স্বর্ণের দাম কমে যাওয়ায় বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন খনিতে উৎপাদন কমে গিয়েছিল৷ কিন্তু এখন স্বর্ণের দাম বাড়তে বাড়তে রেকর্ড ছাড়িয়েছে৷ এর ফলে কি নতুন খনির কাজও শুরু হতে পারে?
বিজ্ঞাপন
একদিকে মার্কিন-চীন সম্পর্কের অবনতি, অন্যদিকে করোনা মহামারির ফলে বিশ্বের নানা প্রান্তে নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে অনেকেই ঝুঁকছেন স্বর্ণের দিকে৷
এর ফলে বেড়েছে চাহিদাও৷ এ বছর স্বর্ণের দাম ২০ শতাংশ বেড়ে ইতিহাসের সর্বোচ্চ হয়েছে৷ বিভিন্ন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রণোদনার ফলে এখন নতুন নতুন খনির দিকে ঝুঁকছেন বিনিয়োগকারীরা৷
এ সপ্তাহেই ২০১১ সালের রেকর্ড ভাঙে স্বর্ণের দাম৷ প্রতি আউন্সে দাম পৌঁছায় এক হাজার ৯৪৪ ডলারে৷ ২০১১ সালে সর্বোচ্চ দাম ছিল আউন্সপ্রতি এক হাজার ৯২১ ডলার৷
স্বর্ণের দাম বাড়ার আরো নানা কারণ রয়েছে৷ মহামারি ও নানা বৈশ্বিক অর্থনৈতিক টানাপড়েনের ফলে ব্যাংকগুলোর সুদের হার ও বন্ডের সুবিধা কমে গেছে৷ ফলে ক্ষুদ্র ব্যক্তিপর্যায়েও অনেকে স্বর্ণকেই বেছে নিচ্ছেন ভবিষ্যতের সঞ্চয় হিসেবে৷
বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান বুলিয়ন ভল্টের গবেষণা বিষয়ক পরিচালক আদ্রিয়ান অ্যাশ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘মূল্যস্ফীতির আশঙ্কা এবং শান্তিকালীন সময়েও অভূতপূর্ব অর্থনৈতিক ঘাটতির ফলে অনেকে নগদ অর্থ বা ক্রেডিটের বিকল্প হিসেবে স্বর্ণকে পছন্দ করছেন৷’’
সবচেয়ে বেশি স্বর্ণের মালিক যে ১০ দেশ
স্বর্ণ মজুদের ক্ষেত্রে শীর্ষ দেশগুলোর একটি তালিকা প্রকাশ করেছে ফোর্বস ম্যাগাজিন৷ তালিকায় শীর্ষ আছে অ্যামেরিকা, আর দশম ভারত৷ ছবিঘরে দেখে নিন কাদের স্বর্ণের পরিমাণ কতো৷
ছবি: picture-alliance/ZUMAPRESS.com/Miami Herald
১০. নেদারল্যান্ডস
নেদারল্যান্ডসের প্রধান ব্যাংকে মজুদ আছে ৬১২ টন স্বর্ণ৷ সম্প্রতি ব্যাংকটি বিপুল পরিমাণ স্বর্ণ যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত এনেছে৷
ছবি: imago/J. Tack
৯. ভারত
ভারতীয়দের স্বর্ণের প্রীতি সর্বজনবিদিত৷ পৃথিবীতে স্বর্ণের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ভোক্তাও দক্ষিণ এশিয়ার দেশটি৷ বর্তমানে ৭৮৭ টন স্বর্ণের মজুদ আছে ভারতের৷
ছবি: dapd
৮. জাপান
বিশ্বের তৃতীয় সর্বোচ্চ অর্থনীতির দেশ জাপানে স্বর্ণের মজুদ আছে ৮৪৬ টন৷ ২০১৬ সালে স্বর্ণ রিজার্ভে সুদের হার শূন্যতে নামিয়ে আনে দেশটি, যার ফলে বিশ্বব্যাপী স্বর্ণের আদান-প্রদান বেড়ে যায়৷
ছবি: DW
৭. সুইজারল্যান্ড
১ হাজার ৪০ টন স্বর্ণের মজুদ আছে সুইজারল্যান্ডের৷ মজুদের পরিমাণের বিচারে সপ্তম অবস্থানে থাকলেও মাথাপিছু মজুদের ক্ষেত্রে দেশটি এক নম্বরে আছে৷ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে ইউরোপের স্বর্ণ বেচাকেনার প্রধান কেন্দ্র ছিল সুইজারল্যান্ড, একইসঙ্গে মিত্রশক্তি ও অক্ষশক্তি উভয়ের লেনদেন ছিল তাদের সঙ্গে৷
