1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

স্বামীর হাতে খুন ৭৯৪ নারী

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
৩ নভেম্বর ২০১৯

চার বছরেরও কম সময়ে বাংলাদেশে প্রায় আটশো নারী স্বামীর হাতে খুন হয়েছেন৷ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই যৌতুকের জন্য তারা সহিংসতা বা হত্যার শিকার হন৷ অধিকাংশ ঘটনারই বিচার দূরের কথা, কোনো মামলাও হয় না৷

Symbolbild - Ehrenmord - Pakistan
ছবি: picture-alliance/dpa/Keystone USA Falkenberg

চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে সারাদেশে ১৫২ জন নারী স্বামীর হাতে খুন হয়েছেন৷ আগের বছর ১২ মাসে এই সংখ্যা ছিলো ১৯৩ জন৷ ২১৩ জন খুন হয়েছেন ২০১৭ সালে৷ আর ২০১৬ সালে ১৯১ জন নারী স্বামীর হাতে হত্যার শিকার হয়েছেন৷ সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে এই পরিসংখ্যান তৈরি করেছে আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)৷ তারা বলছে বাস্তবে সংখ্যাটি আরো বেশি হতে পারে৷

এসব হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কোনো মামলা করা হয় না৷ ২০১৬ সাল থেকে হিসাব করলে এখন পর্যন্ত ৭৯৪ জন নারী স্বামীর হাতে হত্যার শিকার হয়েছেন৷ কিন্তু এই সময়ে মামলা হয়েছে মাত্র ৩৪৭টি৷ অর্থাৎ ৪৪৭টি ঘটনার মামলাই হয়নি৷

আইনজীবী এবং মানবাধিকারকর্মী ব্যারিস্টার মিতি সানজানা ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘হত্যা মামলা প্রত্যাহারের কোনো সুযোগ নেই৷ এর নিষ্পত্তি একমাত্র আদালতের এখতিয়ার৷ তাই এইসব ক্ষেত্রে আদালত বা থানায় যেখানেই মামলা হোক তা প্রত্যাহার হয় সেটা বলা যাচ্ছে না৷ আর হত্যা মামলা আপোশযোগ্যও নয়৷''

মিতি সানজানা

This browser does not support the audio element.

তিনি বলেন, ‘‘যেটা ঘটে তাহলো, অনেক সময়ই অপরাধীরা থাকে শক্তিশালী৷ তারা প্রভাব বিস্তার করে, শক্তি প্রয়োগ করে মামলা করতে দেয় না৷ থানায় গেলেও অনেক সময় পুলিশ মামলা নেয় না৷ পুলিশ অবৈধভাবে প্রভাবিত হয়ে এ কাজটি করে৷ এছাড়া প্রভাবশালীরা চাপের মুখে ও অর্থের বিনিময়ে আপোশ করে ফেলে৷ কিন্তু এখানে পুলিশের ভূমিকা আছে৷ তারা তা পালন করছে না৷ কারণ হত্যার মত ঘটনাতো আর চাপা থাকে না৷ তাই পুলিশ নিজেই মামলা করতে পারে৷ পুলিশ অবৈধ সুবিধা নিয়ে তা করা থেকে বিরত থাকে৷ মনে রাখতে হবে হত্যা মামলার বাদী রাষ্ট্র৷''

নারীরা সহিংসতা ও হত্যার শিকার হওয়ার ক্ষেত্রে স্বামীর পাশাপাশি তার পরিবারের অন্য সদস্যদেরও ভূমিকা থাকে৷ চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে হত্যাসহ পরিবারে সহিংসতার শিকার হয়েছেন ২৯৭ জন৷ স্বামীর হাতে ১৫২ জন নিহত হওয়ার ঘটনা বাদ দিলে ১৪৫ জন বিভিন্নভাবে নির্যাতিত হয়েছেন৷ তাদের মধ্যে ১৫ জন খুন হয়েছেন স্বামীর পরিবারের সদস্যদের হাতে৷

বাকিরা পরিবারের সদস্য এবং স্বামীর হাতে নানা ধরনের সহিংসতা শিকার হয়েছেন৷ নির্যাতনের কারণে আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছেন ৪২ জন৷ আগের বছরগুলোর হিসাব দেখলেও একই ধরণের চিত্র পাওয়া যায়৷

ড. মিজানুর রহমান

This browser does not support the audio element.

স্ত্রী হত্যার ঘটনা সবচেয়ে বেশি ঘটছে যৌতুকের জন্যে৷ চলতি বছর ৭০ জন নারী এই কারণে হত্যার শিকার হয়েছেন, নির্যাতিত হয়েছেন ৪৪ জন৷ তিনজন আত্মহত্যায় বাধ্য হয়েছেন৷ এর বাইরেও বনিবনা না হওয়া, পারস্পরিক সন্দেহ, অবিশ্বাস, বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কের কারণেও হত্যাকাণ্ড ঘটছে৷

মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘কঠোর আইন থাকলেও আমাদের সমাজে ধর্মান্ধতা এখনো আছে৷ শুধু তাই নয়, সরকার তার রাজনৈতিক কারণে নারীর অধিকার নিয়ে নানা ধর্মীয় গোষ্ঠীর সাথে সমঝোতা করেছে নানা সময়ে৷ এখনো করছে৷ ফলে যৌতুকের মত বিষয়গুলো সমাজ থেকে দূর হয়নি৷ যার কারণে স্ত্রী হত্যার ঘটনা কমছে না৷''

তিনি বলেন, ‘‘নারী এখন স্বাবলম্বী হচ্ছে, শিক্ষিত হচ্ছে৷ তার ভিতরে এখন স্বাধীনচেতা মনোভাব গড়ে উঠছে৷ এটা অনেক পুরুষই মেনে নিতে পারছেন না৷ তাদের মানসিকতায় পরিবর্তন আসেনি৷ তারা অন্ধ চিন্তার মধ্যেই আছেন৷ তাই তারা স্বাধীন নারীকে আঘাত করেন৷''

তাঁর মতে, ‘‘স্বামীর হাতে স্ত্রী হত্যা বা নারীর প্রতি ঘরে সহিংসতা আমাদের পশ্চাদপদ সমাজ ও পারিবারিক কাঠামোরই ফল৷ পরিবারের লোকজনও অপরাধে সহযোগী হয়৷ আমরা এর থেকে বের হয়ে না আসতে পারলে মানবিক এবং আধুনিক সমাজ ও রাষ্ট্র গড়তে পারব না৷''

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