1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

স্বাস্থ্য ঝুঁকি কমাতে উৎসবে মিষ্টি খাওয়া কমাতে হবে

৭ মে ২০১৮

মিষ্টি বাংলাদেশের মানুষের অত্যন্ত প্রিয়৷ তাই যে কোনো উৎসবেই চাই মিষ্টি৷ কিন্তু মিষ্টি আমাদের কতটা স্বাস্থ্যঝুঁকিতে ফেলছে? উত্তর দিচ্ছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ডা. শাহজাদা সেলিম৷

Unterschiedliche Süssigkeiten aus Bangladesch
ছবি: DW/M. M. Rahman

ডয়চে ভেলে: মিষ্টির ভালো-খারাপ দু'টো দিকই আছে৷ শুরুতে এটা নিয়ে একটু বলুন...

ডা. শাহজাদা সেলিম: শুধু বাংলাদেশ নয়, ভারত বা পাকিস্তানেও আকর্ষণীয় একটি খাদ্য উপাদান হলো মিষ্টি৷ এ দেশগুলোয় যত সামাজিক বা ধর্মীয় অনুষ্ঠান হয়, সবখানেই মিষ্টি খুব গুরুত্বছপূর্ণ৷ মিষ্টি ছাড়া এসব জায়গায় কোনো অনুষ্ঠানই হয় না৷ তবে আমরা যদি পুষ্টির বিষয়টা বিবেচনায় আনি, তাহলে মিষ্টির খারাপের দিকটাই বেশি৷ ভালো দিকটা কম৷ মিষ্টি অতি দ্রুত খাদ্যে গ্লুকোজ সরবরাহ করে৷ আর আমাদের শরীরে যে জ্বালানি সরবরাহ হয়, সেটা মূলত গ্লুকোজ থেকেই আসে৷ অনেকেই দিনে ৩-৪ বার খাবার খান৷ আবার ডায়বেটিস রোগীদের দিনে ছ'বারও খেতে বলি আমরা৷ কম বয়সিরাও বেশি বার খায়৷ তবে এর অর্থ এই নয় যে, বেশি মিষ্টি খেয়ে রক্তে গ্লুকোজ তৈরি করতে হবে৷ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে মানুষের ওজন বেড়ে যাচ্ছে৷ এর পেছনে কিন্তু মিষ্টি জাতীয় খারারের একটা হাত আছে৷ এছাড়া অন্যান্য খাবারও আছে৷ অনেকে প্রশ্ন করেন, মিষ্টি খেলে ডায়বেটিস হয় কিনা৷ এর সরাসরি উত্তর দেয়া সম্ভব নয়৷ তবে যাঁদের ডায়বেটিস হয়নি, তাঁদেরও উচ্চতা অনুযায়ী ওজন নিয়ন্ত্রনে রাখতে হবে৷ আর ওজন নিয়ন্ত্রনে রাখতে হলে মিষ্টি জাতীয় খাবার কমিয়ে আনতে হবে৷ বিশেষ করে বাংলাদেশের মানুষের মিষ্টি জাতীয় খাবার যতটা কমিয়ে আনা যায়, ততটাই ভালো৷ অর্থাৎ, আমাদের উলটোটা করতে হবে৷ যে খাবারগুলো খেলে রক্তে ধীরে ধীরে গ্লুকোজ সরবরাহ হবে, সেই ধরনের খাবার বেশি খেতে হবে৷ ডায়বেটিসের কারণে আমাদের হৃদরোগসহ অন্যান্য রোগ বেড়ে যাচ্ছে৷ 

ড. শাহজাদা সেলিম

This browser does not support the audio element.

শরীরে নিশ্চয় মিষ্টির প্রয়োজনীয়তাও আছে?

