1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

স্বাধীনতার ৫০ বছর: উন্নয়ন কার কাছে যায়?

১৬ ডিসেম্বর ২০২১

বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে এটাই বড় অর্জন৷ এর চেয়ে বড় অর্জন একটি জাতির জীবনে আর কিছু থাকতে পারে না৷ কিন্তু তাতে কী সব কিছু বলা হয়ে যায়? অবশ্যই না৷ তাহলে বাংলাদেশের অগ্রগতির গতিপথ কী?

ছবি: MOHAMMAD PONIR HOSSAIN/REUTERS

মুক্তিযুদ্ধ গবেষক, রাজনৈতিক বিশ্লেষক, মানবাধিকার কর্মী, নারী নেত্রী ও অর্থনীতিবিদদের বিশ্লেষণের নানা দিক ও মাত্রা আছে৷ কিন্তু সুশাসন, মানবাধিকার, গণতন্ত্র ও বৈষম্যহীন সমাজ ব্যবস্থা নিয়ে তাদের অভিমতে অনেটাই মিল৷ অর্জনের পথে বাধা কোথায়, কার দায় তা নিয়ে নানা মত৷ কিন্তু অর্জনটা আরো বড় হতে পারত বলে মনে করেন তারা৷

অর্থনীতির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অর্জন অনেক বড়৷ বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় যেতে যোগ্যতা অর্জন করেছে৷ মানুষের আয় বেড়েছে৷ বেড়েছে জীবনযাত্রার মান৷ নারীর ক্ষমতায়ন হয়েছে৷ শিক্ষার হার বেড়েছে৷ কিন্তু গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার অবনতি হয়েছে, অবনতি হয়েছে মানবাধিকারের৷ মানবাধিকার কর্মী নূর খান তাই গণতন্ত্র এবং মানবাধিকার নিয়ে উদ্বিগ্ন৷ তবে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষক আফসান চৌধুরী মনে করেন এটা মধ্যবিত্তের সমস্যা৷ মধ্যবিত্ত তার ক্ষমতা হারিয়েছে৷ কিন্তু গ্রামের সাধারণ মানুষ এটাকে পাত্তা দেয় না৷ তাদের অবস্থান আরো সংহত হয়েছে৷ মুক্তিযুদ্ধে গ্রামের এই সাধারণ মানুষই বেশি অংশগ্রহণ করেছেন৷ তার কথা, ‘‘বিশ্বে এখন রাজনৈতিক রাষ্ট্র পিছিয়ে পড়ছে৷ এগিয়ে যাচ্ছে অর্থনৈতিক রাষ্ট্র৷ বাংলাদেশ সেদিকেই যাচ্ছে৷ ফেসবুকের হাহাকার দিয়ে বাংলাদেশের বাস্তব অবস্থা বোঝা যাবে না৷ সেটা বুঝতে হলে গ্রামের মানুষের সাথে কথা বলতে হবে৷ আমি তাদের কাছে যাই৷ তাদের সাথে কথা বলি৷’’

ড. নাজনীন আহমেদ

This browser does not support the audio element.

কিন্তু সেটাই কি পর্যাপ্ত? অর্থনীতিবিদ ড. নাজনীন আহমেদ  মনে করেন, ‘‘উন্নয়ন হয়েছে৷ সেটার বড় প্রমাণ আজ আমরা উন্নয়নশীল দেশের কাতারে৷ কিন্তু বৈষম্যও বেড়েছে৷ মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের সক্ষমতা বেড়েছে৷ কিন্তু এর সুফল সবাই পাচ্ছে না৷ অর্থনেতিক বৈষম্য বাংলাদেশের উন্নয়নের গতিকে শ্লথ করছে৷ আর এর জন্য দরকার সুশাসন, বিচার ব্যবস্থার উন্নয়ন, অর্থনৈতিক সাম্য৷’’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক মনে করেন, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন কতটুকু বাস্তবায়ন করা গেছে তার ওপর নির্ভর করে দেশ স্বাধীনতার ৫০ বছরে কতটা এগিয়েছে৷ তার সেটা বিবেচনা করলে তার স্বপ্ন বাস্তবায়নে আরো অনেক বাকি৷ তিনি বলেন,‘‘একটি উদার গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল রাষ্ট্র নির্মাণে তার যে স্বপ্ন তা বার বার বাধাগ্রস্ত হয়েছে৷ দেশ এগিয়েছে৷ কিন্তু দেশে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তিও সক্রিয়৷ বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর তারা তাদের অবস্থান তৈরিতে এখনো সক্রিয়৷ ফলে জাতির মধ্যে একটা বিভাজন স্পষ্ট৷ এটার অবসান ঘটা প্রয়োজন৷ তবে সেটা আপোস করে নয়, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সবখানে প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে সম্ভব৷’’

