স্বামী টাকা না পাঠানোয় ভিক্ষুককে সন্তান ‘দান' করেছিলেন মা!
৩ মার্চ ২০২৩
লক্ষ্মীপুরে এক মা তার শিশুপুত্রকে ভিক্ষুকের কোলে রেখে চলে যান৷ প্রবাসী স্বামী সংসার খরচ না দেওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে এমন কাজ করেছিলেন বলে জানিয়েছেন তিনি৷ সন্তান ফিরে পেতে এখন পুলিশের দ্বারস্থ তিনি৷
প্রতীকী ছবিছবি: Farjana K. Godhuly/AFP/Getty Images
বিজ্ঞাপন
তবে এখনই সেই মা সন্তানকে ফেরত পাচ্ছেন না বলে ডয়চে ভেলের কনটেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন লক্ষ্মীপুর জেলার পুলিশ সুপার মো. মাহফুজ্জামান আশরাফ৷ কারণ, ওই শিশুকে তার প্রকৃত অভিভাবকের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হবে আদালতের মাধ্যমে৷
বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে শিশুটির মা-সহ পরিবারের লোকজন সদর থানায় শিশুপুত্রকে ফিরিয়ে নিতে আসে৷
পুলিশ সুপার জানান, শিশুটির মায়ের আরও তিনটি মেয়ে আছে৷ তার সৌদি প্রবাসী স্বামীর বাড়ি লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলায়৷ ওই নারী জেলা শহরের ৬ নম্বর ওয়ার্ডে সন্তানদের নিয়ে ভাড়া বাসায় থাকতেন৷ তিন মেয়েকে সেখানের একটি মাদ্রাসায় ভর্তি করিয়েছেন৷
বুধবার দুপুর ২টার দিকে লক্ষ্মীপুর পৌরসভার ১০ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণ মজুপুর গ্রামের আধুনিক হাসপাতালের সামনে ‘ওয়াশরুমে যাওয়া'র কথা বলে তার কোলের শিশুকে সালমা বেগম নামে এক বৃদ্ধ ভিক্ষুকের কোলে রেখে যান এক নারী৷ কিন্তু এরপর তিনি আর ফিরে না এলে ওই বৃদ্ধা স্থানীয়দের মাধ্যমে বিষয়টি পুলিশকে জানান৷
ফুটফুটে শিশুপুত্রকে বৃদ্ধার কাছে রেখে যাওয়ার বিষয়ে ওই নারী বলেন, ‘‘চার সন্তান নিয়ে আমি জেলা শহরে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকি৷ প্রতিমাসে ১১ হাজার টাকা কিস্তি, সন্তানদের খরচ, সংসারের খরচ লাগে৷ সব মিলিয়ে আমাকে হিমশিম খেতে হয়৷ মুদি দোকানে অনেক দেনা হয়ে আছে৷ কিন্তু তাদের বাবা কোনো খরচ দেয় না৷ তাই তার উপর জেদ করে এ কাজ করেছি৷”
তিনি বলেন, ‘‘শিশু সন্তানকে ভিক্ষুকের কোলে দিয়ে অন্য সন্তনদেরকে নিয়ে বাপের বাড়ি ভবানীগঞ্জে চলে গিয়েছিলাম৷ ছেলেকে না নিয়ে যাওয়ায় পরিবারের লোকজন আমাকে বকাঝকা শুরু করে৷
‘‘পরে বুঝতে পেরেছি কাজটি আমি ঠিক করিনি৷ বুকের ধনকে রেখে সারারাত ঘুমাতে পারিনি৷ পরদিন সকাল থেকে তাকে খুঁজতেছি, কোথাও পাইনি৷
‘‘পরে বিকালের দিকে পরিচিত একজন ফেসবুকের মাধ্যমে শিশুটির বিষয়ে জানতে পারে৷ তার মাধ্যমে থানায় আসি৷”
যেসব দেশে সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশি
প্রতি বছরই বাংলাদেশিরা কাজ নিয়ে পাড়ি জমাচ্ছেন বিশ্বের কোনো না কোনো দেশে৷ বৈধপথে বিদেশে যাওয়া এসব প্রবাসীর হিসাব রাখে সরকারের জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো বা বিএমইটি৷
