২০১৪ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গবেষণায় দেখা যায় বাংলাদেশে প্রতিদিন ২৮ জন মানুষ আত্মহত্যা করে৷ এর কারণ হিসেবে মনোবিজ্ঞানী মেহতাব খানম স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের অবনতিকে দায়ী করেছেন৷
বিজ্ঞাপন
এছাড়া সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ব্যস্ততাকেও দায়ী করেছেন তিনি৷ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এডুকেশনাল অ্যান্ড কাউন্সেলিং সাইকোলজি বা শিক্ষা ও পরামর্শ মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মেহতাব খানম ডয়চে ভেলেকে এ সংক্রান্ত একটি সাক্ষাৎকারে বলেন এ কথাগুলো৷ তারই একটা অংশ এখানে তুলে ধরা হলো৷
ডয়চে ভেলে: আগের তুলনায় বাংলাদেশে কি আত্মহত্যার হার বেড়েছে?
মেহতাব খানম: পরিসংখ্যানটা সঠিক বলতে পারবো না৷ তবে এটা বলতে পারি যে, আমাদের সমাজে একটা পরিবর্তন এসেছে৷ সমাজে, রাষ্ট্রে যখন একটা পরিবর্তন আসে, তার প্রভাব পড়ে মানুষের মনে৷ এই যেমন, যন্ত্রের মাধ্যমে বেশি যোগাযোগ হচ্ছে৷ এর ফলে মানুষ অনেক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ছে৷ যেগুলো খুব স্থায়ী সম্পর্ক নয়৷ বিবাহবিচ্ছেদের সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে৷ সমাজের সবক্ষেত্রে একটা অবক্ষয় ঘটেছে৷ যেমন শিক্ষার ক্ষেত্রে অবক্ষয়, শিক্ষা ব্যবস্থায় পরিবর্তন, বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবক্ষয় এসেছে৷ বিয়ের সম্পর্কগুলো ভালো থাকছে না৷ সম্পর্কের অবনতি ঘটছে৷ আর এ জন্য প্রযুক্তি একটা বড় ভূমিকা রাখছে৷
ছাড়াছাড়ি মা-বাবার, ভোগান্তি সন্তানের
প্রযুক্তির সুবিধা বাড়ার সাথে বাড়ছে ডিভোর্স বা বিবাহবিচ্ছেদের সংখ্যা৷ বাড়ছে স্বামী-স্ত্রীর আলাদা থাকার প্রবণতাও৷ বিশেষজ্ঞদের মতে এসবের নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে সন্তানের মনোজগতে৷ ওর স্বাভাবিক বিকাশ হচ্ছে বাধাগ্রস্ত৷
ছবি: Getty Images/AFP/R. Beck
শিশুদের ভয় আর আতঙ্ক
সন্তানের কাছে মা-বাবার ছাড়াছাড়ি মেনে নেয়া অনেক কষ্টকর৷ বিশেষ করে সন্তানের বয়স যদি কম থাকে৷ এক সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, হঠাৎ করে একজনের সাথে, অর্থাৎ মা বা বাবার সাথে থাকতে হয় বলে শতকরা ৩৭ থেকে ৪৮ ভাগ শিশু-কিশোরের মনেই অন্যজনকে হারানোর ভয় থাকে৷
ছবি: goodluz - Fotolia
যে কষ্ট তারা বোঝাতে পারে না
যে কোনো সন্তানের কাছে মা-বাবাই তার সবচেয়ে কাছের, ভালোবাসার মানুষ৷ আর তাদের মধ্যেই যখন বোঝাপড়া না হয়, তখন শিশুরা হয়ে পড়ে অসহায়৷ যা থেকে অনেক শিশু বা কিশোর-কিশোরী প্রচণ্ড আঘাত পায় আর সেই আঘাতের ক্ষত হয়তো তাকে সারা জীবনই কষ্ট দেয়৷ এমনটাই মনে করেন মিউনিখের মনোচিকিৎসক বেনেডিক্ট ক্লাউকে৷
ছবি: Fotolia/Kitty
‘আমাকে কেউ ভালোবাসে না, আমি মূল্যহীন’
মা-বাবার ছাড়াছাড়ির মনোকষ্টের কথা শিশুরা সহজে বোঝাতে পারে না৷ তাই বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মাথা ব্যথা, পেট ব্যথা, পড়াশোনায় মনোযোগ না থাকা বা অকারণে হঠাৎ করে রেগে যাওয়া – এ সবের মধ্য দিয়েই শিশুদের কষ্টের প্রকাশ ঘটে৷ ওদের তখন মনে হয়, ‘‘আমার কেউ নেই৷ আমাকে কেউ ভালোবাসে না৷ আমি মূল্যহীন৷’’ ওরা ভাবে, ওদের যদি কেউ ভালোবাসে, তাহলে ভালোবাসার দু’জন মানুষের মধ্যে একজন তাকে ছেড়ে যাবে কেন?
