স্বাধীনতার এত বছর পরও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে বিতর্ক
রেজোয়ান হক রাজা ঢাকা
২৬ মার্চ ২০১৯
আর মাত্র দু’বছর পর, ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী পালন করবে বাংলাদেশ৷ অথচ দেশের স্বাধীনতার ইতিহাস নিয়ে দুর্ভাগ্যজনক বিতর্ক এখনও শেষ হয়নি৷ এক কথায় বললে এর মূল কারণ রাজনীতি৷
ছবি: Journey/M. Alam
বিজ্ঞাপন
প্রথমে রাজনৈতিক গণ-আন্দোলন, তারপর সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মধ্যে দিয়ে জন্ম নেয়া এই দেশটি তার বেড়ে ওঠার সময় ক্রমাগতভাবে রাজনৈতিক বিভক্তির মধ্যে দিয়ে এগিয়েছে, যা এখন আর শুধু রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই – প্রশাসন, ডাক্তার, প্রকৌশলী, আইনজীবী, সাংবাদিকসহ পেশাজীবী বিভিন্ন সংগঠন, এমনকি বিচার বিভাগেও এ বিভক্তি ষ্পষ্ট৷ তাই প্রায় সবকিছুর বিশ্লেষণই যার যার রাজনৈতিক আদর্শ বা দৃষ্টিভঙ্গি থেকে করা হয়, যা থেকে স্বাধীনতার ইতিহাসও রেহাই পায়নি৷
বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের সবচেয়ে গৌরবময় এবং গুরুত্বপূর্ণ অংশ মুক্তিযুদ্ধের কয়েকটি বিষয় নিয়ে বিতর্ক এই রাজনৈতিক বিভক্তি উসকে দিয়েছে৷ স্বাধীনতা আন্দোলনের অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের নির্মম হত্যাকাণ্ডের পর এর বড় সুবিধাভোগী জেনারেল জিয়াউর রহমানের গড়া দল বিএনপির কিছু দাবি এ বিতর্কের সূচনা করে৷ ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ দিবাগত রাতে বঙ্গবন্ধু তাঁর ধানমন্ডির বাড়ি থেকে পাকিস্তানি সেনাদের হাতে গ্রেপ্তার হবার আগ মুহূর্তে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন – আওয়ামী লীগের পাশাপাশি দেশ-বিদেশের নানা তথ্য-উপাত্ত এই দাবিটিই সমর্থন করে৷ তবে জন্মের পরপরই রাজনীতিতে আওয়ামী লীগের একক আধিপত্য চ্যালেঞ্জ করে আসা বিএনপির দাবি বঙ্গবন্ধু নয়, স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন তৎকালীন মেজর জিয়া, ২৭শে মার্চ চট্টগ্রামে কর্মরত অবস্থায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর পক্ষ-ত্যাগ, অর্থাৎ বিদ্রোহের পর কালুরঘাট রেডিও স্টেশনে গিয়ে৷ এই দিনটি যে ২৭শে মার্চ ছিল তা বরাবরই বলে এসেছেন ঐ সময় মেজর জিয়ার সঙ্গে থাকা কয়েক সহকর্মী, যারা পরে তাঁর দলে যোগ দিয়েছিলেন, যেমন জেনারেল মীর শওকত, কর্নেল অলি প্রমুখ৷ কিন্তু স্বাধীনতা দিবস যেহেতু ২৬শে মার্চ পালিত হয়ে আসছে, তাই তার সঙ্গে সাযুজ্য রাখতে ২০০১ থেকে ২০০৬ মেয়াদের বিএনপির আমলে দিনটি এগিয়ে এনে সেটি ২৬শে মার্চ ছিল বলে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করা হয়েছিল, স্কুলের পাঠ্যবইতে ছাপানোও হয়েছিল, তবে শেষ পর্যন্ত তা টেকেনি৷
মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের আদ্যপান্ত
বাংলাদেশের ইতিহাস-ঐতিহ্য ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস তুলে ধরার জন্য সম্পূর্ণ বেসরকারি উদ্যোগে কয়েকজন মুক্তিপাগল মানুষের উদ্যোগে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে৷ সেই জাদুঘর নিয়েই এই ছবিঘর৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