রাজনৈতিক বিশ্লেষক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক ড. শান্তনু মজুমদার মনে করেন, বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার হয়েছে৷ যুদ্ধাপরাধের বিচার চলমান৷ এগুলো খুব বড় প্রাপ্তি রাজনৈতিক দিক থেকে৷  তার কথা, ‘‘একটি ছোট দেশে বিপুল জনসংখ্যা নিয়ে যে অর্থনৈতি অগ্রগতি হচ্ছে সেটা বড় ধরনের সাফল্য৷” তবে তিনি মনে করেন,"বাংলাদেশে গণতন্ত্রের যে ঘাটতি সেটাকে বিশ্ব প্রেক্ষাপট থেকে দেখতে হবে৷ বাংলাদেশে বিগত দুইটি নির্বাচন ভালোভাবে হয়নি৷ কারা এর জন্য দায়ী তার চেয়ে বড় কথা হলো এখন আমাদের প্রয়োজন রাজনৈতিক ও গণতান্ত্রিক উন্নয়ন৷ আমাদের মনে রাখতে হবে এই ৫০ বছরে আমরা দুইবার দীর্ঘ সময় ধরে সামরিক শাসনের মধ্যে ছিলাম৷’’

তার মতে, ‘‘বাংলাদেশের কিছু মানুষের কাছে মুক্তিযুদ্ধটাও নেগোশিয়েবল৷ তারা ৩০ লাখ শহীদের সংখ্যা কমিয়ে তিন লাখ করতে পারলে খুশি হয়৷ এই মানসিকতা জাতীয় ঐক্যের পথে অন্তরায়৷’’

‘মধ্যবিত্ত তার ক্ষমতা হারিয়েছে’

This browser does not support the audio element.

বাংলাদেশে গণতন্ত্র,মানবাধিকার এবং বিচার ব্যবস্থার এ অবস্থা  একদিনে হয়নি৷ বিভিন্ন সময় যারা দেশ শাসন করেছেন তারা কম বেশি দায়ী৷ তবে এই সময়ে সঙ্কট সবচেয়ে বেশি বলে মানবাধিকার কর্মী এবং আইন ও সালিশ কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক নূর খান৷ তার মতে,‘‘এখন মানবাধিকার, গণতন্ত্র, ভোটাধিকার ও বাক স্বাধীনতা খুব খারাপ পর্যায়ে রয়েছে৷ এগুলোর উন্নয়ন না হলে আর কোনো উন্নয়ন টেকসই হয় না৷’’

বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়ন হচ্ছে৷ তাদের শিক্ষার হার বাড়ছে৷ নারীরা শুধু চাকরি করছেন না , তারা উদ্যোক্তাও হচেছন৷ নারী নেত্রী অ্যাডভোকেট এলিনা খান বলেন,‘‘নারীদের এইসব বিষয়ে উন্নয়ন হচ্ছে৷ তবে এখনো আমরা উন্নত পর্যায়ে পৌঁছতে পারিনি৷ নারীর প্রতি সহিংসতা, নির্যাতন বরং আরো বেড়েছে৷ নারী উন্নয়নের স্বাধীন চলকে এখনো পরিণত হতে পারেনি৷ তাকে এখনো ঠেলে এগিয়ে নিতে হয়৷ তাই এটাকে আমরা উন্নত অবস্থা বলতে পারি না৷’’

দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা,চিকিৎসা খাতেরও উন্নয়ন হয়েছে৷ কিন্তু এইসব উন্নয়নের বিপরীতে দুর্নীতি আর অর্থ পাচারও বেড়ছে  বলে জানান বিশ্লেষকেরা৷ আর সুশাসনের সংকটের মূলে এটাও বড় কারণ৷ আফসান চৌধুরী মনে করেন, এটা আগেও ছিলো৷ এখন অর্থনীতি বড় হয়েছে তাই দুর্নীতি আর অর্থ পাচারের পরিমাণও বেড়েছে৷ তারপরও গ্রাম শক্তিশালী হয়েছে৷ করোনায় এক কেটি মানুষ গ্রামে গিয়েছে৷ গ্রাম তাদের আশ্রয় দিয়েছে৷ শহর কিন্তু পারেনি৷

কিন্তু ড. নাজনীন আহমেদের মতে, ‘‘বাংলাদেশের উন্নয়নের পথে সুশাসনের অভাবই এখন সবচেয়ে বড় বাধা৷ আর এটার পেছনে রাজনৈতিক নয়, বরং অর্থবিত্তের ক্ষমতাই বেশি সক্রিয়৷ সব কিছু তাদের কাছে যায়৷ উন্নয়নের সুফল সাধারণ মানুষের যেভাবে পাওয়ার কথা ছিলো তারা সেভাবে পাচ্ছে না৷”

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