স্বাধীনতার ৫০ বছর: মুক্তিযোদ্ধাদের প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি
সালেক খোকন ঢাকা
৩১ মার্চ ২০২১
একাত্তরে ছেলেকে বাঁচানোর অপরাধে শহীদ হন এক বাবা৷ সেই ছেলে বীর মুক্তিযোদ্ধা নৌ কমান্ডো মো. শাহজাহান কবির (বীর প্রতীক) ক্ষোভের সঙ্গে কয়েকটি প্রশ্ন তুলে ধরেছেন৷
বিজ্ঞাপন
রাষ্ট্র কি শহীদদের তালিকা করেছে? শহীদদের আত্মত্যাগের ইতিহাস তুলে এনে কি প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে পেরেছে?
একাত্তরের ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে মো. শাহজাহান কবির বলেন, ‘‘আমার বাবা মো. ইব্রাহীম বিএবিটি, চাঁদপুরের সফরমালি হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক ছিলেন৷ অপারেশন জ্যাকপটের আওতায় চাঁদপুর নদীবন্দরে নৌ অপারেশনের আগে প্রথম উঠেছিলাম নিজ বাড়িতে, চাঁদপুরের দাশাদিতে৷ অপারেশন শেষে বাড়িতেই আত্মগোপনে থাকি৷ এ খবর রাজাকারদের মাধ্যমে পেয়ে যায় পাকিস্তানি সেনারা৷ একাত্তরে স্কুল খোলা রাখার সরকারি নির্দেশ অমান্য করে বাবা সফরমালি স্কুল বন্ধ রেখেছিলেন৷ এ নিয়েও ক্ষিপ্ত ছিল ওরা৷’’
‘‘১৭ আগস্ট ১৯৭১, সকালবেলা৷ চার পাঁচটা নৌকায় বাড়ির চারপাশ ঘেরাও দেয় ওরা৷ অতঃপর আমার সঙ্গে বাবাকেও বেঁধে পিটাতে থাকে৷ বুটের লাথিতে যন্ত্রণায় তিনি বাঁকা হয়ে যান৷ বাবাকে ওরা জিজ্ঞেস করে– ‘নৌ কমান্ডোরা কোথায়?’
মার খেয়েও তিনি মুখ খোলেন না৷ বাড়ি সার্চ করে কোনো অস্ত্র পায় না৷ ফলে আমাদের বেঁধে নৌকায় তুলে নেয়৷
৫০ বছরেও ধর্মনিরপেক্ষতা ও গণতন্ত্র না পাওয়ার আক্ষেপ
বিশ্বের বুকে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের স্থান করে নেয়ার ৫০ বছর পূর্তিতে এ দেশের অগ্রযাত্রায় মুক্তিযোদ্ধারা আনন্দিত৷ কিন্তু অনেকে মনে করেন এখনো ধর্মনিরপেক্ষতা এবং আইনের শাসন পুরোপুরি প্রতিষ্ঠিত হয়নি, এখনো গন্তব্য বহুদূর৷
ছবি: picture alliance/Pacific Press Agency/B. H. Rana
‘সঠিক ইতিহাস প্রজন্ম যেন জেনে নেয়’
বরিশালের সৈয়দ আবদুল মালেক একাত্তরে যুদ্ধ করেন নয় নম্বর সেক্টরে৷ ডান পায়ে গুলি লাগে৷ এখনও স্বাভাবিকভাবে হাঁটতে পারেন না৷ ১৯৭৩ সালে ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে যোগ দেন পটুয়াখালিতে, দীর্ঘ কর্মজীবন শেষে অবসরে যান সচিব হিসেবে৷ তিনি বলেন, ’’দেশের জমি কমেছে, মানুষ বেড়েছে, তবুও খাদ্যে স্বয়ংসম্পন্ন আমরা৷ কর্মসংস্থান ও আয় বেড়েছে৷ এগুলো দেখলেই তৃপ্ত হই৷ তবে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাসটা প্রজন্ম যেন জেনে নেয়৷’’
ছবি: Salek Khokon/DW
‘বাংলাদেশ পেয়েছি, এটাই বড় পাওয়া’
সাব-সেক্টর কমাণ্ডার মাহফুজ আলম বেগ ছিলেন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর স্পেশাল সার্ভিস গ্রুপের এলিট কমান্ডো৷ একাত্তরে কৌশলে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে পালিয়ে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন৷ স্বাধীনতার পর চাকরি জীবন শুরু করেন, সবশেষ পানি উন্নয়ন বোর্ডের পরিচালকের দায়িত্বে ছিলেন৷ এখনও স্বপ্ন দেখেন দেশকে নিয়ে৷ বললেন, ‘‘বাংলাদেশ পেয়েছি, এটাই বড় পাওয়া৷ মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য এর চেয়ে বড় সফলতা আর কী আছে!’’
