গোটা বিশ্বেই শকুনির সংখ্যা কমে চলেছে৷ ফলে পরিবেশ সংরক্ষণে তাদের ভূমিকা আরও স্পষ্ট হয়ে উঠছে৷ স্পেনে শকুনিদের বাঁচাতে এক অভিনব প্রকল্প চলছে৷
বিজ্ঞাপন
স্পেনের পিরেনিস পর্বতের আকাশে এখনো এই শকুনিদের আধিপত্য৷ পশুপাখির মৃতদেহ দূর করে এককালে গোটা ইউরোপে ইকোসিস্টেম অক্ষত রাখায় এদের বড় ভূমিকা ছিল৷ বর্তমানে মানুষই তাদের খাদ্যের সন্ধানে সাহায্য করছে৷ যেমন আন্টোনি মার্গালিডা ও জর্ডি কানুট৷ প্রতি শনিবার জর্ডি কানুট পাহাড়ে উঠে শকুনিদের খাওয়ান৷
আন্টোনি মার্গালিডা ইকোলজি প্রফেসর৷ স্পেনের উত্তরে এই শকুনি সংরক্ষণ প্রকল্পে তিনি বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করছেন৷ গোপন ডেরা থেকে তিনি তাদের উপর নজর রাখতে পারেন৷ জর্ডি কানুট বিশাল জায়গা জুড়ে মাংসের টুকরো ছড়িয়ে দেন, যাতে সব প্রজাতির শকুনি যথেষ্ট খাদ্য পায়৷ সংরক্ষিত এলাকায় এই খাদ্য বিতরণের উদ্যোগের ফলে প্রো. মার্গালিডা-র শকুনি গবেষণায় সুবিধা হয়েছে৷ প্রো. মার্গালিডা বলেন, ‘‘চার প্রজাতির শকুনি একসঙ্গে দেখতে হলে এটাই সম্ভবত ইউরোপের সেরা জায়গা৷’’
আদনানের ক্যামেরায় বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী
বাংলাদেশের বিভিন্ন বনে-জঙ্গলে দেখা যায় নানান বন্যপ্রাণী৷ বাংলাদেশের ওয়াইল্ডলাইফ ফটোগ্রাফার আদনান আজাদ আসিফের তোলা চমৎকার কিছু আলোকচিত্র নিয়ে এই ছবিঘর৷
ছবি: Adnan Azad Asif
চিতা বিড়াল
চিতা বিড়ালের ইংরেজি নাম লেপার্ড ক্যাট৷ ছেলে ও মেয়ে বিড়ালের মধ্যে চেহারায় কিছুটা ভিন্নতা আছে৷এরা গভীর বনের বাসিন্দা৷ এরা শিকারে পটু৷ এদেরকে চিতা বাঘের রেপ্লিকাও বলা হয়৷
ছবি: Adnan Azad Asif
মুখপোড়া হনুমান
ক্যাপড লেঙ্গুর বা মুখপোড়া হনুমানের ছবিটি হবিগঞ্জের সাতছরি জাতীয় উদ্যান থেকে তোলা৷ লালা হনুমান নামেও পরিচিত এরা৷ বর্তমানে সারা বিশ্বেই এই প্রজাতিটির অস্তিত্ব বিপন্ন৷ একটি পুরুষের নেতৃত্বে দলের সব স্ত্রী, যুবক ও বাচ্চারা থাকে৷ এরা খুবই শান্তিপ্রিয়৷দলবদ্ধ এই প্রাণীদের একেকটি দলে সচরাচর ২ থেকে ১৪টি প্রাণী থাকে৷ এরা মূলত পাতাভোজী৷
ছবি: Adnan Azad Asif
উল্লুক
হুলক গিবন বা উল্লুক৷ পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হতে বসেছে প্রাণীটি৷ পুরুষদের গায়ের রং কালো, কিন্তু দর্শনীয় সাদা ভ্রু রয়েছে৷ অন্যদিকে মেয়ে উল্লুকের সারা গায়ে আছে ধূসর-বাদামী লোম৷ ছবিটি তোলা হয়েছে মৌলভীবাজারের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান থেকে৷
ছবি: Adnan Azad Asif
মেছোবাঘ
ফিশিং ক্যাট বা মেছোবাঘের এ ছবিটি মৌলভী বাজারের হাইল হাওড় থেকে তোলা৷ এরা সাধারণত নদী ও পাহাড়ি ছড়া ও জলাভূমির পাশে বাস করে৷ বাংলাদেশের বিপন্ন প্রজাতির এ প্রাণীটি রাতেই শিকার করে৷
