1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যে উৎসাহিত হত্যাকারীরা

হারুন উর রশীদ স্বপন, ঢাকা১১ আগস্ট ২০১৫

ব্লগার হত্যার কিনারা হচ্ছে না বাংলাদেশে৷ এখনও কাউ গ্রেপ্তার হয়নি৷ অথচ পুলিশের আইজি-র সঙ্গে সুর মেলালেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী৷ বললেন, ‘‘ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করলে ব্লগারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে৷''

Bangladesch Protest gegen Ermordung von US-Blogger (Bildergalerie)
ছবি: DW

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামাল মঙ্গলবার ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে বলেন, ‘‘ব্লগে বা অন্য কোনো মাধ্যমে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়া যাবে না৷ দিলে তাদের বিরুদ্ধে দেশের প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা নেয়া হবে৷''

এর আগে, গত রবিবার, পুলিশের আইজি বলেন, ‘‘ব্লগারদের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বলছি, আপনারা কারো ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করবেন না৷ লিখতে গিয়ে সীমা লঙ্ঘন করবেন না৷'' এ কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে তিনি এ-ও মনে করিয়ে দেন যে, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিলে ১৪ বছরের শাস্তির বিধান আছে বাংলাদেশে৷

এঁরা দু'জনই এমন এক পরিস্থিতিতে এই কথাগুলো বললেন, যখন গত সাড়ে পাঁচ মাসে বাংলাদেশে চারজন ব্লগারকে হত্যা করা হয়েছে৷ সর্বশেষ, গত শুক্রবার, হত্যা করা হয় নীলাদ্রি চট্টোপাধ্যায় ওরফে নিলয় নীলকে৷ অন্য ঘটনাগুলোর মতো, এই হত্যাকাণ্ডেও এখনো কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ৷ বরং তাদের কথা অনুয়ায়ী, জঙ্গিরা এখন বেপরোয়া হয়ে উঠেছে বাংলাদেশে৷ নতুন নতুন কৌশলের কারণে তাদের চিহ্নিত করা গেলেও আটক করা যাচ্ছে না৷

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘জঙ্গিদের বিভাজিত সেলের (গ্রুপ) কারণে থামছে না এ সব হত্যাকাণ্ড৷ তারা অনেক ছোট ছোট গ্রুপে ভাগ হয়ে কাজ করে৷ এছাড়া এদের অসংখ্য ভুয়া ফেসবুক আইডি আছে৷''

তিনি বলেন, ‘‘আনসার আল-ইসলাম, আনসারুল্লাহ বাংলা টিম, আনসার বাংলা-৭, আনসার বাংলা-৮, আনসার আল-বাংলাদেশসহ বিভিন্ন নামে জঙ্গি সংগঠনগুলো সারাদেশে ছড়িয়ে আছে৷ মূলত পুলিশের দৃষ্টি এড়ানোর জন্যই আনসারুল্লাহ বাংলা টিম আলাদা আলাদা গ্রুপে বিভক্ত৷ এ সব বিভাজিত গ্রুপের কারণে সবাইকে নজরদারির মধ্যে রাখা যায় না৷ এক গ্রুপের সদস্যদের খবর অন্য গ্রুপের কাছেও পাওয়া যায় না৷ এমনকি কেউ কারো নামও বলতে চায় না, যা জটিল পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে৷''

মনিরুল ইসলাম জানান, ‘‘জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের প্রধান সমন্বয়ক মুফতি জসিম উদ্দিন রাহমানি এখন কারাগারে৷ বর্তমানে সংগঠনটির সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করছেন তামিম আল-আদনানি৷ আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সামগ্রিক একটি নেটওয়ার্ক দেশের ভিতরে আছে৷ আর এটি পরিচালনা করা হচ্ছে পাকিস্তান থেকে৷'' তাঁর কথায়, এই জঙ্গি সংগঠনে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রসহ আইটি শিক্ষিত লোকজনও যুক্ত৷

জঙ্গিরা ছদ্মনাম ব্যবহার করে ফেসবুক ও জি-মেল অ্যাকাউন্ট খুলে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ করছে বলে জানান মহানগর গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান যুগ্ম কমিশনার৷ তিনি বলেন, ‘‘জঙ্গিদের হাজার হাজার ভুয়া ফেসবুক অ্যাকাউন্ট, ওয়েবসাইট রয়েছে, যেগুলো ব্যবহার করে তারা সংঘঠিত হচ্ছে৷ তৈরি করছে জঙ্গি নেটওয়ার্ক, ঘটাচ্ছে হত্যাকাণ্ড৷''

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের প্রশ্ন

এই যখন পরিস্থিতি তখন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং আইজিপি-র বক্তব্য সহজভাবে নিতে পারছেন না বিশ্লেষকরা৷ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষক ড. শান্তনু মজুমদার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করলে আমাদের আইনে শাস্তির বিধান আগে থেকেই আছে৷ এটা নতুন করে বলার কিছু নেই৷ কেউ আঘাত করে থাকলে যে কোনো সময়ই আইনে ব্যবস্থা নেয়া যায়৷ তারা নতুন করে এটা বলে কী বোঝাতে চান?''

শান্তনু মজুমদার বলেন, ‘‘আমাদের সংবিধানে মত প্রকাশের এবং বাকস্বাধীনতা নিশ্চিত করা আছে৷ সেই মত প্রকাশ করতে গিয়ে যাঁদের চাপাতির কোপে জীবন দিতে হচ্ছে, তাঁদের রক্ষায় সরকার কী ব্যবস্থা নিচ্ছে?''

শান্তনু মজুমদারের কথায়, ‘‘এখন সরকারকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে সরকার কী চায়৷ সরকারকে অগ্রাধিকার নির্ধারণ করতে হবে৷ আর সেই অগ্রাধিকার নির্ধারণ করতে যদি তারা না পারে, তাহলে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে এই দেশের অবস্থান নড়বড়ে হয়ে পড়বে৷''

গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ডা. ইমরান এইচ সরকার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং আইজিপি-র বক্তব্যে হত্যাকারীরা আরো উৎসাহিত হবে৷ তাঁরা আসলে ব্লগারদের আরো ঝুঁকির মুখে ঠেলে দিলেন৷''

তিনি বলেন, ‘‘বাকস্বাধীনতা রক্ষায় ব্যবস্থা না নিয়ে তাঁরা প্রকারন্তরে বাক স্বাধীনতা ও মুক্ত চিন্তার বিপক্ষে অবস্থান নিলেন৷ সরকারের যদি এই মনোভাব হয়, তাহলে সামনে কঠিন বিপর্যয় অপেক্ষা করছে৷''

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