মহালয়ার মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে দেবী পক্ষ। আর এক সপ্তাহ পরেই শুরু বাঙালি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব- দুর্গাপূজা৷ বাংলাদেশে এবারও পূজার আয়োজন চলছে সাড়ম্বরেই৷
বিজ্ঞাপন
পূজা শুরুর আগেই দেশের নানা স্থানে ঘটে প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনা৷ এবারও নানা জায়গায় গত এক মাসে এমন অনেক ঘটনা ঘটেছে৷ কিন্তু অন্য বছরের তুলনায় এবার তা অনেকটাই কম বলে মনে করছেন হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাসগুপ্ত। হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের হিসাব অনুযায়ি এখন পর্যন্ত ১২ থেকে ১৫টি জায়গায় প্রতিমা ভাঙচুর হয়েছে৷ ঘটেছে সংখ্যালঘুদের উপর হামলার ঘটনাও৷
এই পরিস্থিতিতে এবার পূজার প্রস্তুতি কেমন? জানতে চাইলে রানা দাসগুপ্ত ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘অন্য বছরের তুলনায় এবার পরিস্থিতি ভালো৷ কিন্তু কয়েক জায়গায় প্রতিমা ভাঙচুর তো হয়েছে৷ সেগুলো আমাদের মনে রাখতে হবে৷ কক্সবাজারের কুতুপালংয়ে খ্রিষ্টান দুই নারী ও দুই শিশুকে হত্যা, খুলনায় একজন হিন্দু নেতাকে হত্যা করা হয়েছে৷ তাকে মাদক ব্যবসায়ি বলে হত্যা করা হয়েছে। আমরা খুলনায় গিয়ে খোঁজ নিয়ে জেনেছি, তিনি মাদকের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন৷ আইন শৃঙ্খলা বাহিনী তাকে মাদক ব্যবসায়ি বললেও আমরা তেমন তথ্য পাইনি৷ এই ঘটনা জাতীয়ভাবে প্রভাব না ফেললেও স্থানীয় সংখ্যালঘুদের মধ্যে চরম আতঙ্কের সৃষ্টি করেছে সন্দেহ নেই৷''
রানা দাসগুপ্ত
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কয়েকদিন আগে ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার ভবানীপুরের মহেষপুর গ্রামে রাতের আঁধারে মাওরা বাড়ি মন্দিরের প্রতিমা ভাঙচুর হয়েছে৷ চাঁদপুর শহরের পুরান বাজারে সার্বজনীন দুর্গা মন্দিরে প্রতিমা ভাঙচুর হয়েছে৷ এ ঘটনায় পুলিশ ৫ জনকে আটক করলেও মূল অপরাধীরা ধরা পড়েনি বলে অভিযোগ হিন্দু নেতাদের৷ মৌলভীবাজার সদর উপজেলার গিয়াসনগর ইউনিয়নের কদুপুরে ভৈরব মন্দিরে প্রতিমা ভাঙচুর করা হয়েছে৷ এ ঘটনায়ও জড়িত থাকার অভিযোগে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ৷
কলকাতা জুড়ে দুর্গা পূজার আমেজ
বিশ্বের সব বাঙালির জন্যই দুর্গাপূজা খুব বড় উৎসব, যা ঈঙ্গিত করে অশুভের বিরুদ্ধে শুভ শক্তির জয়৷ পাঁচদিন ধরে চলে বাঙালির এই দুর্গাপুজো৷ খাওয়া-দাওয়া, হই হুল্লোড়ের পাশে ছোট বড় মণ্ডপগুলোতে ভিড় জমে প্রতিমা দর্শনের জন্য৷
ছবি: DW/ P. Tiwari
বনেদি পুজোর চালচিত্র
কলকাতার বনেদি পুজোর চেহারা মোটামুটি একই আছে৷ পলাশীর যুদ্ধের পরে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কর্তা রবার্ট ক্লাইভের উপস্থিতিতে রাজা নবকৃষ্ণ দেবের বাড়িতে শুরু হয়েছিল শতাব্দী প্রাচীন দুর্গাপুজো৷ শোভাবাজার ছোট রাজবাড়ির দুর্গা সাজের অপেক্ষায়৷
