বৃহস্পতিবার বিকেলে বার্সেলোনা শহরের এক ব্যস্ত এলাকায় দ্রুত গতিতে একটি ভ্যান চালিয়ে পথচারীদের পিষে দেয় এক আততায়ী৷ ফলে কমপক্ষে ১৪ জন নিহত ও প্রায় ১০০ জন আহত হয়৷ জার্মান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্র অনুযায়ী বার্সেলোনায় আহতদের মধ্যে ১৩ জন জার্মান নাগরিক রয়েছেন৷ তাঁদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা গুরুতর৷
হামলাকারী পালিয়ে যেতে সমর্থ হয়৷ পুলিশ তার খোঁজে অভিযান চালাচ্ছে৷ এর মধ্যে চার ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷ তাদের একজন মরক্কোর নাগরিক, দ্বিতীয় জন স্পেনের নাগরিক৷ আটক মরক্কোর নাগরিক দ্রিস উকাবিরের ভাই মুসা-র খোঁজ চলছে৷ তবে সেই ভ্যান চালক ছিল কিনা, তা স্পষ্ট নয়৷
তারপর বার্সেলোনা শহর থেকে প্রায় ১২০ কিলোমিটার দক্ষিণে কামব্রিলস শহরে দ্বিতীয় হামলার খবর পাওয়া যায়৷ সেখানেও হামলাকারীরা পথচারীদের পিষে ফেলার চেষ্টা করেছিলো বলে জানিয়েছে কাটালান পুলিশ৷ তবে সেই কাজে তারা সফল হতে পারে নি৷ সেই ঘটনায় এক পুলিশ কর্মী ও ছ’জন পথচারী আহত হয়েছে৷ পুলিশ পাঁচজন হামলাকারীকে গুলি করে হত্যা করেছে৷ স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের সূত্র অনুযায়ী পুলিশের নির্দেষ অমান্য করে হামলাকারীরা গাড়ি নিয়ে পালাবার চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের পেছনে ধাওয়া করে৷ তাদের গাড়ি উলটে যাওয়ার পর তারা পালাবার চেষ্টা করলে পুলিশের গুলিতে তারা নিহত হয়৷ হামলাকারীদের শরীরে বিস্ফোরক ছিল বলে সন্দেহ করা হচ্ছিল৷ পরে পুলিশের নিয়ন্ত্রণে কিছু বিস্ফোরণ ঘটানো হয়৷
বার্সেলোনা শহর থেকে প্রায় ২০০ কিলোমিটার দক্ষিণে আলকানার শহরে এক বিস্ফোরণে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছে ও একটি বাড়ি ধসে পড়েছে৷ পুলিশ জানিয়েছে, তিনটি ঘটনার মধ্যেই যোগসূত্র রয়েছে৷ সম্ভবত ৮ থেকে ১২ জনের এক সেল এই হামলার ষড়যন্ত্রে জড়িত ছিল বলে তদন্তকারীরা সন্দেহ করছেন৷
আইএস তাদের ঘনিষ্ঠ আমাক সংবাদ সংস্থার মাধ্যমে বার্সোলোনায় হামলার দায় স্বীকার করেছে৷ তাদের দাবি, তাদের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযানের জবাবে আইএস ‘সৈন্যরা’ এই হামলা চালিয়েছে৷ উল্লেখ্য, স্পেনের কয়েক'শ সৈন্য ইরাকে সক্রিয় থাকলেও তারা স্থলবাহিনীর অভিযানে অংশ নিচ্ছে না৷
আইএস-এর দাবি সত্য প্রমাণিত হলে গত ১৩ মাসে ইউরোপে ট্রাক বা বড় গাড়ি চালিয়ে হামলায় একশ’ জনেরও বেশি নিহত হলো৷ নিস, বার্লিন, লন্ডন ও স্টকহোম শহরের পর এবার বার্সেলোনা হামলার শিকার হলো৷
স্পেনের প্রধানমন্ত্রী মারিয়ানো রাখই নিজের ছুটি বাতিল করে বার্সেলোনায় পৌঁছেছেন৷ তিনি গোটা দেশে তিনদিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেন৷ তিনি বলেন, এমন ‘জিহাদি’ হামলার মুখে স্পেন নতি স্বীকার করবে না৷
