ব্লগার হত্যার কিনারা হচ্ছে না বাংলাদেশে৷ এখনও কাউ গ্রেপ্তার হয়নি৷ অথচ পুলিশের আইজি-র সঙ্গে সুর মেলালেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী৷ বললেন, ‘‘ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করলে ব্লগারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে৷''
বিজ্ঞাপন
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামাল মঙ্গলবার ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে বলেন, ‘‘ব্লগে বা অন্য কোনো মাধ্যমে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়া যাবে না৷ দিলে তাদের বিরুদ্ধে দেশের প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা নেয়া হবে৷''
এর আগে, গত রবিবার, পুলিশের আইজি বলেন, ‘‘ব্লগারদের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বলছি, আপনারা কারো ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করবেন না৷ লিখতে গিয়ে সীমা লঙ্ঘন করবেন না৷'' এ কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে তিনি এ-ও মনে করিয়ে দেন যে, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিলে ১৪ বছরের শাস্তির বিধান আছে বাংলাদেশে৷
এঁরা দু'জনই এমন এক পরিস্থিতিতে এই কথাগুলো বললেন, যখন গত সাড়ে পাঁচ মাসে বাংলাদেশে চারজন ব্লগারকে হত্যা করা হয়েছে৷ সর্বশেষ, গত শুক্রবার, হত্যা করা হয় নীলাদ্রি চট্টোপাধ্যায় ওরফে নিলয় নীলকে৷ অন্য ঘটনাগুলোর মতো, এই হত্যাকাণ্ডেও এখনো কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ৷ বরং তাদের কথা অনুয়ায়ী, জঙ্গিরা এখন বেপরোয়া হয়ে উঠেছে বাংলাদেশে৷ নতুন নতুন কৌশলের কারণে তাদের চিহ্নিত করা গেলেও আটক করা যাচ্ছে না৷
হত্যার হুমকি পাওয়া এক ব্লগার
তাঁর বাবা হুমায়ুন আজাদের ওপরও হামলা হয়েছিল৷ বাবা তাঁর ছেলে অনন্যকে বলেছিলেন, ‘এরপর তুমি...’৷ হুমায়ুন আজাদের মৃত্যুর কয়েক বছরের মধ্যেই ব্লগার অনন্য আজাদকে হত্যার হুমকি দিয়েছে জঙ্গিরা৷ তাঁকে নিয়েই আজকের ছবিঘর...
ছবি: DW/Gönna Ketels
লিখে যেতে চান অনন্য
ঢাকায় জন্ম৷ ঢাকা শহরকে তাই খুব ভালোবাসেন অনন্য আজাদ৷ এই শহর ছেড়ে কোথাও যেতে চাননি, তবে হত্যার হুমকি দেয়ার পর থেকে জীবন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছিল৷ তারপরও লেখলেখি থামাননি৷
ছবি: DW/Gönna Ketels
চিন্তা মুক্ত, মতামত নয়
২৪ বছর বয়সি ব্লগার অনন্য নিজেকে ‘মুক্তচিন্তক’ মনে করেন৷ তিনি মনে করেন, ধর্ম বা যে কোনো কিছুকে বিশ্বাস করা বা না করার অধিকার সবারই থাকা উচিত৷ এই ভাবনা নিয়েই লেখালেখি করেন৷ এ কারণে ইসলামি জঙ্গিরা তাঁকে হত্যার হুমকি দিয়েছে৷
ছবি: DW/Gönna Ketels
আত্মরক্ষার চেষ্টা
২০১৩ সালে ৮৪ জন ব্লগারের নামের তালিকা প্রকাশ করে তাঁদের হত্যার হুমকি দেয়া হয়৷ পরের ৩ বছরে মোট ৯ জন ব্লগারকে হত্যা করা হয়েছে৷ হালে দিনের আলোয়, জনাকীর্ণ স্থানে ব্লগার হত্যার ঘটনার পর তাঁকেও হত্যার হুমকি দেয়ায় অনন্য সাবধানে চলাফেরা শুরু করেন৷ ঢাকায় তো হেলমেট না পরে বেরই হতেন না তিনি৷
ছবি: DW/Gönna Ketels
চিন্তার জগতে এক
ইসলামি জঙ্গি এবং তাদের ভাবধারায় বিশ্বাসীরা ব্লগারদের ঢালাওভাবে ‘নাস্তিক’ বলছে৷ কিন্তু বাস্তবে বাংলাদেশের খুব কম ব্লগারই ধর্মের সমালোচনা করে লেখালেখি করেন৷ সরকার শুধু ব্লগারদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থই নয়, উল্টো ব্লগারদের ওপরই বিধিনিষেধ আরোপ করতে সচেষ্ট৷ অনেক ক্ষেত্রে ব্লগারদেই বরং বিচারের মুখোমুখি করা হচ্ছে৷
ছবি: DW/Gönna Ketels
ঐতিহাসিক বিরোধ
একাত্তরে নয় মাসের যুদ্ধ শেষে স্বাধীন দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে বাংলাদেশ৷ যুদ্ধে জামায়াতে ইসলামিসহ কয়েকটি দল পাকিস্তানকে সমর্থন করেছে, তাদের অনেক কর্মী হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট, অগ্নিসংযোগে অংশ নিয়েছে৷ ২০১৩ সালে জামায়াত নেতা, যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার ফাঁসির দাবিতে ব্লগাররা আন্দোলন শুরু করে৷ শাহবাগে সমবেত হয় লাখো মানুষ৷ আন্দোলনের এক পর্যায়ে ৮৪ জন ব্লগারের তালিকা প্রকাশ করে হত্যার হুমকি দেয়া হয়৷
ছবি: DW/M. Mamun
এরপর তুমি...
