স্পেনে ঐতিহ্যের সঙ্গে লিথিয়াম খনির সংঘাত
১৯ আগস্ট ২০২১বিরল জাতের এই কালো মেরিনো ভেড়ার চারণভূমি বদলানোর সময় এসে গেছে৷ গবাদি পশুদের এমনভাবে ঘোরাতে থাকলে গোটা অঞ্চলের মাটি উর্বর থাকে এবং জীববৈচিত্র্য সমৃদ্ধ হয়৷
গনসালো পালোমো স্পেনের উত্তরে কাসেরেস শহরের বাইরে নিজের চাষের জমি আবার ব্যবহার করতে শুরু করেছেন৷ সেখানে অরগ্যানিক অলিভ অয়েল, মাংস ও কাপড় উৎপাদন করা হচ্ছে৷ গনসালো বলেন, ‘‘এই ফার্মটিকে একবিংশ শতাব্দীর আদর্শ খামার হিসেবে তুলে ধরার সুযোগ রয়েছে৷ ইউরোপীয় ইউনিয়ন ভবিষ্যতের কৃষিকাজ এমন দেখতে চায়৷''
সহযোগীদের সঙ্গে তিনি এই টেকসই খামারে কমপক্ষে ৬০,০০০ ইউরো বিনিয়োগ করেছেন৷ কিন্তু এলাকায় এক লিথিয়ামের খনি খোলার পরিকল্পনা সেই উদ্যোগের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত করে তুলছে৷ গনসালো পালোমো বলেন, ‘‘আমরা অলিভ গাছের যে বাগানে দাঁড়িয়ে আছি, সেখানে খনির বর্জ্য জমা রাখার কথা৷ এমনটা একেবারেই খাপ খায় না৷ শুধু উত্তোলনের সময় নয়, চিরকালের জন্য বাগান নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে৷''
সিয়েরা দে লা মস্কা অঞ্চলে ইউরোপের অন্যতম বড় লিথিয়ামের ভাণ্ডার পাওয়া গেছে৷ ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃত কাসেরেস শহরের কেন্দ্রস্থলের খুব কাছেই সেই প্রাকৃতিক এলাকা অবস্থিত৷ সেখানে এখন ব্যাপক উত্তেজনা দেখা যাচ্ছে৷ নাগরিকরা পরিকল্পিত খনির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন৷ খুস্তিনা পেরেস সেই বিশাল উদ্যোগের অংশ৷ তিনি বলেন, ‘‘সবচেয়ে খারাপ বিষয় হলো, ওরা কাসেরেসের ফুসফুস হিসেবে পরিচিত সবুজ এলাকা ধ্বংস করবে৷ সেই এলাকা কার্যত শহরেরই অংশ৷ কেউ কেউ বলে শহরের কেন্দ্রস্থল থেকে দেড় কিলোমিটার দূরে৷ কিন্তু পানি পরিশোধন প্লান্ট মাত্র ৩০০ মিটার দূরে৷ ওরা সেখানেই গর্ত খুঁড়তে চাইছে৷ এই উদ্যোগ বর্বরোচিত৷ বাড়িঘর বেশি দূরে নয়৷ শহরবাসীরা খুব কাছেই থাকেন৷''
লিথিয়াম উত্তোলনের কারণে বাতাস ও ভূগর্ভস্থ পানি দূষিত হবে বলে নগরবাসীরা আশঙ্কা করছেন৷ অস্ট্রেলিয়ার খনি কোম্পানি অবশ্য নিজেদের প্রচারের ভিডিওতে এই উদ্যোগকে ভবিষ্যতধর্মী হিসেবে তুলে ধরছে৷
ইউরোপ মহাদেশেই লিথিয়াম উত্তোলন ইলেকট্রিক গাড়ির ব্যাটারি তৈরির ক্ষেত্রে ইউরোপীয় ইউনিয়নের রণকৌশলের অন্যতম চাবিকাঠি৷ জীবাশ্মভিত্তিক জ্বালানী বর্জনের প্রক্রিয়ায় বাইরের সম্পদের উপর নির্ভরতা কমানোও অন্যতম উদ্দেশ্য৷ কোম্পানির জন্য ওপেন কাস্ট মাইন বিশাল এক সুযোগ এনে দিচ্ছে৷ এক্সট্রেমাদুরা মাইনিং কোম্পানির ম্যানেজার ডেভিড ভ্যাল্স বলেন, ‘‘এটা আসলে প্রয়োজনীয় পরিবর্তনের প্রক্রিয়া৷ কার্বন নির্গমন কমানোর পরিকল্পনার আওতায় সব গাড়ি উৎপাদক কোম্পানিই লিথিয়াম ব্যাটারিচালিত যানের পথে এগোচ্ছে৷''
একটি ভিডিওর মাধ্যমে এক্সট্রেমাদুরা মাইনিং কোম্পানি এই প্রকল্পের ব্যাখ্যা দেবার চেষ্টা করছে৷ তারা টেকসই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বছরে প্রায় ১৫,০০০ টন লিথিয়াম হাইড্রোক্সিন উত্তোলন করতে চায়৷ খনিতে বর্জ্য পানি ব্যবহারের লক্ষ্য স্থির করা হয়েছে৷ সপ্তাহে মাত্র কয়েকবার প্রয়োজনীয় বিস্ফোরণ করা হবে এবং বনভূমি নতুন করে গড়ে তোলা যাবে বলে কোম্পানি দাবি করছে৷ ডেভিড ভ্যাল্স বলেন, ‘‘লিথিয়ামের ভাণ্ডার সরানো সম্ভব নয়৷ সেটা এখানেই আছে৷ সেই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যে শিল্পোন্নয়ন হবে, সেটা গুরুত্বপূর্ণ৷ আমরা লিথিয়াম হাইড্রক্সাইড উৎপাদনের লক্ষ্যে শিল্প গড়ে তুলছি৷ বর্তমানে ইউরোপে সেই শিল্পশাখার অস্তিত্বও নেই৷''
ভাল্সের মতে, স্বাধীন উৎপাদন ক্ষমতার মাধ্যমে স্পেন লিথিয়াম ব্যাটারি ব্যবসায় শীর্ষ স্তরে পৌঁছে যেতে পারে৷
ইওয়ানা গটশাল্ক/এসবি