1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান
খেলাধুলাআর্জেন্টিনা

‘স্বর্গীয়' বাঁ পায়ের জাদুতেই শেষ আটে আর্জেন্টিনা

সামীউর রহমান ঢাকা
৩ ডিসেম্বর ২০২২

যেখানে বাস্তবতার সীমানা শেষ, জাদুর শুরু তো সেখানেই। তখন অস্ট্রেলিয়া ছড়ি ঘোরাচ্ছে আর্জেন্টিনার উপর। এটাই যখন কঠিন বাস্তব তখনই স্বর্গীয় বাঁ পায়ের জাদু। লিওনেল মেসির ঝলকে আর্জেন্টিনার গোল। তাতেই ঘুরে গেল ম্যাচের ভাগ্য।

FIFA WM 2022 Katar | Achtelfinale | Argentinien vs Australien
ছবি: Robert Michael/dpa/picture alliance

মেসি আর জুলিয়ান আলভারেজের গোলে অস্ট্রেলিয়াকে ২-১ গোলে হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে আর্জেন্টিনা, অস্ট্রেলিয়া পক্ষে একমাত্র গোলটি করেছেন ক্রেইগ গুডউইন। সৌদি আরবের সঙ্গে হেরে বিশ্বকাপ শুরু করা আর্জেন্টিনার একটা সময় শেষ ষোলোতে পা রাখা নিয়েই ছিল শঙ্কা, সব উড়িয়ে দিয়ে দ্বিতীয় দল হিসেবে আকাশী-নীলরা পা রেখেছে শেষ আটে। সেখানে তাদের অপেক্ষায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে হারিয়ে আসা নেদারল্যান্ডস।

বাতাসে ভাসছিল ডি মারিয়ার খেলতে না পারার গুঞ্জন, এমনকি চোটের কারণে বিশ্বকাপটাই শেষ হয়ে যাবার কথা। আর্জেন্টিনা একাদশ ঘোষণা করতেই জানা গেল গুঞ্জনটা সত্যি, ডি মারিয়ার জায়গায় পাপু গোমেজের নাম। আক্রমণে তাই শুরুতে ধারটা একটু কমই ছিল আর্জেন্টিনার, যে সুযোগটা নিয়েছে প্রতিপক্ষ।

অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচটা ছিল মেসির ক্যারিয়ারের ১০০০ তম ম্যাচ আর আর্জেন্টিনার অধিনায়ক হিসেবে শততম ম্যাচ। কী দারুণভাবেই না এই মাইলফলকে পা রাখাটা উদযাপন করলেন ফুটবলের জাদুকর। আক্রমণের শুরুটা মেসির নেয়া ফ্রি-কিক থেকে। ডান-প্রান্তে, কর্নার ফ্ল্যাগ আর সাইড লাইনের খানিক সামনের জায়গায় ফ্রি-কিক নেন মেসি। অস্ট্রেলিয়ার রক্ষণের খেলোয়াড় হেডে বলটা ফেরালেও ক্লিয়ার করতে পারেননি, বল চলে যায় আলেক্সিস ম্যাকআলিস্টারের কাছে, তিনি দ্রুত বল দিয়ে দেন মেসির কাছে। তার সঙ্গে ওয়ান-টু পাসে ততক্ষণে মেসি ঢুকে পড়েছেন বক্সের ভেতর। ১৫ গজ দূর থেকে মেসির জাদুকরি বাম পায়ের শট তিন জন অস্ট্রেলিয়ান রক্ষণ প্রহরীর ফাঁক দিয়েও ঠিকই খুঁজে নয় কাঙ্খিত গন্তব্য। ম্যাথু রায়ান ডান দিকে ঝাঁপিয়েও বাঁচাতে পারেননি গোল। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচে মেসির প্রথম গোলপোস্টে শট, প্রথম শটেই গোলের দেখা। যে গোলটা বিশ্বকাপের নকআউট পর্বে মেসির প্রথম ও সব মিলিয়ে নবম গোল। এই গোলে ডিয়েগো ম্যারাডোনাকে বিশ্বকাপের গোলসংখ্যায় ছাড়িয়ে গেলেন মেসি, ১০ গোল নিয়ে সামনে কেবলই গ্যাব্রিয়েল বাতিস্তুতা।একই সঙ্গে পেশাদার ক্যারিয়ারেও এটা মেসির ৭৮৯তম গোল।

দুর্দান্ত গোলে আর্জেন্টিনাকে এগিয়ে নেয়ার পর সতীর্থদের সঙ্গে মেসির উল্লাসছবি: Tnani Badreddine/DeFodi Images/picture alliance

মেসির ঠিক পেছনেই ছিলেন রদরিগো দি পল। মেসির পায়ে বল দেখে যেভাবে 'হার্ড ব্রেক' করে সটান দাঁড়িয়ে গেলেন জায়গায়, তাতেও প্রতিপক্ষ কম বিভ্রান্তিতে পড়েনি! বেশিরভাগ ডিফেন্ডারই চোখে চোখে রাখছিলেন ডি পলকেই। কিন্তু আচমকা বক্সের ভেতর ওভাবে ঢুকে গিয়ে বলের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে গোলের নিশানায় পাঠিয়ে দেয়া, এমন সব অবিস্মরণীয় মুহূর্তের জন্ম দিতে পারেন বলেই না তিনি মেসি!