ছবি: Adnan Azad Asif
বন বিড়াল
বন বিড়ালের ইংরেজি নাম ‘জাঙ্গল ক্যাট’৷ এরা জংলি বিড়াল নামেও পরিচিত৷ দিনে এদের দেখা যায় না বললেই চলে৷ এরা সাধারনত ছোট ছোট প্রাণী ও পাখি শিকার করে খায়৷
ছবি: Adnan Azad Asif
চশমাপরা হনুমান
ফেরে’স লিফ মাঙ্কির বাংলা নাম চশমাপরা হনুমান৷ কালো হনুমান নামেও এটি পরিচিত৷ চোখের চারপাশের লোম সাদা রঙের হয়ে থাকে বলেই মনে হয় চশমা পরে আছে৷ অন্যান্য প্রজাতির হনুমানের চেয়ে এরা কিছুটা লাজুক প্রকৃতির৷ ছবিটি তোলা হয়েছে সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান থেকে৷
ছবি: Adnan Azad Asif
এশীয় তাল খাটাশ
এশিয়ান পাম সিভেট বা এশীয় তাল খাটাশ৷ এদের নামও ঠাঁই পেয়েছে পৃথিবীর বিপন্ন প্রাণীর তালিকায়৷ ছবিটি হবিগঞ্জের কালেংগা সংরক্ষিত বনাঞ্চল থেকে তোলা৷ খাটাশের বিভিন্ন প্রজাতির মধ্যে এরাই মানুষের বেশি কাছাকাছি থাকে৷ এরা মূলত ফলখেকো হলেও কীটপতঙ্গ, শামুক, ডিম, বাচ্চা-পাখি, ছোট প্রাণী, তাল-খেজুরের রসও খায়৷
ছবি: Adnan Azad Asif
দেশি সজারু
ইন্ডিয়ান ক্রেস্টেড পোরকুপিন মূলত দেশি সজারু নামেই পরিচিত৷ নিরামিষভোজী জীব হিসেবে এটি পাতা, ঘাস, ফলমূল, শস্য, গাছের শিকড় ছোট ছোট গাছপালা খেয়ে জীবনধারণ করে৷ ছবিটি তোলা হয়েছে সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান থেকে৷
ছবি: Adnan Azad Asif
মায়া হরিণ
মায়া হরিণের ইংরেজি নাম বার্কিং ডিয়ার৷ সর্বভূক এ প্রাণীটি গভীর বনে একাকী চলাফেরা করতে পছন্দ করে৷ ঘাস- লতাপতা ছাড়াও পাখির ডিম, এমনকি ক্ষুদ্র স্তন্যপায়ী প্রাণীও মায়া হরিণের প্রিয় খাদ্য৷ সামান্য শব্দ পেলেই এরা পালিয়ে যায় বলে এদের দেখা পাওয়া খুবই কঠিন৷ ছবিটি তোলা হয়েছে সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান থেকে৷
ছবি: Adnan Azad Asif
লজ্জাবতী বানর
লজ্জাবতী বানরের ইংরেজি নাম বেঙ্গল স্লো লরিস৷ নিশাচর এ প্রাণিটি সাধারণত গাছের উঁচু ডালে থাকতে পছন্দ করে৷ দিনে গাছের ডালে বা গাছের গর্তে পায়ের ভেতর মাথা ঢুকিয়ে বলের মতো হয়ে থাকে৷
ছবি: Adnan Azad Asif
কুলু বানর
নর্দার্ন পিগ টেইলড ম্যাকেক বা উল্টোলেজী বানর৷ কুলু বানর নামেও পরিচিত৷ পুরুষ কুলু বানর বেশ রাগী হয়, স্ত্রী বানর তুলনামূলকভাবে শান্ত৷ ফল, মূল, কচি পাতা, কুঁড়ি, কীটপতঙ্গ, কাঁকড়া, পাখির বাচ্চা ইত্যাদি খেয়ে থাকে৷ লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান থেকে তোলা ছবিটি৷
ছবি: Adnan Azad Asif
চিত্রা হরিণ