ছবি: DW
এক কোটি প্রবাসী
বাংলাদেশের ঠিক কতজন নাগরিক প্রবাসে আছেন তার সঠিক পরিসংখ্যান নেই৷ বিএমইটি-র হিসাবে ১৯৭৬ সাল থেকে এখন পর্যন্ত এক কোটি ৩০ লাখ মানুষ কর্মসংস্থানের জন্য দেশের বাইরে পাড়ি জমিয়েছেন৷ তবে কতজন ফিরে এসেছেন সেই পরিসংখ্যান নেই সেখানে৷
ছবি: Positive light
১৪ লাখ কোটি টাকা
দেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি প্রবাসীদের আয়৷ এর কারণে বাংলাদেশের রিজার্ভের অঙ্কটাও এখন বেশ শক্তিশালী৷ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ১৯৭৬ সালে মাত্র ২৪ লাখ ডলার বা প্রায় ৩৬ কোটি টাকার রেমিটেন্স এসেছিল দেশে৷ সেই তুলনায় রেমিটেন্স অনেক বেড়েছে৷ শুধু গত বছরই এসেছে ১৮৩৫ কোটি ডলার বা এক লাখ ৫৫ হাজার কোটি টাকা৷ সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত ২১ হাজার ৭০৫ কোটি ডলার বা ১৫ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা৷
ছবি: AFP
এক তৃতীয়াংশ সৌদি আরবে
বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি প্রবাসীর গন্তব্য সৌদি আরব, যেখানে ২০২০ সালের মে পর্যন্ত ৪১ লাখ ৮৪ হাজার বাংলাদেশি পাড়ি জমিয়েছেন৷ ১৯৭৬ সালে মাত্র ২১৭ জন দিয়ে এই শ্রমবাজারের যাত্রা শুরু৷ ২০১৭ সালে সর্বোচ্চ ৫ লাখ ৫১ হাজার কাজ নিয়ে গেছেন মধ্যপ্রাচ্যের দেশটিতে৷ আর চলতি মে পর্যন্ত পাড়ি জমিয়েছেন এক লাখ ৩৪ হাজার জন৷
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/N. Economou
আরব আমিরাতের মন্দা বাজার
শুরুর দিকে সংযুক্ত আরব আমিরাতই ছিল বাংলাদেশের বড় বাজার৷ ২০০৮ সালে দেশটিতে একবছরে সবচেয়ে বেশি ৪ লাখ ১৯ হাজার জন বাংলাদেশি গেছেন৷ তবে ২০১৩ সালের পর থেকে এই বাজারটিতে মন্দা চলছে৷ গতবছর মাত্র তিন হাজার ৩১৮ জন দেশটিতে পাড়ি জমানোর সুযোগ পেয়েছেন৷ ১৯৭৬ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ২৩ লাখ ৭২ হাজার বাংলাদেশির গন্তব্য ছিল আরব আমিরাত, যা মোট জনশক্তি রপ্তানির ১৮ ভাগের কিছু বেশি৷
ছবি: picture-alliance/J. Schwenkenbecher
পড়তিতে ওমান
প্রবাসীদের গন্তব্যের দিক থেকে তৃতীয় অবস্থানে আছে পারস্য উপসাগরের দেশ ওমান৷ ১৫ লাখ ১৮ হাজার বাংলাদেশি কাজ নিয়ে গেছেন সেখানে৷ তবে গত ৩ বছর ধরে এই বাজারটিতেও প্রবাসী যাওয়ার সংখ্যা কমছে৷ ২০১৬ সালে যেখানে এক লাখ ৮৮ হাজার জন ওমানে পাড়ি জমিয়েছেন, গেল বছর তা নেমে এসেছে ৭২ হাজার ৬৫৪ জনে৷ আর চলতি বছর মে পর্যন্ত গেছেন মাত্র ১৭ হাজার ৪০০ জন৷
ছবি: picture-alliance/A. Farnsworth
আকর্ষণীয় মালয়েশিয়া
বাংলাদেশিদের কাছে মালয়েশিয়া আকর্ষণীয় হয়ে উঠতে শুরু করে মূলত ১৯৯০ সালের পর থেকে৷ ২০০৭ সালে সেখানে সবচেয়ে বেশি ২ লাখ ৭৩ হাজার জনের বেশি শ্রমিক কাজের জন্যে গেছেন এশিয়ার দেশটিতে৷ মাঝে এই প্রবণতা কমলেও সম্প্রতি আবার বেড়েছে৷ ২০১৮ সালে দেশটিতে গেছেন প্রায় এক লাখ ৭৬ হাজার জন আর ২০১৯ এ মাত্র ৫৪৫ জন৷ সব মিলিয়ে মালয়েশিয়ায় বৈধভাবে পাড়ি জমিয়েছেন সাড়ে ১০ লাখ ৫৭ হাজারের বেশি বাংলাদেশি৷
