1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সন্তানদের আত্মহত্যার কারণ কী?

অমৃতা পারভেজ১৩ জুন ২০১৬

২০১৪ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গবেষণায় দেখা যায় বাংলাদেশে প্রতিদিন ২৮ জন মানুষ আত্মহত্যা করে৷ এর কারণ হিসেবে মনোবিজ্ঞানী মেহতাব খানম স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের অবনতিকে দায়ী করেছেন৷

বাবা-মা’র সম্পর্ক সন্তানদের আত্মহত্যার অন্যতম কারণ
প্রতীকী ছবিছবি: Fotolia

এছাড়া সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ব্যস্ততাকেও দায়ী করেছেন তিনি৷ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এডুকেশনাল অ্যান্ড কাউন্সেলিং সাইকোলজি বা শিক্ষা ও পরামর্শ মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মেহতাব খানম ডয়চে ভেলেকে এ সংক্রান্ত একটি সাক্ষাৎকারে বলেন এ কথাগুলো৷ তারই একটা অংশ এখানে তুলে ধরা হলো৷

ডয়চে ভেলে: আগের তুলনায় বাংলাদেশে কি আত্মহত্যার হার বেড়েছে?

মেহতাব খানম: পরিসংখ্যানটা সঠিক বলতে পারবো না৷ তবে এটা বলতে পারি যে, আমাদের সমাজে একটা পরিবর্তন এসেছে৷ সমাজে, রাষ্ট্রে যখন একটা পরিবর্তন আসে, তার প্রভাব পড়ে মানুষের মনে৷ এই যেমন, যন্ত্রের মাধ্যমে বেশি যোগাযোগ হচ্ছে৷ এর ফলে মানুষ অনেক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ছে৷ যেগুলো খুব স্থায়ী সম্পর্ক নয়৷ বিবাহবিচ্ছেদের সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে৷ সমাজের সবক্ষেত্রে একটা অবক্ষয় ঘটেছে৷ যেমন শিক্ষার ক্ষেত্রে অবক্ষয়, শিক্ষা ব্যবস্থায় পরিবর্তন, বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবক্ষয় এসেছে৷ বিয়ের সম্পর্কগুলো ভালো থাকছে না৷ সম্পর্কের অবনতি ঘটছে৷ আর এ জন্য প্রযুক্তি একটা বড় ভূমিকা রাখছে৷

সামাজিক যোগাযোগের নেতিবাচক দিকটা কী?

সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে সবাই কিন্তু নিজের ভালো জিনিসগুলো শেয়ার করে৷ কে কোথায় ঘুরতে যাচ্ছে, কোথায় খেতে যাচ্ছে৷ কোন কনসার্টে গেলো, কী ভালো লাগলো – এ সব৷ এতে করে যে মানুষটা হতাশায় ভুগছে সে আরো ভাবে পৃথিবীর সব মানুষ কত আনন্দে আছে, যত দুঃখ সব তাদের৷ আমার কাছে যত হতাশা নিয়ে ‘ক্লায়েন্ট' আসে৷ আর এ নিয়ে গবেষণায় দেখা গেছে যারা বেশি ফেসবুক ব্যবহার করে, তারা বেশি হতাশাগ্রস্ত৷ তাদের অনেকেই এই কথাটা বলতে শোনা যায়৷ সরাসরি ‘শেয়ারিং'-এ যে ভাবের আদান-প্রদান হয়, সেটা কি আর যন্ত্রের মাধ্যমে সম্ভব!

কাদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা সবচেয়ে বেশি?

পুরুষদের তুলনায় নারীদের মধ্যে আত্মহত্যা প্রবণতা বেশি৷ বয়ঃসন্ধি থেকে নিয়ে ২৫ থেকে ৩০ বয়সি নারীদের অনেকেই হতাশাগ্রস্ত৷ তাই তাদের মধ্যে আত্মহত্যা প্রবণতাও বেশি৷ একটা বিষয় হচ্ছে আজ সমাজে সবকিছুই কেমন এগিয়ে আসছে৷ মানসিক অসুস্থতার বয়সটাও এগিয়ে আসছে৷ মাত্র সাত বছর বয়সি ছেলেও বিষণ্ণতা নিয়ে আমার কাছে আসছে৷ যেটা আগে মোটেও দেখা যেত না৷ আর এটা পরিবারের কারণেই হচ্ছে বেশি৷

মেহতাব খানম

This browser does not support the audio element.