ছবি: Salek Khokon/DW
‘অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ এখনো হয়নি’
রমা রানী দাস ট্রেনিং নেন ক্যাপ্টেন মাহফুজ আলম বেগের কাছে৷ নয় নম্বর সেক্টরের অধীনে সাতক্ষীরা, ভোমরা, আসাশুনিতে গুপ্তচরের ভূমিকা পালন করতেন৷ স্বাধীনতার পর ঝালকাঠি হরচন্দ্র সরকারি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে সুনামের সঙ্গে শিক্ষকতা করেন৷ দুই মেয়ে ও এক ছেলে নিজ নিজ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত৷ তবে রমা রানী বলেন, ‘‘স্বাধীন দেশে ভালো আছি৷ তবে অসাম্প্রদায়িক দেশের স্বপ্ন দেখেছিলাম৷ সেটা এখনও হয়নি৷’’
ছবি: Salek Khokon/DW
‘ধর্মনিরপেক্ষতা বাধার মুখে পড়েছে’
ডা. মোহাম্মদ সিরাজুল হক একাত্তরে ধলেশ্বরীতে জোনাল কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করেন৷ স্বাধীনতার পর যোগ দেন চিকিৎসা পেশায়৷ স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও প্রথম ট্রেজারার তিনি৷ সব মিলিয়ে তৃপ্ত হলেও একটা আক্ষেপ আছে তার, ‘‘বঙ্গবন্ধু টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া মুসলমানদের নিয়েই একটা ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন৷ স্বাধীনতার ৫০ বছর পরে সেই ধর্মনিরপেক্ষতার দিকটা বাধার মুখে পড়েছে৷’’
ছবি: Salek Khokon/DW
মানুষের ‘মানুষ’ পরিচয়টাই যেন বড় হয়
সিলেটের যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা রুহুল আহম্মদ বাবু একাত্তরে ট্রেনিং নেন আসামে৷ চার নম্বর সেক্টরে দিলখুশা চা বাগান অপারেশনে সাবমেশিন গানের গুলিতে তার বাম পা ক্ষতিগ্রস্ত হয়৷ স্বাধীনতার পর ব্যবসা শুরু করেন৷ এখন সানি স্যোলার লিমিটেড নামক একটি প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী৷ তিনি বলেন, ‘‘আমি দেখতে চাই না– তুমি হিন্দু কি মুসলমান৷ দেখতে চাই, তুমি মানুষ কিনা, তুমি বাংলাদেশকে ভালবাসো কিনা, তুমি বাঙালি কিনা৷’’
ছবি: Salek Khokon/DW
‘গণতন্ত্রের নামে যেন রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত না হয়’
মো. সাইফুল আলম আট নম্বর সেক্টরে গেরিলা যোদ্ধা ছিলেন৷ স্বাধীনতার পর আইনজীবী হিসেবে কাজ শুরু করেন৷ সহকারি জজ, জেলা জজের দায়িত্ব শেষে দুদকের মহাপরিচালক হিসাবে অবসরে যান৷ তিনি বলেন, ‘‘আইনের শাসন প্রতিষ্ঠাই হচ্ছে সবচেয়ে বড় কাজ৷ গণতন্ত্রের নামে যেন পরোক্ষ রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা না পায় সেদিকেও খেয়াল রাখা দরকার৷ ফাইনান্সিয়াল অফেন্স, আর সেক্সচুয়াল অফেন্স কমিয়ে আনতে না পারলে সোনার বাংলা হবে না৷’’
ছবি: Salek Khokon/DW
‘তৃণমূলের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস তুলে ধরতে হবে’
অধ্যাপক মো. আবুল হোসেন একাত্তরে সম্মুখ যুদ্ধে অংশ নেন দুই নম্বর সেক্টরে৷ নোয়াখালি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক ছিলেন এই মুক্তিযোদ্ধা, উপ-উপাচার্য ছিলেন চার বছর৷ অবসরের পরও ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে অনারারি প্রফেসর হিসেবে কাজ করছেন৷ বললেন, ‘‘তৃণমূলের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস তুলে আনাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ৷ মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়ার উদ্যোগ সরকারকেই নিতে হবে৷’’
