেরেসা রোমেরো বলে জানানো হয়েছে৷ তাঁর বয়স ৪০ এর ঘরে৷ সোমবার থেকে তাঁকে আলাদাভাবে চিকিৎসা দেয়া শুরু হয়েছে৷ স্পেনের রাজধানী মাদ্রিদের একটি হাসপাতালে তিনি কাজ করেন৷ সেখানেই তিনি পশ্চিম আফ্রিকা থেকে ফেরত আসা দু'জন স্প্যানিশ ধর্ম প্রচারককে সেবা প্রদান করেন, যাঁরা পরবর্তীতে এবোলার কারণে মারা যান৷
এই দুই ধর্ম প্রচারকের একজন গার্সিয়া বিয়েখো ৷ ৬৯ বছর বয়েসি বিয়েখো সিয়েরা লিওনে ছিলেন৷ সেখান থেকে স্পেনে ফেরার পর ২৫ সেপ্টেম্বর তাঁর মৃত্যু হয়৷ বিয়েখোকে সেবা দিয়েছিলেন রোমেরো৷ সেখানে থেকেই রোমেরো এবোলায় আক্রান্ত হতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে৷
সিয়েরা লিওনে ইবোলার বিরুদ্ধে লড়াই
পশ্চিম আফ্রিকার কয়েকটি দেশে ইবোলা বা এবোলার সংক্রমণ মহামারির রূপ নিয়েছে৷ সিয়েরা লিওনও আছে সেই তালিকায়৷ ছোট্ট দেশটিতে চলছে ইবোলার বিরুদ্ধে বড় এক লড়াই৷ দেখুন ছবিঘরে৷
ছবি: DW/Scholz/Kriesch
জীবন তবু বহমান...
সিয়েরা লিওনের রাজধানী ফ্রিটাউনের সবজির বাজারে গোলমরিচ বিক্রি করেন সুয়ার্ড ডেম্বি (ডানে)৷ প্রতিদিন শত শত লোক এবোলায় সংক্রমিত হচ্ছে৷ বাজারে এত ভিড়, কার কাছ থেকে যে এবোলা এসে তাঁর শরীরেও বাসা বাঁধবে, কে বলবে! ভয় আছে ঠিকই, তবুও ডেম্বিকে প্রতিদিন আসতে হয় বাজারে৷ তাঁর আয়েই সংসারটা চলে৷ ডেম্বি মরিচ বিক্রি না করলে সংসার চলবে কী করে!
ছবি: DW/Scholz/Kriesch
স্থপতিও লড়াইয়ে
এবোলায় সংক্রমিতদের চিকিৎসা করতে হয় আলাদাভাবে৷ সে কারণে চাই বিশেষ ইউনিট৷ এখন অনেক জায়গাতেই এমন ইউনিট গড়ে তুলতে হচ্ছে৷ আছে উপযুক্ত স্থানের অভাব, প্রশিক্ষিত সেবাকর্মীর অভাব তো আরো বেশি৷ ছবির এই মানুষটির নাম কামারা৷ পেশায় স্থপতি৷ নানান প্রকল্প নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন এতদিন৷ সব ছেড়ে চলে এসেছেন ফ্রিটাউনে৷ নিজেকে সঁপে দিয়েছেন এবোলা ভাইরাসে আক্রান্তদের জন্য বিশেষ ইউনিট গড়ার কাজে৷
ছবি: DW/Scholz/Kriesch
পুলিশই সবার ‘মা’
ইনি নিজের নাম কাউকে বলতে চান না৷ স্থানীয়রা তাঁর নাম দিয়েছেন ‘মামা জি’৷ সিয়েরা লিওনের সাধারণ এক মহিলা পুলিশ৷ স্বভাবে মায়ের মতো৷ সবার দুঃখ দুর্দশায় পাশে থাকেন৷ এখনো আছেন৷ এবোলার শিকার হয়ে কেউ মারা গেলে লাশ দাফন করতে আর কেউ না এলেও ‘মামা জি’ আসেন৷ ভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার ভয় আছে জেনেও লাশ হয়ে যাওয়া মানুষদের পরম মমতায় পৌঁছে দেন শেষ ঠিকানায়৷
ছবি: DW/Scholz/Kriesch
এক জার্মান
ওলে হ্যাঙ্গেলব্রক জার্মান নাগরিক৷ প্রায় এক বছর ধরে আছেন সিয়েরা লিওনে৷ ‘ক্যাপ আনামুর’ নামের এক বেসরকারি সংস্থার হয়ে পথশিশুদের নিয়ে কাজ করতে গিয়েছেন পশ্চিম আফ্রিকার দেশটিতে৷ লিওন প্রিমিয়ার লিগে একটি দলের হয়ে ফুটবলও খেলছেন চুটিয়ে৷ সে দেশে এখন এবোলা আতঙ্ক৷ ওলে হ্যাঙ্গেলব্রক তা নিয়ে বেশি মাথা ঘামাচ্ছেন না৷ সিয়েরা লিওন তাঁর কাছে দ্বিতীয় জন্মভূমি৷ রোগের ভয়ে জন্মভূমি ছাড়বেন, তা হয় নাকি!
