ইইউ-তে খাদ্যপণ্যের ওপর লেবেল সাঁটার সময় কথাটা মনে রাখতে হয়, কেননা ওয়াইন বা চিজ বা সসেজ খেতে কেমন হল, তার চেয়েও বড় কথা, সেটা সত্যিই ওমুক দেশের তমুক জায়গার ওয়াইন বা চিজ কিংবা সসেজ কিনা?
বিজ্ঞাপন
‘জিওগ্র্যাফিকাল ইনডিকেশন অ্যান্ড ট্র্যাডিশনাল স্পেশ্যালিটিজ' অর্থাৎ ভৌগোলিক পরিচয়চিহ্ন এবং প্রথাগত সুখাদ্যের ব্যাপারে ইউরোপীয় ইউনিয়নের তিন-তিনটি স্কিম আছে৷ প্রথমটি হল প্রোটেক্টেড ডেজিগনেশন অফ অরিজিন বা পিডিও; দ্বিতীয়টি, প্রোটেক্টেড জিওগ্র্যাফিকাল ইনডিকেশন বা পিজিআই; এবং ট্র্যাডিশনাল স্পেশ্যালিটিজ গ্যারান্টিড বা টিএসজি৷
২০১২ সালের নীতি ও আইন অনুযায়ী এই ভাগাভাগি৷ উদ্দেশ্য হল: একটি বিশেষ এলাকায় যে পণ্য উৎপাদিত হয়েছে, শুধু সেই পণ্যই সেই এলাকার নাম বহন করতে পারবে – অবশ্যই বাণিজ্যিক কারণে৷ একে এক ধরনের ট্রেডমার্ক বা কপিরাইট বললে বোধহয় সকলে বুঝতে পারবেন, যার আদত আইনটি ১৯৯২ সাল থেকে চালু৷
জার্মানরা মাংস খেতে বেশি ভালোবাসেন
জার্মানরা প্রায় প্রতিদিনই মাংস খায় যদিও ডাক্তারদের মতে, কেউ দিনে ১০০ গ্রামের বেশি মাংস খেলে তাঁর হৃদরোগের ঝুঁকি এবং পাকস্থলীর ক্যানসারের ঝুঁকি বেড়ে যায়৷
ছবি: aquariagirl1970 - Fotolia.com
প্রতিদিন মাংস
জার্মানদের খাবারের তালিকায় প্রায় প্রতিদিনই মাংস থাকা চাই৷ মাংস রান্না বা সেদ্ধ অবস্থায়, এছাড়া সসেজ, সালামি, হ্যাম – কোনো না কোনোভাবে তাঁদের খাবার টেবিলে থাকে মাংস৷ তবে অতিরিক্ত মাংস খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয় এবং এতে নানা সমস্যা দেখা যায়, সে কথা জেনেও তাঁরা মাংস পছন্দ করেন৷
ছবি: picture-alliance/landov
সপ্তাহে ৬০০ গ্রাম মাংস
একজন প্রাপ্তবয়স্ক জার্মান গড়ে দিনে ১৫০ গ্রাম মাংস খান, অর্থাৎ সপ্তাহে যা ১০০০ গ্রামেরও বেশি৷ অথচ ডাক্তাদের মতে, একজন মানুষ সপ্তাহে ৬০০ গ্রাম মাংস খেতে পারেন এবং এর বেশি খাওয়া একেবারেই উচিত নয় যদি সে মাংস ‘রেড মিট’ হয়৷ গরু, ছাগল, শূকর, ভেড়া এবং ঘোড়ার মাংসকে ‘রেডমিট’ বলা হয়৷
ছবি: Fotolia/stockcreations
ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়
ডাক্তারদের মতে, কেউ দিনে ১০০ গ্রামের বেশি ‘রেডমিট’ খেলে তাঁর হৃদরোগের ঝুঁকি এবং পাকস্থলীর ক্যানসারের ঝুঁকি বেড়ে যায়৷ সে তুলনায় সাদা মাংস, অর্থাৎ মুরগি বা পাখির মাংস খেলে ঝুঁকি অনেক কম৷
ছবি: picture alliance/dpa
পরিমিত পরিমাণ
মাংসতে রয়েছে প্রোটিন, আয়রন এবং ভিটামিন ‘বি’৷ জার্মানির পট্সডাম রেব্র্যুক-এর খাদ্য গবেষণা ইন্সটিটিউটের পুষ্টি বিশেষজ্ঞ ড.গিজেলা ওলিয়াস বলেন, রেডমিট হৃদরোগ এবং পাকস্থলীর ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায় ঠিকই৷ তবে মাংসের তৈরি সসেজ কিন্তু এই ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয় আরো বেশি৷
ছবি: picture alliance/chromorange
প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মিটকাটার
জার্মান মাংসের দোকানের কর্মীরা প্রায় সকলেই প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত৷ এখানে যে কোনো জায়গায় কাজ করতে গেলে সে বিষয়ে প্রশিক্ষণ থাকতে হয় – তা সে মাংস কাটার কাজ হোক, অথবা অন্য কোনো কাজ৷
ছবি: DW
গ্রিল মাংস
আগুনে পোড়ানো বা গ্রিল করা রসালো মাংস দেখতে যেমন লোভনীয়, তেমন খেতেও দারুণ মজা৷ তাই গ্রীষ্মকালে জার্মানরা প্রায়ই গ্রিল পার্টির আয়োজন করেন, যেখানে প্রচুর পরিমাণে মাংস খাওয়া হয়৷
ছবি: DW/K.Sacks
আরো গ্রিল
নানাভাবে বিভিন্ন পশুর বিভিন্ন অংশের মাংস গ্রিল করা হয়৷ তবে জার্মানরা বেশিরভাগই গ্রিল করেন শূকরের মাংস৷ এসব লোভনীয় গ্রিল দেখে কারো কি মনে থাকার কথা যে, একজন মানুষের দিনে মাত্র ১০০ গ্রাম মাংস খাওয়া উচিত?