ছবি: Salek Khokon/DW
‘মুক্তিযুদ্ধের ছবিগুলো প্রজন্ম দেখুক’
মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে করিমপুর ইয়ুথ ক্যাম্পের সঙ্গে সহকারি প্রশিক্ষক হিসেবে যুক্ত হন যুদ্ধ-আলোকচিত্রী ও মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হামিদ রায়হান৷ পরে বাংলাদেশ ভলান্টারি সার্ভিসেস কোর-এর আলোকচিত্রী হিসেবে যোগ দেন৷ মুক্তিযুদ্ধের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় ও ঘটনা ক্যামেরায় ধরে রেখেছেন৷ এই আলোকচিত্রী বলেন, ‘‘মুক্তিযুদ্ধের ছবিগুলো প্রজন্ম দেখুক৷ ছবি দেখে প্রজন্ম ভাবুক কত কষ্ট আর ত্যাগের বিনিময়ে আমার স্বাধীনতা পেয়েছি৷’’
ছবি: Salek Khokon/DW
8 ছবি1 | 8
আমার হাত ও পা বাঁধা৷ নৌকায় বাবাকে পাশেই ফেলে রাখছে৷ ব্যাথায় উনি গোঙ্গাচ্ছেন৷ জুটমিলের লেবার সর্দার ছিল বাচ্চু রাজাকার৷ সেও নৌকায়৷ বুড়ো মানুষ দেখে আরেক রাজাকার বাবার হাত ও পায়ের বাঁধন খুলে দেয়৷ পাকিস্তানিদের বুটের আঘাতে তার সারা শরীর ফুলে গিয়েছিল৷
নৌকায় ওরা ব্যস্ত থাকে লুট করে আনা টাকা ও সোনা-রুপা নিয়ে৷ সে সুযোগে বাবা কানে কানে বলেন– ‘তুই এখান থেকে পালা৷’ কৌশলে আমার হাত ও পায়ের বাঁধনও খুলে দেন৷ অস্ত্র হাতে নৌকার দুই পাশে দুজন পাকিস্তান সেনা দাঁড়ানো৷ এক সাইডে একটারে পা ধরে পানিতে ফেলে দিই৷ এরপরই ঝাপ দিই৷ ওরা ব্রাশ ফায়ার করে৷ কিন্তু তার আগেই চলে যাই দূরে৷
খানিক পরেই কানে আসে কয়েকটি গুলির শব্দ৷ বুকের ভেতরটা তখন খামচে ধরে৷ ছেলেকে বাঁচানোর অপরাধে শহীদ হয়েছেন বাবা৷ বাবার দেওয়া জীবন নিয়েই বেঁচে আছি ভাই৷ একাত্তরে এমন হাজারো পিতা শহীদ হয়েছেন৷ স্বাধীনতার ৫০ বছরে আমরা কি মনে রেখেছি তাঁদের? রাষ্ট্র কি একাত্তরের শহীদদের তালিকা করেছে? শহীদদের আত্মত্যাগের ইতিহাস তুলে এনে প্রজন্মের কাছে কি তুলে ধরতে পেরেছে?
একাত্তরে বাবার শহীদ হওয়ার ইতিহাস তুলে ধরে ক্ষোভের সঙ্গেই প্রশ্নগুলো তোলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা নৌ কমান্ডো মো. শাহজাহান কবির (বীর প্রতীক)৷
যুদ্ধ করেই দেশ ও স্বাধীনতা এনেছেন বীর মুক্তিযোদ্ধারা৷ শহীদ ও যুদ্ধাহতদের রক্ত দিয়ে স্বাধীন দেশের মানচিত্র তৈরি করেছেন তারা৷ তাই আমাদের দেশের মানচিত্র রক্তের মানচিত্র, ৩০ লাখ শহীদের মানচিত্র, দুই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ের মানচিত্র৷ এটাই পরম পাওয়া, তৃপ্তির জায়গা৷ ফলে এটাও জরুরী জাতির বীর সন্তানেরা কোন দেশের স্বপ্ন দেখেছেন, সেই স্বপ্ন কতটা বাস্তবায়িত হয়েছে তা জানা৷
মুক্তিযুদ্ধ এবং যুদ্ধ-পরবর্তী কিছু ঐতিহাসিক মুহূর্ত
বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে বিশেষ কিছু ছবি প্রকাশ করেছিল সংবাদ সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি)৷ দেখে নিন অনেক ত্যাগের বিনিময়ে পাওয়া স্বাধীনতার ইতিহাস...