বাবা হুমায়ুন আজাদ ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং লেখক৷ তাঁর ওপরও হামলা হয়েছিল৷ হুমায়ুন আজাদ তার কিছুদিন পরই মারা যান৷ একদিন হুমায়ুন অনন্যকে বলেছিলেন, ‘‘এরপর তুমি...৷’’ হুমায়ুন তাঁর লেখায় একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান সেনাবাহিনী ও তাদের দোসর রাজাকার, আলবদরদের ভূমিকার কথা উল্লেখ করতেন৷ তাই হত্যার উদ্দেশ্যে তাঁর ওপর হামলা চালানো হয়৷ অনন্যকেও হত্যার হুমকি দিয়েছে জঙ্গিরা৷
ছবি: DW/Gönna Ketels
‘গৃহবন্দিত্ব’ থেকে মুক্তি
হত্যার হুমকির পরও লেখালেখি চালিয়ে যাচ্ছেন অনন্য৷ লিখছেন মৌলবাদের বিরুদ্ধে জোরালো অবস্থান ধরে রেখে৷ কয়েকদিন হলো বৃত্তি নিয়ে জার্মানিতে এসেছেন অনন্য আজাদ৷ প্রিয় শহর ঢাকায় নিজের বাড়িতেই প্রায় বন্দি থাকার যন্ত্রণা থেকে আপাতত মুক্তি!
ছবি: DW/Gönna Ketels
7 ছবি1 | 7
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘জঙ্গিদের বিভাজিত সেলের (গ্রুপ) কারণে থামছে না এ সব হত্যাকাণ্ড৷ তারা অনেক ছোট ছোট গ্রুপে ভাগ হয়ে কাজ করে৷ এছাড়া এদের অসংখ্য ভুয়া ফেসবুক আইডি আছে৷''
তিনি বলেন, ‘‘আনসার আল-ইসলাম, আনসারুল্লাহ বাংলা টিম, আনসার বাংলা-৭, আনসার বাংলা-৮, আনসার আল-বাংলাদেশসহ বিভিন্ন নামে জঙ্গি সংগঠনগুলো সারাদেশে ছড়িয়ে আছে৷ মূলত পুলিশের দৃষ্টি এড়ানোর জন্যই আনসারুল্লাহ বাংলা টিম আলাদা আলাদা গ্রুপে বিভক্ত৷ এ সব বিভাজিত গ্রুপের কারণে সবাইকে নজরদারির মধ্যে রাখা যায় না৷ এক গ্রুপের সদস্যদের খবর অন্য গ্রুপের কাছেও পাওয়া যায় না৷ এমনকি কেউ কারো নামও বলতে চায় না, যা জটিল পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে৷''
মনিরুল ইসলাম জানান, ‘‘জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের প্রধান সমন্বয়ক মুফতি জসিম উদ্দিন রাহমানি এখন কারাগারে৷ বর্তমানে সংগঠনটির সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করছেন তামিম আল-আদনানি৷ আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সামগ্রিক একটি নেটওয়ার্ক দেশের ভিতরে আছে৷ আর এটি পরিচালনা করা হচ্ছে পাকিস্তান থেকে৷'' তাঁর কথায়, এই জঙ্গি সংগঠনে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রসহ আইটি শিক্ষিত লোকজনও যুক্ত৷
জঙ্গিরা ছদ্মনাম ব্যবহার করে ফেসবুক ও জি-মেল অ্যাকাউন্ট খুলে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ করছে বলে জানান মহানগর গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান যুগ্ম কমিশনার৷ তিনি বলেন, ‘‘জঙ্গিদের হাজার হাজার ভুয়া ফেসবুক অ্যাকাউন্ট, ওয়েবসাইট রয়েছে, যেগুলো ব্যবহার করে তারা সংঘঠিত হচ্ছে৷ তৈরি করছে জঙ্গি নেটওয়ার্ক, ঘটাচ্ছে হত্যাকাণ্ড৷''
নিলয় হত্যারহস্যও একই পথে?
