স্পেন পুলিশের জালে দক্ষিণ আমেরিকার নারী পাচার চক্র
২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
৪৮ জন নারীকে উদ্ধার করে পুলিশ। এরা মূলত কলম্বিয়া এবং ভেনেজুয়েলা থেকে পাচার হয়ে এসেছেন।
স্পেনের পুলিশছবি: Richard Zubelzu/ZUMA/picture alliance
বিজ্ঞাপন
রোববার স্পেনের আলিকান্টি শহর থেকে নারী পাচারকারীদের একটি দল ধরা পরেছে। তিনটি ব্রথেল-সহ প্রায় আটটি জায়গায় হানা চালিয়ে ৪৮ জন অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এছাড়া ৪৮ জন নারীকে উদ্ধার করে তারা। উদ্ধার হওয়া নারীরা মূলত কলম্বিয়া এবং ভেনেজুয়েলা থেকে পাচার হয়ে এসেছেন।
পুলিশ জানিয়েছে, "এই পাচারচক্রের শিকার মূলত দক্ষিণ আমেরিকার নারীরা। চাকরির লোভ দেখিয়ে তাদের এদেশে আনা হয়।"
চাকরির লোভ দেখিয়ে পাচার
এই অপরাধচক্রের মূল চক্রী একজন স্প্যানিশ এবং তার সঙ্গী দুজন কলম্বিয়ার নারী। গত এক বছরে তারা প্রায় ১০০০ নারী পাচার করেছেন বলে অনুমান করা হচ্ছে। তাদেরকে ক্লিনিং এবং প্রসাধনী জগতে কাজ দেওয়ার কথা বলে "স্থানীয় ক্লাবে বিক্রি করা হয়। সেখানে তারা যৌন শোষণের শিকার হন" বলে আরো জানিয়েছে পুলিশ।
জবরদস্তির পতিতাবৃত্তি থেকে জীবনের আনন্দে
প্রতি বছর নেপালের কয়েক হাজার মেয়েকে ইচ্ছার বিরুদ্ধে বেছে নিতে হয় যৌনকর্মীর জীবন৷ শারীরিক নির্যাতন, ধর্ষণ – সবই সইতে হয় তাঁদের৷ চাকরির আশায় ঘর ছেড়ে অন্ধকার গলিতে ঢুকে পড়া এমন মেয়েদেরই জীবনের আনন্দে ফেরায় ‘মাইতি নেপাল’৷
ছবি: Gábor Halász
ঘর ছেড়ে আঁধারের পথে
মানবপাচারকারীদের খপ্পরে পড়ে প্রতি বছর নেপালের অন্তত দশ হাজার মেয়ে ঘর ছাড়ে৷
ছবি: DW/E. Felden
যেখানে নরক
পরিবারে অভাব৷ তাই ভালো চাকরির আশ্বাসে মানবপাচারকারীদের বিশ্বাস করে ঘর ছাড়ে মেয়েরা৷ কিন্তু আশা অনুযায়ী চাকরি জোটে না৷ বেশির ভাগ মেয়েকেই ভারতে নিয়ে জোর করে নামানো হয় পতিতাবৃত্তিতে৷ অত্যাচার, নির্যাতন তো আছেই, ধীরে ধীরে এইডসসহ অনেক জটিল রোগ বাসা সচ্ছল জীবনের ঠিকানা খুঁজতে গিয়ে অন্ধকার গলিতে ঢুকে পড়া মেয়েদের শরীরে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
তাঁদের পাশে ‘মাইতি নেপাল’
অনেক বছর ধরেই দারিদ্র্যের সুযোগ নিয়ে নেপালেের মেয়েদের যৌনকর্মী হতে বাধ্য করছে মানবপাচারকারীরা৷ একবার যৌনকর্মী হলে আর নিস্তার নেই – এমন যাঁরা ভাবতেন, অত্যাচার-নির্যাতন সইতে সইতে যাঁরা স্বপ্ন দেখতে ভুলে গিয়েছিলেন, তাঁদের অনেককেই ২২ বছর ধরে স্বপ্ন দেখাচ্ছে মাইতি নেপাল৷ ১৯৯৩ সালে এই সংগঠনটি গড়েছিলেন অনুরাধা কৈরালা৷ সেই থেকে বাধ্য হয়ে যৌনকর্মীর জীবন মেনে নেয়া মেয়েদের জীবনের পথে ফেরাচ্ছে মাইতি নেপাল৷
ছবি: Gábor Halász
মঞ্চে জীবনের অভিনয়
যৌনপল্লি থেকে নিয়ে এসে মেয়েদের জীবনে আনন্দও এনে দেয় মাইতি নেপাল৷ সে আনন্দ ধরে রাখার উপায়ও শেখায়৷ মঞ্চনাটক করে মেয়েরা৷ সেই নাটকেও থাকে মানবপাচারকারী এবং তাদের দুরভিসন্ধির কথা৷ সেই নাটকে অভিনয় করেন যৌনপল্লিফেরত মেয়েরা৷ এভাবে অন্য মেয়েদের যৌনপল্লি থেকে দূরে থাকার উপায়ও জানায় যৌনকর্মীর জীবনকে পেছনে ফেলে আসা মেয়েরা৷
ছবি: Gábor Halász
নজরদারি
আর কোনো মেয়ে যাতে মানবপাচারকারীদের পাল্লায় পড়ে দেশ না ছাড়ে সেদিকে সবসময় নজর রাখে মাইতি নেপাল৷ বিশেষ করে ভারত সংলগ্ন সীমান্তে গিয়ে বাসগুলোর ওপর কড়া নজর রাখেন সংস্থার কর্মীরা৷ কোনো মেয়ে এবং তার সঙ্গের কোনো পুরুষকে দেখে সন্দেহ হলেই তাঁরা পুলিশ ডাকেন৷
ছবি: Gábor Halász
নয় বছরের সেই মেয়েটি
গীতা নামের এই নারীকে মানবপাচারকারী যখন যৌনপল্লিতে নিয়ে যায়, তখন তাঁর বয়স মাত্র নয়৷ সেখান থেকে যখন ফিরলেন তখন এইচআইভি-র সংক্রমণে তাঁর শরীর কাহিল, বেঁচে থাকার আশাও প্রায় শেষ৷ একে তো যৌনকর্মী তার ওপর এইচআইভি-র রোগী –তাই অনেক সমাজসেবকও তখন গীতার কাছেই ঘেঁষতেন না৷ তখনই তাঁর পাশে দাঁড়ায় মাইতি নেপাল৷
ছবি: AP
নতুন ঠিকানা
নেপালের সীমান্ত এলাকায় ১১টি গৃহ নির্মাণ করেছে মাইতি নেপাল৷ যৌনপল্লি থেকে ফেরা মেয়েদের জন্য ঘর৷ মেয়েদের ভোকেশনাল ট্রেনিং বা বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণও দেয়া হয় সেখানে৷
ছবি: Gereon Wagener
দুঃসহ স্মৃতি ভুলতে...
