রোববার বিশেষ আদালত ভুবনেশ্বর এইমসে পার্থের স্বাস্থ্য পরীাক্ষার নির্দেশ দেয়। সোমবার ভোরে তাকে তোলা হয় এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে।
বিজ্ঞাপন
কলকাতার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মেডিক্যাল কলেজ এবং হাসপাতাল এসএসকেএম-এর উপর ভরসা রাখতে পারছে না আদালতও। রোববার কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি ভুবনেশ্বর এইমসে গিয়ে পার্থের স্বাস্থ্য পরীক্ষার নির্দেশ দেন। সেই মতো রোববার ভোর সাতটা নাগাদ এসএসকেএম থেকে এসএসসি মামলায় অভিযুক্ত মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে বিমানবন্দরের দিকে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় ভুবনেশ্বরে। বিচারপতির নির্দেশ, ভুবনেশ্বর এইমসে বিভিন্ন বিভাগের চিকিৎসকদের নিয়ে একটি বোর্ড গঠন করতে হবে। তারা পার্থের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে বিকেল তিনটের মধ্যে একটি রিপোর্ট দেবেন।
শনিবার ভোরে পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে গ্রেপ্তার করে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। বস্তুত, শুক্রবার সকালে সাবেক শিক্ষামন্ত্রী এবং বর্তমান শিল্পমন্ত্রী পার্থের বাড়িতে তল্লাশি চালাতে যায় ইডি। তার বিরুদ্ধে এসএসসি দুর্নীতি মামলায় জড়িত থাকার অভিযোগ আছে। প্রায় ৩০ ঘণ্টা ধরে তল্লাশি চালানোর পর শনিবার সকালে তাকে গ্রেপ্তার করে প্রথমে কেন্দ্রীয় সরকারের ইএসআই হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য। সেখান থেকে তাকে ব্যাঙ্কশাল কোর্টে তোলা হয়।
নিম্ন আদালত পার্থের দুই দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেয়। কিন্তু পার্থের আইনজীবীরা শারীরিক অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে তাকে এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তির আবেদন জানান। আদালত তাতে রাজি হয়। কিন্তু ইডি এই রায়ের বিরুদ্ধে শনিবার রাতেই কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির কাছে আবেদন জানায়। ইডির বক্তব্য, ভর্তি করতেই হলে এইমসে ভর্তি করা হোক পার্থকে। যা কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে। কল্যাণী এইমসে তাকে ভর্তির কথা বলা হয়। কিন্তু বিচারপতি জানান, কল্যাণী এইমসের নিয়োগেও দুর্নীতির অভিযোগ আছে। ফলে সেখানে পার্থকে নিয়ে যাওয়া যাবে না। বরং তাকে ভুবনেশ্বরে নিয়ে যাওয়া হোক। এরপরেই ভুবনেশ্বরে ডাক্তারদের বিশেষ দল তৈরি করে পরীক্ষার নির্দেশ দেন বিচারপতি।
এসএসসি কেলেঙ্কারিতে মন্ত্রী গ্রেপ্তার, বান্ধবীর বাড়ি থেকে ২২ কোটি
দীর্ঘ জেরার পর গ্রেপ্তার করা হলো পশ্চিমবঙ্গের মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে। এসএসএসি কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িত অভিযোগে। পার্থ-ঘনিষ্ঠ অর্পিতার বাড়ি থেকে ২২ কোটি উদ্ধার। তার দাবি, পার্থই টাকা রাখতে বলেছিলেন।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
শুক্রবার সকাল থেকে জেরা
শুক্রবার সকাল সাড়ে সাতটা নাগাদ কেন্দ্রীয় এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট বা ইডি-র অফিসাররা পৌঁছে যান পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের নাকতলার বাড়িতে। পার্থ তখন ঘুমাচ্ছিলেন। তাকে ঘুম থেকে তুলে শুরু হয় জেরা ও তল্লাশি।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