ছবি: picture-alliance/dpa
দীর্ঘস্থায়ী বিষণ্ণতা
ডিভোর্স বা ছাড়াছাড়ি যেমন মা-বাবার জন্য একটি চ্যালেঞ্জ, তেমনি সন্তানের জন্যও৷ সমীক্ষায় জানা গেছে, পরিবারকে নতুন পরিস্থিতির মোকাবেলা করতে মা এবং বাবাকেই বড় ভূমিকা নিতে হবে৷ সন্তানের সাথে কথা বলার জন্য যে কোনো পরিস্থিতেই পিতা-মাতাকে প্রস্তুত থাকতে হবে৷ তাছাড়া সন্তানের কাছে একে অপরকে দোষারোপ করাও উচিত নয়, কারণ, এই জটিল ব্যাপারে বাবা বা মায়ের পক্ষ নিতে গিয়ে সন্তানকে যেন বিচারকের ভূমিকা না নিতে হয়৷
মা-বাবা যা করবেন
যেসব দম্পতির ছাড়াছাড়ি হয়েছে তাঁদের প্রতি বেনেডিক্ট ক্লাউকের পরামর্শ, ‘‘সন্তান যার কাছেই থাকুক না কেন, ওকে এমন একটা অনুভূতি বা ধারণা দিন যেন ও মনে করে, আপনারা আলাদা থাকলেও ওকে দু’জনই সমান ভালোবাসেন, কারণ, শিশুর জন্য মানবিক সম্পর্কের জায়গাগুলো বেশ জটিল৷ তাই যতটা সম্ভব ওর সাথে সময় কাটান৷ ‘তোমাকে ভালোবাসি’ বলতে ভুলবেন না৷ জানিয়ে দিন, ওর যে কোনো সমস্যায় আপনারা ওর সাথে আছেন এবং থাকবেন৷’’
ছবি: picture-alliance/dpa
5 ছবি1 | 5
সামাজিক যোগাযোগের নেতিবাচক দিকটা কী?
সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে সবাই কিন্তু নিজের ভালো জিনিসগুলো শেয়ার করে৷ কে কোথায় ঘুরতে যাচ্ছে, কোথায় খেতে যাচ্ছে৷ কোন কনসার্টে গেলো, কী ভালো লাগলো – এ সব৷ এতে করে যে মানুষটা হতাশায় ভুগছে সে আরো ভাবে পৃথিবীর সব মানুষ কত আনন্দে আছে, যত দুঃখ সব তাদের৷ আমার কাছে যত হতাশা নিয়ে ‘ক্লায়েন্ট' আসে৷ আর এ নিয়ে গবেষণায় দেখা গেছে যারা বেশি ফেসবুক ব্যবহার করে, তারা বেশি হতাশাগ্রস্ত৷ তাদের অনেকেই এই কথাটা বলতে শোনা যায়৷ সরাসরি ‘শেয়ারিং'-এ যে ভাবের আদান-প্রদান হয়, সেটা কি আর যন্ত্রের মাধ্যমে সম্ভব!
কাদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা সবচেয়ে বেশি?
পুরুষদের তুলনায় নারীদের মধ্যে আত্মহত্যা প্রবণতা বেশি৷ বয়ঃসন্ধি থেকে নিয়ে ২৫ থেকে ৩০ বয়সি নারীদের অনেকেই হতাশাগ্রস্ত৷ তাই তাদের মধ্যে আত্মহত্যা প্রবণতাও বেশি৷ একটা বিষয় হচ্ছে আজ সমাজে সবকিছুই কেমন এগিয়ে আসছে৷ মানসিক অসুস্থতার বয়সটাও এগিয়ে আসছে৷ মাত্র সাত বছর বয়সি ছেলেও বিষণ্ণতা নিয়ে আমার কাছে আসছে৷ যেটা আগে মোটেও দেখা যেত না৷ আর এটা পরিবারের কারণেই হচ্ছে বেশি৷
মেহতাব খানম
এর প্রতিকার আসলে কী? আসলে পরিবার এক্ষেত্রে কি ভূমিকা রাখতে পারে?
মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়টা বাংলাদেশে তেমন একটা গুরুত্ব দেয়া হয় না৷ কয়েকটা ‘ইনস্টিটিউশন' বা সংগঠন আছে যা অপ্রতুল৷ ঢাকার বাইরে খুব কম৷ মানুষের যখন আত্মহত্যার প্রবণতা হয়, তখন তারা সাহায্য খোঁজে৷ যে মডেল আত্মহত্যা করার আগে ফেসবুকে ভিডিওটি দিয়ে গেছে, সে কিন্তু সবার সাহায্য চাইছে এ সমস্যা থেকে উত্তোরণের জন্য৷ তার অনেক বন্ধুও তাকে সাহায্য করতে চাইছে৷ এই সাহায্যটা যদি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে না হয়ে সরাসরি হতো, মেয়েটা হয়ত বাঁচত৷ তাছাড়া দেশে ‘হেল্পলাইন'-ও বেশি নেই৷ যখন এমন প্রবণতা হবে তখন যদি কাউকে তার সমস্যাটা বলতে পারে, তবে আত্মহত্যার ইচ্ছেটা চলে যাবে৷ অনেক ‘ক্রাইসিস সেন্টার' যদি থাকে তবে ভালো হয়৷ কেবল একটি সরকারি ক্রাইসিস সেন্টার রয়েছে, যা যথেষ্ট নয়৷ কেননা সব মানুষ সেখানে ফোন করছে, তারা সামাল দিতে পারছে না৷
পরিবারের ব্যাপারটা হলো আগের মতো কেউ পরিবারের সাথে বেড়াতে যায় না, গল্প করে না৷ কেননা মানুষে মানুষে যোগাযোগটা আগের তুলনায় যন্ত্রের মাধ্যমে একটু বেশি হচ্ছে৷ আগে যেখানে সরাসরি হতো৷ পরিবারে হয়ত চারজন মানুষ আছে৷ বাসায় ফিরে চারজনই চারটি মোবাইল বা ল্যাপটপ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ রক্ষা করছে৷
আগের মতো পিকনিকেও খুব একটা যায় না মানুষ৷ আর বাইরে যেতেও ভয় পায়, কারণ এত দুর্ঘটনা হয়, তা নিয়েও মানুষ দুশ্চিন্তায় ভোগে৷ নিজেদের বিনোদনটায় আজকাল মানুষ বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে৷ তাই যন্ত্রের সাথে বেশি সময় কাটাচ্ছে৷ কেউ কষ্টের জায়গাগুলো ফেসবুকে দিচ্ছে না৷ যারা বিষণ্ণতায় ভুগছে তাদের বিষণ্ণতাকে আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে ফেসবুক৷ অন্যদের আনন্দ করতে দেখে এটা আরো বাড়ছে৷ তাই সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম, যেমন ফেসবুক, টুইটারে যোগাযোগ না বাড়িয়ে সামাজিক যোগাযোগ বাড়াতে হবে৷
পরিবারের মানুষ কোন লক্ষণ দেখে বুঝবেন যে তার সন্তান বা আত্মীয় বিষণ্ণতায় ভুগছেন, বা তার সাহায্যের প্রয়োজন?
কেউ যদি খিটখিটে মেজাজের হয়, হয়ত বেশি খাচ্ছে বা কম খাচ্ছে৷ ঘুম থেকে দেরি করে ওঠা, অল্পতেই রেগে যাওয়া, মানুষকে আঘাত করা, দৈননন্দিন কাজে ধীরগতি, উদ্বেগ – এ সবই বিষণ্ণতার লক্ষণ৷ বিষণ্ণতার অন্যতম প্রধান কারণ দাম্পত্য সম্পর্কে দ্বন্দ্ব ও অসামঞ্জস্যতা৷ বাবা-মা কেউ কাউকে সইতে পারছে না, সম্মান করছে না –এটা সন্তানদের মধ্যে বিষণ্ণতা তৈরি করছে৷ আর মা-বাবার দোষ দিয়েও লাভ নেই, তারা যখন নিজেরা খারাপ আছেন, তখন আর কে খারাপ থাকলো সেদিকে লক্ষ্য করেন না৷ কিছু পরিবারের বিয়ের পর প্রথমদিকেই স্ত্রীর ওপর শ্বশুরবাড়ির একটা নেতিবাচক প্রভাব থাকে৷ দুই পরিবারের মধ্যে মনোমালিন্য৷ তারা একে-অপরকে ছোট করছে, দোষারোপ করছে৷ এতে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সম্পর্কের অবনতি ঘটছে৷ পরে দুই পরিবার হয়ত চেষ্টা করে সমঝোতা করতে৷ পরে কাউন্সেলিং-এ আসে৷ দুই পরিবারের সম্পর্কের অবনতিতে শিশুদের সাথে পরিবারের অন্য সদস্যদের মেলামেশা বন্ধ হয়ে যায়৷ এতে মানসিকভাবে চাপ পড়ে শিশুদের ওপর৷
প্রেমের সম্পর্কগুলোর ক্ষেত্রে আত্মহত্যার কারণটা কী?