অথচ এই গোলটার আগ পর্যন্তও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বেশ ঘাম ঝরছিল আর্জেন্টিনার। উঁচু শারীরিক গড়ন আর গতি, এই দুইয়েই আর্জেন্টিনাকে বেশ চাপে রেখেছিল অস্ট্রেলিয়া, মেসির গোলের আগের মিনিটেই তো হ্যারি সুটার একটা সুযোগ পেয়েছিলেন গোলের।

একেবারেই খেলার ধারার বাইরে গিয়ে ম্যাচের ৩৫তম মিনিটে আর্জেন্টিনাকে গোল এনে দিয়েছেন মেসি আর তা দেখে মেসির এক সময়ের সতীর্থ পাওলো জাবালেতা রেডিও ধারাভাষ্যে বলেছেন, ‘‘মেসিকে শুধু বলটা দাও, এটাই যথেষ্ট। বক্সের ভেতর কী দারুণ সমন্বিত খেলা দেখা গেল আর নিখুঁত ফিনিশিং।''

প্রথম গোলটা যতটা মেসির কৃতিত্ব, দ্বিতীয় গোলটায় ততটাই অস্ট্রেলিয়ান গোলরক্ষক ম্যাথু রায়ানের নির্বুদ্ধিতা। ব্যাকপাস পা দিয়ে ধরতে গিয়েছিলেন, তখন তার পা থেকে বল কেড়ে নেন রিরিগো ডি পল। দুজনের বল দখলের লড়াইয়েই রায়ান পড়ে যান মাটিতে, ডি পল ফাউল না হওয়া বোঝাতে হাত তুলে দাঁড়িয়ে। তখন জুলিয়ান আলভারেজ আচমকাই বলটা রায়ানের পা থেকে ছিনিয়ে নিয়ে পাঠিয়ে দেন জালে। ম্যাচের ৫৭ মিনিটে দ্বিতীয় গোলটা পেয়ে আর্জেন্টিনা পেয়ে যায় কোয়ার্টার ফাইনালের সুবাস। তরুণ এই ফরোয়ার্ডের বিশ্বকাপে এটা দ্বিতীয় গোল। পোল্যান্ডের বিপক্ষেও গোল করেছিলেন ম্যানচেস্টার সিটিতে খেলা আলভারেজ, যার পরিচিতি মাকড়শা (লা আরানা) হিসেবে!

কোয়ার্টার ফাইনালে আর্জেন্টিনার প্রতিপক্ষ যুক্তরাষ্ট্রকে ৩-১ গোলে হারানো নেদারল্যান্ডসছবি: Francisco Seco/AP/picture alliance

ম্যাচের ৬৫তম মিনিটে ডিয়েগো ম্যারাডোনাকে মনে করিয়ে দেয়ার মতো ড্রিবলিংয়ে মাঝমাঠ থেকে বেশ কয়েকজনকে কাটিয়ে অস্ট্রেলিয়ার বক্স এর ভেতর ঢুকে গিয়েছিলেন মেসি। কিন্তু শেষ মুহূর্তে কর্নারের বিনিময়ে

মেসিকে থামায় অস্ট্রেলিয়া। এক মিনিট পর বক্সের ঠিক বাইরে থেকে বাম পায়ে শট নিয়েছিলেন মেসি, যেটা যায় বারের উপর দিয়ে।

৭২ মিনিটে জুলিয়ান আলভারেজ আর মার্কাস আকুইনাকে তুলে লাউতারো মার্তিনেজ ও নিকোলাস তেগলিয়াফিকোকে নামান কোচ লিওনেল স্কালোনি। লক্ষ্যটা পরিষ্কার, এবার জয়টা মুঠোবন্দি করে ফেলতে হবে। তাই তাজা-দম স্ট্রাইকার আর ডিফেন্ডার নামানো। অন্যদিকে মেসির কৃতিত্বে আর নিজেদের নির্বুদ্ধিতায় দুটো গোল হজম করে অস্ট্রেলিয়া ছন্নছাড়া। তারা কেবলই সময় গুনছে। এমন সময়ে আর্জেন্টিনার ভুল ফের ঢেউ তুললো গ্যালারির ছোট্ট হলুদ অংশে। অস্ট্রেলিয়ার গোলটি আত্মঘাতী, বক্সের বাইরে থেকে ক্রেইগ গুডউইনের নেয়া দূরপাল্লার শট এনজো ফার্নান্দেজের গায়ে লেগে ঢুকে যায় আর্জেন্টিনার গোলবারে। ম্যাচের ৭৭ মিনিটের ঘটনা এটি। গোল জাগিয়ে তোলে অস্ট্রেলিয়াকে। মিনিট দুয়েক পর আজিজ বাহিচ একক প্রচেষ্টায় দারুণভাবে তিনজনকে কাটিয়ে আর্জেন্টিনার ডি বক্সে ঢুকে পড়ার পর কর্নারের বিনিময়রে রক্ষা করেন লিসান্দ্রো মার্তিনেজ।

