স্বাধীনতা দিবস উদযাপন
২৬ মার্চ ২০১৩ চৈতীর মতো আরেক শিশু আদিত্য৷ সে ক্লাস থ্রি’তে পড়ে৷ তারও দাবি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার৷ শুধু এই ছোট্ট শিশুরাই নয়, এখন সারা বাংলাদেশের মানুষের প্রাণের দাবি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার৷ তাই মঙ্গলবার স্বাধীনতা দিবসে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে আরেক দফা শপথ নিল দেশের তরুণ সমাজ৷
মঙ্গলবার ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবসের ৪২তম বার্ষিকী৷ অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলীয় নেত্রীসহ সকল শ্রেণি, পেশার মানুষ সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে স্বাধীনতা যুদ্ধে শহিদদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানিয়েছেন৷ ফুল দিতে আসা সাধারণ মানুষদের অনেকেই বললেন, নতুন করে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়েছে৷ তাই এবার, স্বাধীনতা বিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শেষ করেই তারা ঘরে ফিরবেন, যতই রাজপথে তাণ্ডব চালাক স্বাধীনতা বিরোধীরা৷ তাতে তাদের আন্দোলন কিছুতেই থামবে না৷ একাত্তরের পরাজিত শক্তি রাজাকার-আল বদরদের প্রতিহত করার দৃঢ় প্রত্যয় এবং যুদ্ধাপরাধীদের শাস্তি কার্যকর করার দাবি সবার মুখে৷
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন ডয়চে ভেলেকে বললেন, অনেক সময় পার হয়ে গেছে৷ এখন আর পিছু হটার কোনো সুযোগ নেই৷ তাছাড়া, তরুণ প্রজন্ম যেভাবে জেগে উঠেছে তাতে এবার যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায় কার্যকর করেই তারা ঘরে ফিরবে৷ তিনি স্বাধীনতা বিরোধীদের সামাজিকভাবে প্রত্যাখ্যান করার আহবান জানান৷ বলেন, ‘‘যত বাঁধাই আসুক যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শেষ করতেই হবে৷’’
এর আগে মধ্যরাতে স্বাধীনতা দিবসের শুরুতে স্মৃতি সৌধে ফুল দিয়ে জাতি বিনম্র শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতায় স্মরণ করছে পরাধীনতার শৃঙ্খল ছিঁড়তে আত্মদানকারী বীর সন্তানদের৷ সকাল থেকেই সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধের বেদি ভরে উঠেছে ফুলে ফুলে৷ আর তখন থেকেই সেখানে নেমেছে মানুষের ঢল৷ শিশু থেকে বৃদ্ধ কে যায়নি বীর সন্তানদের শ্রদ্ধা জানাতে!
সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান৷ পরে দলীয় নেতা-কর্মীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে জড়ো হন ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে৷ রাজধানীতে ভোরে ৩১ বার তোপধ্বনির মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা দিবসের সূচনা হয়৷
২৬ মার্চ দিনটি বাঙালি জাতির জীবনে একই সঙ্গে আনন্দ ও বেদনার৷ স্বাধিকারের দাবিতে জেগে ওঠা নিরীহ বাঙালির প্রতি ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি হানাদার সেনারা যে বর্বর গণহত্যা চালিয়েছিল, সেই মৃত্যুর বিভীষিকা থেকে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছিল দেশের মুক্তিপাগল বীর সন্তানেরা৷ ২৫ মার্চের গভীর রাতে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাড়িতে গ্রেপ্তার হওয়ার আগেই বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন৷ তাঁর ডাকে সাড়া দিয়ে প্রশিক্ষণহীন নিরস্ত্র বাঙালিরা যেভাবে একটি সুশৃঙ্খল, অত্যাধুনিক, সমরাস্ত্রে সজ্জিত সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিল, পৃথিবীর ইতিহাসে এই সংগ্রামের দৃষ্টান্ত বিরল৷ জীবন উৎসর্গ করে শত্রুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তির সংগ্রাম শেষে বাঙালি পরাজিত করেছিল পাকিস্তানি হানাদারদের৷ ছিনিয়ে এনেছিল বিজয়৷
এদিকে গান, কবিতা ও স্লোগানে আবারও মুখরিত হয়ে উঠেছে শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চ৷ পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী, মঙ্গলবার গণজাগরণ মঞ্চের মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে ভোর থেকেই জন সমাগম ঘটতে শুরু করে গণজাগরণ চত্বরে৷ মঙ্গলবার স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে গণজাগরণ মঞ্চের পক্ষ থেকে জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুস্পস্তবক অর্পণ করার পর গণজাগরণের নেতাকর্মীরা ছুটে যান শাহবাগ চত্বরে৷ জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধ করার প্রক্রিয়া শুরু করাসহ ৬ দফা দাবিতে ধারাবাহিক আন্দোলন চালিয়ে আসছেন গণজাগরণ মঞ্চের কর্মীরা৷ এর মধ্যে জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ এবং এদের সব ধরনের প্রতিষ্ঠান বাজেয়াপ্ত করার দাবি জানিয়ে ২৬ মার্চের মধ্যে তা কার্যকর করার জন্য সরকারকে সময় বেঁধে দিয়েছিল গণজাগরণ মঞ্চ৷