আবারও ব্লগার হত্যার ঘটনা ঘটল বাংলাদেশে৷ এবার বাড়িতে ঢুকে জবাই করা হলো ব্লগার নীলয় নীলকে৷ বরাবরের মতো হত্যাকাণ্ডের পরই পুলিশ অপরাধীদের গ্রেপ্তারের আশ্বাস দিলেও, নিহতের পরিবার এ আশ্বাসে আস্থা রাখতে পারছে না৷
ছবি: Getty Images/AFP/Uz Zaman
ঘরে ঢুকে জবাই
গত ৭ আগস্ট ঢাকার উত্তর গোড়ান এলাকার বাসায় ঢুকে নীলাদ্রি চট্টোপাধ্যায়, ওরফে নিলয় নীলকে দুর্বৃত্তরা হত্যা করে৷ ব্লগার ও গণজাগরণ মঞ্চের সক্রিয় কর্মী নিলয়ের বয়স হয়েছিল ৪০ বছর৷ ভাড়া নেয়ার জন্য বাসা দেখতে চেয়ে ঢুকে পড়া চার দুর্বৃত্ত প্রথমে নিলয়ের স্ত্রী ও তাঁর ছোট বোনকে বারান্দায় বের করে ভেতর থেকে দরজা বন্ধ করে দেয়, তারপর জবাই করে নিলয়কে৷
ছবি: Twitter
পুলিশকে পাশে পাননি নিলয়
কিছুদিন ধরেই তাঁর ওপর হামলার আশঙ্কা করছিলেন নিলয়৷ তিন মাস আগে তিনি লক্ষ্য করেছিলেন, অচেনা কয়েকজন লোক তাঁকে অনুসরণ করছে৷ বিষয়টি জানিয়ে সাধারণ ডায়েরি করার জন্য থানায় গিয়েছিলেন৷ পুলিশ বিষয়টিকে আমলে না নিয়ে তাঁকে বরং দেশ ছাড়ার পরামর্শ দেয়৷ তাঁকে অনুসরণ করা এবং পুলিশের দেশ ছাড়ার পরামর্শের কথা ফেসবুকে নিলয় নিজেই লিখেছিলেন নিলয়৷
ছবি: Twitter
নিন্দার ঝড়, গ্রেপ্তার ও শাস্তি দাবি
নিলয় নীল নৃশংসভাবে নিহত হওয়ার পর দেশ-বিদেশে নিন্দার ঝড় ওঠে৷ জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি-মুন এবং অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, হিউম্যান রাইটস ওয়াচসহ বেশ কিছু আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানিয়ে হত্যাকারীদের শাস্তি দাবি করেছে৷ নিলয়ের স্ত্রী আশামনি (ওপরের ছবিতে, বাঁ দিক থেকে দ্বিতীয়) এখনো কেউ গ্রেপ্তার না হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেন৷
ছবি: Getty Images/AFP/Uz Zaman
প্রতিবাদ
নিলয় হত্যার পর রাজধানী ঢাকাসহ কয়েকটি শহরে প্রতিবাদ সমাবেশ হয়েছে৷ নিলয়সহ সব ব্লগার হত্যার দ্রুত বিচার দাবি করার পাশাপাশি পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা এবং ব্যর্থতায় ক্ষোভ প্রকাশ করে গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার বলেছেন, ‘‘এতদিন ব্লগারদের রাস্তায় হত্যা করা হতো, এখন বাসায় ঢুকে জবাই করা শুরু হলো৷ এই সরকার ব্লগার হত্যায় পৃষ্ঠপোষকতা করছে৷’’
ছবি: Getty Images/AFP/Uz Zaman
সরকারের নিষ্ক্রিয়তা ও বিচারহীনতার জন্যই হত্যাকাণ্ড চলছে
গত ২৬শে ফেব্রুয়ারি বইমেলা থেকে ফেরার পথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ব্লগার ও বিজ্ঞান লেখক অভিজিৎ রায়কে কুপিয়ে হত্যা করা হয়৷ ৩০শে মার্চ তেজগাঁও এলাকায় প্রকাশ্য দিবালোকে হত্যা করা হয় ওয়াশিকুর রহমান বাবুকে৷ মৌলবাদীদের প্রাণনাশের হুমকির মুখে দেশ ছাড়া লেখিকা তসলিমা নাসরীন ধারবাহিকভাবে ব্লগার হত্যার জন্য শেখ হাসিনার সরকার এবং পুলিশ প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তাকে দায়ী করেছেন৷
ছবি: AFP/Getty Images
আল-কায়েদার দায়িত্ব স্বীকার
শুক্রবারই নিলয় হত্যার দায় স্বীকার করে আল-কায়েদা৷ আল-কায়েদার ভারতীয় উপ-মহাদেশের (একিউআইএস) বাংলাদেশ শাখা, আনসার আল-ইসলামের নামে সংবাদমাধ্যমে ই-মেল পাঠিয়ে ইসলামি জঙ্গি সংগঠনটি এ হত্যার দায়িত্ব স্বীকার করে৷
ছবি: Fotolia/Oleg Zabielin
‘ধর্মের নামে সন্ত্রাস চলতে দেবো না’
এদিকে ঢাকার এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ধর্মরক্ষার কথা বলে মানুষ হত্যাকে ‘ধর্মের নামে সন্ত্রাস’ হিসেবে উল্লেখ করে বলেছেন, ‘‘বাংলাদেশে এটা চলতে দেওয়া যাবে না৷’’ তিনি আরো বলেন, ‘‘ইসলাম ধর্ম শান্তির ধর্ম৷ যারা ধর্মকেও কলুষিত করে যাচ্ছে, তারা কখনোই ধর্মে বিশ্বাস করে বলে মনে হয় না৷ তারা নিজেদের মুসলমান হিসেবে কীভাবে ঘোষণা দেবে?’’