২৭ ঘণ্টা ধরে জেরা
গ্রেপ্তার করার আগে ২৭ ঘণ্টা ধরে জেরা করে ইডির অফিসাররা। শুধু পার্থের বাড়ি নয়, মোট ২০টি জায়গা তল্লাশি চালান ইডি-র কর্মকর্তারা। প্রায় ৯০ জন ইডি কর্মী পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি চালাতে থাকেন। উপরের ছবিতে কলকাতার নাকতলায় পার্থ চট্টোপাধ্য়ায়ের বাড়ি।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
বান্ধবীর বাড়ি থেকে ২২ কোটি উদ্ধার
তল্লাশির সময় অভিনেত্রী ও পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ অর্পিতা মুখোপাধ্য়ায়ের ফ্ল্যাট থেকে ২২ কোটি টাকা উদ্ধার করে ইডি। টাকা অর্পিতার শোয়ার ঘরের আলমারিতে চটের বস্তায় রাখা ছিল। অর্পিতা ইডি-র অফিসারদের জানিয়েছেন, পার্থই তার কাছে টাকা রেখেছিলেন।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
রাতভর টাকার হিসাব
ইডি-র অফিসাররা ব্যাংক থেকে দশটি টাকা গোনার মেশিন ও কর্মীদের নিয়ে আসেন। সারারাত ধরে টাকা গোনা হয়। দেখা যায়, ২২ কোটি টাকা আছে। তাছাড়া ৫০ লাখ টাকার সোনার গয়না ও প্রচুর ডলার পাওয়া যায়। বেশ কিছু নথিপত্রও নিয়ে গেছে ইডি। অর্পিতাকেও গ্রেপ্তার করা হয়। উপরের ছবিতে অর্পিতার দক্ষিণ কলকাতার আবাসনের ফ্ল্যাটের সামনে নিরাপত্তা বাহিনীর প্রহরা।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
কীসের টাকা
আদালতে ইডি জানিয়েছে, অর্পিতা এসএসসি-তে বেআইনি নিয়োগের সঙ্গে জড়িত। তিনি অন্যতম চক্রান্তকারী। তার বাড়িই ছিল নিয়োগের আখড়া। সেই নথিপত্র ইডি পেয়েছে। মন্ত্রীর নামের সরকারি খামও পাওয়া গেছে। অর্পিতা ইডিকে জানিয়েছে, টাকাটা পার্থ চট্টোপাধ্যায তাকে রাখতে দিয়েছিলেন। তিনি এনিয়ে কিছুই জানেন না। ইডি এখন অর্পিতার বাড়ি থেকে পাওয়া বিদেশি মুদ্রা নিয়েও আলাদা মামলা করতে পারে।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
কে এই অর্পিতা?
অর্পিতা মুখোপাধ্যায় অভিনেত্রী। তিনি বাংলা ও ওড়িয়া ছবিতে অভিনয় করেছেন। তাছাড়া তিনি নেল আর্ট করতেন। পার্থর সঙ্গে একটি নির্দিষ্ট ফোনে অর্পিতা সারাদিন কথা বলতেন বলে অভিযোগ। তিনি দক্ষিণ কলকাতার একটি নামী দুর্গাপুজোর সঙ্গেও জড়িত। এই পুজোর সঙ্গে পার্থও য়ুক্ত।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
কী বলছেন অর্পিতার মা
মেয়ের গ্রেপ্তারের খবর পেয়ে তার মা মিনতি বলেন, ‘‘বাবা-মা যা চাইবে ছেলেমেয়ে কি সেটাই করবে? সেরকম হলে তো মেয়ের বিয়ে দিতে পারতাম। ওর কথা খবরে শুনেছি। তবে অর্পিতা এই কাজ করেছে কি না, সেই সত্যাসত্যও বিচার করা হবে।’’
ছবি: Satyajit Shaw/DW
পার্থ হাসপাতালে
গ্রেপ্তার করার পর পার্থকে নিজেদের হেফাজতে রাখে ইডি। তারপর আদালতে পার্থ জানান, তিনি অসুস্থ বোধ করছেন। তখন আদালত তাকে হাসপাতালে ভর্তি করতে বলে। এসএসকেএম হাসাপাতালে তাকে ভর্তি করা হয়। ইডি অবশ্য আপত্তি জানিয়েছিল।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
ইডির দাবি মেনে
ইডি পরে কলকাতা হাইকোর্টে জানায়, পার্থকে কল্যাণীর এইমসের চিকিৎসকরা পরীক্ষা করে দেখুন। কিন্তু বিচারপতি বলেন, কল্যাণীর এইমসের উপর তার ভরসা নেই। পরে তিনি নির্দেশ দেন, ভুবনেশ্বরের এইমসে পার্থর স্বাস্থ্যপরীক্ষা করা হবে।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
শান্তিনিকেতনে পার্থর বাড়ি?
