গণভোটে ৯০ শতাংশেরও বেশি স্বাধীনতার পক্ষে রায় দিলেও ইরাকি কুর্দিস্তানের পক্ষে সেই সিদ্ধান্ত কার্যকর করা আরও কঠিন হয়ে পড়ছে৷ বাগদাদে কেন্দ্রীয় সরকার থেকে শুরু করে অঞ্চলের বেশিরভাগ দেশে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে৷
বিজ্ঞাপন
সোমবারের গণভোটের রায় কার্যকর করার কোনো আইনি বাধ্যবাধকতা নেই৷ ইরাকি কুর্দিস্তানের নেতারা আগেই বলেছিলেন, গণভোটের রায় ইতিবাচক হলে বাগদাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণভাবেই তাঁরা স্বাধীনতার পথে এগোতে চান৷
কিন্তু তা সত্ত্বেও ইরাকের কেন্দ্রীয় সরকার কুর্দিস্তান অঞ্চলের উপর চাপ সৃষ্টি করার পদক্ষেপ নিয়ে চলেছে৷ ইরাকের প্রধানমন্ত্রী হায়দার আল আবাদির দাবি, এই গণভোটকে অবৈধ ঘোষণা করতে হবে৷ তিনি সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, একমাত্র ইরাকের সাংবিধানিক কাঠামোর আওতায়ই আলোচনা সম্ভব৷
ইরাকের সংসদ দেশের ঐক্য ও অখণ্ডতা বজায় রাখতে প্রধানমন্ত্রীকে সব প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবার ডাক দিয়ে একটি প্রস্তাব পাশ করেছে৷ এমনকি কুর্দি এলাকায় সামরিক পদক্ষেপের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে না৷
এরবিল ও সুলেমানিয়া শহরের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিয়ন্ত্রণ বাগদাদের হাতে তুলে দেবার নির্দেশ অস্বীকার করায় একাধিক বিমান সংস্থা উড়াল বাতিল করছে৷ তুরস্ক, লেবানন, মিশরের কয়েকটি বিমান সংস্থা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ এছাড়া তুরস্ক ও ইরান সীমান্তও কার্যত বন্ধ হয়ে যাচ্ছে৷ ইরাকি কুর্দিস্তানের বিরুদ্ধে বাণিজ্যের ক্ষেত্রেও বেশ কিছু শাস্তিমূলক পদক্ষেপের হুমকি দেওয়া হচ্ছে৷
ইরাকি কুর্দিস্তানে স্বাধীনতা সংক্রান্ত গণভোটের বিরোধিতা করে আসছে একাধিক দেশ ও সংগঠন৷তুরস্কও ইরানের মতো প্রতিবেশী যেসব দেশে কুর্দি সংখ্যালঘু গোষ্ঠী ছড়িয়ে রয়েছে, তাদের চরম আপত্তির কারণ স্পষ্ট৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও জাতিসংঘও এমন পদক্ষেপের বিরোধিতা করছে৷ রাশিয়া ইরাকি কুর্দিস্তানের পেট্রোলিয়াম শিল্পে অনেক বিনিয়োগ করছে৷ ফলে সে দেশও ইরাকের ঐক্যের পক্ষে সমর্থন জানিয়েছে৷
দীর্ঘ প্রায় ১৪ বছর ধরে স্বায়ত্তশাসনের ফলে ইরাকি কুর্দিস্তান অনেক ক্ষেত্রেই কার্যত স্বাধীনতা ভোগ করছে৷ আঞ্চলিক বাণিজ্যের মাধ্যমে প্রতিবেশী দেশগুলির সঙ্গে গভীর যোগাযোগ সৃষ্টি হয়েছে৷ আইএস-এর বিরুদ্ধে সংগ্রামেও এই অঞ্চল অ্যামেরিকার ঘনিষ্ঠ সহযোগী৷ এমন প্রেক্ষাপটে বিচ্ছিন্নভাবে ইরাকি কুর্দিস্তানের পক্ষে টিকে থাকা সম্ভব হবে না বলে মনে করছেন অনেক বিশেষজ্ঞ৷ অন্যদিকে জাতি হিসেবে রাষ্ট্রহীন অস্তিত্বও মেনে নিতে প্রস্তুত নয় অনেক কুর্দি৷
যুদ্ধে নারী, নারী যোদ্ধা
২০১৪ সালের গ্রীষ্মে ইসলামিক স্টেট উত্তর ইরাকের ইয়াজিদি এলাকাগুলি দখল করে৷ হাজার হাজার ইয়াজিদি মহিলা ও কিশোরীকে ধরে নিয়ে গিয়ে দাসী হিসেবে রাখা হয় ও ধর্ষণ করা হয়৷ আজ সেই ইয়াজিদি নারীরাই সন্ত্রাসবাদিদের বিরুদ্ধে লড়ছেন৷
ছবি: Reuters/A. Jadallah
শত্রুর খোঁজ