প্রেম-ভালোবাসা সম্পর্ক গড়তে গেলে প্রথমেই বাবা-মায়ের সম্পর্কের দিকে সন্তানের চোখ পড়ে৷ তাদের সম্পর্ক যদি ভালো না হয়, তবে সুস্থ প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে না৷ গর্ভকালীন অবস্থায় বাচ্চার ওপর মায়ের মানসিক স্বাস্থ্যের প্রভাব পড়ে৷ তাই বাবা-মাকে অনেক বেশি যত্নশীল হবে৷ এখনকার যুগে ছেলে বা মেয়ে একে অপরকে চাপ দেয়ার চেষ্টা করে৷ তুমি এটা করতে পারবে না, ওটা করতে পারবে না – এ সব শর্ত জুড়ে দিচ্ছে একে অন্যকে৷ এ সব শর্ত ভঙ্গ হলেই সম্পর্কে চিড় ধরছে৷ এই চাপ সৃষ্টির কারণে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে সুস্থ সম্পর্ক৷
শিশুদের বিষণ্ণতার ৬টি কারণ
বিষণ্ণতা কিশোর-কিশোরীদের আত্মহননের পথেও ঠেলে দেয়৷ তাই সন্তানকে শুধু ভালোবাসলেই চলবে না, খেয়াল রাখতে হবে বিষণ্ণতায় ডুবে যাওয়ার মতো কারণ থেকেও তাদের যাতে দূরে রাখা যায়৷ ছবিঘরে থাকছে শিশুদের বিষণ্ণতার কিছু কারণ৷
ছবি: Fotolia/Nicole Effinger
অতিরিক্ত প্রত্যাশার চাপ
বাংলাদেশে পরীক্ষায় ভালো না করায় কিশোর-কিশোরীর আত্মহত্যার ঘটনা প্রতি বছরই ঘটে৷ বাবা-মা, পরিবার, সমাজ অনেকক্ষেত্রেই বোঝে যে ছোটদের খুব চাপে ফেলা মানে বিপদ বাড়ানো৷ লেখাপড়া, খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড – সব জায়গাতেই তীব্র প্রতিযোগিতা৷ অনেক সময় প্রত্যাশার চাপে শিশুরা দিশেহারা হয়ে পড়ে৷ বিষণ্ণতা গ্রাস করে তাদের৷ বয়ঃসন্ধিকালে এ অবস্থায় অনেকে এমন চাপ থেকে মুক্তির পথ খোঁজে আত্মহত্যায়৷
ছবি: picture-alliance/blickwinkel
ভাঙা পরিবার
বাবা-মায়ের বিচ্ছেদ সন্তানের জন্য খুব বড় আঘাত৷ এই আঘাত তাদের জীবনযাপন, আচার-আচরণ সবকিছুতেই বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বিরূপ প্রভাব ফেলে৷ ‘ম্যারিজ অ্যান্ড ফ্যামিলি’ জার্নালে প্রকাশিত সাম্প্রতিক এক নিবন্ধ বলছে, ডিভোর্সি বাবা-মায়ের সন্তানদের অবসাদগ্রস্থ হওয়া এবং আত্মহত্যার ঝুঁকি অনেক বেশি৷
ছবি: goodluz - Fotolia
কম খেলাধুলা
শিশুদের সুস্থ জীবনের জন্য খেলাধুলা খুবই দরকার৷ খেলাধুলা বেড়ে ওঠা, মেধার বিকাশ, শেখার আগ্রহ এবং সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা বাড়ানো – বলতে গেলে স্বাভাবিক জীবনের জন্য অপরিহার্য অনেক গুণ তৈরিতেই বড় ভূমিকা রাখে৷ শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ পেটার গ্রে জানিয়েছেন, যেসব শিশু খেলাধুলা কম করে তারা দৈনন্দিন জীবনের ছোটখাটো সমস্যা সমাধানেও বহুক্ষেত্রে কম দক্ষ হয়৷ বিষয়টি তাদের একসময় হতাশাগ্রস্ত করে আর হতাশা ডেকে আনে বিষাদ৷