শান্তিনেকতনে ছয়টি বাড়ি পার্থর বলে অভিযোগ উঠেছে। তারমধ্যে একটি বাড়ির কেয়ারটেকার বলেছেন, একটি বাড়িতে পার্থর আসা-যাওয়া ছিল। একটি সাত বিঘের জমিও পার্থর বলে অভিযোগ। তবে সরকারি আধিকারিকরা বলেছেন, তারা খোঁজ না করে এই বিষয়ে কিছু বলতে পারবেন না।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
পার্থর বিরুদ্ধে অভিযোগ
পার্থ চট্টোপাধ্যায় আগে শিক্ষামন্ত্রী ছিলেন। তখন এসএসসি কেলেঙ্কারি হয়। পরীক্ষা দিয়ে যারা উঁচু স্থান পেয়েছে, তাদের চাকরি না দিয়ে, পয়সা দিয়ে নিয়োগের অভিযোগ ওঠে। এই নিয়োগের বিরুদ্ধে কলকাতায় দীর্ঘদিন ধরে বিক্ষোভ চলছে। পরে হাইকোর্টের নির্দেশে সিবিআই এই অভিযোগের তদন্ত করছে।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
তৃণমূলের প্রতিক্রিয়া
পার্থ চট্টোপাধ্যায় পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অন্যতম বরিষ্ঠ মন্ত্রী। মমতার অত্যন্ত বিশ্বস্ত সৈনিক। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হামেশাই অভিযোগ করেন, কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা দিয়ে রাজ্যের নেতাদের হেনস্থা করা হচ্ছে। কিন্তু পার্থকে গ্রেপ্তার করার পর তৃণমূলের বক্তব্য, অভিযোগ প্রমাণ হলে দল ও সরকার ব্যবস্থা নেবে।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
সিপিএমের প্রতিক্রিয়া
সিপিএম সাংসদ ও আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য আদালতে এসএসসি চাকুরিপ্রার্থীদের হয়ে মামলা লড়ছেন। বিকাশরঞ্জনের প্রতিক্রিয়া হলো, ''পার্থ হচ্ছেন দাবার ঘুঁটি, ইডির উচিত হরিশ চ্যাটার্জি রোডে তল্লাশি করা। সেখানে হাজার হাজার কোটি টাকা পাওয়া যাবে।'' তার দাবি, ''ইডি যেদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়কে ধরবে, সেদিন পুরো দুর্নীতি সামনে আসবে।'' সিপিএম কর্মীরা এখন বিভিন্ন জেলায় রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন।
ছবি: Abp Photo/Sudipta Bhowmick
বিজেপি, কংগ্রেসের অভিযোগ
বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদার এসএসসি নিয়ে বিক্ষোভ-মঞ্চে যান। তিনি টুইট করে পার্থ ও অর্পিতা নিয়ে সোচ্চার হন। দিলীপ ঘোষও তাই। কংগ্রেসও এসএসসি কেলেঙ্কারি নিয়ে সোচ্চার হয়েছে।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
14 ছবি1 | 14
এদিন শুনানির সময় পার্থের আইনজীবীরা বিচারপতিকে বলেন, এসএসকেএম প্রভাবশালীদের জন্য নিরাপদ জায়গায় পরিণত হয়েছে। মদন মিত্র এবং অনুব্রত মন্ডলের নামও বলেছেন তিনি। এর আগে গ্রেপ্তার হয়ে দীর্ঘদিন এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন সাবেক মন্ত্রী মদন মিত্র। সিবিআইযের তলব পেয়ে অনুব্রত মন্ডলও এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। বস্তুত, এর আগেও হাইকোর্ট এসএসকেএম হাসপাতালে প্রভাবশালীদের ভর্তি হওয়া নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করেছিল।
এদিকে সোমবারই পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের আদালতে হাজির হওয়ার কথা। হাইকোর্ট জানিয়েছে, প্রয়োজনে ভিডিওকলে পার্থের শুনানি হতে পারে। এদিকে আদালতে রোববার ইডি জানিয়েছিল, এসএসকেএম কর্তৃপক্ষ ইডি অফিসারদের কার্যত হুমকি দিয়েছে, তাদের কাজ করতে দেওয়া হয়নি।
সম্প্রতি বার বার বিতর্কে উঠে এসেছে এসএসকেএম হাসপাতালে প্রভাবশালীদের ভর্তি হওয়ার প্রসঙ্গটি। চিকিৎসকদের একাংশের বক্তব্য, রাজ্যের সরকারি হাসপাতালগুলিতে এমনিতেই আসনসংখ্যা বাড়ন্ত। মাসের পর মাস মানুষ লাইন দিয়ে অপেক্ষা করেন একটি বেড পাওয়ার জন্য। সেখানে কেন প্রভাবশালীরা দিনের পর দিন হাসপাতালের বেড আটকে রাখবেন? হাইকোর্টের মন্তব্যে আনন্দিত ডাক্তারদের একাংশ।