1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

স্বর্ণ কেলেঙ্কারি: ‘ক্লারিক্যাল মিসটেক' না সংঘবদ্ধ চক্র

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
১৮ জুলাই ২০১৮

রিজার্ভ চুরির পর এবার বাংলাদেশ ব্যাংক সমালোচনার মুখে পড়েছে ভল্টে রাখা স্বর্ণের হেরফের নিয়ে৷ চাকতিকে শতকরা ৮০ ভাগ সোনা ৪০ ভাগ হয়ে যাওয়া বা ২২ ক্যারেটের সোনা ১৮ ক্যারেট হওয়া নিয়ে চলছে বিতর্ক৷

Deutschland BdT Geldmuseum
ছবি: picture-alliance/AP Photo/M. Probst

বিষয়টি নিয়ে প্রতিবেদন দিয়েছে সরকারেরই আরেকটি সংস্থা৷ সরকারের শুল্ক গোয়েন্দা অধিদপ্তরের প্রতিবেদনের বলা হয়েছে, ভল্টে জমা রাখা ৩ কেজি ৩০০ গ্রাম ওজনের সোনার চাকতি ও আংটি মিশ্র বা শংকর ধাতু হয়ে গেছে৷ সেখানে শতকরা ৮০ ভাগ স্বর্ণ ছিল৷ পরে সেখানে শতকরা ৪০ ভাগ স্বর্ণ পাওয়া গেছে৷ এছাড়া ২২ ক্যারেট সোনা হয়ে গেছে ১৮ ক্যারেট!

২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে অনুসন্ধান চালায় শুল্ক গোয়েন্দা অধিদপ্তর৷ দৈবচয়ন ভিত্তিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে রক্ষিত ৯৬৩ কেজি সোনা পরীক্ষা করে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই অনিয়ম পাওয়া যায়৷ প্রতিবেদনটি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড হয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে দেওয়া হয়েছে বলে সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে৷

‘২২ ক্যারেটের সোনা ১৮ ক্যারেট হবে, এটা অসম্ভব’

This browser does not support the audio element.

মঙ্গলবার প্রতিবেদনটি প্রকাশ হওয়ার পর বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃপক্ষ দাবি করে, ‘শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগের দেয়া সোনা জমা রাখার সময় খাঁটি সোনা ৪০ শতাংশই ছিল৷ কিন্তু ইংরেজি বাংলার হেরফেরে সেটা ৮০ শতাংশ লিখে ভুলবশত নথিভুক্ত করা হয়৷ বাংলাদেশ ব্যাংকের তালিকাভুক্ত শখ জুয়েলার্সের স্বর্ণকার গিয়াসউদ্দিন এই ভুলটি করেছিলেন৷ চাকতিতে ইংরেজিতে ৪০ শতাংশ সোনা লেখা ছিল৷ কিন্তু এটা ভুলে ৮০ লেখা হয়েছিল৷ এটা ‘ক্লারিক্যাল মিসটেক'৷'

বাংলাদেশ ব্যাংকের কারেন্সি অফিসার আওলাদ হোসেন চৌধুরী ২২ ক্যারেটের জায়গায় ১৮ ক্যারেট হওয়ার বিষয়টির ব্যাপারে বলেন, ‘‘দু'টি ভিন্ন যন্ত্রে পরিমাপের কারণে এ রকম হয়েছে৷ শুল্ক গোয়েন্দারা যখন সোনা জমা রাখেন, তখন হয়ত তাঁদের মেশিনে ২২ ক্যারেট দেখিয়েছিল, কিন্তু আমাদের মেশিনে সেটি ১৮ ক্যারেটই হয়েছিল৷''

এদিকে অর্থ প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান বুধবার সচিবালয়ে এক জরুরি বৈঠক শেষে বলেন,‘‘জনগণের সম্পদ রক্ষায় বাংলাদেশ ব্যাংকের সামান্য গাফিলতি পেলে সে দায় সরকারের৷ বিষয়টিকে ছোট করে দেখছি না৷ সামান্য ফাঁকফোকড় দিয়ে বড় ঘটনা ঘটতে পারে৷ এতে ব্যাংকের কারও গাফিলতি পেলে সে দায় সরকারকে নিতে হবে৷''

‘বাংলাদেশ ব্যাংকে আরো একটি ন্যাক্কারজনক ঘটনা প্রকাশ পেল’

This browser does not support the audio element.