ছবি: picture-alliance/dpa/R. Schlesinger
ইলেক্ট্রনিক গেমের নেশা
আপনার সন্তান খুব বেশি কম্পিউটার গেম খেলে? কম্পিউটার, স্মার্টফোন বা ট্যাবলেট হাতে পেলেই গেম খেলায় ব্যস্ত হয়ে পড়ে? তাহলে সন্তানকে একটু সময় দিন৷ অ্যামেরিকান জার্নাল অফ ইন্ডাস্ট্রিয়াল মেডিসিন-এ প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, যেসব শিশু দিনে পাঁচ ঘণ্টা বা তার বেশি গেম খেলে, তারা অবসাদগ্রস্তও হয় বেশি৷ বিজ্ঞানীরা বলছেন, দীর্ঘদিন সপ্তাহে ২০ ঘণ্টার বেশি গেম খেললে শিশুদের মস্তিষ্কের কোষ সংকুচিত হতে শুরু করে৷
ছবি: dpa
বেশি চিনি খাওয়া
ব্রিটিশ মনস্তত্ত্ববিদ ম্যালকম পিট গবেষণা করে দেখেছেন, বেশি চিনি, কেক, মিষ্টি জাতীয় খাবার বেশি খাওয়া এবং কার্বোনেটেড পানীয় বেশি পান করার অভ্যাসও অনেক সময় শিশুদের অবসাদগ্রস্ত করে৷ চিনি বেশি খেলে মস্তিষ্কে বৃ্দ্ধি হরমোনের কার্যক্রমেও সমস্যা তৈরি করে৷
ছবি: Colourbox
বেশি অ্যান্টিবায়োটিক
বেশি অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ানো অনেক কারণেই খারাপ৷ বেশি অ্যান্টিবায়োটিকও শিশুদের মনস্তত্ত্বে কুপ্রভাব ফেলে৷ ম্যাকমাস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা কিছু ইঁদুরের দেহে দীর্ঘদিন অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে এ সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/F. May
6 ছবি1 | 6
আত্মহত্যার প্রবণতা হলে কী ধরনের থেরাপি আপনারা দেন?
প্রথমেই শুরু করি পরিবারের ধরণ কেমন, বাবা-মা এর সম্পর্ক কেমন সেটা দিয়ে৷ অতিরিক্ত শাসন বা অতিরিক্ত ভালোবাসা – দু'টোতেই সমস্যা সৃষ্টি হয়৷ মা যখন শ্বশুরবাড়ি বা স্বামীর কাছ থেকে কষ্ট পেয়েছেন, সেটা শিশুর মানসিক স্বাস্থ্যে প্রভাব ফেলে৷ কষ্টের পাশাপাশি রাগও জমা হতে থাকে৷ যেমন একজন আমার কাছে এসে বলছে, তার বাবাকে আঘাত করতে বা কড়া কথা শুনিয়ে দিতে উচ্ছে হতো, কিন্তু বাবা তো তাই সেটা সে পারেনি৷ বাবা-মার হাতাহাতিও হয়েছে৷ তাই মানসিক বিকাশ কীভাবে ঘটছে সেটা প্রথমে দেখি৷ ‘ইমোশনাল ডেভেলপমেন্ট'-কে গুরুত্ব দেয়ার চেষ্টা করি৷ আবেগ, রাগ, কষ্ট কতটা মোকাবেলা করতে পারছে সে৷ এগুলোকে যখন নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, তখন সম্পর্ক ভালো হয়৷ যখন নিজে ভালো থাকবে, নিজেকে যত্ন করতে ইচ্ছে করবে, ভালোবাসতে ইচ্ছে করবে, তখন অন্যের সাথে সম্পর্ক ভালো হবে৷ তাই ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স গড়ে তুলতেও সাহায্য করি আমরা৷
ভালোবাসার সম্পর্কে চিড় ধরলে কী করবেন?