ছবি: DW/Scholz/Kriesch
প্রথম অভিজ্ঞতা
সংক্রমণ নিরোধক এই পোশাক আগে কখনো পরেননি মোমেডো লাম্বো৷ এবোলা রোগীদের ওয়ার্ডে কাজ করতে চান বলে ফ্রিটাউনে এসেছেন প্রশিক্ষণ নিতে৷ প্রশিক্ষণের প্রয়োজনেই পরতে হলো এ পোশাক৷
ছবি: DW/Scholz/Kriesch
সচেতনতা বাড়াতে...
এবোলার সংক্রমণ রুখতে হলে এ ভাইরাস সম্পর্কে সর্বস্তরে সচেতনতা বাড়ানো প্রয়োজন৷ পকেটের টাকা খরচ করে এ সম্পর্কে জেনেছেন উসমান রহিম বাহ৷ এখন দ্বারে দ্বারে গিয়ে এবোলা সম্পর্কে সচেতন করে তুলছেন সবাইকে৷
ছবি: DW/Scholz/Kriesch
সদাব্যস্ত স্টেলা
৩০ বছর বয়সি স্টেলা এক হাসপাতালের সেবিকা৷ রোগযন্ত্রণা, মৃত্যু, কান্না, আহাজারি কম দেখেননি৷ কিন্তু এবোলা-আতঙ্ক তাঁর জন্যও এক নতুন অভিজ্ঞতা৷ এবোলায় সংক্রমিত প্রথম রোগীটি যখন এলো, বলতে গেলে সব সহকর্মীই হাসপাতাল ছাড়লেন৷ কিন্তু স্টেলা যাননি৷ তাঁর দেশ শিগগিরই এ বিপর্যয় থেকে বেরিয়ে আসবে - এ আশায় দিন-রাত রোগীর সেবা করে যাচ্ছেন এখনো৷
ছবি: DW/Scholz/Kriesch
পায়ে পায়ে বিপদ
ডেসমন্ড রিজ রেড ক্রসের টিম লিডার৷ দলনেতা হিসেবে তাঁর মূল দায়িত্ব, মৃতদেহ সৎকারের কাজে ব্যস্ত সহকর্মীদের সুস্থতা নিশ্চিত করা৷ বড় কঠিন দায়িত্ব৷ ডেসমন্ড রিজ বললেন, ‘‘আমরা যে ভালো প্রশিক্ষণ পেয়েছি এবং সংক্রমণ এড়ানোর জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নিয়েই কাজ করছি সেটা আমি জানি৷’’ তবু ভয় একটু থাকেই৷ রিজ প্রতিদিন ভাবেন, আজই হয়তো মহামারির বিরুদ্ধে লড়াইটা শেষ হবে৷
ছবি: DW/Scholz/Kriesch
8 ছবি1 | 8
কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, কীভাবে মাদ্রিদের ঐ হাসপাতালের বিশেষ ইউনিটের নিরাপত্তা ব্যবস্থা টপকে রোমেরোর শরীরে এবোলা ভাইরাস প্রবেশ করলো৷ ইউরোপীয় ইউনিয়ন বিষয়টি জানতে স্পেনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছে৷ ইউরোপীয় কমিশনের মুখপাত্র ফ্রেডেরিক ভিনসেন্ট মনে করেন, ‘‘নিশ্চয়ই কোথাও না কোথাও সমস্যা আছে৷''
অবশ্য এবোলা আবিষ্কারকদের একজন পিটার পিওট বলেন, সারা বিশ্বের স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য এবোলা হুমকি হলেও উন্নত দেশে সেটা মহামারি রূপ ধারণ করতে পারে বলে তিনি মনে করেন না৷
এদিকে, এবোলা আক্রান্ত সেবিকা রোমেরোর সহকর্মীরা হাসপাতালের দূর্বল নিরাপত্তা ব্যবস্থার প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেছেন৷ তাঁরা এর জন্য স্বাস্থ্যমন্ত্রীর পদত্যাগও দাবি করেন৷ বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, সেবক-সেবিকাদের পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ দেয়া হয়নি৷
স্পেন পরিস্থিতি
রোমেরোর শরীরে এবোলা ধরা পড়ার পর তাঁর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট তিনজন সহ আরেকজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে৷ এর মধ্যে একজন রোমেরোর স্বামী৷ তিনি ‘মারাত্মক ঝুঁকি'-র মধ্যে রয়েছেন বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা৷ সেজন্য তাঁকে পুরোপুরি আলাদাভাবে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে৷ এছাড়া রোমেরোর আরও দুই সহকর্মীকে হাসপাতালে নেয়া হয়েছে৷
নাইজেরিয়া থেকে স্পেনে ফেরত যাওয়া এক প্রকৌশলীকেও এবোলা আক্রান্ত সন্দেহে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে৷