স্পেনে সন্ত্রাসী হামলার খবর পেয়ে বিশ্বনেতারা হামলার নিন্দা করে স্পেনের প্রতি সংহতি প্রকাশ করেছেন৷ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যে কোনো ধরনের সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন৷
এসবি/ডিজি (ডিপিএ, রয়টার্স)
মাদ্রিদ, ফ্রাংকফুর্ট, লন্ডন, প্যারিস, ব্রাসেলস, নিস, বার্সেলোনা – একের পর এক ভয়াবহ হামলার শিকার ইউরোপ৷ বড় শহরগুলিতে সন্ত্রাসের হুমকি নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তাও৷ গত ১৩ বছরে ইউরোপে বিভিন্ন হামলার তথ্য নিয়ে এই ছবিঘর৷
ছবি: REUTERS/Stringerস্পেনে হামলার এক দিন পরেই ফিনল্যান্ডের টুর্কু শহরে ছুরি চালিয়ে ২ জনকে হত্যা করে এক আততায়ী৷ তার ছুরির আঘাতে কমপক্ষে আরও ৬ জন আহত হয়েছে৷ পুলিশ তার পায়ে গুলি করে তাকে গ্রেফতার করেছে৷ গোটা দেশে সতর্কতা জারি করা হয়েছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/J. Riihimakiপ্রথমে বার্সেলোনা, তারপর উপকূলবর্তী কামব্রিলস ও আলকানার শহর৷ পর পর তিনটি সন্ত্রাসী হামলার মুখে স্পেনের কাটালুনিয়া রাজ্য৷ বার্সেলোনা শহরে হামলার দায় স্বীকার করেছে তথাকথিত ইসলামিক স্টেট বা আইএস৷ এতে নিহত হন ১৩ জন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/O. Duranযুক্তরাজ্যের লন্ডনের একটি মসজিদের বাইরে মুসল্লিদের ওপর গাড়ি চালিয়ে দেয় এক ব্রিটিশ নাগরিক৷ এ ঘটনায় নিহত হন একজন, গুরুতর আহত হন অনেকেই৷ হামলাকারী অভিবাসীবিরোধী এবং মুসলিমবিদ্বেষী হিসেবে পরিচিত ছিলেন৷
ছবি: Reuters/Y. Mokলন্ডন ব্রিজে ঘুরতে আসা পথচারীদের ওপর গাড়ি তুলে দেয় তিন ইসলামি জঙ্গি৷ তাতেই থেমে থাকেনি তারা৷ গাড়ি হামলার পর কাছেই বোরো মার্কেটে ছুরি নিয়ে হামলা চালিয়ে ৮ জনকে খুন করে জঙ্গিরা৷
ছবি: Reuters/S. Wermuthঘটনাস্থল যুক্তরাজ্যের ম্যানচেস্টার৷ নর্থ ইংল্যান্ডের ম্যানচেস্টার অ্যরেনায় আরিয়ানা গ্রান্ডের কনসার্টে আত্মঘাতি হামলায় নিহত হন ২২ জন৷
ছবি: Reuters/D. Hoganএকটি ট্রাক হাইজ্যাক করে সুইডেনের স্টকহোমের একটি ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের মধ্যে চালিয়ে দেয় হামলাকারী৷ এতে মারা যান চার পথচারী৷
ছবি: Reuters/A. Wiklundএই ঘটনায় একটি ভাড়া করা এসইউভি গাড়ি লন্ডনের ওয়েস্টমিনিস্টার ব্রিজে পথচারিদের ওপর তুলে দেয় হামলাকারী৷ এ ঘটনায় চারজন মারা যান৷ এরপর গাড়ি থেকে নেমে এক পুলিশ অফিসারকে ছুরি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে হামলাকারী৷
ছবি: DW/A. Frymann Rouchহামলার অস্ত্র হাইজ্যাক করা ট্রাক৷ এবার ঘটনাস্থল জার্মানির বার্লিন৷ বার্লিনের ক্রিসমাস মার্কেটে ভিড়ের মধ্যে চালানো এ হামলায় নিহত হন ১২ জন৷
ছবি: picture alliance / NurPhotoফ্রান্সের পর্যটননগরী নিসে চলছিল বাস্তিল দিবস উদযাপনের আয়োজন৷ ফলে ভিড়ও ছিল অস্বাভাবিক৷ আর এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে ট্রাক হামলা চালিয়ে ৮৬ জনকে হত্যা করে হামলাকারী৷