ছবি: picture-alliance/FOTOGRAMMA/M. Alberico
সম্ভাবনার কাতার
২০০৬ সাল পর্যন্তও কাতারের বাজার বাংলাদেশের শ্রমশক্তি রপ্তানিতে ততটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল না৷ তবে মধ্যপ্রাচ্যের তেলসমৃদ্ধ এই দেশটিও এখন বিদেশ গমনেচ্ছুদের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে৷ কাতারের বিশ্বকাপ আয়োজন সেখানে অনেক বাংলাদেশির জন্যেই কাজের সুযোগ তৈরি করেছে৷ এখন পর্যন্ত আট লাখ ১১ হাজার বাংলাদেশি দেশটিতে কাজ নিয়ে গেছেন৷
ছবি: picture-alliance
দক্ষ শ্রমিকের বাজার সিঙ্গাপুর
দেশের দক্ষ শ্রমিকদের জন্য পছন্দের এক গন্তব্য সিঙ্গাপুর৷ এশিয়ার উদীয়মান অর্থনীতির দেশটিতে এখন পর্যন্ত চাকরি নিয়ে ৭ লাখ ৯২ হাজার বাংলাদেশি পা রেখেছেন, যা মোট প্রবাসীর ছয় ভাগের কিছু বেশি৷ এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৬০ হাজার জন গেছেন ২০১৩ সালে৷
ছবি: picture-alliance/Global Travel Images
কুয়েতে ৫ ভাগ
বাংলাদেশিদের জন্য কুয়েতের মতো গুরুত্বপূর্ণ এক শ্রমবাজার প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল বলা চলে৷ ২০০৮ থেকে ২০১৩— এই সময়ে মাত্র ৪১৪ জন দেশটিতে পাড়ি জমিয়েছিলেন৷ ২০১৪ সাল থেকে তা বাড়তে শুরু করলেও গত দুই বছর ধরে আবার পড়তির দিকে৷ সব মিলিয়ে ছয় লাখ ৩০ হাজার বাংলাদেশি গেছেন কুয়েতে, যা মোট প্রবাসীর প্রায় ৫ ভাগ৷
ছবি: picture-alliance/robertharding/G. Hellier
পারস্য উপসাগরের দ্বীপে
চার লাখ ১০ হাজার বাংলাদেশির গন্তব্যের দেশ বাহরাইন৷ ২০১৬ সালে সর্বোচ্চ ৭২ হাজার মানুষ কাজ নিয়ে পাড়ি জমিয়েছেন পারস্য উপসাগরের দ্বীপ রাষ্ট্রটিতে৷ তবে ২০১৯ সালে গেছেন মাত্র ১৩৩ জন৷
ছবি: Getty Images/AFP/M.Al-Shaikh
ইউরোপে সর্বোচ্চ ইটালিতে
ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশি রয়েছে ইটালিতে৷ ২০০২ সাল থেকে সেখানে পাড়ি জমানোর তথ্য আছে বিএমইটির কাছে৷ সে অনুযায়ী এখন পর্যন্ত সাড়ে ৫৫ হাজার বাংলাদেশি বৈধ পথে গেছেন পশ্চিম ইউরোপের দেশটিতে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A. Medichini
11 ছবি1 | 11
শিশুটির দাদা বিডিনিউজকে জানান, ১০ থেকে ১২ বছর আগে তার ছেলের বিয়ে হয়৷ বিয়ের পর ছয় মাস তারা বাড়িতে ছিল৷ তার ছেলে সৌদি আরবে থাকে৷ আর তার পুত্রবধূ নাতি-নাতনিদের নিয়ে জেলা শহরে ভাড়া থাকে৷
তার ছেলে সংসারের খরচ পাঠায় দাবি করে তিনি বলেন, তার ছেলে ছয় মাস আগে দেশ থেকে সৌদি ফিরে যান৷ তার পুত্রবধূ ‘মানসিক সমস্যার কারণে' নাতিকে ভিক্ষুকের কাছে রেখে চলে গেছে৷ এটা কোনো ‘স্বাভাবিক মানুষের কাজ না'৷
এদিকে বুধবার বিকালে পুলিশ শিশুটিকে ভিক্ষুকের কোল থেকে উদ্ধারের পর স্থানীয় কাউন্সিলর জসিম উদ্দিন মাহমুদের তত্বাবধানে দেয়৷ কাউন্সিলর তার আত্মীয় এক নিঃসন্তান দম্পতির ঘরে লালন-পালনের জন্য রাখেন শিশুটিকে৷