এর প্রতিকার আসলে কী? আসলে পরিবার এক্ষেত্রে কি ভূমিকা রাখতে পারে?

মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়টা বাংলাদেশে তেমন একটা গুরুত্ব দেয়া হয় না৷ কয়েকটা ‘ইনস্টিটিউশন' বা সংগঠন আছে যা অপ্রতুল৷ ঢাকার বাইরে খুব কম৷ মানুষের যখন আত্মহত্যার প্রবণতা হয়, তখন তারা সাহায্য খোঁজে৷ যে মডেল আত্মহত্যা করার আগে ফেসবুকে ভিডিওটি দিয়ে গেছে, সে কিন্তু সবার সাহায্য চাইছে এ সমস্যা থেকে উত্তোরণের জন্য৷ তার অনেক বন্ধুও তাকে সাহায্য করতে চাইছে৷ এই সাহায্যটা যদি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে না হয়ে সরাসরি হতো, মেয়েটা হয়ত বাঁচত৷ তাছাড়া দেশে ‘হেল্পলাইন'-ও বেশি নেই৷ যখন এমন প্রবণতা হবে তখন যদি কাউকে তার সমস্যাটা বলতে পারে, তবে আত্মহত্যার ইচ্ছেটা চলে যাবে৷ অনেক ‘ক্রাইসিস সেন্টার' যদি থাকে তবে ভালো হয়৷ কেবল একটি সরকারি ক্রাইসিস সেন্টার রয়েছে, যা যথেষ্ট নয়৷ কেননা সব মানুষ সেখানে ফোন করছে, তারা সামাল দিতে পারছে না৷

পরিবারের ব্যাপারটা হলো আগের মতো কেউ পরিবারের সাথে বেড়াতে যায় না, গল্প করে না৷ কেননা মানুষে মানুষে যোগাযোগটা আগের তুলনায় যন্ত্রের মাধ্যমে একটু বেশি হচ্ছে৷ আগে যেখানে সরাসরি হতো৷ পরিবারে হয়ত চারজন মানুষ আছে৷ বাসায় ফিরে চারজনই চারটি মোবাইল বা ল্যাপটপ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ রক্ষা করছে৷

আগের মতো পিকনিকেও খুব একটা যায় না মানুষ৷ আর বাইরে যেতেও ভয় পায়, কারণ এত দুর্ঘটনা হয়, তা নিয়েও মানুষ দুশ্চিন্তায় ভোগে৷ নিজেদের বিনোদনটায় আজকাল মানুষ বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে৷ তাই যন্ত্রের সাথে বেশি সময় কাটাচ্ছে৷ কেউ কষ্টের জায়গাগুলো ফেসবুকে দিচ্ছে না৷ যারা বিষণ্ণতায় ভুগছে তাদের বিষণ্ণতাকে আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে ফেসবুক৷ অন্যদের আনন্দ করতে দেখে এটা আরো বাড়ছে৷ তাই সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম, যেমন ফেসবুক, টুইটারে যোগাযোগ না বাড়িয়ে সামাজিক যোগাযোগ বাড়াতে হবে৷

পরিবারের মানুষ কোন লক্ষণ দেখে বুঝবেন যে তার সন্তান বা আত্মীয় বিষণ্ণতায় ভুগছেন, বা তার সাহায্যের প্রয়োজন?