ছবি: picture-alliance/dpa/I. Langsdonবেলজিয়ামের ব্রাসেলস বিমানবন্দর ও সাবওয়েতে আত্মঘাতি হামলায় ৩২ জন নিহত হন, আহত হন শতাধিক৷ ইউরোপের অন্যান্য শহরে হামলায় এই হামলাকারীরাই জড়িত থাকার প্রমাণ মিলেছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/bsnyderফ্রান্সের প্যারিসে বাতাক্লঁ কনসার্ট হল ও আরো কয়েকটি এলাকায় একযোগে হামলা চালায়৷ নিহত হন ১৩০ জন৷ হামলাকারীরা জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেটের অনুসারী ছিল৷
ছবি: Reutersডেনমার্কের কোপেনহেগেন৷ এক বন্দুকধারীর গুলিতে নিহত হন চলচ্চিত্র নির্মাতা ফিন ন্যোরগর্ট৷ এ ঘটনায় তিন পুলিশ সদস্যও আহত হন৷ একদিন পর একই হামলাকারী (যাকে চিহ্নিত করা হয়েছে ওমর আল-হোসাইন নামে) একটি সিনাগগে হামলা চালিয়ে এক নিরাপত্তাকর্মীকে হত্যা করে৷ পরে পুলিশের গুলিতে নিহত হয় হামলাকারী৷
ছবি: Reuters/H. Hanschkeফ্রান্সের প্যারিসে ব্যাঙ্গাত্মক পত্রিকা শার্লি এব্দোর কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে ১৭ জনকে হত্যা করা হয়৷ জঙ্গি গোষ্ঠী আল-কায়েদা এই ঘটনার দায় স্বীকার করে৷ শার্লি এবদোয় মুসলিমদের মহানবী হযরত মোহাম্মদকে নিয়ে ব্যাঙ্গ করার প্রতিশোধ বলে উল্লেখ করা হয় ঘটনাটিকে৷
ছবি: picture-alliance/Pixsell/S. Strukicবেলজিয়ামের ব্রাসেলসে এক ইহুদি জাদুঘরে কালাশনিকভ রাইফেল নিয়ে হামলা চালিয়ে চার জনকে হত্যা করে হামলাকারী৷ অভিযুক্ত ব্যক্তি সিরিয়ায় আইএস-এর হয়ে যুদ্ধ করেছে বলে সংবাদ প্রকাশ হয়েছে৷
ছবি: Reuters/Y. Boudlalআল-কায়েদার মাধ্যমে অনুপ্রাণিত দুই জঙ্গি লন্ডনের রাস্তায় লি রিগবি নামের এক ব্রিটিশ সৈন্যকে তাড়া করে এবং কুপিয়ে হত্যা করে৷
ছবি: picture alliance/AP Photoআল-কায়েদার সাথে সংশ্লিষ্ট এক বন্দুকধারী ফ্রান্সের টুলুস শহরে তিন ইহুদি স্কুলছাত্র, এক ইহুদি রাবাই এবং তিন প্যারাট্রুপারকে হত্যা করে৷
ছবি: REUTERSআন্ডার্স বেরিং ব্রেইভিক নামের এক মুসলিমবিদ্বেষী হামলাকারী, নরওয়ের অসলোতে বোমা হামলা চালায়৷ এরপর নরওয়ের উটোয়া দ্বীপের এক যুব ক্যাম্পে গুলি চালিয়ে ৭৭ জনকে হত্যা করে৷
ছবি: dapdশার্লি এব্দোর অফিসে হামলার ঘটনা৷ মুসলিমদের মহানবী হযরত মোহাম্মদের কার্টুন চিত্র প্রকাশ করায় আগুন ধরিয়ে দেয়া হয় ম্যাগাজিনটির অফিসে৷ তবে এতে হতাহতের ঘটনা ঘটেনি৷
ছবি: picture-alliance/abacaজার্মানির ফ্রাংকফুর্ট বিমানবন্দরে ইসলামি জঙ্গি আরিদ উকা গুলি চালিয়ে দুই মার্কিন বৈমানিককে হত্যা করে৷ হামলাকারী আফগানিস্তানে মার্কিন সেনাদের কর্মকান্ড নিয়ে একটি ভুয়া ভিডিও দেখে এ হামলায় উদ্বুদ্ধ হয়েছে বলে তদন্তে প্রমাণ পাওয়া গেছে৷
ছবি: APলন্ডনে আল-কায়েদার সাথে জড়িত চার আত্মঘাতি জঙ্গি তিনটি সাবওয়ে ট্রেন এবং একটি বাসে বোমার বিস্ফোরণ ঘটায়৷ এই ঘটনায় ৫২ জন যাত্রী নিহত হন৷
ছবি: APস্পেনের মাদ্রিদে চারটি ট্রেনে অফিসগামী যাত্রীদের ওপর বোমা হামলা চালানো হয়৷ মোট নিহত হন ১৯১ জন যাত্রী৷
ছবি: AP