তিনি আরো বলেন, ‘‘সব সোনা ঠিক আছে, ঘরেই আছে৷ এ সম্পর্কে পরিষ্কার হয়ে গেছি৷ যে পরিমাণের কথা বলা হয়েছে, ৯৬৩ কেজি নাকি – তা মোটেই ঠিক নয়৷জনগণ বা যে কোনো সংস্থায় গিয়ে দেখতে পারে৷ বাংলাদেশ ব্যাংকের দরজা খোলা আছে৷ ৪০ আর ৮০ নিয়ে ভুল হতেই পারে৷ আগে সোনা মাপা হতো মান্ধাতা আমলের নিক্তি দিয়ে৷ এখন আধুনিক পরিমাপক দিয়ে মাপা হয়৷ তাতে দশমিক ০০০০১ কম-বেশি হয়৷''
 

এদিকে এই ঘটনায় নাম আসা বাংলাদেশ ব্যাংকের তালিকাভুক্ত স্বর্ণকার ও শখ জুয়েলার্সের মালিক গিয়াসউদ্দিন ডয়চে ভেলের কাছে দাবি করেন, ‘‘চাকতিতে কী পরিমাণ সোনা আছে তা লেখার দায়িত্ব আমার ছিল না৷ আমি সেটা লিখিও না৷ সোনা ওজন করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের অত্যাধুনিক মেশিন আছে৷ ওই মেশিন বাতাসের চাপও আলদা করতে পারে৷ আমার নাম বলা হলেও আমি সোনা পরিমাপ করি নাই৷ আমি শুধু সোনার গুণাগুণ পরীক্ষা করেছি৷ আমরা কস্টি পাথর দিয়ে প্রচলিতভাবে সোনা পরীক্ষা করি৷ আমাদের পরীক্ষায় ১৮ ক্যারেটের সোনা পাই৷ আধুনিক মেশিন নিয়ে পরীক্ষা করলে সামান্য হেরফের হতে পারে৷ তবে ২২ ক্যারেটের সোনা ১৮ ক্যারেট হবে, এটা অসম্ভব৷ এত হেরফের সম্ভব নয়৷ ২২ ক্যারেট বড়জোড় ২১ ক্যারেট হতে পারে৷''

তিনি আরো বলেন, ‘‘আমাকে গত জানুয়ারি মাসে এ নিয়ে শুল্ক গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জিজ্ঞাসাবাদও করেছেন৷ আমি তাঁদের এ সব কথাই জানিয়েছি৷''

২০১৩ সাল থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের তালিকাভুক্ত এই স্বর্ণপরীক্ষক বলেন, ‘‘আদালতের নির্দেশে চোরাচালানসহ বিভিন্ন কারণে আটক সোনা বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা রাখা হয়৷ আবার আদালতের নির্দেশে মালিককে ফিরিয়ে দেয়া হয় বা নিলাম করা হয়৷''

শুল্ক গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা রাখা ২২ ক্যারেটের অধিকাংশ সোনাই ১৮ ক্যারেট দেখানো হয়েছে৷'

আজকের খবর

01:45

This browser does not support the video element.

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নিবার্হী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বাংলাদেশ ব্যাংকে আরো একটি ন্যাক্কারজনক ঘটনা প্রকাশ পেল৷ আর সরকারেরই আরেকটি সংস্থা শুল্ক গোয়েন্দা অধিদপ্তর তদন্ত করে এই কেলেঙ্কারির ঘটনা উদঘাটন করেছে৷ কিন্তু এরপর আমরা দেখছি অস্বীকার করার প্রবণতা৷ বাংলাদেশ ব্যাংক অস্বীকার করছে৷ আমরা আগে দেখেছি সরকারি প্রতিষ্ঠান সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অস্বীকার করে৷ কিন্তু এবার সরকারের একটি প্রতিষ্ঠানের তদন্ত প্রতিবেদন আরেকটি প্রতিষ্ঠান প্রত্যাখ্যান করছে, যা দুঃখজনক৷''

তাঁর কথায়, ‘‘অস্বীকার না করে সরকারের উচিত হবে একটি নিরপেক্ষ তদন্ত কমিশন গঠন করে স্বর্ণ নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকে আসলে কী ঘটেছে, তা বের করে প্রকৃত অবস্থা তুলে ধরা৷ এরইমধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিয়ে এক ধরনের আস্থাহীনতা তৈরি হয়েছে৷ নতুন করে কোনো আস্থাহীনতা তৈরি করা ঠিক হবে না৷ তাই যা ঘটেছে তা প্রকাশ করে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন৷''

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