ভালোবাসার সম্পর্ক যত দীর্ঘ হয়, একে অপরের প্রতি আবেগ, উচ্ছ্বাস তত কমতে থাকে৷ কখনোবা সম্পর্কে চিড়ও ধরে৷ দু’জনের পুরনো মধুর সম্পর্ককে ঝালিয়ে নিতে একটু দোলা দিন৷ কিভাবে? তা জানাচ্ছেন একজন জার্মান বিশেষজ্ঞ৷
ছবি: Fotolia/Kitty
প্রথমেই কারণ খুঁজে বের করুন
প্রথমদিকে প্রেমিক-প্রেমিকা বা স্বামী-স্ত্রী’র আবেগ বা একে অপরকে কাছে পেতে চাওয়ার আগ্রহ খানিকটা কমে যাওয়া স্বাভাবিক৷ তবে তা যদি মাত্রা ছাড়িয়ে যায় বা কোনো বড় কারণ ছাড়াই নিয়মিত দু’জনের মধ্যে ঝগড়া হয়, তাহলে অবশ্যই বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে হবে৷
ছবি: DW-Montage/picture-alliance/dpa
একঘেয়েমি থেকে বেরিয়ে আসুন
কর্মস্থল থেকে কাজের এক ফাঁকে আপনার সঙ্গীর সাথে যোগাযোগ করুন৷ কেউ আপনাকে রাগিয়েছে কিনা কিংবা কোনো হাসির খবর অথবা সুন্দর একটি ছবি তুলে মোবাইলে পাঠিয়ে দিন৷ বুঝিয়ে দিন যে আপনি হাজারো কাজের মাঝেও এখনো আগের মতোই তাঁর কথা ভাবেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa Themendienst
উপহার
জার্মান ভাষায় বলা হয় ‘ক্লাইনে গেশেঙ্কে এরহালটেন ফ্রয়ন্ডশাফ্ট’ অর্থাৎ ছোটখাটো উপহার বন্ধুত্বকে টিকিয়ে রখে৷ তবে পার্টনারের ক্ষেত্রে জানা প্রয়োজন যে, আপনার সবচেয়ে কাছের মানুষটির কী পছন্দ বা সে কী চায়৷ মনের খবর নিয়েই উপহার কিনুন, তা না হলে ফল উল্টো হতে পারে কিন্তু!
ছবি: Fotolia/EMrpize
পুরনো শখ মেটান
সম্পর্কে যখন চিড় ধরতে শুরু করেছে তখন কিন্তু আর টুকিটাকি জিনিসে মন ভরবেনা৷ তাই ভালো করে জেনে নিন, কী উপহার পেলে সে সত্যিই খুশি হবে এবং দুজনেই কাছাকাছি থাকা যাবে, যোগাযোগ রাখা যাবে৷ সারপ্রাইজ উপহারটি হতে পারে স্মার্ট ফোন, কম্পিউটার কিংবা দূরে কোথাও বেড়াতে যাওয়া , যেখানে যাওয়ার ইচ্ছে মনের মধ্যে বহুদিন থেকেই ছিল৷
ছবি: Fotolia/ChenPG
ভূমিকা অদল-বদল
সংসারে দু’জনেই জানেন যে কোন কাজ কার পছন্দ বা পছন্দ নয়৷ যেহেতু দু’জনকেই অনেকসময় জোর করে সংসারের অনেক কাজ করতে হয়, তাই এবার সম্ভব হলে ভূমিকা পরিবর্তন করে স্বামী করুন স্ত্রীর কাজ আর স্ত্রী করুন স্বামীর কাজ৷ দেখবেন বেশ মজা হবে৷ তাছাড়া এর মধ্য দিয়ে একে অপরের কাজের স্বীকৃতিও দেওয়া হবে৷
ছবি: picture-alliance / Helga Lade Fotoagentur GmbH, Ger
রোম্যান্টিক টিপস
টিভি অনুষ্ঠান দেখা, ম্যাগাজিন বা পত্রিকা পড়ার ক্ষেত্রেও যার যার আলাদা পছন্দ থাকে৷ তাই এক্ষেত্রেও কিন্তু অদল-বদল করা যেতে পারে৷ তখন একে অপরকে বোঝা অনেক সহজ হবে৷ করেই দেখুন না একবার! ঝিমিয়ে পড়া বা চিড় ধরা ভালোবাসার সম্পর্ককে একটু দোলা দিয়ে চাঙা করে তুলতে এই টিপসগুলো আমাদের দিয়েছেন জার্মান ক্রিয়েটিভ বিশেষজ্ঞ ব্যার্নহার্ড ভল্ফ৷