ছবি: DW/K.Sacks
দামে সস্তা
গরু বা খাসির মাংসের তুলনায় শূকরের মাংস দামের দিক দিয়ে অনেক সস্তা৷ আর সেজন্যই হয়ত শূকরের মাংস জার্মানিতে বেশি খাওয়া হয়ে থাকে৷ এবং সেটা হয়ে থাকে নানাভাবেই!
ছবি: picture alliance / Fotoagentur Kunz
পাউরুটির সাথেও মাংস
জার্মানরা সকালের নাস্তা বা রাতে রুটির সাথেও মাংসের সসেজ বা মাংসের স্লাইস খান৷ এছাড়া, বিভিন্ন দোকানে, ক্যাফেতে নানা ধরনের রুটির মধ্যে ‘স্যান্ডউইচ’ আকারে মাংস ভরে খাবারও চল আছে জার্মানিতে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ড্যোনার কাবাব
জার্মানিতে অনেক তুর্কি রেস্তোরাঁ আছে এবং এসব রেস্তোরাঁর বেশিরভাগ খাবারই মাংস দিয়ে তৈরি৷ বিশেষ করে ‘ড্যোনার কাবাব’ তরুণদের কাছে বেশ প্রিয়৷ এটা একরকম পাতলা রুটির মধ্যে সবজি এবং গ্রিল করা মাংস দিয়ে তৈরি করে হয়৷ বলা বাহুল্য, জার্মানিতে ৪০ লাখ মুসলমানের বাস, যাঁদের মধ্যে বেশিরভাগই এসেছেন তুরস্ক থেকে৷
হালাল মাংস
জার্মানিতে তুর্কি দোকানগুলোতে হালাল মাংসও পাওয়া যায়৷ সেসব দোকানে বিভিন্ন দেশ থেকে আসা মুসলমানসহ জার্মানরাও মাংস কেনেন৷
ছবি: aquariagirl1970 - Fotolia.com
11 ছবি1 | 11
এই সব আইনের বলে ইউরোপ জুড়ে বিভিন্ন সুরা, চিজ, হ্যাম, সসেজ, অলিভ, ভিনিগার এমনকি পাঁউরুটি, ফলমূল কিংবা মাংসও সুরক্ষিত৷ গর্গনজোলা চিজ বা পার্মিজানো চিজ, কামমবেয়ার চিজ, শ্যাম্পেন ওয়াইন – এ গুলো সবই তাদের এলাকার নাম বহন করছে – গর্বভরে৷ ফ্রান্সের ওভ্যারনিয়ঁ অঞ্চলের রকফোর শহরের কাছের পাহাড়ের গুহায় রেখে যে চিজ তৈরি করা হয়, শুধু তাই রকফোর চিজ হিসেবে পরিচিতি পাবে৷
জার্মানির কোনো সুপারমার্কেটের চিজ ডিপার্টমেন্টে গেলেই এই সব নাম করতে হয় কিংবা শুনতে হয়৷ গোড়ায় তো অসুবিধেই হতো, বিশেষ করে চিজ নিয়ে৷ এতো সব নামকরা চিজ, অথচ খেতে কী অখাদ্য – এমন মনে হতো৷ আজ অভ্যেস হয়ে গিয়েছে, তাই নিজেই গিয়ে গর্গনজোলা কিংবা কামমবেয়ার কিনি – রান্নার জন্যে নয়, পাঁউরুটির ওপর দিয়ে খাবার জন্য৷
অবশ্য কোন খাদ্য, সুখাদ্য বা অখাদ্য (!) কোন দেশ থেকে আগত, তার নির্দেশ এর আগেও পাওয়া যেতো, যেমন ফ্রান্সের আপেলাসিয়ঁ দো'রিজিন বা ইটালির দেনোমিনাৎসিওনে দি অরিজিনে৷ কিন্তু এই সব খুঁটিনাটি দেখে কেনাকাটা বা খাওয়া-দাওয়া করার মতো সময় বা সামর্থ্য আজ অধিকাংশ মানুষেরই নেই বলে মনে হয়৷ সকলেরই তাড়া, আর সকলেই খুঁজছেন, কোন বস্তুটি কম দামে পাওয়া যায়৷ তবুও পণ্য বিক্রয়ের প্রথম পন্থা হল পরিচিতি: ওটা যেন অনেকটা পাসপোর্টের মতো৷ আপনি জার্মানির নাগরিক হলে বহু দেশে ঢুকতে আপনার ভিসা লাঘবে না – আমার মতো বাঙালি-জার্মানদেরও নয় – কেননা ধরে নেওয়া হবে, জার্মানির লোক যখন, তখন আর বেচাল কী করবে?
সেইভাবেই, লেবেলে যাই লেখা থাক না কেন, প্যাকেজ কিংবা বোতলের ভেতরে কী আছে এবং সেটা যে আদতে কোন দেশ থেকে আসছে, সেটা সব সময়ে হলপ করে বলা যায় না৷ তবুও এই বিশ্বায়নের যুগেও মানুষ খুঁজছে তার গ্রামগঞ্জ, তার সেই ছোট্ট, সীমায়িত বিশ্বকে৷ আর খাবার সময় যেটা পাচ্ছে সেটা হল: সীমার মাঝে অসীম তুমি...