প্রত্যাশা অনুযায়ী ‘প্রতীকী' স্বাধীনতা ঘোষণা করলেও মাদ্রিদের সঙ্গে আলোচনার স্বার্থে রাজ্য বিধানসভায় আপাতত সেই সিদ্ধান্ত কার্যকর না করার ডাক দিয়েছেন স্পেনের কাটালুনিয়া রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী কারলেস পুজেমন৷
বিজ্ঞাপন
মঙ্গলবার সন্ধায় বার্সেলোনায় কাটালুনিয়া রাজ্য বিধানসভায় বহু প্রতীক্ষিত ভাষণে মুখ্যমন্ত্রী কারলেস পুজেমন বিতর্কিত গণভোটে স্বাধীনতার রায়ের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিলেন৷ অর্থাৎ তিনি কার্যত কাটালুনিয়ার স্বাধীনতা ঘোষণা করলেন৷ কিন্তু একতরফা এই ঘোষণা সত্ত্বেও মাদ্রিদে ফেডারেল সরকারের সঙ্গে সংলাপের পথও খোলা রাখতে চান তিনি৷ তাই ‘প্রতীকী' অর্থে স্বাধীনতার এই ঘোষণা সত্ত্বেও এখনই সেই সিদ্ধান্ত কার্যকর না করার ডাক দিয়েছেন পুজেমন৷
আপাতত কাটালুনিয়ার এমন ‘প্রতীকী' স্বাধীনতাও স্পেনে গভীর সংকট সৃষ্টি করেছে, এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই৷ বার্সেলোনা থেকে সংলাপের এই বার্তা মাদ্রিদে ফেডারেল সরকার গ্রহণ করবে – এমন কোনো সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না৷ মঙ্গলবারই এক সরকারি মুখপাত্র এই ঘোষণার তীব্র সমালোচনা করে সংলাপের প্রস্তাব উড়িয়ে দিয়েছেন৷ শুরু থেকেই একতরফা স্বাধীনতার প্রশ্নে কোনোরকম আলোচনার পথ বন্ধ করে দিয়েছে প্রধানমন্ত্রী মারিয়ানো রাখোই-এর সরকার৷
এমন পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী রাখোই স্পেনের আধুনিক ইতিহাসে অভূতপূর্ব পদক্ষেপ নেবার ইঙ্গিত দিয়েছেন৷ কাটালুনিয়ার রাজ্য বিধানসভা ভেঙে দিয়ে তিনি আগাম নির্বাচন ডাকতে পারেন৷ সাংবিধানিক আদালতের কাছেও সরকার এই স্বাধীনতার ঘোষণাকে অসাংবিধানিক হিসেবে নস্যাৎ করে দেবার আবেদন জানাতে পারে৷
স্পেনের পর ইউরোপে আরও বিভাজনের আশঙ্কা?
স্পেনের কাটালুনিয়া রাজ্যের স্বাধীনতার গণভোট নিয়ে বিতর্কের মাঝে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্য কিছু অঞ্চলেও বিচ্ছিন্নতার প্রয়াস উৎসাহ পাচ্ছে৷ এই সব অঞ্চলে কাটালুনিয়ার স্বাধীনতার প্রতি ব্যাপক সমর্থন দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/EPA/G. Stuart
ব্রেক্সিটের পর স্কটল্যান্ডের ভবিষ্যৎ
২০১৪ সালেই এক গণভোটে স্কটল্যান্ডের ৫৫ শতাংশ ভোটার ব্রিটেন থেকে স্বাধীনতার বিপক্ষে রায় দিয়েছিলেন৷ কিন্তু ব্রেক্সিট-পরবর্তী যুগে তাদের মতামত আবার যাচাই করতে চায় স্কটল্যান্ডের জাতীয় পার্টি৷ ইইউ-র সঙ্গে ব্রিটেনের বিচ্ছেদ সংক্রান্ত চুক্তি চূড়ান্ত হলে, এমনকি কোনো বোঝাপড়া না হলেও স্কটল্যান্ডে স্বাধীনতার প্রশ্নে গণভোট আয়োজন করতে চায় এসএনপি দল৷
ছবি: picture-alliance/dpa/EPA/G. Stuart
বেলজিয়াম থেকে ফ্লেমিশ অঞ্চলের বিদায়?