ছবি: DW/P. Samanta
গন্তব্য যখন মণ্ডপ
শহর কলকাতার প্রথম বারোয়ারি পূজা ১৯১০ সালে শুরু৷ আদিগঙ্গার তীরে বলরাম বসু ঘাট অঞ্চলেই সেই বারোয়ারির সূচনা৷ শতাব্দীপ্রাচীন সেই ঐতিহ্য মেনেই বাঙালির বারোয়ারি পুজোর রমরমা আজ৷
ছবি: DW/P. Samanta
নিরাপত্তার জন্য
বারোয়ারি পুজোর প্রধান লক্ষ্য দর্শক৷ কলকাতার শ্রেষ্ঠ বারোয়ারি পুজোগুলো মানুষ টানার জন্য আয়োজনে নিয়ে আসে নানা থিম ও বিষয়বৈচিত্র্য৷ তাই পথে মানুষের ঢল নামার আগেই বাড়তি সতর্কতা নেওয়া হয়৷
ছবি: DW/P. Samanta
দু’দণ্ড অবসর
পুজোর চারদিন কলকাতার অন্য রূপ৷ ভিড়ের ঠেলায় শহরে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়৷ পায়ে হাঁটা ছাড়া উপায় থাকে না৷ তবে ছোট গলিতে রিকশার বিকল্প থাকে না৷ তাই কাজের ফাঁকে দু’দণ্ড জিরিয়ে নিচ্ছেন চালক৷
ছবি: DW/P. Samanta
ঢাকে পড়ল কাঠি
বাঙালির পুজো ঢাক ছাড়া সম্পূর্ণ হয় না৷ নিজের গ্রাম ছেড়ে এখন শহরেই ঢাকিদের বাস৷
ছবি: DW/P. Samanta
আলোর রমরমা
বাঙালির দুর্গোৎসব মানে সারা শহর জুড়ে আলোর রোশনাই৷
ছবি: DW/P. Samanta
মণ্ডপসজ্জা
অনেক শিল্পীর উদ্ভাবনী ক্ষমতা আর পরিশ্রমের ফসলই পুজোর এই মণ্ডপসজ্জা৷ দর্শকদেরও তাই কলকাতার উত্তর থেকে দক্ষিণে দিনভর চলে সেরা মণ্ডপ ও প্রতিমার খোঁজ৷ কলেজ স্কোয়ারের একটি পুজো মণ্ডপ৷
ছবি: DW/P. Samanta
বিতর্কও সঙ্গ ছাড়ে না
এবার পুজোয় ডাক্তারদের অসুর সাজিয়ে বিতর্ক তুলেছে মোহাম্মদ আলী পার্ক৷ পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন চিকিৎসামহল থেকে এর তীব্র বিরোধিতা করা হয়েছে৷ স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে বিতর্কের অবসান ঘটেছে অবশেষে৷
ছবি: DW/P. Samanta
আড্ডার আমেজ সর্বত্র
আড্ডাপ্রিয় বাঙালির কাছে পুজো মানেই বাড়তি আড্ডার সুযোগ৷ পাড়ায় পাড়ায় বসে যায় আড্ডা-গল্পের জমজমাট আসর৷ বাদড়া বারোয়ারি তলার ঘরোয়া আমেজে তাই দেখা গেল৷
ছবি: DW/P. Samanta
চেনা ভিড়
ভিড়েই কলকাতাকে নতুন করে চেনা যায়৷ তাই দুর্গাপুজোই সেরা সময়৷ আবহাওয়ার খবর অনুযায়ী, এবার আছে নিম্নচাপের ভয়৷ তবুও মানুষের ঢল আটকানো যাবে না৷ সব প্রতিকূলতা অগ্রাহ্য করে মানুষের এহেন উৎসাহকে কুর্নিশ জানাতেই হয়৷
ছবি: DW/P. Samanta
মুখ ঢেকে যায় বিজ্ঞাপনে
বিজ্ঞাপনের সম্ভার এ শহরে নতুন নয়৷ কিন্তু পুজোর সময় বাড়তি বিজ্ঞাপন চোখ ধাঁধিয়ে দেয় কলকাতাবাসীর৷
ছবি: DW/P. Samanta
আলো যখন শিল্প
দুর্গাপুজো মানে শিল্পের কদর৷ বাদ যায় না আলোকশিল্পীরাও৷ বিভিন্ন জেলার আলোকশিল্পীরাও তাঁদের আলোকসামগ্রী নিয়ে হাজির হন শহরে৷ কলকাতার রাতকে আলোকোজ্জ্বল করতে তাঁদের জুড়ি নেই৷
