কাটালুনিয়ার উপর স্পেন পুনরায় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করলে পুলিশসহ অন্য কোনো কর্মকর্তাই তা মেনে নেবে না বলে জানিয়েছে কাটালুনিয়া৷
বিজ্ঞাপন
পররাষ্ট্র বিষয়ক প্রধান রাউল রোমেভা বিবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, কেন্দ্রীয় সরকার কাটালানদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে কাজ করছে৷ ইউরোপে স্পেনের মিত্র দেশগুলোর অস্থিরতার আশংকার মধ্যেই কাটালুনিয়ানদের পক্ষ থেকে এমন ঘোষণা এলো৷ সংবিধানের বিশেষ ধারা অনুযায়ী, কাটালুনিয়ার আঞ্চলিক সরকার বাতিল করে নতুন করে ভোটগ্রহণের উদ্যোগ নিয়েছে স্পেন৷ শুক্রবার এ ভোট অনুষ্ঠিত হবার কথা রয়েছে৷ রাউল রোমেভা বলেন, ‘‘এমন নয় যে আমরা আদেশ অমান্য করবো৷ এটা কোনো ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত নয়৷ এটা ৭০ লক্ষ মানুষের সিদ্ধান্ত৷ আর সেদিক থেকে বিবেচনা করলে, আমার কোনো সন্দেহই নেই যে, কাটালুনিয়ার সরকারি কর্মকর্তারা এখনকার নির্বাচিত ও বৈধ সংস্থার নির্দেশই মানবে৷’’
কাটালুনিয়ার কর্তৃপক্ষের হিসেবে, ভোটে অংশগ্রহনকারী প্রায় ৯০ ভাগ কাটালান স্বাধীনতার পক্ষে ভোট দিয়েছে৷ তবে, এ ভোটে মাত্র ৪৩ ভাগ ভোটার অংশ নিয়েছে৷
স্পেনের পর ইউরোপে আরও বিভাজনের আশঙ্কা?
স্পেনের কাটালুনিয়া রাজ্যের স্বাধীনতার গণভোট নিয়ে বিতর্কের মাঝে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্য কিছু অঞ্চলেও বিচ্ছিন্নতার প্রয়াস উৎসাহ পাচ্ছে৷ এই সব অঞ্চলে কাটালুনিয়ার স্বাধীনতার প্রতি ব্যাপক সমর্থন দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/EPA/G. Stuart
ব্রেক্সিটের পর স্কটল্যান্ডের ভবিষ্যৎ
২০১৪ সালেই এক গণভোটে স্কটল্যান্ডের ৫৫ শতাংশ ভোটার ব্রিটেন থেকে স্বাধীনতার বিপক্ষে রায় দিয়েছিলেন৷ কিন্তু ব্রেক্সিট-পরবর্তী যুগে তাদের মতামত আবার যাচাই করতে চায় স্কটল্যান্ডের জাতীয় পার্টি৷ ইইউ-র সঙ্গে ব্রিটেনের বিচ্ছেদ সংক্রান্ত চুক্তি চূড়ান্ত হলে, এমনকি কোনো বোঝাপড়া না হলেও স্কটল্যান্ডে স্বাধীনতার প্রশ্নে গণভোট আয়োজন করতে চায় এসএনপি দল৷
ছবি: picture-alliance/dpa/EPA/G. Stuart
বেলজিয়াম থেকে ফ্লেমিশ অঞ্চলের বিদায়?
১৮৩০ সালে ফ্রান্স ও জার্মানির মাঝে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বেলজিয়াম সৃষ্টি হয়েছিল৷ ফরাসি-ভাষাভাষী দক্ষিণাঞ্চল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে এবার স্বাধীনতার চেষ্টা চালাচ্ছে উত্তরের ফ্লেমিশভাষী সমৃদ্ধ অঞ্চল৷ বেলজিয়ামের জোট সরকারের সবচেয়ে বড় দল হিসেবে জাতীয়তাবাদী এনভিএ গোষ্ঠী ২০১৯ সালের নির্বাচনে সাফল্য বাড়িয়ে স্বাধীন ফ্লেমিশ রাষ্ট্রের স্বপ্ন কার্যকর করতে চায়৷
ছবি: Reuters
স্পেনের বাস্ক অঞ্চলের সংগ্রাম
১৯৬৯ সাল থেকে স্বাধীন বাস্ক রাষ্ট্রের জন্য সশস্ত্র সংগ্রাম চালিয়েছে বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী ‘এটা’৷ চলতি বছরের এপ্রিল মাসেই এই গোষ্ঠী অস্ত্র ত্যাগ করেছে৷ শান্তিপূর্ণ পথে ফ্রান্স ও স্পেনে বাস্ক সম্প্রদায়ের মানুষের জন্য স্বাধীন রাষ্ট্র গড়তে চায় ‘সর্টু’ নামের এক রাজনৈতিক দল৷ কাটালুনিয়ার স্বাধীনতাকামীদের প্রতি স্পেনের বাস্ক অঞ্চলে বিক্ষোভ দেখা গেছে৷
ছবি: AP
নিউ ক্যালিডোনিয়ার বিদায় আসন্ন?