যাত্রা শুরু
১৯৯৬ সালের ২২ মার্চ ঢাকার সেগুনবাগিচার একটি পুরনো বাড়ি ভাড়া নিয়ে যাত্রা শুরু করে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর৷ আটজন ট্রাস্টির উদ্যোগে মুক্তিযুদ্ধের নানান স্মারক সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও উপস্থাপনের প্রয়াস নিয়েই যাত্রা হয় এই জাদুঘরের৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
নতুন ঠিকানায়
ভাড়া বাড়ির স্থান-স্বল্পতার কারণে সংগৃহীত স্মারকগুলো যথাযথভাবে প্রদর্শন করা সম্ভব না হওয়ায় ২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় আগারগাঁও এলাকায় জায়গা বরাদ্দ দেয়া হয়৷ ২০১১ সালের ৪ মে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের নতুন ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন৷ প্রায় ১০২ কোটি টাকা ব্যয়ে তৈরি হয় জাদুঘরের নয়তলা ভবন৷ ২০১৭ সালের ১৬ এপ্রিল নতুন ভবনে যাত্রা শুরু করে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
বীরশ্রেষ্ঠদের প্রতীক
মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের সামনে সাত বীরশ্রেষ্ঠর প্রতীক হিসেবে প্রাচীন স্থাপত্যরীতির সাতটি স্তম্ভ রাখা হয়েছে৷ এই স্তম্ভগুলো নওগাঁ জেলার পত্নীতলায় দিবর দিঘিতে স্থাপিত একাদশ শতকের রাজা দিব্যকের স্তম্ভের অনুকৃতি৷ ঐতিহাসিকদের মতে, দিব্যকের সেই স্তম্ভই বাংলার প্রথম বিজয়স্তম্ভ৷ এ কারণেই মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশিদের অবিস্মরণীয় বিজয়ের স্মারক হিসেবে এই স্তম্ভগুলো স্থাপন করা হয়েছে৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
বিশাল সংগ্রহশালা
মুক্তিযুদ্ধের নানান স্মারক, মুক্তিযোদ্ধা ও শহিদদের ব্যবহৃত সামগ্রী, অস্ত্র, দলিল, চিঠিপত্র ইত্যাদি মিলিয়ে ১৭ হাজারের বেশি নিদর্শন রয়েছে জাদুঘরের বিশাল সংগ্রহশালায়৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
শিখা অম্লান
মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের প্রথম তলায় রয়েছে শিখা অম্লান৷ কালো মার্বেল পাথরে পানির ভেতর থেকে জ্বলছে সেই শিখা৷ উদ্বোধনের আগে সেগুনবাগিচার পুরোনো ভবন থেকে মুক্তিযোদ্ধা ও নতুন প্রজন্মের ৭১ জন মানুষ হেঁটে শিখা অম্লানটি নতুন জাদুঘরে নিয়ে আসেন৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য
জাদুঘরের প্রথম তলায় শিখা অম্লানের পাশে স্থাপন করা হয়েছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও জাতীয় চার নেতার ব্রোঞ্জ নির্মিত ভাস্কর্য৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
মুক্তিযুদ্ধে ব্যবহৃত বিমান ও হেলিকপ্টার
মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের প্রথম তলার দুইপাশে ছাদের সঙ্গে আটকানো রয়েছে একটি যুদ্ধবিমান ও একটি হেলিকপ্টার৷ একাত্তরে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ব্যবহৃত হয়েছিল বিমান ও হেলিকপ্টারটি৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