অবশ্যই আছে৷ যাঁদের আর্থিক সংগতি নেই বা কম খাবার পান, তাঁরা যদি এখনই একটা মিষ্টি খেয়ে নেন, তাহলে দেখবেন রক্তে দ্রুত গ্লুকোজ সরবরাহ হয়ে যাচ্ছে৷ তবে মনে রাখতে হবে যে, এতে করে পরবর্তী খাবারের সময়টা কিন্তু এগিয়ে আসবে৷ অর্থাৎ অন্য সময় তিনি যতটা দেরিতে খাবার খেতেন, মিষ্টি খেলে তাঁকে পরবর্তী খাবার আগে খেতে হবে৷ মিষ্টিতে যে গ্লুকোজ আছে সেটা অন্যান্য খাবারেও কিন্তু আছে৷ ভাত, আলু বা সব ধরনের শর্করা জাতীয় খাবারেই গ্লুকোজ আছে৷ তবে এগুলো আস্তে আস্তে রক্তে গ্লুকোজ সরবরাহ করে৷ মিষ্টির কথা আলাদাভাবে বলার কারণ হলো – এর গ্লুকোজ অতি দ্রুত রক্তে চলে যায়৷ অন্যগুলো একটু সময় নেয়৷

মিষ্টি কী উপাদান দিয়ে তৈরি হয় ?

আমাদের দেশের মানসম্পন্ন মিষ্টি হলে সেটা দুধ থেকেই তৈরি হওয়ার কথা৷ এখন অবশ্য দেশে অনেকেই মিষ্টিতে অনেক বেশি চিনি দিচ্ছেন, গুড় দিচ্ছেন৷ অন্যদিকে দেশে ডায়বেটিস মিষ্টিও তৈরি হচ্ছে৷ এই ডায়বেটিস মিষ্টিতে ক্যালরিকারক দ্রব্য কম দিলে মিষ্টি বেশি লাগার কথা৷ তবে এগুলো বেশি ব্যবহার করলে মিষ্টি তিতা হয়ে যাওয়ার কথা৷ অথচ মিষ্টির দোকানিরা যে ডায়বেটিস মিষ্টি তৈরি করছেন, সেগুলো কিন্তু তিতা লাগছে না, বরং মিষ্টিই লাগছে!

মিষ্টিতে ক্ষতিকর কোন পদার্থটা বেশি থাকে?

মিষ্টিতে কোনো ক্ষতিকারক পদার্থ থাকার কথা নয়৷  দেখুন, দোকানের মিষ্টি দীর্ঘ সময় থাকে৷ অথচ তারপরও নষ্ট হয় না৷ এখন মিষ্টিতে যদি অন্য কিছু না মিশিয়ে শুধু দুধ বা ছানা দিয়ে তৈরি করা হয়, তাহলে তো সেটা দীর্ঘ সময় থাকার কথা নয়৷ এর কারণ এখানেও বহুল আলোচিত ফরমালিন ব্যবহার করা হচ্ছে বলে আমাদের কাছে তথ্য আসছে৷

বিশ্বে কি এমন কোনো দেশ আছে, যেখানে শতভাগ স্বাস্থ্যকর মিষ্টি তৈরি হয়?

এটা সম্ভব নয়৷ যেখানে সবাই স্বাস্থ্য সচেতন, সেখানে মিষ্টি খাওয়ার প্রবণতা অনেক কম৷ যেমন ধরুন, ক্যানাডা৷ সেখানে প্রতিটি দোকানে প্রতিটি খাবারের প্রতিটি উপাদান সরকার থেকে বেঁধে দেয়া৷ এরপর আছে অস্ট্রেলিয়া৷ এছাড়াও অন্যান্য কিছু দেশও মিষ্টি তৈরি কমিয়ে আনছে৷ 

মিষ্টির এত ক্ষতিকর দিকের পরও মিষ্টির সংস্কৃতি থেকে আমরা বের হতে পারছি না কেন?

আমাদের সংস্কৃতি হাজার বছরের পুরনো৷ তখন তো অত বৈজ্ঞানিক গবেষণা ছিল না৷ তাছাড়া সংস্কৃতি চাইলেই আপনি বদলে ফেলতে পারবেন না৷ এখন আমি যদি বলি, কোনো অনুষ্ঠান হলে সেখানে মিষ্টি বর্জন করে অনুষ্ঠান করতে হবে, তাহলে কি আপনি সেটা মানবেন? একটা বাচ্চা স্কুলে ভালো রেজাল্ট করেছে বা পরিবারে কোনো ভালো খবর এসেছে, আমাদের দেশে সেটা প্রকাশের ভাষা হলো যার যে সামর্থ্ আছে তা অনুযায়ী মিষ্টি বিতরণ করা৷ কোনো আনন্দের উপলক্ষ্য হলেই সেখানে মিষ্টি থাকবে৷ আমাদের দেশের জন্য এটা থেকে বের হয়ে আসাটা খুবই জরুরি৷

মিষ্টির দোকানের মালিকরা কি কখনও ডাক্তার দিয়ে পরীক্ষা করিয়েছেন?

