কাটালুনিয়ান নেতা কারলেস পুজেমনকে আরো তিন দিন সময় দিলেন স্পেন সরকার৷ তার মধ্যে পুজেমনকে বলতে হবে, এলাকাটি স্বাধীনতা ঘোষণা করেছে কিনা৷
বিজ্ঞাপন
কাটালান নেতা কারলেস পুজেমন স্পেনের প্রধানমন্ত্রী মারিয়ানো রাখোইয়ের সঙ্গে সরাসরি আলাপ-আলোচনা কামনা করেছিলেন৷ স্পেনের উপ-প্রধানমন্ত্রী সোরাইয়া সায়িঞ্জ দে সান্তামারিয়া সে অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করে বৃহস্পতিবার অবধি একটি নতুন চরমপত্র দিয়েছেন, যার মর্ম হলো, কাটালুনিয়াকে সেই সময়ের মধ্যে তাদের স্বাধীনতা প্রাপ্তির প্রচেষ্টা পরিত্যাগ করতে হবে৷
সায়িঞ্জ দে সান্তামারিয়া মাদ্রিদে সাংবাদিকদের সমীপে বলেন যে, কাটালুনিয়া স্পেন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার কথা ঘোষণা করেছে কিনা, সে বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকার সোমবার স্থানীয় সময় বেলা দশটার মধ্যে পুজেমনের কাছ থেকে একটি সহজ ‘‘হ্যাঁ বা না'' উত্তর কামনা করেছিলেন৷ কিন্তু পুজেমন সেরকম কোনো উত্তর দিতে ব্যর্থ হয়েছেন৷ ‘‘হ্যাঁ বা না বলাটা খুব শক্ত ছিল না,'' সায়িঞ্জ দে সান্তামারিয়া বলেন, ‘‘আগামী তিন দিনে যৌক্তিকতায় ফেরাটাও শক্ত নয়৷''
পুজেমনের চাল: রাখয়ের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা
সোমবারের চরমপত্রের মেয়াদ শেষ হবার আগেই পুজেমন যে দু'পাতার চিঠি পাঠান, তাতে তিনি স্পষ্ট করে দেননি, তিনি স্পেন থেকে স্বাধীনতা ঘোষণা করেছেন কিনা৷ পরিবর্তে তিনি বিষয়টি নিয়ে স্পেনের প্রধানমন্ত্রী মারিয়ানো রাখোইয়ের সঙ্গে দু'মাসের আলাপ-আলোচনা কামনা করেছেন৷
‘‘আগামী দু'মাসে আমাদের মূল লক্ষ্য হলো, আপনার প্রতি সংলাপের'', এবং ‘‘আন্তর্জাতিক, স্পেনীয় ও কাটালান'' মধ্যস্থদের আলাপ-আলোচনার পথ খোলার সুযোগ দেওয়ার অনুরোধ জানানো, পুজেমন রাখোইকে লিখিত তাঁর পত্র বলেছেন৷ তাঁর সরকার যে ‘‘স্বাধীনতা ঘোষণার রাজনৈতিক সনদ মুলতুবি'' রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, এ থেকে তাঁর সরকারের ‘‘দ্বন্দ্বের পরিবর্তে সমাধান সৃষ্টির দৃঢ় অভিপ্রায়'' প্রমাণিত হয় – লিখেছেন পুজেমন৷
কিন্তু পুজেমনের চিঠিতে এ-ও বলা হয় যে, পয়লা অক্টোবরের গণভোটের পর কাটালুনিয়ার সংসদ স্বাধীনতা ঘোষণার ‘‘গণতান্ত্রিক সনদ'' পেয়েছে৷ বিতর্কিত গণভোটটি স্পেনীয় কর্তৃপক্ষের ইচ্ছার বিরুদ্ধে অনুষ্ঠিত হয় এবং অর্ধেকের চেয়ে কম ভোটার অংশগ্রহণ করলেও প্রায় ৯০ শতাংশ ভোট পড়ে স্পেন থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার পক্ষে৷
গত মঙ্গলবার পুজেমন একটি প্রতীকী স্বাধীনতা ঘোষণা প্রকাশ করার কিছু পরেই তা আবার স্থগিত রাখেন ও বলেন যে, তিনি স্পেন সরকারের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার পথ খুঁজবেন৷ সেই যাবৎ কাটালুনিয়ার পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে৷
এসি/ডিজি (রয়টার্স, এএফপি, এপি, ডিপিএ)
স্পেনের পর ইউরোপে আরও বিভাজনের আশঙ্কা?
স্পেনের কাটালুনিয়া রাজ্যের স্বাধীনতার গণভোট নিয়ে বিতর্কের মাঝে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্য কিছু অঞ্চলেও বিচ্ছিন্নতার প্রয়াস উৎসাহ পাচ্ছে৷ এই সব অঞ্চলে কাটালুনিয়ার স্বাধীনতার প্রতি ব্যাপক সমর্থন দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/EPA/G. Stuart
ব্রেক্সিটের পর স্কটল্যান্ডের ভবিষ্যৎ
২০১৪ সালেই এক গণভোটে স্কটল্যান্ডের ৫৫ শতাংশ ভোটার ব্রিটেন থেকে স্বাধীনতার বিপক্ষে রায় দিয়েছিলেন৷ কিন্তু ব্রেক্সিট-পরবর্তী যুগে তাদের মতামত আবার যাচাই করতে চায় স্কটল্যান্ডের জাতীয় পার্টি৷ ইইউ-র সঙ্গে ব্রিটেনের বিচ্ছেদ সংক্রান্ত চুক্তি চূড়ান্ত হলে, এমনকি কোনো বোঝাপড়া না হলেও স্কটল্যান্ডে স্বাধীনতার প্রশ্নে গণভোট আয়োজন করতে চায় এসএনপি দল৷
ছবি: picture-alliance/dpa/EPA/G. Stuart
বেলজিয়াম থেকে ফ্লেমিশ অঞ্চলের বিদায়?