শত্রু বাইরে কোথাও - কুর্দি নারী যোদ্ধা হাসেবা নৌজাদ ইরাকের মোসুল শহরের কাছে চোখে দুরবিন লাগিয়ে ‘ফ্রন্ট লাইন’ পরখ করে দেখছেন৷ কুর্দ এলাকা ও আইএস নিয়ন্ত্রিত এলাকার মধ্যে সীমারেখা হলো এই ফ্রন্ট৷ কুর্দিরা ইরাকি সামরিক বাহিনীর সহযোগিতায় ক্রমেই আরো এগিয়ে যাচ্ছে, পিছু হটছে ইসলামিক স্টেট৷
ছবি: Reuters/A. Jadallah
গুপ্তপ্রতিরোধের ভ্যানগার্ড
শত্রু নজরে পড়েছে, এবার তাদের দিকে গুলি চালানো হবে৷ হাসেবা নৌজাদ দেখাচ্ছেন কোনদিকে; আসেমা দাহির (ডান দিক থেকে তৃতীয়) ও অন্যান্য ইয়াজিদি নারী যোদ্ধারা নিশানা ঠিক করছেন৷ শুধুমাত্র বিমান থেকে আইএস সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে লাভ নেই৷ তাই ইয়াজিদি আর কুর্দ মহিলাদের নিয়ে রণক্ষেত্রে এই ভ্যানগার্ড তৈরি করা হয়েছে৷
ছবি: Reuters/A. Jadallah
সুন্দর দেখানোর জন্য নয়
বন্দুক নিয়ে ঠিকমতো নিশানা করার জন্য মাথার চুল কপালে বা চোখে পড়লে চলবে না৷ তাই চুল টান টান করে বেঁধে নেন হাসেবা নৌজাদ, ‘মিলিটারি লুক’ ফ্যাশনের জন্য নয়৷
ছবি: Reuters/A. Jadallah
লাকি চার্ম
যুদ্ধের ফাঁকে আসেমা দাহির৷ হাতে যে লাল রঙের টেডি বেয়ারটি রয়েছে, সেটা হয়তো অতীতের সেই সুন্দর, শান্তিপূর্ণ দিনগুলির প্রতীক, যখন আইএস ইয়াজিদিদের স্বদেশকে দখল করেনি৷ ২০১৪ সালের গ্রীষ্মে সেই শান্তি শেষ হয়ে যায়, শুরু হয় আইএস-এর সন্ত্রাস৷
ছবি: Reuters/A. Jadallah
পালানো ছাড়া পথ ছিল না
শিশু, মহিলা, বৃদ্ধ, আইএস কাউকে ক্ষমা করেনি৷ ২০১৪ সালের গ্রীষ্মে লক্ষ লক্ষ ইয়াজিদি বাস্তু ছেড়ে পালানোর চেষ্টা করেন, তাদের পিছনে আইএস৷ এক বৃদ্ধ ও দুই তরুণীর এই ছবিটি যেন বিশ্বের সামনে ইয়াজিদিদের যন্ত্রণাকে তুলে ধরে৷
ছবি: Reuters
বিভীষিকা
এই ইয়াজিদি কিশোরী ক্যামেরার সামনে তার মুখ দেখাতে চায় না৷ ২০১৪ সালে এই ১৫ বছর বয়সের মেয়েটিকে ধরে নিয়ে গিয়ে একজন আইএস যোদ্ধার সঙ্গে জোর করে বিয়ে দেওয়া হয়েছিল৷ তার দু’মাস পরে মেয়েটি পালাতে সমর্থ হয়৷ আজ সে আবার নিজের পরিবারের সঙ্গেই বাস করছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/D. Bennett
ধ্বংসস্তূপ
উত্তর সিরিয়ার কোবানি শহরটি তুর্কি সীমান্তের অদূরে৷ আইএস যোদ্ধারা মাসের পর মাস শহরটি অবরুদ্ধ করে রেখেছিল৷ কুর্দিরা সব কিছুর পরও প্রতিরোধ চালিয়ে যায় ও শেষমেশ মার্কিন বিমানবাহিনীর সাহায্যে সন্ত্রাসবাদীদের পরাজিত করতে সমর্থ হয়৷ পড়ে থাকে একটি শহর নয়, যেন শহরের ধ্বংসস্তূপ৷
ছবি: Getty Images/AFP/Y. Akgul
সবে মিলে করি কাজ
যারা আইএস-এর আদর্শে বিশ্বাস করে না, আইএস-এর দৃষ্টিতে তারা সবাই শত্রু৷ বিভিন্ন ধর্ম, সম্প্রদায় ও জাতির মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করাই হলো আইএস-এর উদ্দেশ্য৷ সে উদ্দেশ্য সর্বক্ষেত্রে সফল হয় না৷ কুর্দি আর ইয়াজিদি মেয়েদের মধ্যে যে বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছে, এক অর্থে তা আইএস-এর প্রতীকী পরাজয়৷
ছবি: Reuters/A. Jadallah
স্বাধীনতার সড়ক
শুধু অস্ত্র দিয়ে আইএস-কে হারানো যাবে না৷ সিরিয়া আর ইরাকের অনেক এলাকা এখনও আইএস-এর নিয়ন্ত্রণে৷ কুর্দি আর ইয়াজিদি মেয়েরাও তাদের সংগ্রাম চালিয়ে যাবে৷ তাদের প্রতিরোধের আর একটি শিক্ষা হলো, মেয়েরা পুরুষের দাস নয় - সন্ত্রাসবাদিদের যা কাজে লাগার কথা!