কখনোই না৷ কারণ, আমাদের দেশে প্রতিটি দোকানে যে খাদ্য উপাদান রাখা হয়, সেটা স্বাস্থ্যসম্মত কিনা সেটা দেখার দায়িত্ব বিএসটিআই-এর৷ তারা কি সেটা করছে? আমি বলবো, আমাদের জনগণকে মিষ্টিনির্ভর না হয়ে আমিষ নির্ভর বা শাক-সবজি নির্ভর করতে৷ তাহলে আপনি সুস্থ থাকবেন, ভালো থাকবেন৷

বাংলাদেশে কোন বয়সি মানুষ সবচেয়ে বেশি মিষ্টি খায়? কোনো গবেষণা আছে কি?

মধ্যবয়সি মানুষ সবচেয়ে বেশি মিষ্টি খান৷ আমাদের দেশে যে পরিমাণ রোগীর ডায়বেটিস ধরা পড়েছে, তার অর্ধেক মানুষের এখনো ডায়বেটিস ধরা পড়েনি৷ যাঁদের ধরা পড়েনি, তাঁদের রক্তে যখন গ্লুকোজ কমে যাবে, তখন তার ভেতর থেকেই মিষ্টি খাওয়ার একটা প্রবণতা তৈরি হবে৷ বিভিন্ন ধরনের মিষ্টি খাওয়ার প্রতি আগ্রহ তৈরি হবে তাঁর৷ যেটা এর আগে কিন্তু কখনোই ছিল না৷ এই পরিস্থিতিতে উনি যদি রক্ত পরীক্ষা করেন, তাহলে দেখবেন ওনার ডায়বেটিস ধরা পড়েছে৷ এমন মানুষ ৪০ লাখের কম না৷ এছাড়া বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আপনাকে বিভিন্ন ধরনের আনুষ্ঠানিকতা বাদ দিতে হবে৷ কারণ, আপনি যত অনুষ্ঠানে যাবেন, তত বেশি মিষ্টি খাওয়ার প্রতি আগ্রহ বাড়বে এবং তাতে আপনারই ক্ষতি হবে৷ আমরা যদি ‘টোটাল কনজামশন' ধরি, তাহলে মধ্যবয়সি বা ২৫ থেকে ৫০ বছরের মানুষের মিষ্টির প্রতি আগ্রহ বেশি এবং তাঁরাই বেশি মিষ্টি খান৷

মিষ্টি নিয়ে আপনার কি কোনো পরামর্শ আছে?

বাংলাদেশ বিশ্বের মধ্যে অন্যতম প্রধান দেশে, যেখানকার অনেক মানুষ ডায়বেটিসের ঝুঁকিতে আছে৷ এছাড়া বাংলাদেশ অতিরিক্ত দৈহিক ওজনের ঝুঁকিপূর্ণ দেশ এবং হৃদরোগের ঝুঁকিও এখানে বেশি৷ সেক্ষেত্রে যাঁদের ডায়বেটিস নেই তাঁরা তো মিষ্টি খেতে পারবেনই, যাঁদের ডায়বেটিস আছে তাঁরাও মিষ্টি খেতে পারবেন৷ তবে কতটা খাবেন, এর ক্ষতি কী – এগুলো তাঁদের জানতে হবে৷ আমাদের উৎসবের জন্য মিষ্টি খাওয়া বন্ধ করতে হবে৷ আপনি কষ্ট করে উপার্জন করেন৷ এই উপার্জনের টাকা দিয়ে আপনি এমন কিছু খাবেন না, যেটা আপনাকেই উলটে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে ফেলে দেবে৷ অর্থাৎ, ডায়বেটিস থাকুক আর না থাকুক, সকলকেই মিষ্টি খাওয়া সীমিত রাখতে হবে৷

আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

বাংলাদেশ