আমাদের ঐতিহ্য, আমাদের সংগ্রাম
মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের প্রথম গ্যালারির নাম ‘আমাদের ঐতিহ্য, আমাদের সংগ্রাম’৷ প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন, পাকিস্তান পর্ব, রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন হয়ে ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচন পর্যন্ত দেশের ভূপ্রকৃতির বৈশিষ্ট্য, ইতিহাস ও সংস্কৃতি তুলে ধরা হয়েছে এ গ্যালারিতে৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
প্রথম গ্যালারিতে আর যা কিছু
‘আমাদের ঐতিহ্য, আমাদের সংগ্রাম’ গ্যালারিতে আরও আছে ফসিল, প্রাচীন টেরাকোটা, মৃৎপাত্র, শিলাখণ্ডসহ নানা প্রকার নিদর্শনসহ ঐতিহাসিক ঘটনা ও ব্যক্তির আলোকচিত্র৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
দ্বিতীয় গ্যালারি
জাদুঘরের দ্বিতীয় গ্যালারির নাম ‘আমাদের অধিকার আমাদের ত্যাগ’৷ এই গ্যালারি থেকেই দর্শক সরাসরি ঢুকে পড়বেন মহান মুক্তিযুদ্ধের পর্বে৷ স্বাধীনতার দাবিতে রেসকোর্স ময়দানে ১৯৭০ সালের ৩ জানুয়ারির সমাবেশ, ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর সেই ঐতিহাসিক ভাষণের ছবি৷ মুক্তিযুদ্ধে ব্যবহৃত রাইফেল আর গুলির বাক্সসহ আছে শহিদ ও মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যবহৃত নানা সামগ্রী৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
অপারেশন সার্চলাইট
দ্বিতীয় গ্যালারির একটি অংশে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতের গণহত্যার চিত্র৷ অন্ধকার এই গ্যালারিতে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে ইটের দেয়াল ভেঙে ভেতরে ঢুকছে হেডলাইট জ্বালানো একটি সামরিক যান৷ গাড়ির সেই আবছা আলোয় দেখা যাবে মেঝের চারপাশে পড়ে থাকা গুলিতে নিহত মৃতদেহ৷ আর দেয়ালে আছে ঢাকার বিভিন্ন স্থানে চালানো গণহত্যার আলোকচিত্র৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
তৃতীয় গ্যালারি
জাদুঘরের তৃতীয় গ্যালারিটি চতুর্থ তলায়৷ এর নাম ‘আমাদের যুদ্ধ, আমাদের মিত্র’৷ এখানে আছে ভারতে আশ্রয় নেওয়া শরণার্থীদের জীবনযাত্রা, বিদেশি গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের বড় আকারের ডিজিটাল প্রিন্ট৷ মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ, বিভিন্ন সেক্টরে ভাগ হওয়া, রাজাকারদের তৎপরতা, মুক্তিযোদ্ধাদের গেরিলা যুদ্ধের আশ্রয়স্থল এসব৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
কনসার্ট ফর বাংলাদেশ
তৃতীয় গ্যালারিতে আরো আছে পণ্ডিত রবিশঙ্করের উদ্যোগে যুক্তরাষ্ট্রে আয়োজিত ‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’ এ বিটলসের বিখ্যাত শিল্পী জর্জ হ্যারিসনের গাওয়া ‘বাংলাদেশ বাংলাদেশ’ গানের জর্জের নিজ হাতে লেখা পাণ্ডুলিপি ও সুরের স্টাফ নোটেশন৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
চতুর্থ ও সবশেষ গ্যালারি
মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের সর্বশেষ গ্যালারিটির নাম ‘আমাদের জয়, আমাদের মূল্যবোধ’৷ এতে আছে নৌযুদ্ধের বিভিন্ন নিদর্শন৷ বিলোনিয়ার যুদ্ধের রেলস্টেশনের রেলিং, ট্রলি ইত্যাদি৷ এছাড়া আছে মিত্রবাহিনীর ছত্রীসেনাদের আক্রমণ, দগ্ধ বাড়িঘর৷ সবশেষে বিজয় অর্জন৷ শেষ হয়েছে ১৯৭২ সালে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সংবিধানের অনুলিপিটি দিয়ে৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
ভ্রাম্যমাণ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর
বাংলাদেশের স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসার ছাত্রছাত্রীদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ করতে ও মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানাতে বাংলাদেশের প্রতিটি জেলায় জেলায় ঘুরে প্রদর্শনী করা হয়৷ ২০০১ সাল থেকে দু’টি বড় বাসের মাধ্যমে এ ভ্রাম্যমাণ জাদুঘর ইতিমধ্যেই ৬৪ জেলা ভ্রমণ করেছে, তুলে ধরেছে মুক্তিযুদ্ধের গৌরবময় ইতিহাস৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
সময়সূচি ও অন্যান্য তথ্য
মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের গ্রীষ্মকালীন (মার্চ-সেপ্টেম্বর) সময়সূচি সকাল ১০টা-বিকেল ৬টা৷ আর শীতকালীন (অক্টোবর-ফেব্রুয়ারি) সময়সূচি হলো সকাল ১০টা-বিকাল ৫টা৷ রোজার মাসে জাদুঘর খোলা থাকে সকাল ১০টা থেকে বিকাল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত৷ জাদুঘরের সাপ্তাহিক বন্ধ রোববার৷ প্রবেশমূল্য জনপ্রতি ২০ টাকা৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
16 ছবি1 | 16
মেজর জিয়া ওইদিন স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন ঠিকই, তবে তা বঙ্গবন্ধুর পক্ষে৷ তাঁর স্বকণ্ঠের সেই ঘোষণার অডিও রেকর্ড এখনো রয়েছে৷ আওয়ামী লীগ তাই বলে – জিয়া ছিলেন স্বাধীনতার ঘোষণার পাঠক মাত্র৷ তবে এটি ঠিক যে, সাধারণ মানুষের কাছে জিয়ার এই ঘোষণা অন্যরকম আবেদন তৈরি করেছিল৷ কারণ, তিনি ছিলেন সেনা কর্মকর্তা আর সেনাবাহিনীর বাঙালি কর্মকর্তা-সৈনিকরা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে রয়েছে, এটি জানতে পেরে মানুষ আশ্বস্ত হয়েছিল৷ পরবর্তীতে রাষ্ট্রপতি হিসেবে তিনি যতটা জনপ্রিয় হতে পেরেছিলেন, তাতে সাহায্য করেছিল তাঁর এ রকম একটি ‘দেশপ্রেমিক ইমেজ'৷ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে গঠিত দেশের প্রথম সরকার মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য যেসব মুক্তিযোদ্ধাকে নানা খেতাবে ভূষিত করেছিল, তার মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ খেতাব বীর উত্তম পেয়েছিলেন জিয়া৷ কিন্তু তাঁর গড়া দল বিএনপির সঙ্গে আওয়ামী লীগের সম্পর্ক এখন এতটাই তিক্ত যে, দলটির নেতাদের কেউ কেউ এখন জিয়া মুক্তিযুদ্ধের সময় পাক বাহিনীর চর ছিলেন বলে অভিযুক্ত করছেন৷ বড় দল দু'টো এভাবেই স্বাধীনতা সংগ্রাম, বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে বিভক্ত হয়ে পড়েছে৷