প্রশান্ত মহাসাগরের দক্ষিণে ফ্রান্সের শাসন থেকে মুক্তি পেতে পারে নিউ ক্যালিডোনিয়া৷ আগামী নভেম্বর মাসে সেখানে এই প্রশ্নে গণভোট আয়োজিত হচ্ছে৷ ১৮৫৩ সাল থেকে ফ্রান্সের অধীনে থাকার পর ২৮০,০০০ জনসংখ্যার এই দ্বীপমালা স্বাধীন রাষ্ট্র হয়ে উঠতে পারে৷ ১৯৯৮ সাল থেকেই নিউ ক্যালিডোনিয়া স্বায়ত্তশাসনের আরও অধিকার ভোগ করছে৷
ভূমধ্যসাগরে ফ্রান্সের কর্সিকা দ্বীপের জনসংখ্যা প্রায় ৩৩০,০০০৷ সেখানকার জাতীয় লিবারেশন ফ্রন্ট ২০১৪ সালের জুন মাসে স্বাধীনতার লক্ষ্যে সশস্ত্র সংগ্রাম ত্যাগ করেছে বটে, কিন্তু রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় স্বাধীনতা অর্জনের স্বপ্ন ত্যাগ করেনি৷ স্বায়ত্তশাসনের বেশ কিছু অধিকার সত্ত্বেও তারা তাদের লক্ষ্যে অটল রয়েছে৷
ছবি: DW/E. Bryant
ডেনমার্কের ফেরো দ্বীপ
আটলান্টিক মহাসাগরে ফেরো দ্বীপপূঞ্জে মাত্র ৪৮,০০০ মানুষের বাস৷ সেখানকার ভোটাররা ২০১৮ সালের এপ্রিল মাসে এক গণভোটে ডেনমার্ক থেকে স্বাধীনতার প্রশ্নে তাঁদের রায় জানাবেন৷ ১৯৪৮ সাল থেকে ফেরো দ্বীপ স্বায়ত্তশাসনের অধিকার পেয়েছে৷ শুধু পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষার বিষয় দু’টি ডেনমার্কের হাতে রয়েছে৷
ছবি: picture alliance/augenklick/GES
স্বাধীনতা নয়, স্বায়ত্তশাসন চায় ইটালির উত্তরাঞ্চল
আরও স্বায়ত্তশাসনের প্রশ্নে লম্বার্ডি ও ভেনেতো রাজ্য আগামী ২২শে অক্টোবর এক গণভোটের আয়োজন করেছে৷ সেখানে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ স্বায়ত্তশাসনের পক্ষে রায় দিয়েছে৷ উত্তরের সমৃদ্ধ এই অঞ্চল গোটা দেশের অর্থনীতির প্রায় এক-তৃতীয়াংশের দাবিদার৷ ফলে কাটালুনিয়ার মতো এই অঞ্চলও কর বাবদ অর্থের আরও বড় অংশ নিজেদের কাছে রাখতে চায়৷
ছবি: picture alliance/Arco Images
7 ছবি1 | 7
কাটালুনিয়ার সংকট ইউরোপীয় দেশগুলোর মধ্যেও এক ধরনের সংকট তৈরি করেছে৷ ২০০৭ থেকে ২০০৯-এর মধ্যে স্কটল্যান্ড থেকে ফ্ল্যান্ডার্সে বেকারত্ব, শরণার্থী সমস্যা ইত্যাদিকে পুঁজি করে ইউরোপীয়ান ইউনিয়নের বিরুদ্ধবাদীরা আঞ্চলিক স্বায়ত্বশাসনের সুযোগ খুঁজছে৷ উত্তর ইটালির দুই সমৃদ্ধশালী রাজ্যে রোববার বৃহত্তর স্বায়ত্বশাসনের পক্ষে বিপুল ভোট পড়েছে৷ তবে গত সপ্তাহে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতারা কাটালুনিয়া সংকটকে অভ্যন্তরীণ সমস্যা বলে চিহ্নিত করে এর মধ্যস্থতা করতে অস্বীকার করেছেন৷
কাটালুনিয়ার সরকারের প্রতি সমর্থন দেয়া কট্টর বাম দল সিইউপি-ও কাটালানদের এ অসহযোগিতাতে সমর্থন জানিয়ে বলেছে, মাদ্রিদ কাটালানদের বিরুদ্ধে এমন আগ্রাসন চালালে আইন অমান্য করতে বাধ্য হবে কাটালানরা৷
কাটালুনিয়ার প্রেসিডেন্ট কার্লেস পুজদেমন এ সপ্তাহের বৃহস্পতিবার মাদ্রিদের আচরণের জবাব দিতে সংসদ অধিবেশনের ডাক দিয়েছেন৷ অনেকেই একে কাটালুনিয়ার আনুষ্ঠানিক স্বাধীনতা ঘোষনার পদক্ষেপ হিসেবে দেখছে৷
অনেকেই কার্লেস পুজদেমনকে পুনঃভোটের মাধ্যমে এ সংকট মোকাবেলার আহ্বান জানালেও কাটালুনিয়ার সরকারের মুখপাত্র ‘সমাধানের পথ নয়’ বলে এ প্রস্তাবকে নাকচ করে দিয়েছেন৷
অন্যদিকে স্পেনের উপ-প্রধানমন্ত্রী বলেন, সংবিধানের ১৫৫ ধারা কার্যকর হওয়া মাত্রই পুজদেমন তাঁর পদ হারাবে আর মাদ্রিদ তখন নিজস্ব প্রতিনিধি নির্বাচন করবে৷ ছ’মাসের মধ্যেই স্প্যানিশ সরকার আঞ্চলিক ভোটের ব্যবস্থা করবে বলেও জানান তিনি৷