1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘স্বার্থান্বেষী মহল জলবায়ুর টাকাকে এদিক ওদিক করতে পছন্দ করে’

সমীর কুমার দে ঢাকা
১১ নভেম্বর ২০২২

এবারের জলবায়ু সম্মেলন ঘিরে বাংলাদেশের প্রত্যাশা কী? উন্নত দেশগুলোর প্রতিশ্রুত অর্থ কী পেয়েছে বাংলাদেশ? পেলে সেগুলো কীভাবে খরচ হচ্ছে? এসব ফান্ডের টাকা নিয়ে দুর্নীতির যে অভিযোগ সেটা কতটুকু সত্যি?

ড. আতিক রহমান
ড. আতিক রহমানছবি: How Hwee Young/dpa/picture alliance

এসব বিষয় নিয়ে ডয়চে ভেলের সঙ্গে কথা বলেছেন দক্ষিণ এশিয়ার খ্যাতিমান পরিবেশ বিজ্ঞানী ড. আতিক রহমান৷ ২০০৭ সালে আইপিসিসি যৌথ নোবেল শান্তি পুরস্কার পেলে তিনি ছিলেন এর সহ-প্রাপক৷ ২০০৮ সালে ড. রহমান লাভ করেন জাতিসংঘের সম্মানিত পরিবেশ পদক ‘চ্যাম্পিয়ন অব দি আর্থ’৷

ডয়চে ভেলে : বাংলাদেশ জলবায়ু সহায়তা হিসেবে যে অর্থ পায় সেটা কী সঠিকভাবে কাজে লাগানো হয়?

ড. আতিক রহমান : এখানে দুটো ব্যাপার৷ বাংলাদেশ জলবায়ুর জন্য খুব বেশি অর্থ পায় কিনা সেটা বিবেচ্য? কারণ যে অর্থ পৃথিবীতে দেওয়া প্রয়োজন বলে আমরা গত ২০ বছর ধরে আন্দোলন করে যাচ্ছি, তার এক অংশ বাংলাদেশ পায় না সত্যিকথা বলতে গেলে৷ তাদের প্রাপ্যতা থেকে৷ বাংলাদেশের জনসংখ্যা হচ্ছে ১৭ কোটি৷ এই ১৭ কোটি মানুষ কয়েকটা দেশের সমান৷ সেই তুলনায় আমাদের ক্ষতি প্রচণ্ড৷ বিশেষ করে দক্ষিণাঞ্চল এবং উপকূলীয় এলাকা যেটা৷ সেখানে মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বেঁচে আছে৷ আমাদের সবচেয়ে বড় সম্পদ যেটা সুন্দরবন আজ সেটাও বিপদের সম্মুখীন৷ এই জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে লবণাক্ততা বাড়ছে, পানির উচ্চতা বাড়ছে৷ সব মিলিয়ে দক্ষিণাঞ্চল বিশেষভাবে৷ আমাদের পদ্মা, মেঘনা, ঘমুনা এর মধ্যে দিয়ে চীন, ভারত, নেপাল, ভুটান এর পানি এর মাঝ দিয়ে বের দেই৷ ছোট্ট একটা দেশ, ১৭ কোটি মানুষ তার মধ্যেই আমরা আমাদের বেসিক খাদ্য ভাত বা চাল সেটা মোটামুটি তৈরি করতে পারছি৷ মনে রাখতে হবে যখন বাংলাদেশ স্বাধীন হল তখন লোক ছিল সাত কোটি৷ তখনও কিন্তু মানুষ খাদ্যভাব ছিল৷ এখন ১৭ কোটি লোক আমরা নিজেদের উৎপাদনে খাওয়াতে পারছি৷  

‘এখনও বিশ্বে এক তৃতীয়াংশ খাদ্য এবং জ্বালানি অপচয় হয়’

This browser does not support the audio element.

এবারের জলবায়ু সম্মেলন থেকে বাংলাদেশের প্রত্যাশা কী?