ছবি: AP/picture alliance
‘এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’
৭ই মার্চ ঢাকার রমনায় অবস্থিত রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) অনুষ্ঠিত জনসভায় শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ভাষণ৷ লাখো মানুষের উপস্থিতিতে এই ভাষণে স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিলেন তিনি৷
ছবি: AP/picture alliance
সশস্ত্র মুক্তিযোদ্ধা
১৯৭১ সালের ২রা এপ্রিল, যশোরে একটি রিকশায় অস্ত্র হাতে দুই মুক্তিযোদ্ধা৷
ছবি: AP/picture alliance
মুক্তিবাহিনীর মার্চ
এটাও ২রা এপ্রিলের ছবি৷ যশোরে মুক্তিসেনারা মার্চ করছেন৷
ছবি: AP/picture alliance
প্রত্যয়ী মুক্তিসেনা
১৯৭১ সালের ৮ এপ্রিলের এই ছবিতে কুষ্টিয়ায় মুক্তিবাহিনীর সদস্যরা জয় বাংলা শ্লোগান দিচ্ছেন৷
ছবি: Michel Laurent/AP/picture alliance
সবার মুখে ‘জয় বাংলা’
১৯৭১ সালের ৯ এপ্রিলের এই ছবিটিতে পাংশা গ্রামে শত শত মানুষ ‘জয় বাংলা’ শ্লোগান দিচ্ছেন৷
ছবি: Michel Laurent/AP/picture alliance
রাজধানী ছাড়ছে আতঙ্কিত মানুষ
১৯৭১ সালের ১১ই এপ্রিলের ছবি এটি৷ বাসে করে রাজধানী ছাড়ছেন সাধারণ মানুষ৷
ছবি: Michel Laurent/AP/picture alliance
ঘর ছেড়ে পরবাসে
১৯৭১ সালের ১৯শে এপ্রিলের ছবি এটি৷ মেহেরপুর থেকে ভারতে শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নিতে যাচ্ছেন এই শরণার্থীরা৷
ছবি: AP/picture alliance
রণাঙ্গনে ভারতীয় সেনা
তখন ভারতে হামলা চালিয়েছে দিশাহারা পাকিস্তান৷ তাই রণাঙ্গনে সরাসরি নেমে পড়ে ভারতীয় সেনা৷ ১৯৭১ সালের ৭ ডিসেম্বরের এই ছবিতে পূর্ব পাকিস্তানের ভেতরে দেখা যাচ্ছে ভারতীয় সেনাদের৷
ছবি: AP/picture alliance
যশোর রোডে ভারতীয় সেনা
ছবিটি ১৯৭১ সালের ৮ ডিসেম্বরের৷ যশোর থেকে ঢাকা যাওয়ার পথে অবস্থান নিয়েছে ভারতীয় সেনারা৷
ছবি: AP/picture alliance
জনসমাবেশ
১৯৭১ সালের ১১ ডিসেম্বরের ছবি এটি৷ বিজয়ের মাত্র পাঁচ দিন আগে একটি জনসমাবেশে শ্লোগান দিচ্ছেন সাধারণ মানুষ৷ একজন মুক্তিযোদ্ধা তাদের শান্ত হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছেন৷ পেছনে সিটি হলে ছাদের উপর টহল দিচ্ছে ভারতীয় সেনা৷
ছবি: AP/picture alliance
বিদেশিদের দেশে ফেরা
১৯৭১ সালের ১২ ডিসেম্বরের ছবি এটি৷ ঢাকায় পৌঁছেছে ব্রিটিশ বিমান৷ বিদেশিদের ঢাকা থেকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে৷ ৬ ঘণ্টার অস্ত্রবিরতির সময় বিদেশিরা এই বিমানে করে ঢাকা ছাড়েন৷
ছবি: AP/picture alliance
ভারতীয় সেনাদের স্বাগত
১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে প্রবেশ করছে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ট্যাংক, বগুড়ার দিকে রওনা হওয়ার পথে তাদের স্বাগত জানাচ্ছে সাধারণ গ্রামবাসী৷
ছবি: AP/picture alliance
আত্মসমর্পণ
১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিকেল ৪টা ৩১ মিনিটে ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে পাকিস্তানের জেনারেল নিয়াজী পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আত্মসমর্পণের দলিলে সই করছেন৷ পাশে আছেন ভারত-বাংলাদেশ যৌথ বাহিনীর কমান্ডার লে. জে. জগজিৎ সিং অরোরা৷ সাক্ষী হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের উপ-সেনাপ্রধান এয়ার কমোডর এ কে খন্দকার৷
ছবি: AP/picture alliance
রাজাকারের শাস্তি