বৃহস্পতিবার দুপুরে শিশুটিকে আদালতে সোপর্দ করে তার দায়দায়িত্ব সমাজসেবা কার্যালয়কে দেওয়ার আবেদন করে পুলিশ৷ পরে পৌরসভার ১০ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণ মজুপুর গ্রামের বাসিন্দা ওই নিঃসন্তান দম্পতি আদালতের কাছে শিশুটিকে লালন-পালনের আবেদন জানালে শর্ত সাপেক্ষে তাদেরকে দায়িত্ব দেওয়া হয়৷
একদিনের মধ্যেই শিশুটিকে আপন করে নেওয়া ওই দম্পতি বৃহস্পতিবার রাতে মায়ের খোঁজ পাওয়ার পরই শিশুটিকে নিয়ে থানায় যান৷ এ সময় তাদের কাঁদতেও দেখা যায়৷
শিশুটির মা বার বার ওই দম্পতির পায়ে ধরে ক্ষমা চাওয়ার চেষ্টা করেন এবং তার সন্তানকে ফিরিয়ে নেওয়ার আকুতি জানান৷
জেলার পুলিশ সুপার মো. মাহফুজ্জামান আশরাফ বলেন, আদালত থেকে ওই দম্পতিকে লালন-পালনের দায়িত্ব দিলেও শর্ত ছিল শিশুটির পরিবারকে পাওয়া গেলে তাদের কাছে হস্তান্তর করতে হবে৷ এখন তার মা এবং পরিবারের খোঁজ মিলেছে৷
‘‘আমরা আদালতে এ বিষয়ে প্রতিবেদন দেব৷ আইনি প্রক্রিয়ার ভিত্তিতে শিশুটিকে আদালতের মাধ্যমে গ্রহণ করতে পারবে তার মা৷ তবে সে সময় পর্যন্ত শিশুটি ওই নিঃসন্তান দম্পতির কাছে থাকবে৷”
এনএস/এসিবি (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)
পৃথিবীর সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয় মা
ভালোবাসার মানুষ মায়ের প্রতি বিশেষ সম্মান জানাতেই ‘মা’ দিবসের সূচনা৷ দিনটির প্রচলন প্রথম শুরু হয় প্রাচীন গ্রিসে৷ জার্মানিতে বিশেষ এই দিনটি পালনের ছবি ও তথ্য নিয়ে সাজানো হয়েছে এই ছবিঘর৷
ছবি: SARI GUSTAFSSON/AFP/Getty Images
বিশ্ব মা দিবস
প্রতি বছর মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে বিশ্ব মা দিবস পালিত হয়৷ নানা সূত্র থেকে জানা গেছে, প্রথম মা দিবস উদযাপন শুরু হয় গ্রিসে৷ গ্রিকরা তাদের মাতা-দেবি ‘রেয়া’র নামে পূজা করত৷ ১৯১৩ সালে অ্যামেরিকান কংগ্রেস মা দিবসকে সরকারিভাবে পালনের অনুমতি দেয়৷ তারপর থেকেই বিভিন্ন দেশে মা দিবস উদযাপন শুরু হয়৷ তবে মা দিবস উদযাপনের প্রথম ভাবনাটি এসেছে অ্যামেরিকান সমাজকর্মী জুলিয়া ওয়ার্ডের মাথা থেকে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সকাল থেকেই শুরু
জার্মানিতে ‘মা’ দিবসে মা’কে কোনো কাজ করতে দেয়া হয় না৷ বাবাসহ বাচ্চারা সকালের নাস্তা তৈরি করে মায়ের জন্য উপহার সহ টেবিলে সাজিয়ে রাখে৷ সঙ্গে অবশ্যই থাকে ফুল৷ পরে মাকে নিয়ে যাওয়া হয় কোনো রেস্তোরাঁয়৷ তবে সব পরিবারেই যে এমনটা হয় তা কিন্তু নয়৷
ছবি: Fotolia/Tatyana Gladskih
উপহার
পৃথিবীতে সবচেয়ে মধুর এবং প্রিয় শব্দ ‘মা’৷ তবে কারো কারো প্রশ্ন মা’কে ভালোবাসা দেখানোর জন্য ঘটা করে ‘মা দিবস’ পালন করার কি তেমন কোনো প্রয়োজন আছে? কেউ মনে করেন প্রয়োজন নেই, আবার অনেকের মতে উপহার দিয়ে একটি বিশেষ দিনে মা’কে ভালোবাসা দেখানোর পরিকল্পনাটা খারাপ না৷
