স্বাভাবিক জীবনে ফেরা হলো না মেজর জাহিদের স্ত্রী শিলার
২৫ অক্টোবর ২০২২
দুই মেয়েকে ঘিরে করেন ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা৷ সিদ্ধান্ত নেন বিয়ে না করে মেয়েদের ঠিকমত মানুষ করবেন৷ তাই কুমিল্লা থেকে ঢাকায় চলে আসেন৷ মেয়েদের ভর্তি করেন ভাল একটি স্কুলে৷ বিভীষিকাময় অতীত ভুলে মা ও ভাইবোনদের সহযোগিতায় অনেকটাই ঘুরে দাঁড়ান শিলা৷
কিন্তু উচ্চ আদালতের এক আদেশে তার সবকিছু ওলটপালট হয়ে যায়৷ হাইকোর্টের দেয়া জামিনের আদেশ সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে বাতিল হয়ে যায়৷ তার আইনজীবী ফোনে তাকে এই খবরটি জানালে শিলা আদালতে আত্মসমর্পণ করে৷ আদালত তাকে আবার জেলে পাঠিয়ে দেয়৷
"যেহেতু আপির বিভাগ জামিন বাতিল করেছে তাই সহসা জেল থেকে বের হওয়ার কোন সুযোগ নেই৷ এটা খুবই দুঃখজনক, তবে আদালতের আদেশ তো মানতেই হবে,” বলছিলেন নিম্ন আদালতে তার আইনজীবী নাজনীন আরা খাতুন৷
হাইকোর্টের একজন আইনজীবী বলেন, শিলার বিরুদ্ধে অভিযোগ অনেক গুরুতর বিধায় আপিল বিভাগ তার জামিন বাতিল করে৷
তবে তার মতে, শিলার জামিন বাতিল একটি অনন্য ঘটনা৷ তিনি অনেকদিন জেল খেটেছেন৷ তাছাড়া তার দুই ছোট বাচ্চাও আছে৷ এসব বিবেচনা করেই হাইকোর্ট তার জামিন মঞ্জুর করে ২০২০ সালে৷ কিন্তু জামিন আদেশের বিরুদ্ধে সরকার আপিল করেছিল৷
এই আইনজীবীর মনে করেন, গত ৫/৬ বছরে প্রায় শতাধিক নারী জঙ্গি কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে আটক হয়েছে, যাদের বড় একটি অংশ হাইকোর্টের জামিনে মুক্তি পেয়েছে৷
"অনেক নারী ও পুরুষ যাদের বিরুদ্ধে শিলার চেয়েও গুরুতর অভিযোগ আছে কিন্তু তারাও হাইকোর্ট থেকে জামিনে পেয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে৷ অথচ শিলার জামিন বাতিল হল,” আক্ষেপ করে বলছিলেন তিনি৷
আশকোনায় জঙ্গিবিরোধী অভিযানের সময় শিলা পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেন৷ পরবর্তীতে পুলিশ তার বিরুদ্ধে সন্ত্রাস ও অস্ত্র আইনে দুটি মামলা দায়ের করেন৷ পুলিশের ভাষ্যমতে, অভিযানের এক পর্যায়ে শিলা কোমরে বাধা সুইসাইডাল ভেস্ট খুলে ফেলেন এবং আত্মসমর্পণ সময় একটি রিভলভার পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেন৷
"শিলা আর তার বাচ্চাদের ভবিষ্যৎ আবার অনিশ্চিত হয়ে গেল৷ তার আর বাচ্চাদের কথা চিন্তা করে আদালত জামিন বাতিল না করলেও পারতো,” নাম প্রকাশ না করার শর্তে শিলার এক নিকট আত্মীয় ডয়েচে ভেলেকে জানান৷
হতাশা ব্যক্ত করে তিনি বলেন, শিলা তো পালিয়ে যেতে চাননি৷ তিনি তার জীবনের বড় ভুল শুধরে বাচ্চাদের নিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে চেয়েছিল৷ কিন্তু তাকে সে সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা হল৷ রাষ্ট্রের উচিত যারা অতীতের ভুল ভুঝে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে চায় তাদের সুযোগ ও সহযোগিতা করা৷
শিলা জামিনে বের হওয়ার পর অবসরপ্রাপ্ত এক সেনা কর্মকর্তা দেখা করে যান তার ঢাকার বাসায়৷ সেনা ওই কর্মকর্তা ডয়েচে ভেলেকে জানান, এধরনের আসামীর পক্ষে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসা অনেক কঠিন৷ তবে আমি তার মধ্যে এক ধরনের প্রত্যয় দেখেছি৷ একজন মা হিসেবে সন্তানদের মানুষ করার মাধ্যমে তিনি তার ভুলের প্রাসচিত্ত করতে চেয়েছিলেন৷
কুমিল্লার মেয়ে শিলা তার বন্ধু-বান্ধব, শিক্ষক ও পরিচিতদের কাছে একজন আধুনিক ও স্মার্ট মেয়ে হিসাবে পরিচিত ছিল৷ ২০০৬ সালে মেজর জাহিদের সাথে বিয়ের পরেও তিনি ও জাহিদ সাধারণ জীবন যাপন করছিলেন৷ দুজনের পরিবারও ছিল শিক্ষিত ও আধুনিক৷
২০১৪ সালে সব কিছু বদলে যায়৷ সে বছর জাহিদ এক প্রশিক্ষণে কানাডায় যাওয়ার পর সেখানকার এক মসজিদের ইমামের মাধ্যমে জঙ্গি আদর্শে উদ্বুদ্ধ হন৷ কানাডায় থেকেই জাহিদ ধর্মীয় বিষয়ে শিলাকে নির্দেশনা দেয়া শুরু করেন৷ নিয়মিত নামাজ ও পর্দা করার নির্দেশও দেন৷ ক্রমশ শিলা নিজেকে রূপান্তর করে ফেলেন৷
দেশে ফিরে জাহিদ চাকরি ছেড়ে দিয়ে শিলাকে পুরোপুরি ধর্মীয় জীবনযাত্রায় মনোনিবেশ করতে বলেন৷ শিলা কখনও জাহিদের মতের বিরুদ্ধে যাননি৷ স্বামী যা বলেছেন তিনি সব মেনে নিয়েছিলেন৷