স্বাধীনতার ঘোষণার সঙ্গে জিয়াউর রহমান জড়িত ছিলেন বলে তাঁকে ঘোষক দাবি করার কিছুটা ভিত্তি থাকলেও মুক্তিযুদ্ধে শহিদদের সংখ্যা নিয়ে একাধিকবারের প্রধানমন্ত্রী, বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া যে বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন, তার সমর্থনে কোনো যুক্তিই নেই৷ বছরখানেক আগে এক অনুষ্ঠানে বক্তৃতায় তিনি বলে বসেন, মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ নয়, ৩ লাখ মানুষ নিহত হয়েছে৷ ৩০ লাখ মানুষের প্রাণের বিনিময়ে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি – এই বাক্যটি স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথমদিন থেকেই উচ্চারিত হচ্ছে৷ হতে পারে সংখ্যাটি পুরোপুরি সঠিক নয়৷ ঐ সময় সঠিক হিসেব করা সম্ভবও ছিল না৷ বিভিন্ন সূত্রে পাওয়া খবর থেকে সত্যের কাছাকাছি আনুমানিক এই সংখ্যাটি স্থির হয়েছে এবং এটি অনেক আগেই প্রতিষ্ঠিত৷ মীমাংসিত এই বিষয়টি নিয়ে বেগম জিয়া কেন বিতর্ক সৃষ্টি করলেন, তা তাঁর দলের অনেক নেতার কাছেও বোধগম্য নয় বলে ব্যক্তিগত আলাপে জেনেছি৷ মুক্তিযুদ্ধে শহিদদের সংখ্যা ৩০ লাখের পরিবর্তে ৩ লাখ হলে বিএনপির কী সুবিধা হবে তা ভেবেও কুল কিনারা পাচ্ছেন না কেউ-ই৷ বরং এই বিতর্ক তোলায় বেগম জিয়ার বিরুদ্ধে হওয়া মামলার সংখ্যা একটি বেড়েছে৷ কোনো যুদ্ধে শহিদদের সংখ্যা নিয়ে মীমাংসিত বিষয়ে অহেতুক বিতর্ক তোলা এবং এ নিয়ে মামলার ঘটনা পৃথিবীর আর কোথাও ঘটেছে বলে আমার জানা নেই৷
মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিময় স্থাপনা
দীর্ঘ ন’মাসের মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতার সূর্য উঠেছিল বাংলাদেশে, যাতে ৩০ লাখ নিরীহ বাঙালিকে হত্যা করে পাক বাহিনী৷ প্রাণ বিসর্জন দেওয়া সেইসব শহিদদের স্মরণে দেশের বিভিন্ন স্থানে তৈরি করা হয়েছে স্মৃতিসৌধ ও ভাস্কর্য৷
ছবি: DW/M. M. Rahman
স্বাধীনতা স্তম্ভ ও স্বাধীনতা জাদুঘর
ঢাকার সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে স্বাধীনতা স্তম্ভ ও স্বাধীনতা জাদুঘর৷ ১৯৭১-এর ৭ মার্চ এখানে দাঁড়িয়েই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষণা করেছিলেন স্বাধীনতা অর্জনের দৃঢ় প্রত্যয়৷৭১-এর ১৬ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধের বিজয় দলিলও স্বাক্ষরিত হয়েছিল এখানেই৷ স্বাধীনতা স্তম্ভের পাশে আছে বাঙালি জাতিসত্তার অমরতার প্রতীক ‘শিখা চিরন্তনী’৷ স্বাধীনতা স্তম্ভটি বস্তুত ১৫০ ফুট উঁচু একটি গ্লাস টাওয়ার৷
ছবি: DW/M. M. Rahman
অপরাজেয় বাংলা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবন চত্ত্বরে রয়েছে মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্য ‘অপরাজেয় বাংলা’৷ কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বাংলার নারী-পুরুষের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ এবং বিজয়ের প্রতীক এই ভাস্কর্যটির স্থপতি সৈয়দ অব্দুল্লাহ খালিদ৷
ছবি: DW/M. M. Rahman
মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর
বাংলাদেশের গৌরবময় মুক্তিযুদ্ধ সংক্রান্ত নিদর্শন ও স্মারকচিহ্নসমূহ সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও প্রদর্শনের জন্য ১৯৯৬ সালের ২২ মার্চ ঢাকা শহরের সেগুনবাগিচার একটি পুরানো ভাড়া বাড়িতে প্রতিষ্ঠিত হয়৷ সম্পূর্ণ বেসরকারি উদ্যোগে মুক্তিযুদ্ধের তথ্য, প্রমাণাদি, নিদর্শন, রৈকর্ডপত্র ইত্যাদি সংগ্রহ করে এখানে রাখা হয়৷ ২০১৭ সালের এপ্রিল মাসে এ জাদুঘর স্থানান্তরিত হয় ঢাকার আগারগাঁও এলাকার নিজস্ব ঠিকানায়৷
ছবি: bdnews24.com/A. M. Ove
বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধ
ঢাকার মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধের পাশেই শহিদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ৷ ১৯৭১ সালের ১৪ই ডিসেম্বর দেশের প্রখ্যাত সন্তানদের নির্মমভাবে হত্যা করে এই স্থানের পরিত্যক্ত ইটের ভাটার পেছনের জলাশয়ে ফেলে রাখে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর দোসররা৷ নিষ্ঠুর এই হত্যাকাণ্ড স্মরণীয় করে রাখার জন্য ইটের ভাটার আদলে একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হয় জায়গাটিতে৷ এর স্থপতি ফরিদ উদ্দীন আহমেদ৷
ছবি: DW/M. M. Rahman
শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ
ঢাকার মিরপুরে অবস্থিত শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ৷ ১৯৭১ সালের ১৪ই ডিসেম্বর পাক হানাদার বাহিনী রাজাকার আলবদরদের সহায়তায় এ দেশের সূর্যসন্তান বুদ্ধিজীবীদের নির্বিচারে হত্যা করে৷ তাঁদের স্মরণে ৭১ সালের ২২ ডিসেম্বর মিরপুরে এ স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হয়৷ এর স্থপতি ফরিদ ইউ আহমেদ ও জামি আল শাফি৷
ছবি: DW/M. M. Rahman
জাতীয় স্মৃতিসৌধ
ঢাকা থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের পাশে সাভারের নবীনগরে জাতীয় স্মৃতিসৌধ৷ স্বাধীনতা সংগ্রামে প্রাণ উৎসর্গকারী শহিদদের স্মরণে ১৯৭২ সালের ১৬ই ডিসেম্বর প্রথম বিজয় দিবসে এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান৷ স্থপতি সৈয়দ মঈনুল হোসেনের নকশায় এর নির্মাণ কাজ শেষ হয় ১৯৮২ সালে৷
ছবি: DW/M. M. Rahman
জাগ্রত চৌরঙ্গী
ঢাকার অদূরে গাজীপুর জেলার জয়দেবপুর চৌরাস্তার সড়কদ্বীপে অবস্থিত৷ ১৯৭৩ সালে নির্মিত এই ভাস্কর্যের স্থপতি আব্দুর রাজ্জাক৷ ডান হাতে গ্রেনেড, বাঁ হাতে রাইফেল, লুঙ্গি পরা, খালি গা, খালি পা আর পেশিবহুল এক মুক্তিযোদ্ধার ভাস্কর্য এটি৷
ছবি: DW/M. M. Rahman
শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ
মুক্তিযুদ্ধের শহিদদের স্মরণে ময়মনসিংহের শম্ভুগঞ্জে বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতুর কাছেই এই স্মৃতিসৌধটি নির্মাণ করেছে ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসন৷
ছবি: DW/M. M. Rahman
বিজয় ৭১
ময়মনসিংহের কৃষিবিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্য ‘বিজয় ৭১’৷ মহান মুক্তি সংগ্রামে বাংলাদেশের সকল শ্রেণির মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের মূর্ত প্রতীক এ সৌধ৷ ভাস্কর্যটিতে একজন নারী, একজন কৃষক ও একজন ছাত্র মুক্তিযোদ্ধার প্রতিকৃতি রয়েছে৷ ভাস্কর্যটির দেয়াল জুড়ে আছে পোড়া মাটিতে খোদাই করা মুক্তিযুদ্ধের নানান ঘটনাবলী৷ ২০০০ সালে নির্মিত এ ভাস্কর্যের শিল্পী শ্যামল চৌধুরী৷