এইভাবে একটা দেশের প্রত্যাশা থাকে না৷ এটা আন্তঃরাষ্ট্রীয় সমঝোতা৷ এখানে সমঝোতার বিষয়টা হল, কারা সমস্যাটা তৈরী করছে এবং কারা বিপদগ্রস্থ হচ্ছে৷ যে দল সমস্যাটা তৈরি করছে তারা অতটা বিপদগ্রস্থ হচ্ছে না৷ বিপদগ্রস্থ হচ্ছে অন্য কতগুলো দেশ৷ দুর্ভাগ্যবশত সেই দেশগুলো দরিদ্র সামগ্রিকভাবে৷ তারা যে দরিদ্র তার একটা কারণ হচ্ছে গত শতাব্দী ধরে তারা জলবায়ু পরিবর্তনের ফল ভোগ করছে৷ এর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম৷ মালদ্বীপ, নেপাল, ভুটানও আছে৷ যদিও ভুটানের জনসংখ্যা কম৷ ল্যাটিন আমেরিকার উত্তরাঞ্চলের ছোট ছোট দেশগুলো এবং ইউরোপেরও ছোট ছোট কতগুলো দেশ আছে তারাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়৷ ক্ষতিপূরণ দিয়ে তো আর ক্ষতিগ্রস্ততা তুলে নেওয়া যাবে না কিন্তু দায় স্বীকার করে অর্থনৈতিক উন্নয়নের ভূমিকা রাখা৷

আগে প্রধানমন্ত্রী এই সম্মেলনে যোগ দিতেন, এবার দিচ্ছেন না৷ আমাদের সরকার কী এই সম্মেলনকে গুরুত্ব কম দিচ্ছে?

না৷ আমরা সম্মেলনগুলো আমাদের নিজেদের ভেতরে ভেরি হাই, হাই, মডারেট এবং লো এই কয় ধাপে দেখি৷ এই সম্মেলনটা মডারেট এবং লো এর মাঝামাঝি৷ এটা অত হাইলাইটেডও নয়৷ কিন্তু এখানে লোয়ার লেভেলে যে কনফারেন্সগুলো হয় সেখানে ভালো ভালো সিদ্ধান্ত আসে৷ এসব প্রোগ্রামে যখন রাষ্ট্রপ্রধানরা যান তখন আলোচনার গভীরে যাওয়ার সুযোগ পায় না৷ ক্যামেরা কে কোথায় ধরবে এগুলো নিয়েই ব্যস্ততা বাড়ে৷ বেশিরভাগ যারা যান তারা সরকারি কর্মকর্তা, সরকারি বিজ্ঞানী, বেসরকারি বিজ্ঞানী, এনজিও প্রতিনিধি এবং সোসাইটির প্রতিনিধিরা৷ কিন্তু যখন রাষ্ট্রপ্রধানরা যান তখন সম্পূর্ণ আকর্ষণটা তাদের দিকে চলে যায়৷ রাষ্ট্রপ্রধানরা অনেক সময় এমন স্টেটমেন্ট দিতে প্রনোদিত হন যেটা নিজের জন্য ভালো কিন্তু সমগ্র পৃথিবীর জন্য হয়ত ভালো নয়৷

এই সম্মেলনে এই প্রথম ক্ষতিপূরণ তহবিল সরাসরি আলোচনায় এসেছে৷ সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ এখান থেকে কতটুকু সুবিধা নিতে পারে?

আমরা যারা এনজিও প্রতিনিধি বা আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান প্রতিনিধি তারা বহুদিন ধরে বলে আসছি, এই আলোচনাটা সামনে আসা উচিৎ৷ এতদিন কিন্তু এই আলোচনাটা পেছনে পেছনে হয়েছে৷ অর্থনীতি ট্রান্সফার সম্ভব কিনা? কে কতটা পাবে ইত্যাদি ইত্যাদি৷ কিন্তু এই নম্বরগুলো বড় কঠিন৷ সবার ধারণা তার সবচেয়ে বেশি ক্ষতিপূরণ পাওয়া উচিৎ৷ এটা মাথাপিছু হিসাব করলে বাংলাদেশ, ভারতসহ বেশি জনসংখ্যার দেশ বা ঘনত্বের দিক দিয়ে বেশি জনসংখ্যার দেশের মানুষ বেশি সুবিধা পায়৷ এটা হওয়া উচিৎ কিনা সেটা নিয়েও কথা আছে৷ এজন্য এবারই প্রথম বলা হচ্ছে আর্থিক সমঝোতার একটা সম্ভাবনার কথা৷ সেখানে বাংলাদেশ তার পতাকা ইতিমধ্যে উত্তোলন করেছে৷ সেখানে অংশগ্রহণকারীরা বলছেন, এখানে ভদ্রতার ভেতরে অর্থনৈতিক পর্যায়ে নেওয়া চেষ্টা হচ্ছে বা চলে গেছে৷ বিশেষ করে উন্নত দেশগুলো৷

আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিভিন্ন দেশের জলবায়ু লক্ষ্যমাত্রা পিছিয়ে যাচ্ছে কিনা?