ছবিটি ১৯৭১ সালের ১৮ ডিসেম্বরে ঢাকায় তোলা৷ মুক্তিবাহিনীর হাতে মারা যাওয়ার আগে তিন রাজাকারসহ উপস্থিত সবাই আল্লাহ’র কাছে হাত তুলে প্রার্থনা করছেন (নীচে বসা তিন রাজাকার)৷ পাঁচ হাজার মানুষের সামনে রাজাকারদের ‘মৃত্যুদণ্ড’ কার্যকর করা হয়৷
ছবি: Horst Faas/AP/picture alliance
বিহারি ক্যাম্প
১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের সময় ভারতের বিহার থেকে উর্দুভাষী মুসলমানরা পূর্ব পাকিস্তানে চলে আসেন৷ একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় তাদের অনেকেই পশ্চিম পাকিস্তানের সমর্থক ছিলেন৷ যুদ্ধে মুক্তিবাহিনীর হাতে অনেকে মারাও যান৷ এই ছবিটি ১৯৭১ সালের ২২ ডিসেম্বর ঢাকার মোহাম্মদপুরের বিহারি ক্যাম্পে তোলা৷
ছবি: Michel Laurent/AP/picture alliance
বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন
১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারির ছবি এটি৷ পাকিস্তানের বন্দিত্ব থেকে মুক্তি পেয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যুদ্ধ-বিধ্বস্ত স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের মাটিতে পা রাখেন৷ ঢাকায় পৌঁছানোর পর লাখো মানুষ তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে তাঁকে সংবর্ধনা জানায়৷ ১০ লাখ মানুষের উপস্থিতিতে ভাষণ দেন তিনি৷
ছবি: Michel Laurent/AP/picture alliance
স্বাধীনতার পর কলকাতায় শেখ মুজিবুর রহমান
এই ছবিটি ১৯৭২ সালের ৬ ফেব্রুয়ারির৷ কলকাতা বিমানবন্দরে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী স্বাগত জানাচ্ছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমানকে৷
ছবি: AP/picture alliance
17 ছবি1 | 17
স্বাধীনতা লাভের পর একটা বড় সময় ধরে ক্ষমতায় ছিল স্বাধীনতার চেতনা বিরোধী দল ও সামরিক সরকার৷ তখন রাজাকাররা পুর্নবাসিত হয়েছে, স্বাধীন দেশের লাল-সবুজের পতাকাও উড়েছে তাদের গাড়িতে৷ এটি যেমন ইতিহাসের কলন্কজনক অধ্যায় তেমনি ওইসময়ে ইতিহাস বিকৃতিও ঘটেছে নগ্নভাবে৷ জয় বাংলা ও বঙ্গবন্ধুর কথা মুখেই আনাই যায়নি৷ ফলে কয়েক প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের ভুল ইতিহাস জেনেই বড় হয়েছে৷ ফলে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে আজও বিভ্রান্তি সৃষ্টি করার চেষ্টা চলে৷ যার বেশির ভাগ ঘটছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে৷
বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা দীর্ঘদিন রাষ্ট্রক্ষমতায়৷ তার সময়ে সম্মানিত হয়েছেন বীর মুক্তিযোদ্ধারা৷ ভাতা বৃদ্ধি, আবাসনসহ নানা সুবিধা পাচ্ছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারগুলো৷ বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার ও যুদ্ধাপরাধী রাজাকারদের বিচার করে চিহ্নিতদের ফাঁসির রায়ও কার্যকর করা হয়েছে, বিচার এখনও চলমান ৷ এতে মুক্তিযোদ্ধাদের বুকের ভেতর জমে থাকা কষ্টের পাহাড় অনেকটাই নেমে গেছে৷ এটি সরকারের সাহসী উদ্যোগ যা জাতির জনকের কন্যা ক্ষমতায় না থাকলে সম্ভব হতো না বলে মনে করেন বীর মুক্তিযোদ্ধারা৷ তাদের ভাষায়-‘কষ্টের সময়টা মুছে দিছে শেখের মাইয়া'৷
বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নই ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের স্বপ্ন৷ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সিদ্ধার্থ শংকর রায়কে বলেছিলেন– ‘আমি বাংলাদেশে ধর্মনিরপেক্ষতার একটা বীজ পুতে রেখে গেলাম৷ এই বীজ যেদিন উৎপাটন করা হবে, সেদিন বাংলাদেশ ধ্বংস হয়ে যাবে৷’ কিন্তু আমরা কি বঙ্গবন্ধুর সেই স্বপ্নের পথে এগোচ্ছি?