বদলি ফরোয়ার্ড লাউতারো মার্তিনেজ দুটো দারুণ সুযোগ পেয়েছিলেন দলের গোল-সংখ্যা বাড়িয়ে বিপদমুক্ত করার। কিন্তু দুটো সহজ সুযোগ নষ্ট করে ব্যাবধানটা বাড়াতে পারেননি। মেসিও পেয়েছিলেন গোলসংখ্যা বাড়ানোর সুযোগ, রায়ান পা দিয়ে বলটা বাঁচিয়ে একদম গোলপোস্টের সামনে তুলে দেন মেসির পায়ে। মুহূর্তের বিহ্বলতায় চমকে মেসি বলটা মেরেছেন পোস্টের বাইরে, এমন মিসের পর হতাশার অনুভূতিই বলে দেয় গোলের জন্য তিনি কতটা মরিয়া।

ইরান আর ওয়েলসকে পেছনে ফেলে শেষ ষোলোয় পা রেখেছিল যুক্তরাষ্ট্র, তবে এর বেশি আর এগিয়ে যেতে পারেনিছবি: Martin Meissner/AP Photo/picture alliance

ম্যাচের অন্তিম মুহূর্তে মরণ কামড় বসিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। গারাং কুয়োলের গোলপোস্টের সামনে থেকে নেয়া শটটা এমিলিয়ানো মার্তিনেক যদি বাঁচাতে না পারতেন, তাহলে নিশ্চিতভাবেই খেলা গড়াতো অতিরিক্ত সময়ে। বলটা মার্তিনেজ ধরার পর সতীর্থরা যেভাবে মাটিতে শুয়ে থাকা মার্তিনেজকে জড়িয়ে ধরলেন, তাতেই বোঝা গেল কতটা ভয়ে ছিলেন সেই মুহূর্তে। মার্তিনেজের লম্বা কিকের পরই লম্বা বাঁশিতে শেষ ম্যাচ। ২-১ ব্যবধানে জিতে আর্জেন্টিনা উঠে গেল কোয়ার্টার ফাইনালে আর অস্ট্রেলিয়াকে ধরতে হচ্ছে দেশের বিমান। ডেনমার্ককে বিদায় করে দ্বিতীয় রাউন্ডে এসে আর্জেন্টিনাকেও ভয় ধরিয়ে দিয়েছিল, এই প্রাপ্তি নিয়েই দেশে ফিরবে সকারুরা৷

শেষ আটে ১০ ডিসেম্বর রাতে লুসাইল স্টেডিয়ামে মেসিদের প্রতিপক্ষ নেদারল্যান্ডস। নকআউট পর্বের প্রথম ম্যাচে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ৩-১ গোলে হারিয়ে বেশ সহজেই ডাচরা পা রেখেছে কোয়ার্টার ফাইনালে।

মেমফিস দেপেই ম্যাচের ১০ম মিনিটেই গোল করে এগিয়ে দেন নেদারল্যান্ডসকে।মধ্যবিরতির ঠিক আগে, যোগ করা সময়ে ব্যবধান দ্বিগুন করেন দানি ব্লিন্দ। ম্যাচের ৭৬ মিনিটে যুক্তরাষ্ট্রের হাজি রাইট গোল করে ব্যবধান কমিয়ে আনলেও মিনিট পাঁচেক পর নেদারল্যান্ডসের ডেনজেল ডামফ্রিস গোল করে স্কোরলাইন ৩-১ করে ফেলেন। এরপর আর গোল হয়নি।

ইরান আর ওয়েলসকে পেছনে ফেলে শেষ ষোলোয় পা রেখেছিল যুক্তরাষ্ট্র, তবে এর বেশি আর এগিয়ে যেতে পারেনি। অন্যদিকে ২০১৮ বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতাই অর্জন করতে না পারা নেদারল্যান্ডস পৌঁছে গেছে শেষ আটে৷ অঘটনের বিশ্বকাপে তারা এখনো অপরাজিত। সামনে এখন লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনা, রোমাঞ্চকর এই দ্বৈরথ দেখতে মুখিয়ে ফুটবলপ্রেমীরা। সবশেষ ২০১৪ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে মুখোমুখি হয়েছিল দুই দল, যে ম্যাচটা রোমাঞ্চকর টাইব্রেকারে জিতে ফাইনালে পা রেখেছিল আর্জেন্টিনা।  

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