ছবি: DW/M. M. Rahman
মুজিবনগর স্মৃতিসৌধ
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত অন্যতম একটি স্থান মেহেরপুরের মুজিবনগর৷ ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল মেহেরপুরের বৈদ্যনাথ আম্রকাননে বাংলাদেশের অন্তরবর্তীকালীন সরকার শপথ গ্রহণ করেছিল৷ ১৯৭১ সালের এ ঘটনাকে চিরস্মরণীয় করে রাখতে ১৯৮৭ সালের ১৭ এপ্রিল সেখানে উদ্বোধন করা হয় এ স্মৃতিসৌধ৷ স্মৃতিসৌধটির নকশা করেন স্থপতি তানভীর করিম৷
ছবি: DW/M. M. Rahman
সাবাশ বাংলাদেশ
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মতিহার চত্বরের মুক্তাঙ্গনের উত্তর পাশে অবস্থিত৷ রাকসু এবং দেশের ছাত্রজনতার অর্থ সাহায্যে শিল্পী নিতুন কুন্ডু এই ভাস্কর্য বিনা পারিশ্রমিকে নির্মাণ করেন৷ ১৯৯২ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি এর উদ্বোধন করেন শহিদ জননী জাহানারা ইমাম৷ এই স্মৃতিস্তম্ভে আছে দু’জন মুক্তিযোদ্ধার মূর্তি৷ একজন অসম সাহসের প্রতীক, অন্য মুক্তিযোদ্ধার হাত বিজয়ের উল্লাসে মুষ্টিবদ্ধ হয়েছে পতাকার লাল সূর্যের মাঝে৷
ছবি: DW/M. M. Rahman
11 ছবি1 | 11
স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং মুক্তিযুদ্ধে আওয়ামী লীগ নেতৃত্ব দিয়েছিল বলে এর কৃতিত্ব দলটি সঙ্গত কারণেই দাবি করতে পারে৷ স্বাধীনতার সাত বছর পর ১৯৭৮ সালে বিএনপি গঠন করার সময় মুক্তিযোদ্ধা হয়েও জিয়া তাঁর দলে স্বাধীনতাবিরোধীদের অনেককে নিয়েছিলেন, রাষ্ট্রপতি হিসেবে সংবিধান সংশোধন করে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোকে রাজনীতি করার সুযোগ ফিরিয়ে দেয়ার মাধ্যমে স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াতে ইসলামীকে পুনর্বাসন করেছেন – এ রকম অভিযোগও রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে৷ তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর স্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া দলের হাল ধরার পর জামায়াতে ইসলামীকে রাজনৈতিক মিত্র হিসেবে বেছে নেন, ঘরে-বাইরে অনেক সমালোচনার পরও যা এখনো বহাল রয়েছে৷ এসব মিলিয়ে বিএনপিকে ‘পাকিস্তানপন্থি' হিসেবে চিহ্নিত করার চেষ্টাও করা হয়ে থাকে৷ এ অপবাদ কাটাতে বিএনপির নেতারা তাঁদের দলকে মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডারের দল হিসেবে উল্লেখ করেন, কখনো কখনো ছেলেমানুষির মতো দাবি করেন তাঁদের দলে সবচেয়ে বেশি মুক্তিযোদ্ধা আছে৷
মুক্তিযোদ্ধা, যাঁদেরকে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বলা হয়, তাঁদের স্বীকৃতি দেয়া নিয়েও বিতর্ক রয়েছে এবং বিষয়টি অমীমাংসিত রয়ে গেছে এ রকম পালটাপালটির কারণে৷ বড় এই দল দু'টি যে যখন ক্ষমতায় এসেছে তখনই মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা বদল অথবা সংশোধন হয়েছে৷ গত ৪৭ বছরে ছ'বার মুক্তিযোদ্ধা তালিকা সংযোজন-বিয়োজন হয়েছে৷ মুক্তিযোদ্ধার বয়স, সংজ্ঞা ও মানদণ্ড পাল্টেছে ১১ বার৷ আগামী ২৬শে মার্চ আরেকটি