ছবি: DW/P. Samanta
পুজো মানেই পেটপুজো
ঘণ্টার পর ঘণ্টা হাঁটার পর একটু জিরিয়ে নেওয়া আর পেটপুজো করার রীতি কলকাতাকে দিয়েছে অফুরন্ত প্রাণশক্তি৷ রাস্তার ফুটপাত হোক, বা দামি রেস্তোরাঁ — পেটপুজোর ঢালাও আয়োজনে কারও কার্পণ্য থাকে না৷
ছবি: DW/P. Samanta
13 ছবি1 | 13
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের হিসেব অনুযায়ী, এবার সারাদেশে ৩১ হাজার মণ্ডপে পূজা হচ্ছে৷ এবার ঢাকায় পূজা হচ্ছে ২৩৭টি মণ্ডপে৷ পূজামণ্ডপগুলোতে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সাড়ে তিন লাখ সদস্য নিয়োজিত থাকবেন৷ কয়েকদিন আগে হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল জানিয়েছেন, প্রত্যেকটি পূজামণ্ডপে নিরাপত্তায় পুলিশ, র্যাব, আনসার ও গোয়েন্দা সংস্থাসহ আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা উপস্থিত থাকবেন৷
মাসুদুর রহমান
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার শফিকুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এবার ঢাকা মহানগরীর পূজামণ্ডপে সিসিটিভি, আর্চওয়ে ও মেটাল ডিটেক্টর থাকবে৷ রাজধানীতে প্রায় ২০ হাজার আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন থাকবে৷ এর বাইরে সাদা পোশাকের গোয়েন্দারা পূজা কমিটির সদস্যদের নিয়ে সার্বক্ষণিক মনিটরিং করবে৷''
রানা দাসগুপ্ত বলছিলেন, ‘‘অন্য বছরের মতো এবারও আমরা আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর উপর আস্থা রাখতে চাই৷ তাদের আমরা বারবার বলেছি, তারাও আমাদের আশ্বস্ত করেছে৷ আমরা আশ্বস্ত হতে চাই৷ কিন্তু পূজা ঘিরে কেউ কোন চক্রান্ত করছে কি-না তা তো আমরা জানি না৷ আইন শৃঙ্খলা বাহিনী আমাদের যেভাবে বলছে, আমরা সেভাবেই অবহিত হচ্ছি৷ তাদের আন্তরিকতা আছে, আমরা সেটা আরো ভালোভাবে দেখতে চাই৷''
২০১৯ সালের দেবীপক্ষের সূচনা হবে ২৮ সেপ্টেম্বরে মহালয়া থেকে৷ দুর্গাপূজার মূল উদযাপন শুরু হবে ৩ অক্টোবর, অর্থাৎ পঞ্চমীতিথি থেকেই৷
ছবি: Jibon Ahmed
খুঁটিপূজা সম্পন্ন
দেবীপক্ষের বেশ কিছুদিন আগে থেকেই বিভিন্ন জায়গায় করা হয় খুঁটিপূজা৷ পূজার জন্য নির্দিষ্ট যে জায়গা, সেখানেই মণ্ডপের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের মাধ্যমে করা হয় এই পূজা৷ কলকাতার বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পূজা কমিটি বা ক্লাবে শুরু হয়ে গেছে এই খুঁটিপূজার হিড়িক৷
ছবি: DW/Payel Samanta
তুলির শেষ মুহূর্তের টান
দুর্গাপূজার দিন যত ঘনিয়ে আসে, তত বাড়তে থাকে উত্তর কলকাতার পাড়া কুমোরটুলির খ্যাতি৷ উঠতি চিত্রগ্রাহক থেকে জনসাধারণের সোশাল মিডিয়া- সর্বত্র দেখা যায় প্রতিমা নির্মাণের জন্য পরিচিত এই পাড়ায় শেষ মুহূর্তের কাজের দৃশ্য ধরে রাখার প্রবণতা৷
ছবি: DW/ P. Tiwari
পূজার ওপর বসবে ট্যাক্স?