ছবি: Oli Scarff/Getty Images
‘সীমা লঙ্ঘন করবেন না’
পুলিশের আইজি একেএম শহিদুল হক বাংলাদেশের প্রচলিত আইনে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়া দণ্ডনীয় অপরাধ জানিয়ে ব্লগারদের প্রতি সীমা লঙ্ঘন না করার অনুরোধ জানিয়েছেন৷ এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরো বলেন, ‘‘কারো ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়া উচিত নয়৷ কেউ তা করলে তাঁর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে৷’’ ব্লগার হত্যাকারীদের ‘মানসিক বিকারগ্রস্ত’ হিসেবে অভিহিত করে তাদের গ্রেপ্তারের আশ্বাসও দিয়েছেন তিনি৷
ছবি: Getty Images/AFP/Uz Zaman
জামায়াতের ‘ভুল’
যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে সোচ্চার ছিলেন নিলয় নীল৷ বিচারাধীন, সাজাপ্রাপ্ত এবং অভিযুক্ত যুদ্ধাপরাধীদের অধিকাংশই জামায়াতে ইসলামীর নেতা৷ নিলয় নিহত হওয়ার পর হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দেয় জামায়াত৷ তবে দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য হামিদুর রহমান আযাদের পাঠানো বিবৃতিতে নিলয় নীল নামে পরিচিতি নীলাদ্রি চট্টোপাধ্যায়ের নাম লেখা হয় নীলয় হোসেন ওরফে নীল৷
ছবি: Getty Images/AFP/Uz Zaman
9 ছবি1 | 9
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের প্রশ্ন
এই যখন পরিস্থিতি তখন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং আইজিপি-র বক্তব্য সহজভাবে নিতে পারছেন না বিশ্লেষকরা৷ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষক ড. শান্তনু মজুমদার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করলে আমাদের আইনে শাস্তির বিধান আগে থেকেই আছে৷ এটা নতুন করে বলার কিছু নেই৷ কেউ আঘাত করে থাকলে যে কোনো সময়ই আইনে ব্যবস্থা নেয়া যায়৷ তারা নতুন করে এটা বলে কী বোঝাতে চান?''
শান্তনু মজুমদার বলেন, ‘‘আমাদের সংবিধানে মত প্রকাশের এবং বাকস্বাধীনতা নিশ্চিত করা আছে৷ সেই মত প্রকাশ করতে গিয়ে যাঁদের চাপাতির কোপে জীবন দিতে হচ্ছে, তাঁদের রক্ষায় সরকার কী ব্যবস্থা নিচ্ছে?''
শান্তনু মজুমদারের কথায়, ‘‘এখন সরকারকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে সরকার কী চায়৷ সরকারকে অগ্রাধিকার নির্ধারণ করতে হবে৷ আর সেই অগ্রাধিকার নির্ধারণ করতে যদি তারা না পারে, তাহলে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে এই দেশের অবস্থান নড়বড়ে হয়ে পড়বে৷''
গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ডা. ইমরান এইচ সরকার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং আইজিপি-র বক্তব্যে হত্যাকারীরা আরো উৎসাহিত হবে৷ তাঁরা আসলে ব্লগারদের আরো ঝুঁকির মুখে ঠেলে দিলেন৷''
তিনি বলেন, ‘‘বাকস্বাধীনতা রক্ষায় ব্যবস্থা না নিয়ে তাঁরা প্রকারন্তরে বাক স্বাধীনতা ও মুক্ত চিন্তার বিপক্ষে অবস্থান নিলেন৷ সরকারের যদি এই মনোভাব হয়, তাহলে সামনে কঠিন বিপর্যয় অপেক্ষা করছে৷''