চীনা দূতাবাসের আপত্তিতে বন্ধ হয়ে গেল তিব্বতের শিল্পকর্ম প্রদর্শনী৷ ঢাকা আর্ট সামিটের এক প্রদর্শনীতে অংশ নিতে গিয়ে বাধার সম্মূখীন হন ক’জন শিল্পী৷ ‘‘এটা শিল্পের স্বাধীনতার ওপর হস্তক্ষেপ'', বলেন ভাস্কর ফেরদৌসি প্রিয়ভাষিণী৷
বিজ্ঞাপন
তিব্বতি শিল্পীরা চীনের নির্যাতন ও দমন-পীড়ন তাঁদের চিত্র ও শিল্পকর্মের মাধ্যমে প্রদর্শনীতে দেখানোর চেষ্টা করেছিলেন৷ গত ছয় বছর যাবৎ বিভিন্ন সময়ে তিব্বতে যেসব দমন-পীড়ন ও আত্মাহুতির ঘটনা ঘটেছে, তা মাল্টিমিডিয়ার প্রদর্শন হওয়ার কথা ছিল ঢাকা আর্ট সম্মেলনে৷ এতে ঢাকাস্থ চীনের দূতাবাস আপত্তি জানালে পাঁচটি চিত্রকর্ম সাদা কাগজ দিয়ে ঢেকে দেয় আয়োজনকারী প্রতিষ্ঠান৷
ভারতের চলচ্চিত্র নির্মাতা ঋতু সারিন ও তাঁর স্বামী তেনজিং সোনাম ছিলেন এর আয়োজক৷ তেনজিং সোনমের মূল বাসস্থান তিব্বত হলেও বর্তমানে তিনি নির্বাসিত জীবনযাপন করছেন৷
ঋতু সারিন ও তেনজিং সোনাম সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘‘তিব্বতিদের গায়ে আগুন দিয়ে আত্মহত্যার চিত্রকর্ম আমরা ঢাকা আর্ট সামিটে তুলে ধরতে চেয়েছিলাম''
ফেরদৌসি প্রিয়ভাষিনী
এই সামিটের প্রশাসন শাখার প্রধান সাজ্জাদ হোসেন সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘‘চীনের রাষ্ট্রদূত মা মিং ছিয়াং ওই চিত্রকর্ম দেখে মর্মাহত হয়েছেন৷ আর তার পরেই তিনি এর প্রতিবাদে আমাদের ই-মেল পাঠান এবং চিত্রকর্ম সরিয়ে ফেলতে বলেন৷ তখন আমরা সাদা কাগজ দিয়ে পাঁচটি চিত্রকর্ম ঢেকে দিই৷''
তবে চীনা রাষ্ট্রদূত মা মিং ছিয়াং সোমবার বিকেলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পররাষ্ট্রসচিব মো. শহীদুল হকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেও, তাঁদের কেউই আলোচনার বিষয় নিয়ে কথা বলেননি৷
বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশের অন্যতম ভাস্কর ফেরদৌসি প্রিয়ভাষিণী ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘তিব্বতিদের শিল্পকর্ম প্রদর্শনীতে বাধা দিয়ে বাংলাদেশের আয়োজকরা ক্ষুদ্র মনের পরিচয় দিয়েছেন৷ চিত্রকলার ভাষা আছে৷ স্বাধীন চিত্রকর্মে বাধা দেয়া মানে বাকস্বাধীতায় হস্তক্ষেপ৷ চিত্রকর্ম এক মানবিক অস্তিত্ব৷ আর মানবিকতায় বাধা দেয়া যায় না৷''
তিনি আরো বলেন, ‘‘চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের কারণে হয়ত এরকম করা হয়ে থাকতে পারে৷ কিন্তু আমার কাছে তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়৷ শিল্পের স্বাধীনতার কোনো ভৌগলিক সীমারেখা নেই৷''
বিখ্যাতরা ছোটবেলায় যেমন আঁকতেন
আজ তাঁরা বিখ্যাত৷ কিন্তু ছোটবেলায় কেমন আঁকতেন তাঁরা? তাঁদের সেসময়কার কাজেকর্মে কি বোঝা গিয়েছিল যে, তাঁদের ভবিষ্যত উজ্জ্বল৷ ছবিঘরে এই বিষয়টাই জানার চেষ্টা করা হয়েছে৷
ছবি: Courtesy: Jonathan Meese . Com.m Copyright VG Bild-Kunst, Bonn
ইয়োনাথান মেসে
ছয় বছর বয়সে এই ছবিটি এঁকেছিলেন জার্মান শিল্পী ইয়োনাথান মেসে৷ এখন তাঁর বয়স ৪৪৷ শিশু অবস্থায় যিনি ললিপপ আর লণ্ঠনের ছবি এঁকেছিলেন, তিনি পরবর্তীতে বিতর্কের জন্ম দেন৷ মেসের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তাঁর শিল্পকর্মে নাৎসি প্রতীকের উপস্থিতি ছিল৷ এজন্য তাঁকে আদালতেরও মুখোমুখি হতে হয়৷ অবশ্য পরে সেটা খারিজ হয়ে যায়৷