মুক্তিযোদ্ধা তালিকা প্রকাশ করার ঘোষণা দিয়েছে সরকার৷ ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ আরেক মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে এ পর্যন্ত নতুন করে সরকারি গেজেটভুক্ত হয়েছেন ৩৫ হাজার ৪৮৯ জন৷ একই সময়ে ভাতা পাওয়া মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ১ লাখ থেকে বেড়ে ১ লাখ ৮৬ হাজার হয়েছে৷জনপ্রতি ভাতার পরিমাণ, ২০০৯ সালে ছিল ৯০০ টাকা আর এখন ১০ হাজার৷ এই ভাতা এবং আরো কিছু সুযোগ-সুবিধা পাবার কারণে মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকায় বারবার পরিবর্তন এসেছে৷
রেজোয়ান হক রাজা, সাংবাদিকছবি: facebook/Shipon Halder
মুক্তিযোদ্ধাদের পাকা বাড়ি তৈরি করার জন্য বিশেষ ব্যবস্থায় ঋণ দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার৷ সরকারের পরিকল্পনা হচ্ছে, প্রত্যেককে ১০ লাখ টাকা করে বিনা সুদে ঋণ দেওয়া৷ এছাড়া দেশের রাস্তাঘাটগুলোর নামকরণ মুক্তিযোদ্ধাদের নামে করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে৷ ভারতের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে বিনা খরচে মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা দেয়ার৷ এর আওতায় প্রতি বছর নির্দিষ্ট সংখ্যক মুক্তিযোদ্ধা ভারতে যাবেন৷ সবচেয়ে বড় সুবিধা ছিল সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা বা তাঁদের পোষ্যদের কোটা৷ সরকারি চাকরিতে থাকা মুক্তিযোদ্ধারাও দু'বছর বেশি চাকরিতে থাকার সুবিধা পেয়েছেন, এখনো পাচ্ছেন৷ এসব সুবিধা পাবার কারণে মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় নাম তোলার জন্য প্রতিযোগিতা চলেছে, অনেকে মুক্তিযোদ্ধা না হয়েও নানা উপায়ে এবং প্রভাবশালীদের পৃষ্ঠপোষকতায় এ তালিকায় অন্তর্ভূক্ত হতে সক্ষম হয়েছেন৷
প্রশ্ন হচ্ছে, স্বাধীনতা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযোদ্ধা – এসব বিষয়ে তোলা,থাকা এবং বাড়িয়ে চলা বিতর্ক কি বন্ধ হবে না? সমাজ যেভাবে বহুধা বিভক্ত, প্রধান দুই রাজনৈতিক ধারা যেভাবে বিবাদে লিপ্ত, তাদের মধ্যে সম্পর্ক যেরকম তিক্ত এবং তা যেভাবে বেড়েই চলেছে, তাতে এসব ক্ষেত্রে মতৈক্যে পৌঁছানো দুরুহ৷ বেশ আগে একবার আলোচনা উঠেছিল নিরপেক্ষ ইতিহাসবেত্তাদের নিয়ে একটি কমিশন গঠন করে তাঁদের স্বাধীনতা সংগ্রামের সঠিক ইতিহাস লিখতে বলা হোক৷ কিন্তু এমন ‘নিরপেক্ষ' ব্যক্তি বাংলাদেশে থাকলেও তাঁরা সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হবেন এমন নিশ্চয়তা দেয়া যায় না৷
১৯৯১ সালে দেশে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক ধারা পুনঃপ্রতিষ্ঠার পর থেকে প্রধান দুই দল আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির মধ্যেই ক্ষমতার পালাবদল হচ্ছে৷ নিকট ভবিষ্যতে এ ধারার পরিবর্তনের কোনো লক্ষণও দেখা যাচ্ছে না৷ তাই এই দুই দল যতক্ষণ কিছু বিষয়ে ন্যূনতম সমঝোতায় না পৌঁছাচ্ছে, ততক্ষণ ইতিহাসের বিকৃতি বন্ধ হবার কোনো আশা নেই৷
প্রিয় পাঠক, আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