মনোবিজ্ঞানী মেহতাব খানমছবি: privat

কেউ যদি খিটখিটে মেজাজের হয়, হয়ত বেশি খাচ্ছে বা কম খাচ্ছে৷ ঘুম থেকে দেরি করে ওঠা, অল্পতেই রেগে যাওয়া, মানুষকে আঘাত করা, দৈননন্দিন কাজে ধীরগতি, উদ্বেগ – এ সবই বিষণ্ণতার লক্ষণ৷ বিষণ্ণতার অন্যতম প্রধান কারণ দাম্পত্য সম্পর্কে দ্বন্দ্ব ও অসামঞ্জস্যতা৷ বাবা-মা কেউ কাউকে সইতে পারছে না, সম্মান করছে না –এটা সন্তানদের মধ্যে বিষণ্ণতা তৈরি করছে৷ আর মা-বাবার দোষ দিয়েও লাভ নেই, তারা যখন নিজেরা খারাপ আছেন, তখন আর কে খারাপ থাকলো সেদিকে লক্ষ্য করেন না৷ কিছু পরিবারের বিয়ের পর প্রথমদিকেই স্ত্রীর ওপর শ্বশুরবাড়ির একটা নেতিবাচক প্রভাব থাকে৷ দুই পরিবারের মধ্যে মনোমালিন্য৷ তারা একে-অপরকে ছোট করছে, দোষারোপ করছে৷ এতে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সম্পর্কের অবনতি ঘটছে৷ পরে দুই পরিবার হয়ত চেষ্টা করে সমঝোতা করতে৷ পরে কাউন্সেলিং-এ আসে৷ দুই পরিবারের সম্পর্কের অবনতিতে শিশুদের সাথে পরিবারের অন্য সদস্যদের মেলামেশা বন্ধ হয়ে যায়৷ এতে মানসিকভাবে চাপ পড়ে শিশুদের ওপর৷

প্রেমের সম্পর্কগুলোর ক্ষেত্রে আত্মহত্যার কারণটা কী?

প্রেম-ভালোবাসা সম্পর্ক গড়তে গেলে প্রথমেই বাবা-মায়ের সম্পর্কের দিকে সন্তানের চোখ পড়ে৷ তাদের সম্পর্ক যদি ভালো না হয়, তবে সুস্থ প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে না৷ গর্ভকালীন অবস্থায় বাচ্চার ওপর মায়ের মানসিক স্বাস্থ্যের প্রভাব পড়ে৷ তাই বাবা-মাকে অনেক বেশি যত্নশীল হবে৷ এখনকার যুগে ছেলে বা মেয়ে একে অপরকে চাপ দেয়ার চেষ্টা করে৷ তুমি এটা করতে পারবে না, ওটা করতে পারবে না – এ সব শর্ত জুড়ে দিচ্ছে একে অন্যকে৷ এ সব শর্ত ভঙ্গ হলেই সম্পর্কে চিড় ধরছে৷ এই চাপ সৃষ্টির কারণে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে সুস্থ সম্পর্ক৷

আত্মহত্যার প্রবণতা হলে কী ধরনের থেরাপি আপনারা দেন?

প্রথমেই শুরু করি পরিবারের ধরণ কেমন, বাবা-মা এর সম্পর্ক কেমন সেটা দিয়ে৷ অতিরিক্ত শাসন বা অতিরিক্ত ভালোবাসা – দু'টোতেই সমস্যা সৃষ্টি হয়৷ মা যখন শ্বশুরবাড়ি বা স্বামীর কাছ থেকে কষ্ট পেয়েছেন, সেটা শিশুর মানসিক স্বাস্থ্যে প্রভাব ফেলে৷ কষ্টের পাশাপাশি রাগও জমা হতে থাকে৷ যেমন একজন আমার কাছে এসে বলছে, তার বাবাকে আঘাত করতে বা কড়া কথা শুনিয়ে দিতে উচ্ছে হতো, কিন্তু বাবা তো তাই সেটা সে পারেনি৷ বাবা-মার হাতাহাতিও হয়েছে৷ তাই মানসিক বিকাশ কীভাবে ঘটছে সেটা প্রথমে দেখি৷ ‘ইমোশনাল ডেভেলপমেন্ট'-কে গুরুত্ব দেয়ার চেষ্টা করি৷ আবেগ, রাগ, কষ্ট কতটা মোকাবেলা করতে পারছে সে৷ এগুলোকে যখন নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, তখন সম্পর্ক ভালো হয়৷ যখন নিজে ভালো থাকবে, নিজেকে যত্ন করতে ইচ্ছে করবে, ভালোবাসতে ইচ্ছে করবে, তখন অন্যের সাথে সম্পর্ক ভালো হবে৷ তাই ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স গড়ে তুলতেও সাহায্য করি আমরা৷

মনোবিজ্ঞানী মেহতাব খানমের সাক্ষাৎকারটি আপনাদের কেমন লাগলো? লিখুন নীচের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