ছবি: Courtesy: Jonathan Meese . Com.m Copyright VG Bild-Kunst, Bonn
কাটিয়া স্ট্রুনৎস
জার্মানির কাটিয়া স্ট্রুনৎস ১২ বছর বয়সে আঁকা এই ছবিতে জঙ্গলের চিত্র তুলে ধরেছেন৷ একপাশে হাতির পিঠে টারজান আর অন্যপাশে বাঘকে দেখা যাচ্ছে৷ এর মধ্যে গাছগুলোতে তিনি বেশ রংয়ের ব্যবহার করেছেন৷ অবশ্য স্ট্রুনৎসের এখনকার তৈরি ভাস্কর্যগুলোতে রংয়ের ব্যবহার কমে এসেছে৷
ছবি: Courtesy Katja Strunz
টাল আর
যুদ্ধের সময় জন্ম নেয়ার কারণেই হয়ত শিল্পী টাল আর-এর ছোটবেলায় আঁকা এই ছবিতে সশস্ত্র মানুষ, ট্যাংক আর যুদ্ধজাহাজের উপস্থিতি দেখা যাচ্ছে৷ বর্তমানে তিনি জার্মানির একটি আর্ট অ্যাকাডেমিতে শিক্ষক হিসেবে কাজ করছেন৷
ছবি: Courtesy: TAL R / Copyright Paradis
আক্সেল গাইস
বর্তমানে জার্মানির অন্যতম নামকরা শিল্পী আক্সেল গাইস৷ মাত্র ছয় বছর বয়সে আঁকা তাঁর এই ছবিটি ভালো করে দেখুন৷ কুকুরের চুল কাটছেন একজন নাপিত৷ আর ওদিকে আয়নায় কুকুরের মুখটা দেখা যাচ্ছে৷ মনে আছেতো, ছবিটা কিন্তু এঁকেছেন ছয় বছরের একটা ছেলে!
ছবি: Courtesy Axel Geis
উভে হেনেকেন
ছবিটি যখন এঁকেছিলেন তখন উভে হেনেকেনের বয়স আট৷ তিনি হতে চেয়েছিলেন নৃতত্ববিদ৷ কিন্তু খেয়াল করে দেখুন ছবির এই মেয়েটির দুই কান থেকে গাছ বের হচ্ছে, অর্থাৎ তিনি যে ফ্যান্টাসি পছন্দ করেন এটা তার প্রমাণ৷ হেনেকেনের এখনকার ছবিগুলোতেও সেই ফ্যান্টাসি জগৎ আর রূপকথারই পরিচয় পাওয়া যায়৷
ছবি: Courtesy Uwe Henneken and Galerie Giselal Capitain, Cologne
নোর্বার্ট বিস্কি
সাবেক পূর্ব জার্মানিতে জন্ম নিয়েছিলেন বলেই হয়ত সাত লবছর বয়সে আঁকা এই ছবিতে সামরিক বাহিনীর সদস্যদের দেখা যাচ্ছে৷ বর্তমানে বিস্কি ‘ফ্রেস্কো’ (ভেজা প্লাস্টারে জল রংয়ের ব্যবহার) আঁকেন, যেগুলোতে কিশোরদের জীবনের গল্প ফুটে ওঠে৷
ছবি: VG Bild-Kunst, Bonn, Courtesy Norbert Bisky
ফিয়া লেভান্ডোভস্কি
গ্রিম ভাইদের জনপ্রিয় রূপকথাগুলোর অন্যতম ‘লিটল রেড রাইডিং হুড’৷ মাত্র চার বছর বয়সে সেটা তুলে ধরার চেষ্টা করেছিলেন ফিয়া লেভান্ডোভস্কি৷ বর্তমানে জার্মানির বিভিন্ন স্থানে তাঁর ভাস্কর্য দেখতে পাওয়া যায়৷
ছবি: Courtesy Via Lewandowsky, Copyright VG Bild-Kunst, Bonn 2014
7 ছবি1 | 7
এর আগে ২০০৯ সালের নভেম্বর মাসে ঢাকায় তিব্বতি ছাত্রদের আয়োজনে ধানমন্ডির দৃক গ্যালারির একটি চিত্র প্রদর্শনী ভন্ডুল করে দেয় পুলিশ৷ সে সময় প্রদর্শনীটির উদ্বোধনই করতে দেয়া হয়নি৷ তিব্বতি ছাত্র সংগঠন ‘স্টুডেন্টস ফর এ ফ্রি তিব্বত' আয়োজিত ঐ প্রদর্শনীর শিরোনাম ছিল ‘ইনটু এক্সাইল – ১৯৪৯ থেকে ২০০৯'৷ পুলিশ তখনও চীনা দূতাবাসের আপত্তির মুখে চিত্র প্রদর্শনীটি বন্ধে দৃক গালারিতে তালা লাগিয়ে দিয়েছিল৷
প্রসঙ্গত, চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের জোরালো সম্পর্ক রয়েছে এবং বাংলাদেশ ‘এক চীন' নীতিতে বিশ্বাসী৷
আপনার কী মনে হয়? তিব্বতের শিল্পকর্ম ঢাকায় প্রদর্শিত হতে না দেয়াটা বাকস্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ না কূটনৈতিক ফায়দা আদায়ের চেষ্টা? লিখুন নীচের ঘরে৷