কাঠমান্ডুর মাইতি নেপাল সেন্টারের উঠোনে প্রতিদিন বসে নাচের আসর৷ মেয়েরা যাতে অতীত ভুলে আত্মবিশ্বাসে বলীয়ান হয়ে সুন্দর আগামীর পথ রচনা করতে পারে সেজন্যই নাচ শেখানো হয় তাদের৷ এ পর্যন্ত ১২ হাজার শিশু ও নারী মাইতি নেপালের সহায়তায় যৌনপল্লি ছেড়েছে৷ সীমান্ত থেকে বাঁধা পেয়ে অল্পের জন্য যৌনকর্মী হওয়া থেকে বেঁচেছে প্রায় ৩০ হাজার জন৷
ছবি: Gábor Halász
জার্মানিতে মাইতি নেপালের মেয়েরা
মাইতি নেপাল-এর কয়েকজন এখন জার্মানিতে৷ কোলন শহরের এলি হয়েস রেয়ালশুলে-তে সেদিন নেপালি নাচই নাচলেন৷
ছবি: DW/E. Felden
যেন প্রজাপতি...
কোলনে মাইতি নেপালের মেয়েরা যেন প্রজাপতির মতো উড়ছিলেন৷ তাঁদের জীবনও তো প্রজাপতির মতোই৷ শৈশব থেকে জীবনের একটা সময় পর্যন্ত শুঁয়োপোকার মতো তাঁদেরও অনেক কষ্ট সইতে হয়েছে৷ কষ্টের সময় কেটে যাওয়ার পর এখন প্রজাপতির মতোই যেন ডানা মেলে উড়ছে৷
ছবি: DW/E. Felden
ইউরোপ সফর
নভেম্বর পর্যন্ত ইউরোপের বিভিন্ন শহরে অনুষ্ঠান করবে মাইতি নেপালের মেয়েরা৷ এ সময়ে জার্মানি, অস্ট্রিয়া এবং সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন শহরে হবে তাঁদের অনুষ্ঠান৷
ছবি: DW/E. Felden
11 ছবি1 | 11
এর পরে তারা যৌনকর্মীতে রূপান্তরিত হন। স্থানীয় হস্টেল বা আবাসনের আড়ালে যৌনপল্লিতে তাদের স্থান হয়।
বন্দি জীবন
পুলিশ আরো জানিয়েছে যে এই নারীদের রীতিমতো বন্দি জীবন কাটাতে হত। প্রায় ২৪ ঘণ্টা কাজ করতে বাধ্য করা হতো। সারাদিন সিসিটিভির নজরবন্দিতে কাটাতে হতো এবং প্রতিদিন দুঘণ্টার বেশি বাইরে যাওয়ার অধিকার ছিল না।
রোববার মূলত আলিকান্টি এবং মুরশিয়াতে তল্লাশি অভিযান চালায় পুলিশ।
তল্লাশিতে উদ্ধার অস্ত্র, অর্থ
পুলিশ জানায় তারা তিনটি স্ট্রিপ ক্লাব এবং ১৭টি বাড়িতে তালা ঝুলিয়েছে। এছাড়াও এই তল্লাশি অভিযানে অস্ত্র উদ্ধার করে তারা। প্রায় সাড়ে নয় লক্ষ ইউরোর ব্যাংক আকাউন্ট সিজ-সহ প্রায় দেড় লাখ ইউরো উদ্ধার করে পুলিশ।
যারা ধরা পরেছেন তাদের মধ্যে ছজনকে আদালতে তোলা হবে। বাকিরা জামিন পেয়েছেন। এদের মধ্যে ট্যাক্সি ড্রাইভার এবং ম্যানেজাররাও আছেন।
পুলিশ জানায় এক অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তি পুলিশের নারীপাচার হটলাইনে ফোন করেন। তার দেওয়া খবরেই তল্লাশি শুরু হয় এবং এই আন্তর্জাতিক পাচার চক্র ধরা পরে।
পুলিশ আরো জানায় গত বছর তারা আট হাজারেরও বেশি অভিযোগ পায়। তাদের মধ্যে হাজারের কাছাকাছি অভিযোগের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যও পায় তারা।