একাত্তরে সাধারণ মানুষ, আদিবাসীসহ সকল ধর্মের লোক এক হয়ে মুক্তিযুদ্ধ করেছে একটি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের জন্য৷ মুক্তিযোদ্ধারাও চেয়েছিলেন একটি ধর্মনিরপেক্ষ দেশ৷ কিন্তু এখন তা ধর্মান্ধতার দিকে এগোচ্ছে বলেন মনে করেন অনেকেই৷ কেননা জাতির জনকের ভাস্কর্য ভাঙার মতো ঘটনাও ঘটেছে এ সময়ে৷ থেমে নেই হিন্দু বাড়িতে হামলা, প্রতিমা ভাঙা, ভাস্কর্য ভাঙার ঘটনাও৷ ধর্মনিরপেক্ষতা মানে যে ধর্মহীনতা নয়, এটি পরিস্কারভাবে বলেন গেছেন জাতির জনক৷ এসব বিষয়ে সরকার এখনই জিরো টলারেন্স না দেখালে ভবিষ্যতে সমস্যার মুখে পড়বে বলে মনে করেন মুক্তিযোদ্ধারা৷ তাদের অকপট বক্তব্য- ‘তুমি হিন্দু কি মুসলমান- দেখতে চাই না৷ দেখতে চাই তুমি বাংলাদেশকে ভালবাস কিনা৷ তুমি বাঙালি কিনা৷’
আলোকচিত্রীর ক্যামেরায় একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ
১৯৭১ সালে ভলান্টিয়ার সার্ভিস কোরের ফটোগ্রাফার হিসেবে শরণার্থী শিবির ও মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ শিবিরের প্রায় সাড়ে ৫০০ ছবি তুলেছেন আলোকচিত্রী আবদুল হামিদ রায়হান৷ ছবিঘরে দেখুন তার কয়েকটি৷
২৫ মার্চ, কুষ্টিয়া
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ই মার্চের ভাষণের পর থেকেই উত্তপ্ত হতে থাকে কুষ্টিয়া৷ ২৩ মার্চ ইসলামিয়া কলেজ মাঠে যুদ্ধের প্রস্তুতিতে শোডাউন করেন ছাত্র-মজুর-জনতা৷ ২৫ মার্চ ১৯৭১, কুষ্টিয়া হাইস্কুল মাঠে হয় আরেকটি সমাবেশ৷ ছবিটি সেই সময়ের৷
পতাকা উত্তোলন
কুষ্টিয়া হাইস্কুল মাঠের সেদিনের সমাবেশে ছাত্র নেতারা স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করেন৷ সেখানে উপস্থিত ছিলেন গোলাম কিবরিয়া, আব্দুর রউফ চৌধুরী, নূরে আলম জিকো প্রমুখ৷ সেই আন্দোলনে হামিদ রায়হান নিজে শুধু যুক্তই থাকেননি ক্যামেরায় ছবিও তুলে রেখেছেন৷
ছবি: Abdul Hamid Raihan
তির-ধনুকে প্রস্তুতি
কয়েক হাজার মানুষ সেদিন জড়ো হয়েছিলেন কুষ্টিয়া হাইস্কুল মাঠে৷ পাকিস্তানী বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধের প্রস্তুতি হিসেবে লাঠি, তির-ধনুক, দা ও নকল রাইফেল নিয়ে জড়ো হন তারা৷ শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে নানা বয়সের মানুষ অংশ নেন সেই সমাবেশে৷
ছবি: Abdul Hamid Raihan
শিকারপুর ট্রেনিং ক্যাম্প
প্রশিক্ষণ নিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা তখন বিভিন্ন জায়গায় অপারেশন শুরু করেছেন৷ পুরোদমে চলছে যুদ্ধ৷ বাংলাদেশ ভলান্টিয়ার সার্ভিস কোর কাজ করছিল বিভিন্ন শরণার্থী ক্যাম্পে৷ ১৫ সেপ্টেম্বর ভলান্টিয়ার সার্ভিস কোরের ফটোগ্রাফার হিসেবে যোগ দেন আবদুল হামিদ রায়হান৷ ভারতের পশ্চিমবঙ্গের নদিয়া জেলার শিকারপুর ট্রেনিং ক্যাম্পে মুক্তিযোদ্ধাদের অনুশীলনের এই ছবিটি তিনি তুলেছেন ২০ নভেম্বরে৷
ছবি: Abdul Hamid Raihan
প্রশিক্ষণে মুক্তিযোদ্ধারা
একই সময়ে শিকারপুর ট্রেনিং ক্যাম্পে অনুশীলনরত আরো কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা৷ আবদুল হামিদ রায়হান ঘুরে বেড়িয়েছেন বিভিন্ন ট্রেনিং ক্যাম্প, শরণার্থী ক্যাম্প ও মুক্তাঞ্চলগুলোতে৷ পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর হামলায় ধ্বংস হওয়া সেতু, কালভার্ট ও ভবনের ছবিও উঠে এসেছে তার ক্যামেরায়৷ সেসব ছবি স্বাধীনতার পক্ষে জনমত গড়ে তুলতে সহায়ক হয়েছিল।
পাক সেনাদের রকেট বোমা
