1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

স্বজনকে পথ চেনাতে গিয়ে মবের হাতে প্রাণ গেল রুপলাল ও প্রদীপের

১১ আগস্ট ২০২৫

মেয়ের বিয়ের আলোচনা চলছিল৷ রোববার দিন তারিখ ঠিক হওয়ার কথা৷ শনিবার রাতে স্বজনকে বাড়ি আনতে গিয়ে মবের হাতে প্রাণ গেল তাদের৷

শনিবার রাতে রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার কুর্শা ইউনিয়নের ঘনিরামপুর গলপিটুনিতে নিহত হন রুপলাল দাস ও প্রদীপ দাসছবি: Sarkar Mohammad

শনিবার রাতে রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার কুর্শা ইউনিয়নের ঘনিরামপুর এলাকার এই ঘটনা ঘটে৷ নিহত ব্যক্তিরা হলেন উপজেলার কুর্শা ইউনিয়নের ঘনিরামপুর এলাকার বাসিন্দা রুপলাল দাস এবং মিঠাপুকুর উপজেলার বালুয়াভাটা গ্রামের প্রদীপ দাস৷ প্রদীপ দাস সম্পর্কে রুপলাল দাসের ভাগনির স্বামী ছিলেন৷

বাবাকে হারিয়ে আর্তচিৎকার করেন দুই মেয়ে৷ বাকরুদ্ধ, দিশেহারা পরিবারটি৷

এই ঘটনায় রোববার একটি মামলা দায়ের করেন নিহত রুপলালের স্ত্রী ভারতী রানী৷ ভিডিও ফুটেজ দেখে এখন পর্যন্ত ঘটনার সাথে জড়িত সন্দেহে চারজনকে আটক করেছে পুলিশ৷ এদিকে এই ঘটনাকে এই ঘটনাকে ‘বিপজ্জনক ও অগ্রহণযোগ্য' আখ্যা দিয়ে তীব্র নিন্দা জানিয়েছে আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)৷

রাস্তা না চেনায় স্বজনকে পথ দেখাতে গিয়েছিলেন

বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম প্রথম আলোর খবরে বলা হয়, নিহত রুপলাল দাস জুতা সেলাইয়ের কাজ করতেন৷ আর প্রদীপ দাস ভ্যান চালাতেন৷

নিহত ব্যক্তিদের পরিবার, পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে প্রথম আলো জানায়,  মিঠাপুকুর উপজেলার শ্যামপুর এলাকার এক তরুণের সঙ্গে রুপলাল দাসের মেয়ে নুপুর দাসের বিয়ে কথাবার্তা চলছিল৷ রোববার বিয়ের দিন-তারিখ ঠিক করার কথা ছিল৷ এ জন্য মিঠাপুকুর থেকে নিজের ভ্যান চালিয়ে আত্মীয় রুপলাল দাসের বাড়ির উদ্দেশে রওনা হন প্রদীপ দাস৷ কিন্তু গ্রামের ভেতর দিয়ে রাস্তা না চেনায় প্রদীপ দাস সয়ার ইউনিয়নের কাজীরহাট এলাকায় এসে রুপলালকে ফোন করেন৷ রুপলাল সেখানে যান৷ তারা দুজনে ভ্যানে চড়ে রুপলালের বাড়ি ঘনিরামপুর গ্রামের দিকে রওনা হন৷ রাত ৯টার দিকে তারাগঞ্জ-কাজীরহাট সড়কের বটতলা এলাকায় পৌঁছালে ভ্যানচোর সন্দেহে তাদের দুজনকে থামান স্থানীয় কয়েকজন৷ এরপর সেখানে লোক জড়ো হতে থাকে৷

পরিবার, পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে প্রথম আলো আরো জানায়,  গত ২৮ জুলাই ওই এলাকায় এক শিশুকে হত্যা করে একটি ভ্যান চুরি করা হয়৷ এ ঘটনায় স্থানীয় লোকজন ক্ষুব্ধ ছিলেন৷ একপর্যায়ে স্থানীয় লোকজন প্রদীপ দাসের ভ্যানে থাকা বস্তা থেকে চারটি প্লাস্টিকের ছোট বোতল বের করেন৷ সেগুলোতে চোলাই মদ ছিল বলে পরিবারের ভাষ্য৷ একটি বোতল খুললে ভেতরে থাকা তরলের ঘ্রাণে সেখানকার দুই ব্যক্তি অসুস্থ বোধ করেন বলে জানান৷ এ ঘটনায় লোকজনের সন্দেহ আরও বাড়ে৷ অজ্ঞান করে ভ্যান চুরি সন্দেহে তাদের মারধর শুরু করেন৷ বটতলা থেকে মারতে মারতে বুড়িরহাট উচ্চবিদ্যালয় মাঠে নিয়ে আসা হয় তাদের৷ মারধরের একপর্যায়ে অচেতন হলে সেখানে ফেলে রাখা হয়৷ পরে রাত ১১টার দিকে তাদের উদ্ধার করে তারাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায় পুলিশ৷

হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসক রুপলাল দাসকে মৃত ঘোষণা করেন৷ প্রদীপ দাসকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে রোববার ভোরে তিনিও মারা যান৷

শোকে বিহ্বল নিহত রুপলাল দাসের পরিবারছবি: Sarkar Mohammad

এলাকাবাসীর বিক্ষোভ

এদিকে গণপিটুনির ঘটনার পর রোববার সন্ধ্যায় মরদেহ নিয়ে রংপুর-দিনাজপুর মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে এলাকাবাসী৷

প্রায় এক ঘন্টার বিক্ষোভে  সড়কের দুই দিকেই শত শত যানবাহন আটকে পড়ে৷

খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুবেল রানা ও সেনাবাহিনীর একটি দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আসামিদের গ্রেপ্তারের আশ্বাস দিলে বিক্ষোভকারীরা সড়ক থেকে সরে যান৷

দৈনিক প্রথম আলো জানায়, আজ সোমবার সকাল ১০টার দিকে ঘটনাস্থল বটতলা যাওয়ার পথে সড়কে সেনাবাহিনী ও পুলিশকে টহল দিতে দেখা গেছে৷

সন্দেহভাজন গ্রেপ্তার

গণপিটুনির ঘটনায় অজ্ঞাত পরিচয়ের ৭০০ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন নিহতের স্ত্রী ভারতী রানী৷

ঘটনার ভিডিও ফুটেজ দেখে পুলিশ সন্দেহভাজন চার ব্যক্তিকে আটক করেছে৷

ঘটনার বিচার দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ করেন স্থানীয়রা ছবি: Sarkar Mohammad

গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন উপজেলার সয়ার ইউনিয়নের বালাপুর এলাকার এবাদত হোসেন, বুড়িরহাট এলাকার আক্তারুল ইসলাম, রফিকুল ইসলাম ও রহিমাপুরের মিজানুর রহমান৷ 

এ বিষয়ে তারাগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এমএ ফারুক বলেন, তথ্যপ্রযুক্তি, ভিডিও বিশ্লেষণ ও স্থানীয় বাসিন্দাদের দেওয়া তথ্য মিলিয়ে ঘটনাটির সঙ্গে জড়িত চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷ অন্যদের গ্রেপ্তারেও অভিযান চলছে৷

‘মানবাধিকার মানদণ্ডে অত্যন্ত বিপজ্জনক'

তারাগঞ্জে হিন্দু সম্প্রদায়ের দুই জনকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ ও তীব্র নিন্দা জানিয়েছে মানবাধিকার সংস্থা আসক৷সোমবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে ঘটনার নিন্দা জানায় সংস্থাটি৷

বিবৃতিতে বলা হয়, রংপুরে তারাগঞ্জ উপজেলা এলাকায় হিন্দু সম্প্রদায়ের দুই জন নাগরিককে ভ্যান চুরির সন্দেহে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) গভীর উদ্বেগ ও তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে৷ এ ধরনের ঘটনা প্রচলিত আইন, সংবিধান ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার মানদণ্ডের দৃষ্টিতে অত্যন্ত বিপদজনক ও অগ্রহণযোগ্য৷

আসক আরো বলেছে, সংবিধানের ৩১ ও ৩২ অনুচ্ছেদে নাগরিকের জীবন ও আইনগত সুরক্ষার অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে; যা এই ঘটনায় গুরুতরভাবে লঙ্ঘিত হয়৷ এ ধরনের ঘটনা বিচারহীনতার সংস্কৃতিকে দীর্ঘায়িত করছে; যা সামাজিক সম্প্রীতি ও আইনের শাসনের জন্য হুমকি৷

আরআর/এসিবি (প্রথম আলো, বাংলা ট্রিবিউন)

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