ছবি: Reuters/R. Sprich
৬. চীন
চীনে স্বর্ণের মজুদ আছে ২০১১ টন৷ স্বর্ণ মজুদের ক্ষেত্রে পিপলস ব্যাংক অব চায়না ষষ্ঠ অবস্থানে থাকলেও তা দেশটির মোট রিজার্ভের মাত্র ২ দশমিক ৪ শতাংশ৷ বিশ্বব্যাপী কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর হিসাবে স্বর্ণ রিজার্ভে ব্যাংকটির অবস্থান ১০ম৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Schiefelbein
৫. রাশিয়া
গত ছয় বছর ধরে বিশ্বের সবচেয়ে বড় স্বর্ণের ক্রেতা রাশিয়ান সেন্ট্রাল ব্যাংক৷ মোট ২,২২৯ টন স্বর্ণের মজুদ নিয়ে পঞ্চম অবস্থানে আছে দেশটি৷ ২০১৭ সালে ২২৪ টন স্বর্ণ কেনার কারণে চীনকে টপকে পঞ্চম স্থানে আসতে পেরেছে রাশিয়া৷
ছবি: picture-alliance/TASS/S. Bobylev
৪. ফ্রান্স
গত কয়েক বছরে কিছু পরিমাণ বিক্রির পরও স্বর্ণ মজুদে চতুর্থ স্থানে আছে ফ্রান্স৷ বর্তমানে ইউরোপীয় দেশটির স্বর্ণ মজুদের পরিমাণ মোট ২,৪৩৬ টন৷
ছবি: picture-alliance/imagebroker/S. Randebrock
৩. ইটালি
বহু বছর ধরে একই পরিমাণ স্বর্ণের মজুদ বজায় রেখেছে ইটালি৷ বর্তমানে তাদের ২,৪৫১ দশমিক ৮ টন স্বর্ণের মজুদ রয়েছে৷ ডলারের দর উত্থান-পতনের বিপরীতে নিজেদের অবস্থান ঠিক রাখার স্বার্থে মজুদ ধরে রাখার কথা বলে থাকে দেশটি৷
ইউরোপীয় দেশ হিসাবে সবচেয়ে বেশি স্বর্ণের মজুদ আছে জার্মানিতে৷ দেশটির মোট স্বর্ণের মজুদ ৩,৩৭১ টন৷ ২০১৭ সালে দেশটি ফ্রান্স ও অ্যামেরিকার দু’টি ব্যাংক থেকে ৬৭৪ টন স্বর্ণ দেশে ফিরিয়ে এনেছে৷
ছবি: picture-alliance / dpa
১. অ্যামেরিকা
স্বর্ণ মজুদের ক্ষেত্রে অনেক বছর ধরে বিশ্বব্যাপী সর্বোচ্চ অবস্থানে আছে অ্যামেরিকা৷ বর্তমানে দেশটির মোট ৮,১৩৩ দশমিক ৫ টন স্বর্ণের মজুদ রয়েছে৷ তালিকার পরবর্তী তিন দেশের স্বর্ণের পরিমাণ অ্যামেরিকার পরিমাণের প্রায় সমান৷
ছবি: picture-alliance/ZUMAPRESS.com/Miami Herald
10 ছবি1 | 10
নতুন খনির সন্ধানে
ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিলের হিসেব দেখাচ্ছে গত তিন দশক ধরেই নতুন স্বর্ণের খনি আবিষ্কার কমছে৷ কিন্তু স্বর্ণের দাম বাড়ায় খনি মালিকেরা উৎপাদন বৃদ্ধির দিকেও মনোযোগ দিয়েছেন৷ গত কয়েক বছরের কাটছাঁটের পর এখন নতুন খনির সন্ধানেও ঝুঁকছেন তারা৷ নতুন খনির অনুসন্ধানে ২০১২ সালে ১০ বিলিয়ন ডলার খরচ হলেও এরপর কমতে কমতে তা প্রায় অর্ধেকে এসে দাঁডিয়েছিল৷
গত কয়েক দশকে নতুন আবিষ্কার হওয়া খনিগুলোর বেশিরভাগকেই বিশেষজ্ঞরা ‘বিশ্বমানের' বলতে রাজি নন৷ কোনো খনিতে ৫০ লাখ আউন্স স্বর্ণ মজুদ থাকলে সেটিকে ব্যবসাসফল খনিতে পরিণত করা যায়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সেগুলো থেকে অন্তত আড়াই লাখ আউন্স স্বর্ণ উৎপাদন করা যায়৷
বর্তমানে স্বর্ণখনির অনুসন্ধান কাজে অস্ট্রেলিয়া, ক্যানাডা এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ করে৷ কিন্তু এখন ধীরে ধীরে ল্যাটিন অ্যামেরিকা ও আফ্রিকায় নতুন খনি খোঁজার দিকেও ঝুঁকছেন বিনিয়োগকারীরা৷