এই ছবিটি তোলা হয়েছে ১৯৭১ সালের ১১ ডিসেম্বর৷ যশোরের পিকনিক কর্নারের পাক বাহিনীর ফেলে যাওয়া তাজা রকেট বোমার পাশে দাঁড়িয়ে আছে দুই শিশু৷
রাজাকার আটক
চার রাজাকারকে আটক করেছেন মুক্তিযোদ্ধারা৷ একজন মুক্তিযোদ্ধার হাতে একটি পোস্টার দেখা যাচ্ছে যাতে লেখা, ‘‘রক্তের ঋণ রক্তে শুধবো, দেশকে এবার মুক্ত করবো৷’’ ছবিটি কুষ্টিয়া থেকে তুলেছিলেন আবদুল হামিদ রায়হান৷
এ এইচ এম কামরুজ্জামানের পরিদর্শন
সাতক্ষীরার কালিগঞ্জে মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্প পরিদর্শনে আসেন তৎকালীন অস্থায়ী সরকারের স্বরাষ্ট্র, কৃষি এবং ত্রাণ ও পুনর্বাসনমন্ত্রী এ এইচ এম কামরুজ্জামান৷ তার সঙ্গে ছিলেন মেজর জলিল, ব্যারিস্ট্রার আমীর-উল-ইসলাম, মেজর হায়দার প্রমুখ৷ আবদুল হামিদ রায়হান এই ছবিটি তুলেছেন ০২ ডিসেম্বর৷
স্বেচ্ছাসেবীদের দল
ভারতে শরণার্থী ক্যাম্পগুলোতে স্বেচ্ছাসেবীদের নিয়োগ দিতো বাংলাদেশ ভলান্টিয়ার সার্ভিস কোর৷ ক্যাম্পগুলোতে স্কুল চালানো, স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা সেবা দিতেন তারা৷ ক্যাম্পের যুবক-যুবতীদের সংগঠিত করে বিভিন্ন কাজে যুক্ত রাখতেন স্বেচ্ছাসেবীরা৷ ছবিতে ভলান্টিয়ার সার্ভিস কোরের সঙ্গে যুক্তদের একাংশকে দেখা যাচ্ছে৷
অস্ত্র হাতে মুক্তিযোদ্ধা
এক মুক্তিযোদ্ধার বন্দুক তাক করা এই ছবিটি তোলা সাতক্ষীরার দেবহাটায়৷ কয়েকবছর আগে দৃক গ্যালারিতে ছবিটি প্রদর্শিত হয়৷ সেটি দেখে ছবির মুক্তিযোদ্ধাকে খবর দেন তার এক নিকটাত্মীয়৷ আবদুল হামিদ রায়হান জানান, ‘‘নারায়ণগঞ্জ থেকে এসে একাত্তরে নিজের ছবি দেখে আমাকে কান্নায় জড়িয়ে ধরেন ওই মুক্তিযোদ্ধা৷ তখনই জানি তার নাম মোসলেহ উদ্দিন৷’’
স্বীকৃতি পাওয়ার উল্লাস
১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয় ভারত৷ সেদিন কলকাতায় মিছিল বের করেন বাংলাদেশিরা৷ একটি মিছিলে প্ল্যাকার্ড হাতে ট্রাকের ওপর দাঁড়িয়ে আছেন কবি নির্মলেন্দু গুণ৷
৫৪০টি ছবি
একাত্তর সালে আবদুল হামিদ রায়হান তার ক্যামেরা দিয়ে সংগ্রহ করেছেন মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহাসিক সচিত্র দলিল৷ শরণার্থী ক্যাম্প ও সীমান্ত এলাকার বিভিন্ন অ্যাকশন ক্যাম্পে প্রায় সাড়ে ৫০০ ছবি তোলেন তিনি৷ সেগুলো ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সংস্থায় পাঠানো হতো৷ ছবি দিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে বিশ্বজনমত গড়ে তোলায় ভূমিকা রাখেন এই আলোকচিত্রী মুক্তিযোদ্ধা৷
ছবি: Salek Khokon
12 ছবি1 | 12
স্বাধীনতার এতো বছরেও আমরা রাজাকার ও যুদ্ধাপরাধীদের তালিকা প্রণয়ন করতে পারিনি৷ যা করা দরকার ছিল প্রথমেই৷ তৈরি হয়নি বীর মুক্তিযোদ্ধাদের একটি নির্ভুল তালিকাও৷ এ জন্য নিশ্চয়ই বীর মুক্তিযোদ্ধারা দায়ী নন৷ কিন্তু এখন নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্থ, মানসিক ও সামাজিক চাপের মুখে পড়ছেন তারাই৷ সম্প্রতি মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাইয়ে বাতিল তালিকায় নিজের নাম দেখতে পেয়ে স্ট্রোক করে মারা গেছেন নওগাঁর ধামইরহাটের বীর মুক্তিযোদ্ধা সাহার উদ্দীন৷ অথচ সেখানকার যুদ্ধকালীন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ফরমুদ হোসেন বলছেন- উনি একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন৷ তাহলে এই বীর মুক্তিযোদ্ধার মৃত্যুর দায় কি রাষ্ট্র এড়াতে পারে?