ছোটবেলা থেকেই শেখা
‘মা’ দিবস আসার আগে থেকেই জার্মানিতে একেবারে ছোট বেলা অর্থাৎ কিন্ডারগার্টেনের বাচ্চাদের মায়েদের জন্য নিজ হাতে কিছু না কিছু উপহার তৈরি করতে হয় বা ছবি আঁকতে হয়৷ একটু বড় বাচ্চারা কেউ কেউ আগে থেকেই নিজেদের হাত খরচ থেকে মায়ের জন্য উপহার কিনতে কিছু পয়সা জমিয়ে রাখে৷
ছবি: DW
মায়েদের ভাবনা
জার্মানিতে মা দিবস উদযাপন শুরু হয় ১৯২২ সাল থেকে৷ জার্মান মা’দের, বিশেষ করে বয়স্ক মায়েদের প্রায়ই বলতে শোনা যায় শুধু বিশেষ দিনে নয়, তাঁদের সন্তানরা যেন সময় সুযোগ পেলেই মায়েদের সাথে যোগাযোগ রাখে, মায়ের কথা মনে করে৷
ছবি: Fotolia/Fotowerk
বাণিজ্যিক দিক
মা দিবস উপলক্ষ্যে প্রতি বছরই কিছু না কিছু নতুন জিনিস বাজারে আসে৷ ফুলের ব্যবসা দারুণ জমজমাট হয়ে ওঠে৷ কত ভাবেই না সাজানো ফুল পাওয়া যায় এই দিনে৷ অন্যান্য উপহারের সাথে প্রিয় মায়ের জন্য এক গুচ্ছ ফুল সব ছেলে-মেয়ের হাতেই যেন থাকে৷
ছবি: DW/H. Sirat
দিনটা অবশ্যই রবিবার
প্রতিবছরই তারিখের একটু এদিক সেদিক হলেও বারটি থাকে রবিবার অর্থাৎ ছুটির দিন৷ ফলে অনেক সন্তান কাছে এসে তাদের প্রিয় মা’কে ভালোবাসা জানাতে পারে৷ অনেক বৃদ্ধা মা শুধুমাত্র এই দিনটির জন্য সারা বছর অপেক্ষাও করে থাকেন, বিশেষ করে যাঁরা বৃদ্ধাশ্রমে থাকেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বিদেশি পরিবার
জার্মানিতে বিদেশিদের মধ্যে তুর্কি বংশোদ্ভূত পরিবারের সংখ্যা সবচয়ে বেশি৷ তাছাড়া ওরা উপমহাদেশের পরিবারগুলোর মতো একসাথে মিলেমিশে থাকতেই পছন্দ করে, যে-কোনো উপলক্ষ্যে তো অবশ্যই৷ তাই ‘মা’ দিবসও এর ব্যতিক্রম নয়৷
ছবি: DW/K. Jäger
নিরাপদ আশ্রয়
মানুষ যখন ভয় পায়, অসুস্থ হয়, কোনো সমস্যা বা বিপদে পড়ে তখন তারা মায়ের কাছেই ভয়ার্ত শিশুর মতোই আশ্রয় খোঁজে, আকড়ে ধরে৷ মাকেই তখন পৃথিবীর সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয় বলে মনে হয়৷ আর তা যে-কোনো দেশের সন্তান এবং মায়ের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য৷
ছবি: imago/imagebroker
মাতৃমৃত্যুর হার কমেছে
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেব অনুযায়ী সারা বিশ্বে মাতৃমৃত্যুর হার ১৯৯০ সাল থেকে শতকরা ৪৫ ভাগ কমেছে৷ তবে দুঃখের ব্যাপার হলো, যেসব মা প্রসবকালীন সময়ে মারা যান তাদের মধ্যে বেশিরভাগেরই ছিল ডায়েবেটিস বা মেদবহুল শরীর৷
ছবি: DW/S. Schlindwein
ফিনল্যান্ডের অবস্থা সবচেয়ে ভালো
শিশু সাহায্য সংস্থা ‘সেভ দ্যা চিলড্রেন’-এর এক সমীক্ষার ফলাফলে দেখা গেছে উত্তর ইউরোপের দেশ ফিনল্যান্ডের মায়েদের অবস্থা সবচেয়ে ভালো৷ অর্থাৎ সেখানে মা ও শিশুর স্বাস্থ্য ব্যবস্থা, লেখাপড়া, মায়েদের আয় এবং সামাজিক অবস্থান অন্যান্য দেশের তুলনায় সবচেয়ে ওপরে৷ সেখানে শিশুর জন্মের পর মা ও শিশুকে বিশেষভাবে যত্ন নেওয়া হয়ে থাকে৷