কলকাতায় প্রতিমা ও মণ্ডপ তৈরির কাজ চলছে জোর কদমে৷ এর মধ্যেই কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রকের অধীন আয়কর বিভাগের নির্দেশ, কলকাতার বড় বড় পূজা কমিটিকে তাদের খরচের হিসেব দিতে হবে৷ এবিষয়ে পশ্চিমবঙ্গের মূখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমরা আমাদের জাতীয় উৎসব নিয়ে গর্ব করি৷ কোনো পূজাতে ট্যাক্স বসানো হোক আমি চাই না৷ এটা সংগঠকদের উপর বাড়তি বোঝা হবে৷ তাই দুর্গাপূজা কমিটির উপর কোনো ট্যাক্স বসানো চলবে না৷’’
ছবি: DW/Payel Samanta
তারকাদের পূজা
কলকাতার বড় বড় দুর্গাপূজার মধ্যে বেশ কিছুই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে সেই পূজায় বিভিন্ন তারকাদের উপস্থিতির জন্য৷ ক্রিকেটার সৌরভ গাঙ্গুলির পাড়ার পূজা বেহালার অন্যতম আকর্ষণ হয়ে ওঠে এসময়৷ এছাড়া, বড় কোনো সংস্থা তাদের দুর্গাপূজায় ভিড় টানতে নামী তারকাদের নিজেদের ‘ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর’ হিসাবে বেছে নেন৷ এবারের পূজাতেও এই ধারা অব্যাহত থাকবে সেই ধারনা করা যায়৷
ছবি: DW/Prabhakar Mani Tewari
কীভাবে সাজবে মহানগরী?
কলকাতার বিখ্যাত দুর্গাপূজাগুলিতে ভিড় বাড়ে থিম বা বিষয়বস্তুর অভিনবত্বের ফলে৷ কোনো জায়গায় ‘থিম’ হয় প্রাকৃতিক দুর্যোগ, কোনো বিশেষ ধাতুর প্রতিমা বা কোনো বিশেষ আবহ৷ এই সবের সাথে থাকে পূজাপ্রাঙ্গণের পাশে নামীদামী খাবারের দোকানের স্টল৷ বিভিন্ন ধরনের আলো ও সঙ্গীতে মোড়া এই মণ্ডপগুলি পূজার দিনগুলিতে পাড়াগুলিকে অন্য চেহারা দেয়৷
ছবি: Reuters/R. De Chowdhuri
কলকাতার বাইরে যে দুর্গাপূজা
দুর্গাপূজা কেবলই পশ্চমবঙ্গ বা কলকাতাকেন্দ্রিক উৎসব নয়৷ ভারতে বাঙালি অধ্যুষিত অঞ্চল, যেমন দিল্লির চিত্তরঞ্জন পার্ক বা এলাহাবাদ বা আসাম-ত্রিপুরার একাধিক শহর, সেখানেও দেখা যায় পূজা ঘিরে ব্যাপক উত্তেজনা৷ কিন্তু শুধু ভারতেই নয়, বিপুল উৎসাহে দুর্গাপূজা পালিত হয় বাংলাদেশেও৷ অ্যামেরিকা, যুক্তরাজ্য বা ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়া- প্রায় সব দেশেই সেখানকার বাঙালি বাসিন্দাদের মধ্যে থাকে দুর্গাপূজা উদযাপনে উৎসাহ৷
ছবি: DW/Prabhakar Mani Tewari
7 ছবি1 | 7
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মুখপাত্র ও উপ-কমিশনার মাসুদুর রহমান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এবার মণ্ডপের আশপাশে ইভটিজারদের বিরুদ্ধে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী সজাগ থাকবে৷ এছাড়া মহিলা স্বেচ্ছাসেবক দল, ফায়ার সার্ভিস ও নৌ-পুলিশ উপস্থিত থাকবে৷ পূজার সময় বিদ্যুৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সংশ্লিষ্টদের বলা হয়েছে৷ এছাড়া জরুরি প্রয়োজনে ‘৯৯৯' সার্ভিস আরও কার্যকর থাকবে৷ যে কেউ চাইলে ফোন দিতে পারবেন৷''