যাচাই-বাছাই কমিটিতে যেসকল মুক্তিযোদ্ধারা থাকেন৷ তারা ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বের বা স্বার্থের উধ্বে কতটুকু থাকতে পারছেন তা নিয়েও প্রশ্নে উঠেছে৷ মুক্তিযোদ্ধাদের বিভিন্ন রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের বিষয়টিও যাচাই-বাছাইয়ে সামনে আনা হচ্ছে৷ আবার এ নিয়ে অর্থ লেনদেনের বিষয়ও উঠে আসছে গণমাধ্যমে৷ যা কেনোভাবেই প্রত্যাশিত নয়৷
অনেক মুক্তিযোদ্ধাই এখন সরকারের কাছে জানতে চান, এটাই শেষ যাচাই-বাছাই কিনা৷ প্রায় ৭০ বছর বয়সী এক বীর মুক্তিযোদ্ধা ক্ষোভের সঙ্গে বলেন- ‘মুক্তিযুদ্ধ করে কি ভুল করেছি? একাত্তরে যুদ্ধ করার অপরাধে আর কতবার যাচাই-বাছাইয়ের মুখোমুখি হতে হবে৷ সম্মানের প্রয়োজন নেই৷ বরং এমন অপমান করা বন্ধ করেন৷’
মুক্তিযোদ্ধা সনদ ভুয়া প্রমাণিত হওয়ার পরও সরকারের ছয় সচিবের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি৷ বরং তাদের সনদ বাতিল করে স্বেচ্ছায় অবসরে যাওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে মাত্র৷ সনদ বাতিল তো কোনো শাস্তি নয়৷ বরং এর সঙ্গে যুক্ত সকলকেই আইনের আওতায় আনা প্রয়োজন ছিল৷ ফলে এটি নিয়ে জনমনে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে৷ পাশাপাশি মুক্তিযোদ্ধা কোটা সংশোধনের পরিবর্তে বাতিল করাতে হতাশ হয়েছেন অনেক মুক্তিযোদ্ধা পরিবারও৷
একেকজন মুক্তিযোদ্ধার জীবনের গদ্যই মুক্তিযুদ্ধের একেকটি ইতিহাস৷ অথচ তৃণমূল থেকে সে ইতিহাস তুলে আনার কাজটি হয়নি খুব বেশি৷ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অধিকাংশের বয়স এখন ষাটের ঊর্ধ্বে৷ অনেকেই মৃত্যুবরণ করেছেন৷ ফলে তাদের মৃত্যুর সঙ্গেসঙ্গেই মৃত্যু ঘটছে একটি ইতিহাসের৷ সারা দেশের বধ্যভূমি ও গণহত্যার স্থানগুলো সংরক্ষণ এবং তার ইতিহাস পরবর্তী প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার কার্যকরী উদ্যোগও নিতে হবে সরকারকে৷
একাত্তরে জঘন্যতম গণহত্যার জন্য পাকিস্তান আজও ক্ষমা চায়নি, বিচার করেনি তৎকালীন একজন জেনারেলেরও৷ তাই স্বাধীনতার ৫০ বছর উদযাপনের এই সময়ে একাত্তরে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত গণহত্যার জন্য ক্ষমা চাওয়াসহ পাকিস্তানকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর রাষ্ট্রীয় উদ্যোগই হতে পারে একটি ঐতিহাসিক ঘটনা৷