স্পটেড ডিয়ার বা চিত্রা হরিণ বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি দেখা যায় সুন্দরবনে৷ আদনান এ ছবিটি সুন্দরবনেই তুলেছেন৷
ছবি: Adnan Azad Asif
রেসাস বানর
রেসাস ম্যাকেক-এর বাংলা নাম রেসাস বানর৷ বাংলাদেশের বিভিন্ন বনাঞ্চলে এদের প্রচুর দেখা যায়৷ এরা সাধারণত গাছের ডালে বিচরণ করে থাকে৷ এছাড়া মানুষের কাছাকাছি থাকতেও পছন্দ করে এরা৷ ছবিটি তোলা হয়েছে সুন্দরবন থেকে৷
ছবি: Adnan Azad Asif
লোনা পানির কুমির
সল্ট ওয়াটার ক্রোকোডাইল বা লোনা পানির কুমির৷ উপকূলীয় এলাকার অল্প লবণাক্ত পানি ও নদীতে বসবাস করে৷ বাংলাদেশের সুন্দরবনে সবচেয়ে বেশি দেখা যায়৷ ছবিটি তোলাও সুন্দরবনে৷ সুন্দরবনের করমজলে এই প্রজাতির কুমিরের একটি প্রজনন কেন্দ্রও আছে৷
ছবি: Adnan Azad Asif
আদনান আজাদ আসিফ
পেশায় মডেল ও অভিনেতা আদনান আজাদ আসিফ নেশায় একজন বন্যপ্রাণী আলোকচিত্রী ও গবেষক৷ টিভি ও চলচ্চিত্রে অভিনয়ের পাশাপাশি সময় পেলেই ক্যামেরা নিয়ে ছুটে যান বনে-জঙ্গলে৷ খুব কাছে থেকে দেখার চেষ্টা করেন বন্যপ্রাণীদের জীবন৷
ছবি: Sabit Hasan
15 ছবি1 | 15
ইউরোপের শকুনি প্রজাতিগুলি পশুর মৃতদেহের নির্দিষ্ট কিছু অংশের বিশেষজ্ঞ৷ যেমন গ্রিফন ভালচার ও সিনেরেয়াস ভালচার কোনো মাংস অবশিষ্ট রাখে না৷ বেয়ার্ডেড ভালচার হাড়গোড় খায়৷ তুলনামূলকভাবে ছোট ইজিপ্সিয়ান ভালচার বাকিদের খাওয়া শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করে৷ যা অবশিষ্ট থাকে, সেগুলি কুড়িয়ে খায়৷ এমনকি মাটি থেকে রক্তও শুষে নেয়৷
শকুনিরা প্রকৃতির কোলে পশুর মৃতদেহ দূর করে৷ অবশ্যই খুব গুরুত্বপূর্ণ কাজ৷ কারণ সেই মৃতদেহ থেকে রোগ ছড়িয়ে পড়তে পারে, মাটি ও পানিতে অ্যানথ্র্যাক্সের মতো মারাত্মক জীবাণু ও বিষ মিশে যেতে পারে৷ অথচ তাতে শকুনির কিছু হয় না৷
শকুনিদের হজমের অসাধারণ প্রক্রিয়া এই ক্ষমতা সম্ভব করে তোলে৷ তাদের পাচকরস এতই টক, যে সব জীবাণু মরে যায়৷ অ্যাসিডের মধ্যে পড়ে যেমন সবকিছু নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়, এ ক্ষেত্রেও ঠিক সেটাই ঘটে৷
তাছাড়া শকুনির আন্ত্রিক কাঠামোয় ব্যাকটেরিয়ার বৈচিত্র্য কম৷ মানুষের পেটে ১,০০০-এরও বেশি প্রজাতির ব্যাকটেরিয়া থাকে৷ শকুনির ক্ষেত্রে সংখ্যাটা মাত্র ৭৬৷ তবে তার মধ্যে সবচেয়ে বিপজ্জনক কিছু ব্যাকটেরিয়া রয়েছে, যেমন ক্লসট্রিডিয়াম বোটুলিনাম৷ এই সব ব্যাকটেরিয়া পশুর মৃতদেহ থেকে পুষ্টি সংগ্রহ করতে সাহায্য করে৷
গোটা ইউরোপেই শকুনির খাদ্য কমে চলেছে৷ কারণ আইন অনুযায়ী মানুষকেই পশুর মৃতদেহ দূর করতে হয়৷ ‘ম্যাড কাউ ডিজিজ' দেখা দেবার পর স্পেনেও আইন কড়াকড়ি করা হয়েছিল৷ বর্তমানে অবশ্য কিছু ক্ষেত্রে পশুর মৃতদেহ ফেলে রাখা সম্ভব৷