অবশ্যই পিছিয়ে যাচ্ছে৷ এজন্য রাশিয়া এবং ইউক্রেন উভয়েই দায়ী৷ নিজেদের ক্ষোভ মেটাতে পুরো বিশ্বটাকেই তারা জিম্মি করে ফেলেছে৷ যত সহজে এই আলোচনা আমরা করতে পারতাম সেটা এখন আর হচ্ছে না৷ তার কারণ হচ্ছে, বোমা পড়ছে, লোক মরছে এবং যুদ্ধ যেখানেই হোক একে অপরকে বিপদে ফেলে৷ যেখানে যুদ্ধ নেই তারাও বিপদে পড়ছে৷ সেই অর্থে যুদ্ধটা খুবই খারাপ এবং এই যুদ্ধটা হওয়ার আদৌ কোন যুক্তি নেই৷

জাতিসংঘের মহাসচিব বলেছেন, বিশ্ব জলবায়ু নরকের মহাসড়কে আছে৷ সত্যিই কী আমরা এমন ভয়াবহ পরিস্থিতিতে আছি?

এমনই ভয়াবহ৷ আমরা বহুদিন ধরেই বলে আসছি৷ কিন্তু এই ধরনের শব্দ আমরা ব্যবহার করতাম না৷ আমরা বললে বলতো যে, এরা ভয় দেখায়৷ আপনি দেখবেন জাতিসংঘের মহাসচিব খুব বেশি কথা বলেন না এবং ফালতু কথা বলেন না৷ গরীব মরে যাচ্ছে, গরীব বাঁচাতে হবে এমন সব কথা উনি বলেন না৷ উনি যে ধরনের কথা বলেন তাতে উনি যে এই কথা বলেছেন তাতে আমি একটু হতভম্ব হয়েছি৷ আমার মনে হয়, উনি চিন্তা করে দেখেছেন একটা আঘাত সবাইকে দেওয়া উচিৎ যেটা সবাইকে নাড়িয়ে দেবে৷ সেটা তিনি বলেছেন৷ আমরাও যখন উনাদের সঙ্গে মিটিং করেছি তখন আমরাও বুঝেছি উনি উঁচু মাত্রায় একটা সংকটের ইঙ্গিত দিয়েছেন৷

জলবায়ুর অর্থ: কোন খাতে প্রয়োজন? কোন খাতে মিলছে?

05:07

This browser does not support the video element.

বাংলাদেশ যে জলবায়ু সহায়তা ফান্ড পায়, সেখানে অনেক সময় দুর্নীতির অভিযোগ উঠে৷ এগুলো আসলে সঠিক মনিটরিংয়ের মাধ্যমে খরচ হয় বলে আপনি মনে করেন?

এটা নিয়ে অন্য কথা৷ দুর্নীতি আর সুনীতির মধ্যেই আমাদের অবস্থান৷ ধরেন, একশ টাকা থাকলে শেষের ১০ টাকা নিয়ে আমি খুব বেশি চিন্তিত না৷ ৯০ টাকার কাজটা সঠিকভাবে হচ্ছে কিনা৷ সেটা অনেক সময় হয়, অনেক সময় হয় না৷ কিছু স্বার্থান্বেষী মহল আন্তর্জাতিক টাকাটাকে এদিক ওদিক করতে পছন্দ করে৷ তারা কিছুটা বেনিফিট পায়৷ দেশকে বাইরে রেখে, দেশের দুর্নাম করা এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক৷ এটা কোন দেশেরও প্রয়োজন নেই, কোন ব্যক্তিরও প্রয়োজন নেই৷ কিন্তু পৃথিবীকে এই দুদর্শা থেকে বাঁচানো আমাদের সবার দায়িত্ব৷

উন্নত দেশগুলো প্রতি বছরই কার্বন নিঃসরন ও অর্থ সহায়তার বিষয়ে অঙ্গীকার করে৷ কিন্তু এসব অঙ্গীকার সত্যি কি বাস্তবায়ন হয়?

কার্বণ নিঃসরণের বিষয়টা ক্যালকুলেট করা একটু কঠিন৷ কারণ এর মধ্যে লিকেজ আছে৷ সব মিলিয়ে অংক করলে কমবেশি আগের চেয়ে ভালো৷ আগে একদমই হিসেব ছিল না৷ এখন এনর্জি পোড়ানোর একটা হিসাব হয়৷ বলা হয়, এখনও বিশ্বে এক তৃতীয়াংশ খাদ্য এবং জ্বালানি অপচয় হয়৷ এটা খবই দুর্ভাগ্যজনক৷ যেখানে এতসব অভাব রয়ে গেছে৷ কোন ধর্ম অপচয়কে সাপোর্ট করেনি৷

জলবায়ুর অর্থ: উন্নত বিশ্ব অর্থ দিতে কি আদৌ আগ্রহী?

04:42

This browser does not support the video element.

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