১৮৩০ সালে ফ্রান্স ও জার্মানির মাঝে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বেলজিয়াম সৃষ্টি হয়েছিল৷ ফরাসি-ভাষাভাষী দক্ষিণাঞ্চল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে এবার স্বাধীনতার চেষ্টা চালাচ্ছে উত্তরের ফ্লেমিশভাষী সমৃদ্ধ অঞ্চল৷ বেলজিয়ামের জোট সরকারের সবচেয়ে বড় দল হিসেবে জাতীয়তাবাদী এনভিএ গোষ্ঠী ২০১৯ সালের নির্বাচনে সাফল্য বাড়িয়ে স্বাধীন ফ্লেমিশ রাষ্ট্রের স্বপ্ন কার্যকর করতে চায়৷
ছবি: Reuters
স্পেনের বাস্ক অঞ্চলের সংগ্রাম
১৯৬৯ সাল থেকে স্বাধীন বাস্ক রাষ্ট্রের জন্য সশস্ত্র সংগ্রাম চালিয়েছে বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী ‘এটা’৷ চলতি বছরের এপ্রিল মাসেই এই গোষ্ঠী অস্ত্র ত্যাগ করেছে৷ শান্তিপূর্ণ পথে ফ্রান্স ও স্পেনে বাস্ক সম্প্রদায়ের মানুষের জন্য স্বাধীন রাষ্ট্র গড়তে চায় ‘সর্টু’ নামের এক রাজনৈতিক দল৷ কাটালুনিয়ার স্বাধীনতাকামীদের প্রতি স্পেনের বাস্ক অঞ্চলে বিক্ষোভ দেখা গেছে৷
ছবি: AP
নিউ ক্যালিডোনিয়ার বিদায় আসন্ন?
প্রশান্ত মহাসাগরের দক্ষিণে ফ্রান্সের শাসন থেকে মুক্তি পেতে পারে নিউ ক্যালিডোনিয়া৷ আগামী নভেম্বর মাসে সেখানে এই প্রশ্নে গণভোট আয়োজিত হচ্ছে৷ ১৮৫৩ সাল থেকে ফ্রান্সের অধীনে থাকার পর ২৮০,০০০ জনসংখ্যার এই দ্বীপমালা স্বাধীন রাষ্ট্র হয়ে উঠতে পারে৷ ১৯৯৮ সাল থেকেই নিউ ক্যালিডোনিয়া স্বায়ত্তশাসনের আরও অধিকার ভোগ করছে৷
ভূমধ্যসাগরে ফ্রান্সের কর্সিকা দ্বীপের জনসংখ্যা প্রায় ৩৩০,০০০৷ সেখানকার জাতীয় লিবারেশন ফ্রন্ট ২০১৪ সালের জুন মাসে স্বাধীনতার লক্ষ্যে সশস্ত্র সংগ্রাম ত্যাগ করেছে বটে, কিন্তু রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় স্বাধীনতা অর্জনের স্বপ্ন ত্যাগ করেনি৷ স্বায়ত্তশাসনের বেশ কিছু অধিকার সত্ত্বেও তারা তাদের লক্ষ্যে অটল রয়েছে৷
ছবি: DW/E. Bryant
ডেনমার্কের ফেরো দ্বীপ
আটলান্টিক মহাসাগরে ফেরো দ্বীপপূঞ্জে মাত্র ৪৮,০০০ মানুষের বাস৷ সেখানকার ভোটাররা ২০১৮ সালের এপ্রিল মাসে এক গণভোটে ডেনমার্ক থেকে স্বাধীনতার প্রশ্নে তাঁদের রায় জানাবেন৷ ১৯৪৮ সাল থেকে ফেরো দ্বীপ স্বায়ত্তশাসনের অধিকার পেয়েছে৷ শুধু পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষার বিষয় দু’টি ডেনমার্কের হাতে রয়েছে৷
ছবি: picture alliance/augenklick/GES
স্বাধীনতা নয়, স্বায়ত্তশাসন চায় ইটালির উত্তরাঞ্চল
আরও স্বায়ত্তশাসনের প্রশ্নে লম্বার্ডি ও ভেনেতো রাজ্য আগামী ২২শে অক্টোবর এক গণভোটের আয়োজন করেছে৷ সেখানে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ স্বায়ত্তশাসনের পক্ষে রায় দিয়েছে৷ উত্তরের সমৃদ্ধ এই অঞ্চল গোটা দেশের অর্থনীতির প্রায় এক-তৃতীয়াংশের দাবিদার৷ ফলে কাটালুনিয়ার মতো এই অঞ্চলও কর বাবদ অর্থের আরও বড় অংশ নিজেদের কাছে রাখতে চায়৷