১৮৩০ সালে ফ্রান্স ও জার্মানির মাঝে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বেলজিয়াম সৃষ্টি হয়েছিল৷ ফরাসি-ভাষাভাষী দক্ষিণাঞ্চল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে এবার স্বাধীনতার চেষ্টা চালাচ্ছে উত্তরের ফ্লেমিশভাষী সমৃদ্ধ অঞ্চল৷ বেলজিয়ামের জোট সরকারের সবচেয়ে বড় দল হিসেবে জাতীয়তাবাদী এনভিএ গোষ্ঠী ২০১৯ সালের নির্বাচনে সাফল্য বাড়িয়ে স্বাধীন ফ্লেমিশ রাষ্ট্রের স্বপ্ন কার্যকর করতে চায়৷
ছবি: Reuters
স্পেনের বাস্ক অঞ্চলের সংগ্রাম
১৯৬৯ সাল থেকে স্বাধীন বাস্ক রাষ্ট্রের জন্য সশস্ত্র সংগ্রাম চালিয়েছে বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী ‘এটা’৷ চলতি বছরের এপ্রিল মাসেই এই গোষ্ঠী অস্ত্র ত্যাগ করেছে৷ শান্তিপূর্ণ পথে ফ্রান্স ও স্পেনে বাস্ক সম্প্রদায়ের মানুষের জন্য স্বাধীন রাষ্ট্র গড়তে চায় ‘সর্টু’ নামের এক রাজনৈতিক দল৷ কাটালুনিয়ার স্বাধীনতাকামীদের প্রতি স্পেনের বাস্ক অঞ্চলে বিক্ষোভ দেখা গেছে৷
ছবি: AP
নিউ ক্যালিডোনিয়ার বিদায় আসন্ন?
প্রশান্ত মহাসাগরের দক্ষিণে ফ্রান্সের শাসন থেকে মুক্তি পেতে পারে নিউ ক্যালিডোনিয়া৷ আগামী নভেম্বর মাসে সেখানে এই প্রশ্নে গণভোট আয়োজিত হচ্ছে৷ ১৮৫৩ সাল থেকে ফ্রান্সের অধীনে থাকার পর ২৮০,০০০ জনসংখ্যার এই দ্বীপমালা স্বাধীন রাষ্ট্র হয়ে উঠতে পারে৷ ১৯৯৮ সাল থেকেই নিউ ক্যালিডোনিয়া স্বায়ত্তশাসনের আরও অধিকার ভোগ করছে৷
ভূমধ্যসাগরে ফ্রান্সের কর্সিকা দ্বীপের জনসংখ্যা প্রায় ৩৩০,০০০৷ সেখানকার জাতীয় লিবারেশন ফ্রন্ট ২০১৪ সালের জুন মাসে স্বাধীনতার লক্ষ্যে সশস্ত্র সংগ্রাম ত্যাগ করেছে বটে, কিন্তু রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় স্বাধীনতা অর্জনের স্বপ্ন ত্যাগ করেনি৷ স্বায়ত্তশাসনের বেশ কিছু অধিকার সত্ত্বেও তারা তাদের লক্ষ্যে অটল রয়েছে৷
ছবি: DW/E. Bryant
ডেনমার্কের ফেরো দ্বীপ
আটলান্টিক মহাসাগরে ফেরো দ্বীপপূঞ্জে মাত্র ৪৮,০০০ মানুষের বাস৷ সেখানকার ভোটাররা ২০১৮ সালের এপ্রিল মাসে এক গণভোটে ডেনমার্ক থেকে স্বাধীনতার প্রশ্নে তাঁদের রায় জানাবেন৷ ১৯৪৮ সাল থেকে ফেরো দ্বীপ স্বায়ত্তশাসনের অধিকার পেয়েছে৷ শুধু পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষার বিষয় দু’টি ডেনমার্কের হাতে রয়েছে৷
ছবি: picture alliance/augenklick/GES
স্বাধীনতা নয়, স্বায়ত্তশাসন চায় ইটালির উত্তরাঞ্চল
আরও স্বায়ত্তশাসনের প্রশ্নে লম্বার্ডি ও ভেনেতো রাজ্য আগামী ২২শে অক্টোবর এক গণভোটের আয়োজন করেছে৷ সেখানে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ স্বায়ত্তশাসনের পক্ষে রায় দিয়েছে৷ উত্তরের সমৃদ্ধ এই অঞ্চল গোটা দেশের অর্থনীতির প্রায় এক-তৃতীয়াংশের দাবিদার৷ ফলে কাটালুনিয়ার মতো এই অঞ্চলও কর বাবদ অর্থের আরও বড় অংশ নিজেদের কাছে রাখতে চায়৷